Ajker Patrika

১৩ বছর পরেও সাগর-রুনি হত্যা রহস্যই রয়ে গেল

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০৩
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। ফাইল ছবি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। ফাইল ছবি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের আরও এক বছর পার হলো আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু ১৩ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়নি। রহস্য রয়েছে একই তিমিরে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন নতুন তারিখ ধার্য হচ্ছে।

সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং তাঁর স্ত্রী মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। ২০১২ সালের এদিন রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন এই দম্পতি। এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১১৫ বার। আগামী ২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।

সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দ্রুত রহস্য উদ্‌ঘাটনের এবং খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ, পরে ডিবি দুই মাস এবং সর্বশেষ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে র‍্যাব প্রায় সাড়ে ১২ বছর তদন্ত করেও রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। এখনো অজানাই থেকে গেছে, তাঁদের খুনি কে বা কারা, কেন খুন হয়েছেন।

অবশ্য গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩ অক্টোবর পিবিআইপ্রধানকে নিয়ে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করারও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআই এরই মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই মামলায় কারাগারে থাকা পাঁচজনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পিবিআইপ্রধান মোস্তফা কামাল জানান, খুব দ্রুত এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তাঁর আশা, দ্রুতই রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।

র‍্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর মামলার তদন্তের সর্বশেষ একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হলেও কোনো তথ্য উদ্ধার হয়নি। এ মামলায় কয়েক বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তানভীর রহমান, পলাশ রুদ্র পাল ও মিন্টু ওরফে বারোগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু।

আগের তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ব্যক্তি। মার্কিন একটি ল্যাবকে তাঁদের ছবি আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ওই ছবি পাওয়া যায়নি।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু রহস্য একই তিমিরে রয়ে গেছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।

মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বছরে কিছু হয়নি। বর্তমানে শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্ত করছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা কিছুটা আশাবাদী। তবে রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছি না।’

নওশের আলম রোমান আরও বলেন, ‘আমরা চাই, যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয়। প্রকৃত খুনি যারা, তাদের যেন চিহ্নিত করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাড়কাঁপানো শীতে স্থবির চুয়াডাঙ্গা: বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, জনজীবন বিপর্যস্ত

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩০
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে, যা আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক এবং সবজি বিক্রেতারা জীবিকার তাগিদে ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

পেশাজীবীদের ভাষ্যমতে, হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক স্বপন ইসলাম বলেন, ‘বাপু, হাত-পা তো জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। হ্যান্ডেল ধরলে মনে হয় যেন রড কামড়ে ধরছে। এই হিমেল বাতাসে শরীর কাঁপতিছে। ভাড়া-ভুতো কম, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডার চোটে দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট পাড়ার গৃহিণী অনামিকা খাতুন বলেন, ‘ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে হাত দেওয়া যায় না। রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি, কখন ঠান্ডা লেগে অসুখ-বিসুখ হয়।’

দিনমজুর সেতাব আলী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কামলা দিয়ে খাই। কিন্তু এই ঠান্ডায় মাঠে বা বাইরে বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না। শরীর থরথর করে কাঁপে, কোদাল বা ঝুড়ি ধরা কষ্টের।’

টানা কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের ফলে বোরো ধানের বীজতলা এবং শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষকদের আশঙ্কা, কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধানের বীজতলার কুয়াশা সকালে দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পরিমিত সেচ দিতে হবে।’

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ বৃদ্ধ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। তিনি প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গার বর্তমান তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় মেঘনায় মধ্যরাতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৌদ্ধ গণমাধ্যমকে জানান, সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন এবং পরবর্তীতে আরও একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার সময় নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লঞ্চ দুটির মধ্যে সংঘর্ষে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। পরবর্তীতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে জাকির সম্রাট-৩-এর যাত্রীদের গন্তব্যস্থল ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে পথিমধ্যে গুরুতর আহত আরও এক যাত্রীর মৃত্যু ঘটে।

নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে চালকদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর নদীতে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ দুটি উদ্ধার বা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে অনেক দিন দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিকাজেও প্রভাব পড়ছে।

কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সামনে উপজেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে বোরো বীজতলা হলদে ও লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে।

সরেজমিনে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বীজতলাই পলিথিনে ঢাকা। ভাবিচা গ্রামের কৃষক বিমল প্রামাণিক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন। সে জন্য আগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার জানান, বীজ ফেলার আট দিন পর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ২২ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলবেন। এতে বীজতলায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং রোপণের জন্য ভালো চারা পাওয়া যায়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহার করায় কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বাড়তি খরচও কমে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। এতে বীজ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় হলদে ও লাল হয়ে পচে যায়। পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং চারাগাছ নষ্ট হয় না। এতে কৃষকেরা উপকৃত হন। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন ব্যবহারের জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উলিপুরে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর চাপ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় ও কনকনে ঠান্ডায় এসব রোগের প্রকোপ আরও বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে গত সাত দিনে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ রোগী সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিছুটা সুস্থ হলেই তাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা বজরা ইউনিয়নের আমিনপাড়া এলাকার ইউনুস আলীর (৭০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তীব্র শীতের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আঞ্জু আরা বেগম বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ ধামশ্রেণী ইউনিয়নের খলিলুর রহমান (৬৯) জানান, তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুনাইগাছ ইউনিয়ন থেকে ভর্তি হওয়া ১৭ মাস বয়সী শিশু তাসিনের মা নুরে জান্নাত বলেন, তিন দিন ধরে তাঁর সন্তানের বমি ও ডায়রিয়া হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সাত মাস বয়সী শিশু সাব্বিরকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা সুমাইয়া বেগম বলেন, ঠান্ডার কারণে ছয় দিন ধরে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীই বেশি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত