Ajker Patrika

ফলোআপ /ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় টাকা, ‘খাসির খানা’ হচ্ছে না

 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ১২
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় পাহাড়িয়াদের ভয় দেখিয়ে টাকা দেন সাজ্জাদ আলী। তিনি বলেছিলেন, পাহাড়িয়ারা যদি থানা-পুলিশে দৌড়াদৌড়ি করে, তাহলে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেওয়া হবে না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ওই মহল্লায় গেলে সবার সামনে পাহাড়িয়ারা এমন কথাই বলেছে।

এর আগে গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকা'র অনলাইনে ‘শুক্রবার খাওয়ানো হবে খাসি জবাই করে, রোববার ছাড়তে হবে ঘর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন আজ বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে, ৫৩ বছর পাহাড়িয়ারা ১৬ কাঠা জমির ওপর বাস করে আসছে। এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলী এত দিন পর এ জমির মালিকানা দাবি করছেন। তাঁর চাপে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।

আজকের পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশের পর শুরু হয় তোলপাড়। তৎপর হয় পুলিশ-প্রশাসন। আজ সকালে পাহাড়িয়াদের মহল্লায় যান পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন। সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের একটি দল নিয়ে আসেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী। তিনি সাজ্জাদ আলীকেও ফোন করে ডেকে আনেন।

ওসি আজিজুল বারী পাহাড়িয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কেন থানায় যাননি?’ জবাবে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী বলেছেন যে তোমরা যদি বাড়াবাড়ি কর, যেটুকু টাকা দিচ্ছি, সেটাও দেব না। এটার জন্য আমরা কোনো জায়গাতে যেতে পারলাম না। আমরা টাকা নিতে বাধ্য হলাম।’

আরও একজন বলেন, ‘এখানে জন্মজায়গা। আমরা যদি এখানে থাকতে পারি, থাকতে চাই। জন্মজায়গা ছেড়ে কেউ চলে যেতে চায়? কেউ তো চাই না। কিন্তু আমরা কুনু জাগাতেই যাইনি। আমাদের বুলেছে, তোমরা যুদি হাঁটাহাঁটি করো, তাহিলে কুনু টাকাই পাবা না।’

এলাকার বাসিন্দা আসাদ আলীও এসেছিলেন। পুলিশের সামনেই বললেন, ‘এখানে এরা ৬২ বছর ধরে বাস করছে। এই জমির মালিক ইন্দ্র ধুপি। সাজ্জাদের কথা আমরা শুনিনি।’

সেখানে ছিলেন সাজ্জাদ আলীর কেয়ারটেকার মো. শাহীন। ওসি আজিজুল বারী সাজ্জাদকে কয়েকবার ফোন করান তাঁকে দিয়ে। একপর্যায়ে একটি দলিল হাতে আসেন সাজ্জাদ। তিনি দাবি করেন, এ জায়গা তিনি ১৯৯৪ সালে কিনেছেন। পুনর্বাসন করে জায়গা দখলে নিচ্ছেন।

খাসি জবাই করে খাওয়ানোর আয়োজনের বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল। চলে যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাই বলেছে যে খাসি খাওয়াতে হবে।’

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামীকাল শুক্রবার কোনো ‘খাওয়া’ হবে না সেখানে।

এ সময় বিভিন্ন মানবাধিকার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও সেখানে আসেন।

ওসি আজিজুল বারী জানান, বিষয়টি তাঁর কাছে ঢাকা থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিটি বাড়ির তালিকা করে নেন। তিনি ১৩টি পরিবার থেকে ১৩ জন এবং সাজ্জাদ আলীকে বিকেল ৫টায় কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপপুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে ডাকেন। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সবকিছু জানান।

ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো আগে থানায় যায়নি। নিউজ হওয়ার পরে আপনারা এসেছেন, আমরাও এসেছি। আমরা সকলে মিলে যেটা সুষ্ঠু সমাধান হয়, সেটা করব। যেটাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেটা করব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা এভাবেই থাকবেন। জমির কাগজপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জমির মালিক কে?

পাহাড়িয়াদের দাবি, এ জমির মালিক ছিলেন ইন্দ্র ধুপি নামের একজন ধোপা। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত থেকে ফিরে আসা ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবারকে তিনি এখানে বাড়ি করতে দেন। জায়গাটি তখন ইন্দ্র ধুপির বাথান নামে পরিচিত ছিল। ইন্দ্র ধুপি নিঃসন্তান ছিলেন।

ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, হড়গ্রাম মৌজায় ৫১ নম্বর জে এল ও ১২৯০ নম্বর দাগে জমিটির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৪ শতক। ৪০৫ নম্বর আরএস খতিয়ানে জমিটির মালিক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজশাহীর কাজীহাটা এলাকার গাজিয়া রজকিনি ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মনিতারা রজকিনি।

তবে ১৯৯৪-৯৫ সালে এ জমি খারিজ হয়েছে সাজ্জাদ আলী, সৈয়দ আলী, ইমতিয়াজ ও ফাহামিদার নামে। সাজ্জাদ আলী পুলিশের সামনে যে দলিল হাজির করেন, সেখানে দেখা যায়, মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাশ দাস ও তৃপাল রজকের কাছ থেকে তাঁরা কিনেছেন।

ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরএস রেকর্ডে গাজিয়া রজকিনি ও মনিতারা রজকিনির কাছ থেকে সাজ্জাদের কাছে সরাসরি দলিল হলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাশ দাস ও তৃপাল রজকের নামে জমি কীভাবে হয়েছিল, আগে সে দলিল দরকার। ওই দলিল না পাওয়া গেলে সাজ্জাদের কাছে থাকা দলিল থাকা প্রশ্নবিদ্ধ। এ দলিল সঠিক কি না, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।

তদন্তে জেলা প্রশাসন

পাহাড়িয়াদের ওই মহল্লা পরিদর্শন করেছেন জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি গণেশ মার্ডি, সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজেয়াড়, মানবাধিকারকর্মী আরিফ ইথার, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানসহ অনেকে। তাঁরা সবার সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় আদিবাসী নেতা গণেশ মার্ডি বলেন, ‘এত কিছু হয়ে যাচ্ছে, আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। তারা আমাদেরও কিছু জানায়নি। এভাবেই তারা বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে যেন ব্যবস্থা নেবে।’

জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, এই পরিবারগুলো ৫৩ বছর ধরে এখানে বাস করছে। এর মধ্যে আরএস রেকর্ড হয়েছে। তখন মালিক না হোক, দখলীয় হিসেবেও তো আদিবাসীদের কথা লেখা উচিত ছিল। কিন্তু সেটাও হয়নি।

জানতে চাইলে নগরের বড়কুঠি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসন তাঁকে তদন্ত করতে বলেছে। তিনি দুপুরে একজন সার্ভেয়ারকে পাঠিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেও যাবেন। সবকিছু তদন্ত করে একটা প্রতিবেদন দেবেন।

উল্লেখ্য, মোল্লাপাড়ার এ জায়গা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজশাহীর আমচত্বর-কাশিয়াডাঙ্গা সড়কসংলগ্ন এ জায়গার দাম এখন কয়েক কোটি টাকা। ৫৩ বছর আগে এখানে প্রথমে ছয়টি পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে বাড়ি হয় ১৬টি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী সাজ্জাদ আলী সেখানে যান এবং জানান যে জমির মালিক তিনি। এখন তাঁদের উঠে যেতে হবে। এরও বছর দুয়েক আগে তিনি এ দাবি তুললে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দুপক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। পাহাড়িয়াদের দাবি, তখন সাজ্জাদের দলিলকে ‘জাল’ বলেছিলেন কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নজরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তিনি আরও জমি দখল করেছেন। এটিই তাঁর কৌশল। পাহাড়িয়াদেরও তিনি টাকা দিয়েছেন। প্রথম বাড়ি করা ছয়টি পরিবার ধরে প্রতিটি বাড়িতে দিয়েছেন ৬ লাখ করে টাকা। ছয় পরিবার এখন বেড়ে হয়েছে ১৬টি। মোট ৩০ লাখ টাকা ১৬ পরিবারে ভাগ হয়েছে। কেউ পেয়েছেন ৫০ হাজার, কেউ ১ লাখ, কেউবা ২ লাখ। তা নিয়েই তাঁরা চলে যাচ্ছিলেন।

ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। অন্য ১৩ পরিবারকে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল রোববার। তার আগে শুক্রবার সাজ্জাদ আলী খাসি জবাই করে সবাইকে খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আশপাশের লোকজনকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভ্যানচালক ফারুক হত্যা মামলার ৬ আসামি পালানোর সময় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় ভ্যানচালক ওমর ফারুক (৩৮) হত্যা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার বনবেলঘড়িয়া পশ্চিম বাইপাস রোডে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা বাসে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন বাগমারার ভবানীগঞ্জ সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি উপজেলার দেউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম (৪৭), সাধারণ সম্পাদক মাকিগ্রামের আব্দুল মতিন (৪০), সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক দরগামাড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক (৪০), হেজাতিপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম (৩৬), দেউলিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান (৫৫) ও আব্দুল হান্নান (৩৮)।

র‍্যাব-৫-এর সদর কোম্পানি ও নাটোরের সিপিসি-২-এর যৌথ দল চেকপোস্ট বসিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার সকালে র‍্যাব-৫-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহত ভ্যানচালক ওমর ফারুকের বাড়ি চাঁনপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোসলেম সরদার। ছেলে হত্যার ঘটনায় তিনিই মামলা করেছিলেন।

র‍্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভবানীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ডে নিজের ব্যবহৃত ভ্যানগাড়ি রেখে প্রস্রাব করতে যান ওমর ফারুক। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে সেখানে উপস্থিত অন্য আসামিরা তাঁকে চোর সন্দেহে আটক করেন। এরপর ২০ থেকে ২৫ জন সংঘবদ্ধভাবে ওমর ফারুককে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্মমভাবে মারধর করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে উলঙ্গ করে দেয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে তাঁর দুই হাত ও দুই পায়ে প্রায় দুই ইঞ্চি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মারধরের সময় ওমর ফারুক বারবার পানি চাইলে তাঁকে পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

অত্যাচারে ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে আসামিরা ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে মিথ্যা মাদক সেবনকারী হিসেবে উপস্থাপন করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ফারুককে নিতে অস্বীকৃতি জানালে সেখানে উপস্থিত হন বাগমারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক পুরিয়া গাঁজা রাখার অভিযোগে ওমর ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন।

পরে আহত অবস্থায় ওমর ফারুককে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গুরুতর আহত অবস্থায়ই তাঁকে কারাগারে গ্রহণ করেন। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর ফারুকের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। এরপরই ফারুক হত্যার ঘটনায় মামলা নেয় বাগমারা থানা-পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে ৯২৩ ভোটকেন্দ্রের ১৭৮টি ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ জেলায় ছয়টি আসনে ৯২৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮টি কেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’, ২৮১টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ৪৬৪টিকে ‘সাধারণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলো জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি পুলিশ প্রশাসনের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।

জেলায় মোট ভোটারসংখ্যা ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৮ জন। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে (শাহজাদপুর উপজেলা)। এই আসনে ভোটার ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪১২ জন ও নারী ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন।

সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনে (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ)। এখানে ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৪ জন। এখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন চারজন।

সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৮ ও নারী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের চারজন।

রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ও নারী ২ লাখ ২১ হাজার ৬৮৩ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাতজন।

উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০ ও নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ১২৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৬ জন।

বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৪ ও নারী ২ লাখ ৭ হাজার ৬৫৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের দুজন।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতু আজ বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন্দ্রগুলো আমরা পরিদর্শন করছি। সব কেন্দ্র পরিদর্শন শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কী ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, এ বিষয়েও পরে জানানো হবে।

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, ‘জেলার ছয়টি আসনে মোট ভোটার ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৮ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা আমরা করি না। এটা করে পুলিশের ডিএসবি শাখা। তবে আমাদের কাছে সব কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইটভাটায় ডেকে নিয়ে হত্যা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
আবু তাহের। ছবি: সংগৃহীত
আবু তাহের। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে জাসাস নেতা ফরিদ সরকারকে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শ্রীপুর থানা-পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

নিহত মো. ফরিদ সরকার (৩৫) উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনি গোসিঙ্গা ইউনিয়ন জাসাসের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

গ্রেপ্তার আবু তাহের ওরফে তারা ডাকাত (৪০) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্য নারায়ণপুর গ্রামের মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান বলেন, ২৩ ডিসেম্বর রাতে খুনিরা ফরিদ সরকারকে মোবাইল ফোনে লতিফপুর গ্রামের কেবিএম ইটভাটায় ডেকে নেন। ডেকে নিয়ে গভীর রাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে ফেলে যান।

এ ঘটনায় নিহত ফরিদের বড় ভাই ফারুক হোসেন বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আজ বুধবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দীপু দাস হত্যা: নিথর দেহ গাছে ঝোলানোর ‘মূল হোতা’ গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার নিবির ইসলাম অনিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার নিবির ইসলাম অনিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় চাঞ্চল্যকর পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার চেরাগআলী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবক হলেন নিবির ইসলাম অনিক (২০)। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা (মধ্য ভাটিবাড়ি) গ্রামের মো. কালিমুল্লাহর ছেলে।

তিনি ভালুকার একটি ফ্যাক্টরিতে নিটিং অপারেটর হিসেবে কাজ করেন।

১৮ ডিসেম্বর দীপুকে হত্যার পর রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ভয়াবহ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ দেখতে পায়, সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবক দীপুর নিথর দেহ রশি দিয়ে টেনে গাছের ওপর তুলছেন। প্রযুক্তির সহায়তায় সেই যুবককে অনিক হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে অনিক পলাতক ছিলেন। তাঁকে ধরতে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ ঢাকার বনানী ও গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী দল।

ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অনিক যে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন, ঘটনার পর থেকে তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত