Ajker Patrika

উৎসব, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

মলয় বালা
উৎসব, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।

চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।

প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।

উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।

বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।

শিল্পী স্বপন দাস (ভারতীয় শিল্পী), ‘জীবনের জন্য সংগ্রাম’, ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক, ২০১৮ এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।

বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।

প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।

৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।

শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টন, ‘হারপিট সম্মেলন’, স্থাপনাশিল্প, ২০২০ হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত