মোস্তফা অভি

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে ফিরল না। তার তিন ছেলে ধরাধরি করে রাতের মধ্যেই সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে স্ত্রী আর ছেলেরা কত রকমের আশঙ্কার কথা বলল, ছোবাহান উঁহু পর্যন্ত করল না। সে চোখ খুলল পরদিন দুপুরের দিকে। ছোবাহান প্রথম চাহনিতে স্ত্রীর মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল, যেন মৃত মানুষের মতো পলকহীন চোখ দুটো তার। কেমন অদ্ভুত, অবাধ্য রকমের ঘুমে তার চোখ দুটো আচ্ছন্ন হয়ে যায়! সমস্ত পৃথিবী গোল্লায় যাক, ছোবাহান গভীর ঘুমে ঢলে পড়ুক। পৃথিবীতে ঘুমের চেয়ে শান্তি আর কী আছে!
পরদিন সকালে রাউন্ডে এসে ডাক্তার জানাল, ব্রেন স্ট্রোক। ছোবাহান আবার চোখ খুলল পরদিন রাতে।
মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেলে যেভাবে ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, ছোবাহান হঠাৎ চোখ মেলে সেভাবেই বিছানার ওপর বসল। জলের ভেতর মাছ খোঁজার মতো তার হাত দুটো সামনের দিকে হাতড়ে বেড়ায়। এতক্ষণ মা আর ছেলেদের মাঝে যে স্তব্ধতা নেমেছিল, ছোবাহানের এক চিৎকারে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ছোবাহান ডান হাতে স্ত্রীর কাঁধটা খুঁজে পেয়ে বলল, চোহে তো কিচ্ছু দেহি না মুই।
ভালো চোখ দুটো আলো হারানোর পর চোখের ভেতর মণি দুটো এমনভাবে ঘুরতে থাকে, ছেলেদের মনে হয়, বাবাকে এইমাত্র নতুন করে দেখতে শুরু করেছে ওরা। এক মুহূর্তের মধ্যে বহু বছরের চেনা মানুষটি ওদের কাছে হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায়। ছোবাহানের জীবনে এই সময়ে এটাই অদৃষ্ট।
তিন-চার দিন এভাবেই কেটে যায়। বাড়ি থেকে ছেলেরা যে টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল, ওষুধপত্তর কিনে অনেকটাই ফুরিয়ে যায়। রাতে ডাক্তার রাউন্ডে এসে জানাল, উন্নত চিকিৎসায় ছোবাহান চোখের আলো আবার ফিরে পেলেও পেতে পারে; তবে সত্যিই যে পাবে, এমন ভরসা দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব নয়। ডাক্তার ছোবাহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে ছোবাহানের ছুটি হয়। বাড়ি থেকে আনা বিছানাপত্র গোল করে বেঁধে সবাই মিলে ভ্যানগাড়িতে চড়ে বাড়ির পথে রওনা হয়। ১০-১৫ মাইল পথের ব্যবধানে ছোবাহান কারও সঙ্গে একটা কথাও বলল না। শুধু মনে মনে সে ভাবে, চোখ দুটো হঠাৎ করে কেড়ে নিল খোদাতাল্লায়! যেমন সুস্থ, স্বাভাবিক চোখ নিয়ে সে হাসপাতালে এসেছিল, সেভাবেই আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, পার্থক্য শুধু একটা কালো চশমা। এভাবেই শুরু হলো তার অন্ধত্ব যাত্রার ভূমিকা।
সারাটা পথ সে কত রকমের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হলো, দোকানটার কী হবে ভবিষ্যৎ? বড় ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে দুই বছর অনার্সে ক্লাস করেছে। এখন আর পড়াশোনার উপায় নেই। মেজ ছেলেটা অস্থির প্রকৃতির। গ্রামের ভালোমন্দ সব রকমের ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা তার। আয়রোজগার যদিও করে কিন্তু প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে অনর্থক বিবাদে জড়ায়। ছোট ছেলেটা কীভাবে বড় করবে, সেসবের ভরসা নেই। যখন তাকে নিয়ে ভ্যানগাড়িটা গ্রামের পিচঢালা সরু পথ ধরে বাড়ির কাছাকাছি চলে যাবে, তখন রাস্তার দুই ধারের লোকেরা হাতের কাজ ফেলে তার ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়াবে। চশমার আড়ালে ঢেকে রাখা চোখ দুটো দেখার কত কৌতূহল হবে তাদের! কেউ কেউ তার পিঠের ওপর হাত রেখে বলবে, আফসোস কইর না ভাই, মোরা তো কেউ মরি নাই। বাড়ি যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াবে। ছেলেদের আড়ালে ডেকে নিয়ে চুপি চুপি জানতে চাইবে, একেবারেই কি নিভে গেছে চোখের আলো? মেয়েলোকেরা ফিসফিস করে কত রকমের কথা বলবে, সেসবের হিসাব নেই। যাদের সঙ্গে ছোট থেকে মাঠঘাটে কাজ করে বড় হয়েছে সে, বরিশাল রূপাতলী জাগুয়ার গ্রামে মাসের পর মাস ধানখেতে বদলা দিয়েছে একসঙ্গে, পেছনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে তারাও হয়তো হায়বাত করবে। তার সমবয়সী বন্ধুরা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে যখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে, তখন কেমন লাগবে তার! এসব ভেবে ছোবাহানের অন্ধ চোখে জল এসে যায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কল্পনার সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে গেল তার। দুপুরের পর দু-তিনজন এসে ছোবাহানের বিছানার পাশে বসে ছেলেদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনল। তারা ছোবাহানের পিঠের ওপর কর্তব্যের স্পর্শ দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়। বিকেলের দিকে আর কেউ এল না।
সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকেরা মাঠঘাটের কাজ সেরে একটু অবসর আর বিনোদনের জন্য রাস্তার ধারে চা খেতে যায়। এত দিন তার নিজের দোকানে চা খেতে খেতে কত রকমের গল্প-আড্ডায় জমিয়ে রাখত তারা, কয়েক দিন বন্ধ থাকায় দোকানের সেই সরগরম ভাবটা আগুনে পানি ঢালার মতো নিষ্প্রভ। দোকানের বারান্দায় কয়েকটা কুকুর লেজ গুটিয়ে ঘুমিয়ে থাকে, সেসব তার স্ত্রীর কাছে শুনেছে। দোকানের সেই কাস্টমারগুলো পোয়া মাইল হেঁটে রাস্তার মাথার দোকানে টিভি দেখতে যায়। ঘরের পাশ দিয়ে টিভি দেখতে যাওয়া লোকেদের দৈনন্দিন গালগল্প তার কানে এসে ছুরির ফলার মতো বিঁধে যেতে থাকে। কেউ একবার তার কথা স্মরণ করে ঘরের দরজায় উঁকি পর্যন্ত দিল না।
মানুষ কীভাবে এ রকম পর হয়ে যায়!
কয়েক দিনের ব্যবধানে তার জীবনটা একেবারে ‘নাই’ হয়ে প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকেছে। মেজ ছেলেটা দোকান খুলে তিন-চার দিন চায়ের চুলায় আগুন ধরিয়ে পথের দিকে চেয়ে রইল। কত পরিচিত লোকজন দোকানের সামনে দিয়ে চলে যায়, একবারের জন্যও টুলের ওপর বসে জিরানোর চিন্তা করল না তারা। যে কুকুরগুলো কয়েক দিনের কোলাহলহীন দোকানের বারান্দায় থাকার জায়গা করে নিয়েছিল, ওগুলো দোকান খোলার পরও নড়ল না মোটে। খরিদ্দারের অভাবে দোকানটা একেবারে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ছোবাহান স্ত্রীকে ডেকে বলল, মাহাজনের ধারে মাল কেনার টাহা বাহি রইয়া গ্যাছে, দোহানে যেয়া আছে বেইচ্যা কিইন্যা দেনাদারি শোধ কইর্যা দেও।
মহাজন খবরটা পেয়েছে সত্যি, যাই-যাব করে আর আসা হয়নি তার। একদিন দুপুরে লোকটি এসে কয়েকটা সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে যাওয়ার সময় ছোবাহানের হাত ধরে চুপি চুপি বলল, মোর টাহা কয়ডা যে দরকার। বোঝোই তো, সামান্য চালান। অনেক দিন তো হইয়া গেল।
এক দিনের নোটিশে ছোবাহানের দোকানটা খালি হয়ে যায়।
মেজ ছেলে এখানে-সেখানে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দেয়। মাস দুয়েক যাওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় সে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল।
গ্রামের লোকেরা ছোবাহানের চোখ হারানোয় নিরুত্তাপ থাকলেও দুর্দিনে বড় ভাইকে রেখে মেজ ভাই বিয়ে করে এনেছে, এসব নিন্দাচর্চা প্রতিভার সঙ্গেই তারা করল। অন্ধ মানুষটি আর কী বলবে, ছেলের হাতের কামাই খেয়ে তাকে বলার মতো কোনো ভাষাই যে নেই তার। মাঝরাতে পাশের ঘর থেকে যখন নতুন বউয়ের হাস্যধ্বনি শোনা যায়, তখন ছোবাহানের মনে হয়, অন্ধ জীবনের এমন পীড়া অত্যন্ত ব্যথার। যদি সে সুযোগ পেত, তবে আত্মহত্যা করে হয়তো চিরদিনের জন্য বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু চোখে না দেখলে মৃত্যুর আয়োজন করার যেসব রসদ জোগাড় করা প্রয়োজন, তার পক্ষে সেসব করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বড় ছেলে রাগ করে আর বাড়ি ফিরল না। স্ত্রীর ব্যবহারও আগের মতো নেই। ছোবাহান চোখে না দেখুক, কান দিয়ে যা কিছু শোনে, তাতে অনুভব করতে পারে, কয়েক দিনের মধ্যে সে সংসারে কেমন বোঝা হয়ে উঠেছে। সবকিছুর ওপর যেন মিথ্যার পরত পড়া, কোথাও মায়া-মমতার ছায়াটুকুও নেই। জীবনের এমন এক নির্মম পরিহাস।
মেজ ছেলের কামাই কমে আসায় টাকাপয়সার টান পড়লে ছোবাহানের স্ত্রী বলল, ঘরে তো খাওয়ার মতো কিছুই নেই। ছোবাহান অন্ধ চোখের দুই ফোঁটা জল ফেলে বলল, আর কইও না কিছু মোরে, কাইল বেইল ওডার আগেই যেন মোর মরণ অয়!

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে ফিরল না। তার তিন ছেলে ধরাধরি করে রাতের মধ্যেই সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে স্ত্রী আর ছেলেরা কত রকমের আশঙ্কার কথা বলল, ছোবাহান উঁহু পর্যন্ত করল না। সে চোখ খুলল পরদিন দুপুরের দিকে। ছোবাহান প্রথম চাহনিতে স্ত্রীর মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল, যেন মৃত মানুষের মতো পলকহীন চোখ দুটো তার। কেমন অদ্ভুত, অবাধ্য রকমের ঘুমে তার চোখ দুটো আচ্ছন্ন হয়ে যায়! সমস্ত পৃথিবী গোল্লায় যাক, ছোবাহান গভীর ঘুমে ঢলে পড়ুক। পৃথিবীতে ঘুমের চেয়ে শান্তি আর কী আছে!
পরদিন সকালে রাউন্ডে এসে ডাক্তার জানাল, ব্রেন স্ট্রোক। ছোবাহান আবার চোখ খুলল পরদিন রাতে।
মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেলে যেভাবে ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, ছোবাহান হঠাৎ চোখ মেলে সেভাবেই বিছানার ওপর বসল। জলের ভেতর মাছ খোঁজার মতো তার হাত দুটো সামনের দিকে হাতড়ে বেড়ায়। এতক্ষণ মা আর ছেলেদের মাঝে যে স্তব্ধতা নেমেছিল, ছোবাহানের এক চিৎকারে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ছোবাহান ডান হাতে স্ত্রীর কাঁধটা খুঁজে পেয়ে বলল, চোহে তো কিচ্ছু দেহি না মুই।
ভালো চোখ দুটো আলো হারানোর পর চোখের ভেতর মণি দুটো এমনভাবে ঘুরতে থাকে, ছেলেদের মনে হয়, বাবাকে এইমাত্র নতুন করে দেখতে শুরু করেছে ওরা। এক মুহূর্তের মধ্যে বহু বছরের চেনা মানুষটি ওদের কাছে হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায়। ছোবাহানের জীবনে এই সময়ে এটাই অদৃষ্ট।
তিন-চার দিন এভাবেই কেটে যায়। বাড়ি থেকে ছেলেরা যে টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল, ওষুধপত্তর কিনে অনেকটাই ফুরিয়ে যায়। রাতে ডাক্তার রাউন্ডে এসে জানাল, উন্নত চিকিৎসায় ছোবাহান চোখের আলো আবার ফিরে পেলেও পেতে পারে; তবে সত্যিই যে পাবে, এমন ভরসা দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব নয়। ডাক্তার ছোবাহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে ছোবাহানের ছুটি হয়। বাড়ি থেকে আনা বিছানাপত্র গোল করে বেঁধে সবাই মিলে ভ্যানগাড়িতে চড়ে বাড়ির পথে রওনা হয়। ১০-১৫ মাইল পথের ব্যবধানে ছোবাহান কারও সঙ্গে একটা কথাও বলল না। শুধু মনে মনে সে ভাবে, চোখ দুটো হঠাৎ করে কেড়ে নিল খোদাতাল্লায়! যেমন সুস্থ, স্বাভাবিক চোখ নিয়ে সে হাসপাতালে এসেছিল, সেভাবেই আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, পার্থক্য শুধু একটা কালো চশমা। এভাবেই শুরু হলো তার অন্ধত্ব যাত্রার ভূমিকা।
সারাটা পথ সে কত রকমের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হলো, দোকানটার কী হবে ভবিষ্যৎ? বড় ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে দুই বছর অনার্সে ক্লাস করেছে। এখন আর পড়াশোনার উপায় নেই। মেজ ছেলেটা অস্থির প্রকৃতির। গ্রামের ভালোমন্দ সব রকমের ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা তার। আয়রোজগার যদিও করে কিন্তু প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে অনর্থক বিবাদে জড়ায়। ছোট ছেলেটা কীভাবে বড় করবে, সেসবের ভরসা নেই। যখন তাকে নিয়ে ভ্যানগাড়িটা গ্রামের পিচঢালা সরু পথ ধরে বাড়ির কাছাকাছি চলে যাবে, তখন রাস্তার দুই ধারের লোকেরা হাতের কাজ ফেলে তার ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়াবে। চশমার আড়ালে ঢেকে রাখা চোখ দুটো দেখার কত কৌতূহল হবে তাদের! কেউ কেউ তার পিঠের ওপর হাত রেখে বলবে, আফসোস কইর না ভাই, মোরা তো কেউ মরি নাই। বাড়ি যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াবে। ছেলেদের আড়ালে ডেকে নিয়ে চুপি চুপি জানতে চাইবে, একেবারেই কি নিভে গেছে চোখের আলো? মেয়েলোকেরা ফিসফিস করে কত রকমের কথা বলবে, সেসবের হিসাব নেই। যাদের সঙ্গে ছোট থেকে মাঠঘাটে কাজ করে বড় হয়েছে সে, বরিশাল রূপাতলী জাগুয়ার গ্রামে মাসের পর মাস ধানখেতে বদলা দিয়েছে একসঙ্গে, পেছনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে তারাও হয়তো হায়বাত করবে। তার সমবয়সী বন্ধুরা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে যখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে, তখন কেমন লাগবে তার! এসব ভেবে ছোবাহানের অন্ধ চোখে জল এসে যায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কল্পনার সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে গেল তার। দুপুরের পর দু-তিনজন এসে ছোবাহানের বিছানার পাশে বসে ছেলেদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনল। তারা ছোবাহানের পিঠের ওপর কর্তব্যের স্পর্শ দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়। বিকেলের দিকে আর কেউ এল না।
সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকেরা মাঠঘাটের কাজ সেরে একটু অবসর আর বিনোদনের জন্য রাস্তার ধারে চা খেতে যায়। এত দিন তার নিজের দোকানে চা খেতে খেতে কত রকমের গল্প-আড্ডায় জমিয়ে রাখত তারা, কয়েক দিন বন্ধ থাকায় দোকানের সেই সরগরম ভাবটা আগুনে পানি ঢালার মতো নিষ্প্রভ। দোকানের বারান্দায় কয়েকটা কুকুর লেজ গুটিয়ে ঘুমিয়ে থাকে, সেসব তার স্ত্রীর কাছে শুনেছে। দোকানের সেই কাস্টমারগুলো পোয়া মাইল হেঁটে রাস্তার মাথার দোকানে টিভি দেখতে যায়। ঘরের পাশ দিয়ে টিভি দেখতে যাওয়া লোকেদের দৈনন্দিন গালগল্প তার কানে এসে ছুরির ফলার মতো বিঁধে যেতে থাকে। কেউ একবার তার কথা স্মরণ করে ঘরের দরজায় উঁকি পর্যন্ত দিল না।
মানুষ কীভাবে এ রকম পর হয়ে যায়!
কয়েক দিনের ব্যবধানে তার জীবনটা একেবারে ‘নাই’ হয়ে প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকেছে। মেজ ছেলেটা দোকান খুলে তিন-চার দিন চায়ের চুলায় আগুন ধরিয়ে পথের দিকে চেয়ে রইল। কত পরিচিত লোকজন দোকানের সামনে দিয়ে চলে যায়, একবারের জন্যও টুলের ওপর বসে জিরানোর চিন্তা করল না তারা। যে কুকুরগুলো কয়েক দিনের কোলাহলহীন দোকানের বারান্দায় থাকার জায়গা করে নিয়েছিল, ওগুলো দোকান খোলার পরও নড়ল না মোটে। খরিদ্দারের অভাবে দোকানটা একেবারে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ছোবাহান স্ত্রীকে ডেকে বলল, মাহাজনের ধারে মাল কেনার টাহা বাহি রইয়া গ্যাছে, দোহানে যেয়া আছে বেইচ্যা কিইন্যা দেনাদারি শোধ কইর্যা দেও।
মহাজন খবরটা পেয়েছে সত্যি, যাই-যাব করে আর আসা হয়নি তার। একদিন দুপুরে লোকটি এসে কয়েকটা সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে যাওয়ার সময় ছোবাহানের হাত ধরে চুপি চুপি বলল, মোর টাহা কয়ডা যে দরকার। বোঝোই তো, সামান্য চালান। অনেক দিন তো হইয়া গেল।
এক দিনের নোটিশে ছোবাহানের দোকানটা খালি হয়ে যায়।
মেজ ছেলে এখানে-সেখানে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দেয়। মাস দুয়েক যাওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় সে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল।
গ্রামের লোকেরা ছোবাহানের চোখ হারানোয় নিরুত্তাপ থাকলেও দুর্দিনে বড় ভাইকে রেখে মেজ ভাই বিয়ে করে এনেছে, এসব নিন্দাচর্চা প্রতিভার সঙ্গেই তারা করল। অন্ধ মানুষটি আর কী বলবে, ছেলের হাতের কামাই খেয়ে তাকে বলার মতো কোনো ভাষাই যে নেই তার। মাঝরাতে পাশের ঘর থেকে যখন নতুন বউয়ের হাস্যধ্বনি শোনা যায়, তখন ছোবাহানের মনে হয়, অন্ধ জীবনের এমন পীড়া অত্যন্ত ব্যথার। যদি সে সুযোগ পেত, তবে আত্মহত্যা করে হয়তো চিরদিনের জন্য বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু চোখে না দেখলে মৃত্যুর আয়োজন করার যেসব রসদ জোগাড় করা প্রয়োজন, তার পক্ষে সেসব করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বড় ছেলে রাগ করে আর বাড়ি ফিরল না। স্ত্রীর ব্যবহারও আগের মতো নেই। ছোবাহান চোখে না দেখুক, কান দিয়ে যা কিছু শোনে, তাতে অনুভব করতে পারে, কয়েক দিনের মধ্যে সে সংসারে কেমন বোঝা হয়ে উঠেছে। সবকিছুর ওপর যেন মিথ্যার পরত পড়া, কোথাও মায়া-মমতার ছায়াটুকুও নেই। জীবনের এমন এক নির্মম পরিহাস।
মেজ ছেলের কামাই কমে আসায় টাকাপয়সার টান পড়লে ছোবাহানের স্ত্রী বলল, ঘরে তো খাওয়ার মতো কিছুই নেই। ছোবাহান অন্ধ চোখের দুই ফোঁটা জল ফেলে বলল, আর কইও না কিছু মোরে, কাইল বেইল ওডার আগেই যেন মোর মরণ অয়!
মোস্তফা অভি

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে ফিরল না। তার তিন ছেলে ধরাধরি করে রাতের মধ্যেই সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে স্ত্রী আর ছেলেরা কত রকমের আশঙ্কার কথা বলল, ছোবাহান উঁহু পর্যন্ত করল না। সে চোখ খুলল পরদিন দুপুরের দিকে। ছোবাহান প্রথম চাহনিতে স্ত্রীর মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল, যেন মৃত মানুষের মতো পলকহীন চোখ দুটো তার। কেমন অদ্ভুত, অবাধ্য রকমের ঘুমে তার চোখ দুটো আচ্ছন্ন হয়ে যায়! সমস্ত পৃথিবী গোল্লায় যাক, ছোবাহান গভীর ঘুমে ঢলে পড়ুক। পৃথিবীতে ঘুমের চেয়ে শান্তি আর কী আছে!
পরদিন সকালে রাউন্ডে এসে ডাক্তার জানাল, ব্রেন স্ট্রোক। ছোবাহান আবার চোখ খুলল পরদিন রাতে।
মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেলে যেভাবে ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, ছোবাহান হঠাৎ চোখ মেলে সেভাবেই বিছানার ওপর বসল। জলের ভেতর মাছ খোঁজার মতো তার হাত দুটো সামনের দিকে হাতড়ে বেড়ায়। এতক্ষণ মা আর ছেলেদের মাঝে যে স্তব্ধতা নেমেছিল, ছোবাহানের এক চিৎকারে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ছোবাহান ডান হাতে স্ত্রীর কাঁধটা খুঁজে পেয়ে বলল, চোহে তো কিচ্ছু দেহি না মুই।
ভালো চোখ দুটো আলো হারানোর পর চোখের ভেতর মণি দুটো এমনভাবে ঘুরতে থাকে, ছেলেদের মনে হয়, বাবাকে এইমাত্র নতুন করে দেখতে শুরু করেছে ওরা। এক মুহূর্তের মধ্যে বহু বছরের চেনা মানুষটি ওদের কাছে হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায়। ছোবাহানের জীবনে এই সময়ে এটাই অদৃষ্ট।
তিন-চার দিন এভাবেই কেটে যায়। বাড়ি থেকে ছেলেরা যে টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল, ওষুধপত্তর কিনে অনেকটাই ফুরিয়ে যায়। রাতে ডাক্তার রাউন্ডে এসে জানাল, উন্নত চিকিৎসায় ছোবাহান চোখের আলো আবার ফিরে পেলেও পেতে পারে; তবে সত্যিই যে পাবে, এমন ভরসা দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব নয়। ডাক্তার ছোবাহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে ছোবাহানের ছুটি হয়। বাড়ি থেকে আনা বিছানাপত্র গোল করে বেঁধে সবাই মিলে ভ্যানগাড়িতে চড়ে বাড়ির পথে রওনা হয়। ১০-১৫ মাইল পথের ব্যবধানে ছোবাহান কারও সঙ্গে একটা কথাও বলল না। শুধু মনে মনে সে ভাবে, চোখ দুটো হঠাৎ করে কেড়ে নিল খোদাতাল্লায়! যেমন সুস্থ, স্বাভাবিক চোখ নিয়ে সে হাসপাতালে এসেছিল, সেভাবেই আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, পার্থক্য শুধু একটা কালো চশমা। এভাবেই শুরু হলো তার অন্ধত্ব যাত্রার ভূমিকা।
সারাটা পথ সে কত রকমের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হলো, দোকানটার কী হবে ভবিষ্যৎ? বড় ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে দুই বছর অনার্সে ক্লাস করেছে। এখন আর পড়াশোনার উপায় নেই। মেজ ছেলেটা অস্থির প্রকৃতির। গ্রামের ভালোমন্দ সব রকমের ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা তার। আয়রোজগার যদিও করে কিন্তু প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে অনর্থক বিবাদে জড়ায়। ছোট ছেলেটা কীভাবে বড় করবে, সেসবের ভরসা নেই। যখন তাকে নিয়ে ভ্যানগাড়িটা গ্রামের পিচঢালা সরু পথ ধরে বাড়ির কাছাকাছি চলে যাবে, তখন রাস্তার দুই ধারের লোকেরা হাতের কাজ ফেলে তার ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়াবে। চশমার আড়ালে ঢেকে রাখা চোখ দুটো দেখার কত কৌতূহল হবে তাদের! কেউ কেউ তার পিঠের ওপর হাত রেখে বলবে, আফসোস কইর না ভাই, মোরা তো কেউ মরি নাই। বাড়ি যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াবে। ছেলেদের আড়ালে ডেকে নিয়ে চুপি চুপি জানতে চাইবে, একেবারেই কি নিভে গেছে চোখের আলো? মেয়েলোকেরা ফিসফিস করে কত রকমের কথা বলবে, সেসবের হিসাব নেই। যাদের সঙ্গে ছোট থেকে মাঠঘাটে কাজ করে বড় হয়েছে সে, বরিশাল রূপাতলী জাগুয়ার গ্রামে মাসের পর মাস ধানখেতে বদলা দিয়েছে একসঙ্গে, পেছনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে তারাও হয়তো হায়বাত করবে। তার সমবয়সী বন্ধুরা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে যখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে, তখন কেমন লাগবে তার! এসব ভেবে ছোবাহানের অন্ধ চোখে জল এসে যায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কল্পনার সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে গেল তার। দুপুরের পর দু-তিনজন এসে ছোবাহানের বিছানার পাশে বসে ছেলেদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনল। তারা ছোবাহানের পিঠের ওপর কর্তব্যের স্পর্শ দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়। বিকেলের দিকে আর কেউ এল না।
সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকেরা মাঠঘাটের কাজ সেরে একটু অবসর আর বিনোদনের জন্য রাস্তার ধারে চা খেতে যায়। এত দিন তার নিজের দোকানে চা খেতে খেতে কত রকমের গল্প-আড্ডায় জমিয়ে রাখত তারা, কয়েক দিন বন্ধ থাকায় দোকানের সেই সরগরম ভাবটা আগুনে পানি ঢালার মতো নিষ্প্রভ। দোকানের বারান্দায় কয়েকটা কুকুর লেজ গুটিয়ে ঘুমিয়ে থাকে, সেসব তার স্ত্রীর কাছে শুনেছে। দোকানের সেই কাস্টমারগুলো পোয়া মাইল হেঁটে রাস্তার মাথার দোকানে টিভি দেখতে যায়। ঘরের পাশ দিয়ে টিভি দেখতে যাওয়া লোকেদের দৈনন্দিন গালগল্প তার কানে এসে ছুরির ফলার মতো বিঁধে যেতে থাকে। কেউ একবার তার কথা স্মরণ করে ঘরের দরজায় উঁকি পর্যন্ত দিল না।
মানুষ কীভাবে এ রকম পর হয়ে যায়!
কয়েক দিনের ব্যবধানে তার জীবনটা একেবারে ‘নাই’ হয়ে প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকেছে। মেজ ছেলেটা দোকান খুলে তিন-চার দিন চায়ের চুলায় আগুন ধরিয়ে পথের দিকে চেয়ে রইল। কত পরিচিত লোকজন দোকানের সামনে দিয়ে চলে যায়, একবারের জন্যও টুলের ওপর বসে জিরানোর চিন্তা করল না তারা। যে কুকুরগুলো কয়েক দিনের কোলাহলহীন দোকানের বারান্দায় থাকার জায়গা করে নিয়েছিল, ওগুলো দোকান খোলার পরও নড়ল না মোটে। খরিদ্দারের অভাবে দোকানটা একেবারে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ছোবাহান স্ত্রীকে ডেকে বলল, মাহাজনের ধারে মাল কেনার টাহা বাহি রইয়া গ্যাছে, দোহানে যেয়া আছে বেইচ্যা কিইন্যা দেনাদারি শোধ কইর্যা দেও।
মহাজন খবরটা পেয়েছে সত্যি, যাই-যাব করে আর আসা হয়নি তার। একদিন দুপুরে লোকটি এসে কয়েকটা সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে যাওয়ার সময় ছোবাহানের হাত ধরে চুপি চুপি বলল, মোর টাহা কয়ডা যে দরকার। বোঝোই তো, সামান্য চালান। অনেক দিন তো হইয়া গেল।
এক দিনের নোটিশে ছোবাহানের দোকানটা খালি হয়ে যায়।
মেজ ছেলে এখানে-সেখানে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দেয়। মাস দুয়েক যাওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় সে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল।
গ্রামের লোকেরা ছোবাহানের চোখ হারানোয় নিরুত্তাপ থাকলেও দুর্দিনে বড় ভাইকে রেখে মেজ ভাই বিয়ে করে এনেছে, এসব নিন্দাচর্চা প্রতিভার সঙ্গেই তারা করল। অন্ধ মানুষটি আর কী বলবে, ছেলের হাতের কামাই খেয়ে তাকে বলার মতো কোনো ভাষাই যে নেই তার। মাঝরাতে পাশের ঘর থেকে যখন নতুন বউয়ের হাস্যধ্বনি শোনা যায়, তখন ছোবাহানের মনে হয়, অন্ধ জীবনের এমন পীড়া অত্যন্ত ব্যথার। যদি সে সুযোগ পেত, তবে আত্মহত্যা করে হয়তো চিরদিনের জন্য বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু চোখে না দেখলে মৃত্যুর আয়োজন করার যেসব রসদ জোগাড় করা প্রয়োজন, তার পক্ষে সেসব করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বড় ছেলে রাগ করে আর বাড়ি ফিরল না। স্ত্রীর ব্যবহারও আগের মতো নেই। ছোবাহান চোখে না দেখুক, কান দিয়ে যা কিছু শোনে, তাতে অনুভব করতে পারে, কয়েক দিনের মধ্যে সে সংসারে কেমন বোঝা হয়ে উঠেছে। সবকিছুর ওপর যেন মিথ্যার পরত পড়া, কোথাও মায়া-মমতার ছায়াটুকুও নেই। জীবনের এমন এক নির্মম পরিহাস।
মেজ ছেলের কামাই কমে আসায় টাকাপয়সার টান পড়লে ছোবাহানের স্ত্রী বলল, ঘরে তো খাওয়ার মতো কিছুই নেই। ছোবাহান অন্ধ চোখের দুই ফোঁটা জল ফেলে বলল, আর কইও না কিছু মোরে, কাইল বেইল ওডার আগেই যেন মোর মরণ অয়!

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে ফিরল না। তার তিন ছেলে ধরাধরি করে রাতের মধ্যেই সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে স্ত্রী আর ছেলেরা কত রকমের আশঙ্কার কথা বলল, ছোবাহান উঁহু পর্যন্ত করল না। সে চোখ খুলল পরদিন দুপুরের দিকে। ছোবাহান প্রথম চাহনিতে স্ত্রীর মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল, যেন মৃত মানুষের মতো পলকহীন চোখ দুটো তার। কেমন অদ্ভুত, অবাধ্য রকমের ঘুমে তার চোখ দুটো আচ্ছন্ন হয়ে যায়! সমস্ত পৃথিবী গোল্লায় যাক, ছোবাহান গভীর ঘুমে ঢলে পড়ুক। পৃথিবীতে ঘুমের চেয়ে শান্তি আর কী আছে!
পরদিন সকালে রাউন্ডে এসে ডাক্তার জানাল, ব্রেন স্ট্রোক। ছোবাহান আবার চোখ খুলল পরদিন রাতে।
মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেলে যেভাবে ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, ছোবাহান হঠাৎ চোখ মেলে সেভাবেই বিছানার ওপর বসল। জলের ভেতর মাছ খোঁজার মতো তার হাত দুটো সামনের দিকে হাতড়ে বেড়ায়। এতক্ষণ মা আর ছেলেদের মাঝে যে স্তব্ধতা নেমেছিল, ছোবাহানের এক চিৎকারে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ছোবাহান ডান হাতে স্ত্রীর কাঁধটা খুঁজে পেয়ে বলল, চোহে তো কিচ্ছু দেহি না মুই।
ভালো চোখ দুটো আলো হারানোর পর চোখের ভেতর মণি দুটো এমনভাবে ঘুরতে থাকে, ছেলেদের মনে হয়, বাবাকে এইমাত্র নতুন করে দেখতে শুরু করেছে ওরা। এক মুহূর্তের মধ্যে বহু বছরের চেনা মানুষটি ওদের কাছে হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায়। ছোবাহানের জীবনে এই সময়ে এটাই অদৃষ্ট।
তিন-চার দিন এভাবেই কেটে যায়। বাড়ি থেকে ছেলেরা যে টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল, ওষুধপত্তর কিনে অনেকটাই ফুরিয়ে যায়। রাতে ডাক্তার রাউন্ডে এসে জানাল, উন্নত চিকিৎসায় ছোবাহান চোখের আলো আবার ফিরে পেলেও পেতে পারে; তবে সত্যিই যে পাবে, এমন ভরসা দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব নয়। ডাক্তার ছোবাহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে ছোবাহানের ছুটি হয়। বাড়ি থেকে আনা বিছানাপত্র গোল করে বেঁধে সবাই মিলে ভ্যানগাড়িতে চড়ে বাড়ির পথে রওনা হয়। ১০-১৫ মাইল পথের ব্যবধানে ছোবাহান কারও সঙ্গে একটা কথাও বলল না। শুধু মনে মনে সে ভাবে, চোখ দুটো হঠাৎ করে কেড়ে নিল খোদাতাল্লায়! যেমন সুস্থ, স্বাভাবিক চোখ নিয়ে সে হাসপাতালে এসেছিল, সেভাবেই আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, পার্থক্য শুধু একটা কালো চশমা। এভাবেই শুরু হলো তার অন্ধত্ব যাত্রার ভূমিকা।
সারাটা পথ সে কত রকমের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হলো, দোকানটার কী হবে ভবিষ্যৎ? বড় ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে দুই বছর অনার্সে ক্লাস করেছে। এখন আর পড়াশোনার উপায় নেই। মেজ ছেলেটা অস্থির প্রকৃতির। গ্রামের ভালোমন্দ সব রকমের ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা তার। আয়রোজগার যদিও করে কিন্তু প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে অনর্থক বিবাদে জড়ায়। ছোট ছেলেটা কীভাবে বড় করবে, সেসবের ভরসা নেই। যখন তাকে নিয়ে ভ্যানগাড়িটা গ্রামের পিচঢালা সরু পথ ধরে বাড়ির কাছাকাছি চলে যাবে, তখন রাস্তার দুই ধারের লোকেরা হাতের কাজ ফেলে তার ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়াবে। চশমার আড়ালে ঢেকে রাখা চোখ দুটো দেখার কত কৌতূহল হবে তাদের! কেউ কেউ তার পিঠের ওপর হাত রেখে বলবে, আফসোস কইর না ভাই, মোরা তো কেউ মরি নাই। বাড়ি যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াবে। ছেলেদের আড়ালে ডেকে নিয়ে চুপি চুপি জানতে চাইবে, একেবারেই কি নিভে গেছে চোখের আলো? মেয়েলোকেরা ফিসফিস করে কত রকমের কথা বলবে, সেসবের হিসাব নেই। যাদের সঙ্গে ছোট থেকে মাঠঘাটে কাজ করে বড় হয়েছে সে, বরিশাল রূপাতলী জাগুয়ার গ্রামে মাসের পর মাস ধানখেতে বদলা দিয়েছে একসঙ্গে, পেছনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে তারাও হয়তো হায়বাত করবে। তার সমবয়সী বন্ধুরা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে যখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে, তখন কেমন লাগবে তার! এসব ভেবে ছোবাহানের অন্ধ চোখে জল এসে যায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কল্পনার সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে গেল তার। দুপুরের পর দু-তিনজন এসে ছোবাহানের বিছানার পাশে বসে ছেলেদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনল। তারা ছোবাহানের পিঠের ওপর কর্তব্যের স্পর্শ দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়। বিকেলের দিকে আর কেউ এল না।
সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকেরা মাঠঘাটের কাজ সেরে একটু অবসর আর বিনোদনের জন্য রাস্তার ধারে চা খেতে যায়। এত দিন তার নিজের দোকানে চা খেতে খেতে কত রকমের গল্প-আড্ডায় জমিয়ে রাখত তারা, কয়েক দিন বন্ধ থাকায় দোকানের সেই সরগরম ভাবটা আগুনে পানি ঢালার মতো নিষ্প্রভ। দোকানের বারান্দায় কয়েকটা কুকুর লেজ গুটিয়ে ঘুমিয়ে থাকে, সেসব তার স্ত্রীর কাছে শুনেছে। দোকানের সেই কাস্টমারগুলো পোয়া মাইল হেঁটে রাস্তার মাথার দোকানে টিভি দেখতে যায়। ঘরের পাশ দিয়ে টিভি দেখতে যাওয়া লোকেদের দৈনন্দিন গালগল্প তার কানে এসে ছুরির ফলার মতো বিঁধে যেতে থাকে। কেউ একবার তার কথা স্মরণ করে ঘরের দরজায় উঁকি পর্যন্ত দিল না।
মানুষ কীভাবে এ রকম পর হয়ে যায়!
কয়েক দিনের ব্যবধানে তার জীবনটা একেবারে ‘নাই’ হয়ে প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকেছে। মেজ ছেলেটা দোকান খুলে তিন-চার দিন চায়ের চুলায় আগুন ধরিয়ে পথের দিকে চেয়ে রইল। কত পরিচিত লোকজন দোকানের সামনে দিয়ে চলে যায়, একবারের জন্যও টুলের ওপর বসে জিরানোর চিন্তা করল না তারা। যে কুকুরগুলো কয়েক দিনের কোলাহলহীন দোকানের বারান্দায় থাকার জায়গা করে নিয়েছিল, ওগুলো দোকান খোলার পরও নড়ল না মোটে। খরিদ্দারের অভাবে দোকানটা একেবারে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ছোবাহান স্ত্রীকে ডেকে বলল, মাহাজনের ধারে মাল কেনার টাহা বাহি রইয়া গ্যাছে, দোহানে যেয়া আছে বেইচ্যা কিইন্যা দেনাদারি শোধ কইর্যা দেও।
মহাজন খবরটা পেয়েছে সত্যি, যাই-যাব করে আর আসা হয়নি তার। একদিন দুপুরে লোকটি এসে কয়েকটা সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে যাওয়ার সময় ছোবাহানের হাত ধরে চুপি চুপি বলল, মোর টাহা কয়ডা যে দরকার। বোঝোই তো, সামান্য চালান। অনেক দিন তো হইয়া গেল।
এক দিনের নোটিশে ছোবাহানের দোকানটা খালি হয়ে যায়।
মেজ ছেলে এখানে-সেখানে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দেয়। মাস দুয়েক যাওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় সে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল।
গ্রামের লোকেরা ছোবাহানের চোখ হারানোয় নিরুত্তাপ থাকলেও দুর্দিনে বড় ভাইকে রেখে মেজ ভাই বিয়ে করে এনেছে, এসব নিন্দাচর্চা প্রতিভার সঙ্গেই তারা করল। অন্ধ মানুষটি আর কী বলবে, ছেলের হাতের কামাই খেয়ে তাকে বলার মতো কোনো ভাষাই যে নেই তার। মাঝরাতে পাশের ঘর থেকে যখন নতুন বউয়ের হাস্যধ্বনি শোনা যায়, তখন ছোবাহানের মনে হয়, অন্ধ জীবনের এমন পীড়া অত্যন্ত ব্যথার। যদি সে সুযোগ পেত, তবে আত্মহত্যা করে হয়তো চিরদিনের জন্য বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু চোখে না দেখলে মৃত্যুর আয়োজন করার যেসব রসদ জোগাড় করা প্রয়োজন, তার পক্ষে সেসব করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বড় ছেলে রাগ করে আর বাড়ি ফিরল না। স্ত্রীর ব্যবহারও আগের মতো নেই। ছোবাহান চোখে না দেখুক, কান দিয়ে যা কিছু শোনে, তাতে অনুভব করতে পারে, কয়েক দিনের মধ্যে সে সংসারে কেমন বোঝা হয়ে উঠেছে। সবকিছুর ওপর যেন মিথ্যার পরত পড়া, কোথাও মায়া-মমতার ছায়াটুকুও নেই। জীবনের এমন এক নির্মম পরিহাস।
মেজ ছেলের কামাই কমে আসায় টাকাপয়সার টান পড়লে ছোবাহানের স্ত্রী বলল, ঘরে তো খাওয়ার মতো কিছুই নেই। ছোবাহান অন্ধ চোখের দুই ফোঁটা জল ফেলে বলল, আর কইও না কিছু মোরে, কাইল বেইল ওডার আগেই যেন মোর মরণ অয়!

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে
১০ ডিসেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

প্রকৃতির এমন এক নিষ্ঠুর নিয়ম– ইচ্ছা করলেও কেউ সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একদিন মধ্যরাতে ছোবাহান ঘুম থেকে জেগে বমি করে বিছানা ভাসায়। মাথাটা ঝিনঝিন করে তার। স্ত্রী ছোবাহানের মাথাটা তার কোলের ওপর রেখে কয়েকবার মৃদুস্বরে ডেকে বলল—ওগো, কেমন লাগছে তোমার? ছোবাহান একদিকে কাত হয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করল, আর হুঁশে
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫