আহমেদ ইবনে আরিফ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।
আহমেদ ইবনে আরিফ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫