Ajker Patrika

তাড়াইলে কাউন্সিলের আগে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতা নিহত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৫
আবুল হাসান রতন। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হাসান রতন। ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে বিএনপির উপজেলা কমিটির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর তিন ভাতিজা গুরুতর আহত হন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। তবে দলীয় নেতাদের দাবি, এটি পারিবারিক বিরোধ।

আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের বানাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আবুল হাছান রতন (৫৫) বানাইল গ্রামের মৃত নুরুল হুদার ছেলে। তিনি বিএনপির রাউতি ইউনিয়ন শাখার দুইবারের সভাপতি।

আহতরা হলেন— খালিদ (২২), রাসেল (২৭) ও হৃদয় (১৮)। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত তিনজনই নিহত মো. আবুল হাছান রতনের ভাতিজা।

এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরে নিহত রতনের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রেখেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মী। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হাসপাতাল গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিকালে জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ভিপি সাইফুল ইসলাম সুমন ও বিএনপি নেতা সামীর হোসেন সাকীর নেতৃত্বে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে।

বিএনপি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চিরকুমার আবুল হাছান রতন বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন। কর্মীবান্ধব একজন নেতা হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। সম্প্রতি তাড়াইল উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল আয়োজনের জন্য আগামী ১৫ই জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা এবং সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটন তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। এই দুই নেতাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে দুই শিবিরে বিভক্ত তাড়াইল উপজেলা বিএনপি। এর মধ্যে রতন ছাইদুজ্জামান মোস্তফার পক্ষে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন।

অন্যদিকে বানাইল গ্রামেরই বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন। গিয়াস উদ্দিন রাউতি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। কাউন্সিলকে সামনে রেখে গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে শনিবার রাতে বানাইল গ্রামে গণসংযোগ সভা হয়। সেখানে রতন সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা হয়। আবুল হাছান রতন ও গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয়।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা।

এরপর রোববার সকালে গিয়াসের সঙ্গে রাতের সভার বিষয়ে জানতে চান রতন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে গিয়াস লোকজনসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রতনের উপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচাতে তিন ভাতিজা খালিদ, রাসেল ও হৃদয় এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়। হামলার পর মুমূর্ষু অবস্থায় রতনকে উদ্ধার করে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া গুরুতর আহত তার তিন ভাতিজাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহনূর শুভ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহত আবুল হাছান রতনের বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।

নিহত আবুল হাছান রতনের ভাগনে শামীম মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মামাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’

তবে সভাপতি পদপ্রত্যাশী তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটন দাবি করেন, গিয়াসউদ্দিন তার সমর্থক নয়।

তিনি বলেন, ‘তাঁরা (রতন ও গিয়াস) সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা, তাঁরা আত্মীয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এতোটাই কলুষিত যে সত্যি চিত্রটা সামনে আনা আসলেই কষ্টকর। এটা সম্পূর্ণই তাদের পারিবারিক ইস্যু। এটা কোনোভাবেই অন্যদিকে ঘোরানোর কোনো স্কোপ নাই৷ গিয়াসউদ্দিন আমার সমর্থক না। অনেকেই ইনটেনশনালি বলে। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন আমার সমর্থক না।’

এ ব্যাপারে তাড়াইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি আবুল হাছান রতনকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় তাঁর ওপরে হামলা করা হয়।

আর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ওদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ ছিল আগে থেকেই। এরাতো তাড়াইল বিএনপির কোনো পদে ছিলো না। পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। দলীয়ভাবে তদন্ত করে আমরা দেখব কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। যদি দলীয় নেতৃবৃন্দ জড়িত থাকে তবে আমরা তো জেল ফাঁসি দিতে পারব না। আমরা তাদের দলীয় শাস্তির আওতায় আনব।’

ঘটনার বিষয়ে তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনার সময় ছুরিকাঘাতে আবুল হাছান রতন গুরুতর আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় থেকে একটি সিংহী খাঁচা থেকে বের হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হয়ে এর পাশেই অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি সিংহী বিকেলে খাঁচা থেকে বের হয়ে গেছে। সিংহীর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটিকে খাঁচায় নিয়ে আসতে।’

এটিকে ধরার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবশ করতে অবশ করার গান প্রস্তুত করে রেখেছি। নিরাপত্তা বজায় রেখে অবশ করে খাঁচায় নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হয়েছে। কীভাবে বের হয়েছে, সেটি আমরা এখনো জানতে পারিনি।’

চিড়িয়াখানার এই কিউরেটর বলেন, সিংহীটিকে শান্ত রাখতে তাকে গরুর মাংস দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে বন্দুকের মাধ্যমে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি অচেতন হয়ে গেলে খাঁচায় ভেতরে নেওয়া হবে।

এদিকে, চিড়িয়াখানা থেকে সাধারণ দর্শনার্থীদের নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলেও জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পীরগাছায় দিনের বেলায় কেটে রাখা জমির ধান লুটের অভিযোগ

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
জমিতে বিছিয়ে রাখা এই ধানগুলোই রাতে লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমিতে বিছিয়ে রাখা এই ধানগুলোই রাতে লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের পীরগাছায় দিনের বেলায় কেটে রাখা এক কৃষকের ধান লুটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কিসামত ঝিনিয়া ডাক্তারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পীরগাছা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লুটকারীরা সটকে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতেই এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, তিনি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে ৩০ বছর ধরে ৩৫ শতক জমি ভোগদখল করে আসছেন। চলতি মৌসুমে সেই জমিতে তিনি আমন ধান চাষ করেছিলেন। কিছুদিন আগে পাকা ধান কেটে খড়সহ জমিতে বিছিয়ে রেখে শুকাচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর প্রতিবেশী আব্দুস সোবহান সেই জমি নিজের বলে দাবি করে তাঁর সঙ্গে অহেতুক বিরোধে জড়ান। সেই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আব্দুস সোবহান তাঁর ছেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে জমির ধান লুট করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনার সময় ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আব্দুস সোবহান তাঁর লোকজনসহ তাঁকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দৌড়ে নিজ বাড়িতে ঢুকে রক্ষা পান। পরে তিনি জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই জমি আমার। তাই আমার জমির ধান আমি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছি।’

তবে স্থানীয়রা জানান, ওই জমি আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন। ওই জমিতে ধান আব্দুল মান্নানই চাষ করেছিলেন।

পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোমেল বড়ুয়া জানান, এ ব্যাপারে তিনি একটি এজাহার পেয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় এনসিপির আহ্বায়ক হলেন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া খাদেমুল ইসলাম খুদি। ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া খাদেমুল ইসলাম খুদি। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে জাসদের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খুদিকে গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

ফেসবুকে অনেকেই কমিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। জেলাজুড়ে বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অতীতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য—বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে করা মন্তব্যগুলো ফের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক পোস্ট ও ভিডিওতে খাদেমুল ইসলাম খুদিকে ইনুর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যায়। এর আগে গত বুধবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম স্বাক্ষরিত ৫২ সদস্যের এই কমিটি প্রকাশ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, খাদেমুল ইসলাম খুদি দীর্ঘদিন ধরে হাসানুল হক ইনুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গত অক্টোবর মাসে সাদুল্যাপুর উপজেলায় ‘সুধী সমাবেশ’ করার নামে খাদেমুল ইসলাম খুদি একটি রাজনৈতিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। প্রশাসন বিষয়টি জানতে পারলে খুদি সমাবেশ শুরুর আগেই ব্যানার সরিয়ে সরে পড়েন। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরপরই তিনি বিভিন্ন কৌশলে দলবদল করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত জুলাই আন্দোলন-নেতৃত্বকারী এ দলের জেলায় শীর্ষ পদটি পেয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর ঘনিষ্ঠতার সুযোগে খুদি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে গাইবান্ধা জেলা এনসিপিতে শীর্ষ পদটি নিশ্চিত করেছেন।

ফেসবুকে এস এম এনামুল হক নামে একজন লিখেছেন, ‘যারা সারা জীবন আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছে, তারা কীভাবে এনসিপির আহ্বায়ক হন? টাকার বিনিময়ে কি শহীদদের রক্ত বিক্রি করা হচ্ছে?’ মামুন সরকার নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আরেক নাম এনসিপি।’ রফিক খন্দকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্যই এ কমিটি।’

নাম না প্রকাশের শর্তে খাদেমুল ইসলাম খুদির এক বাল্যবন্ধু বলেন, খুদি ছাত্রজীবন থেকেই ক্ষমতা ও পদ-পদবির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। যদিও তিনি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন, পরে তিনি প্রায়ই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।

এদিকে নতুন কমিটির বিরোধিতা করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এনসিপির জেলা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। নেতা-কর্মীদের কাউকে দেখা যায়নি। ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম মনিরুজ্জামান সবুজ পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, ‘নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে স্বৈরাচারের দোসরকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব বায়োজিদ বোস্তামী জীম বলেন, ‘আওয়ামী লীগপন্থী প্রভাবশালী মহলের দোসর, সুবিধাবাদী চরিত্র ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের অযৌক্তিকভাবে পদ দেওয়া হয়েছে। এতে ত্যাগী ও প্রকৃত কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন।’ তিনি দ্রুত কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জ-৩: প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সেতু অবরোধ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি ঘোষিত মো. কামরুজ্জামান রতনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে ষষ্ঠ বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সেতু ব্লকেড করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

বিকেল ৫টার দিকেও (এই প্রতিবেদন লেখার সময়) অবরোধ চলছিল। অবরোধের কারণে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে দলের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাতেই জেলা শহরে মির্জা ফখরুল ও রতনের কুশপুত্তলিকা দাহ ও মুক্তারপুর এলাকায় মশালমিছিল করেন মহিউদ্দিনপন্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দিনভর এ ব্লকেড কর্মসূচি চলে।

অবরোধ চলাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সাইদুর রহমান ফকির, শাহাদাত হোসেন সরকার, শহর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহবুব-উল-আলম স্বপন, পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মু. মাসুদ রানা, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. আবুল হাসেমসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত