Ajker Patrika

নূরলদীন ও রংপুর কৃষক বিদ্রোহ: জাতিসত্তার দ্রোহ ও মুক্তি

রিয়াদ আল ফেরদৌস
নূরলদীন ও রংপুর কৃষক বিদ্রোহ: জাতিসত্তার দ্রোহ ও মুক্তি

ঋগ্বেদের ঐতরেয় আরণ্যক উপনিষদ শ্রুতি সাহিত্যের ভেলায় মহাকালের স্রোতে ভেসে এসেছে বাঙ্গালা (আজকের বাঙলা) শব্দটি। এই বোধটি এই ভূগোলের মানুষের স্নায়ু ও করোটিতে প্রাণ সঞ্জীবনী যুগিয়ে যাচ্ছে। এখানে ঔপনিবেশিক যুগে শাসক ও শোষিতের মধ্যে সংঘর্ষ জন্ম নিয়েছিল কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনকে কেন্দ্র করে। এই জনপদের মানচিত্র বহিঃশক্তির হাতে বারবার লুণ্ঠিত হতে হতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আত্মপরিচয়ের জায়গা থেকে। পরিণত হয়েছে অসহায় পরিস্থিতির শিকারে, হারিয়েছে ভাতের অধিকার। তাই বারবার সংগ্রাম করেছে প্রভুত্ববাদী ঔপনিবেশিক শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। 

বহুতলীয় ওই ইতিহাস-সংস্কৃতি চর্চার পথে ষাণ্মাসিক গবেষণা কাগজ ‘মনন রেখা’ দৃষ্টান্তস্থানীয়। এর প্রতিটি সংখ্যাই অচর্চিত, ভিন্নতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। ফলে ইতিমধ্যে মনন রেখা দেশে ও দেশের বাইরে পাঠকেদের মনযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। মনন রেখার চলতি সংখ্যাটিও বরাবরের মতো সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ। ‘নূরলদীন ও রংপুর কৃষক বিদ্রোহ’ নামের এই সংখ্যাটি বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে। কেননা, কৃষক বিদ্রোহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যখন কোনো সাহিত্যের কাগজ মনোযোগী হয় তখন তা আমাদের কৌতূহলী করে তোলে। সংখ্যাটিতে দেখা যায়, ঐতিহাসিক রংপুর কৃষক বিদ্রোহকে ফিকশন ও নন-ফিকশনের নানা আঙ্গিক থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কাজটি বহু শ্রমলব্ধ—বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা নিঃসন্দেহে টেকসই চিন্তাচর্চার লক্ষণ। নূরলদীনকে নির্দিষ্ট এলাকার যোদ্ধা না ভেবে বরং শতাব্দীর ক্যানভাসে বাঙালির স্বাধীনচেতা বীরত্বের প্রতীক বলা সমীচীন। 

সংখ্যাটির প্রচ্ছদে দেখা যায়, বাঙলার দুই শোণিত পেশিবহুল কৃষক সশস্ত্র প্রতিরোধে ঔপনিবেশিক শক্তির মুখোমুখি। চিত্রটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, একটি অসম শক্তি ও সামর্থ্য ভুলে, বিজয়ের আশা ক্ষীণ জেনেও প্রতিরোধ ব্যূহ গড়ে তুলছে। বিশেষ নিবন্ধে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস নূরলদীনের তালাশ করেছেন কৃষি উৎপাদন ও ভূমি অধিকারের অনিবার্যতায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার কৃষি উৎপাদনকে জবরদস্তির ফরমান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে রাজস্ব আদায়ের নামে ব্যাপক লুণ্ঠন ও নির্যাতন করে। দেশীয় সামন্তদের তাঁরা ব্যবহার করেছিল দস্তানা হিসেবে যার স্বরূপ আমরা দেখি রায়ত বনাম দেবী সিংহ দ্বন্দ্ব কীভাবে কৃষক চৈতন্যে বিদ্রোহের একটি শক্ত উপাদান হয়ে উঠেছিল। হেস্টিংসের একান্ত সুহৃদ দেবী সিংহের অবর্ণনীয় শোষণ ও অত্যাচার রংপুর কৃষক আন্দোলনের অন্যতম অনুঘটক। 

ইংরেজ তথা দেবী সিংয়ের চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত করের বোঝায় বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। এমনকি জমিদারেরাও জমি হারাচ্ছিল আর দেবী সিংহ নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছিল সেসব জমি। কৃষক জমি, অলংকার, হলের বলদ, কাস্তে, কোদাল বিক্রি করে কপর্দকহীন হয়ে দিনাতিপাত করেছিল। 

মাত্রাতিরিক্ত খাজনার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বনে-জঙ্গলেও আত্মগোপন করে ছিল। শেষমেশ বিদ্রোহ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। ১৭৮৩ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি টানা পাঁচ সপ্তাহ কৃষকেরা এক অপ্রতিরোধ্য লড়াই রচনা করেছিল যা আগে কেউ দেখেনি। বিদ্রোহের মূল নেতৃত্ব দেন নূরলদীন, ধীরাজ নারায়ণ ও কেনা সরকার। এদের মধ্যে নূরলদীন সবচেয়ে আলোচিত এই জন্য যে, সমরশক্তিতে অসম হয়েও প্রবল পরাক্রমে তিনি ঔপনিবেশিক ইংরেজ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যুদ্ধে নূরলদীন পরাজিত হয়েছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছিলেন। 

কিন্তু প্রবল দেশপ্রেম, অমিত তেজ ও সাহসী নেতৃত্বের সম্মিলনে তিনি যে আত্মত্যাগের নজির রেখে গেছেন তা বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে শত শত বছর ধরে শক্তিশালী প্রেরণা হয়ে আছে। নূরলদীন তাই আমাদের জাতীয় জীবনের এক লড়াকু বীরের নাম। ইতিহাস ও সাহিত্যের ক্যানভাসে আঠারো শতকের কিংবদন্তি কৃষক যোদ্ধা নূরলদীন ও তাঁদের পরিচালিত রংপুর কৃষক বিদ্রোহের এক কৌতূহলী ও বিস্তৃত পর্যালোচনা হাজির করে মনন রেখা সম্পাদক আমাদের ঋদ্ধ করেছেন। 

এই বিদ্রোহ ইংরেজদের পলাশী পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে চাপের মুখে ফেলে এবং বাধ্য করে রাজস্বনীতি পরিবর্তন করতে। নূর উদ্দীন মোহাম্মদ বাকের জং বা নূরলদীন ওই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। রংপুরের ফুলচৌকিতে তাঁর কবর রয়েছে। নূরলদীনের ইতিহাস অল্পবিস্তর পাওয়া যায়; সেই ইতিহাস উদ্ধারের সূত্রে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নও সামনে আসে। তবে সেই প্রশ্নের উত্তর যাই হোক নূরলদীনের আত্মবিসর্জনকারী সংগ্রামের মূল্য অপরিসীম। সৈয়দ হক তাঁর শক্তিশালী কলমে শতাব্দীর অতলে হারিয়ে যাওয়া চরিত্র নূরলদীনকে কাব্যনাটকের মাধ্যমে গেঁথে দিয়েছেন সাধারণের মস্তিষ্কে। মনন রেখা স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া সেই ইতিহাসের টুকরোগুলোকে ঘষে মেজে পরিষ্কার করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। 

আঠারো শতকের কৃষক আন্দোলনে দিনাজপুরের একটি চিত্র দেখতে পাই অধ্যাপক মোজাম্মেল বিশ্বাসের লেখায়। বৃহত্তর দিনাজপুরে মাত্রাতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জাঁতাকলে পিষ্ট কৃষক কূল। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং ভয়ানক সামাজিক স্খলনের মহামারিতে আক্রান্ত হয় সমাজ ও জনপদ। কোম্পানি সমগ্র বাংলা অঞ্চলে শোষণ আর নিপীড়নের জাল বিস্তার করে। মিঠুন সাহা ফকির বিদ্রোহের মতো বিষয় নিয়ে গোছানো আলোচনা করেছেন। 

ফকির ও সন্ন্যাসীদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে বিষদ জানার ও চিন্তার সুযোগ আছে। রংপুর, বৃহত্তর দিনাজপুর ও বিহার সংলগ্ন অঞ্চলে সন্ন্যাসী ও ফকিরেরা বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মূলত এখানে বাংলার কৃষক, মজুর ও প্রান্তিক মানুষজনও সেই কর্মকাণ্ড সমর্থন করেছেন। ১৭৬৩ সালে ফকির ও সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরকে কেন্দ্র করে আলোচ্য বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে যা বাংলা জনপদের প্রথম ব্রিটিশবিরোধী স্বতন্ত্র আন্দোলন। 

দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদা, রংপুর, ময়মনসিংহ অঞ্চল হয়ে শ্রীহট্ট, আসাম ও নেপাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহের দাবানল বিস্তৃত হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জরিপ মতে, এই সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহীদের সংখ্যা ৫০ হাজার বা তার বেশি। কোম্পানি প্রশাসনের নথিতে এই ফকিরদের একতরফা ডাকাত বা দস্যু ও লুটেরা বলেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

আদতে এই সন্ন্যাসীরা ছিলেন নবম শতাব্দীর গোঁসাই, গৃহী, নাগা, বকসারিয়া, ভোজপুরি, অঘোরী, কৃষক ও বৈরাগী। ফকির গোষ্ঠীটি ছিল সুফি ধারা থেকে আগত। এরা মুষ্টিভিক্ষা ও বিভিন্ন লোকজ পরিবেশনা করে দক্ষিণা গ্রহণ করতেন। কোম্পানি দমন নীতির আলোকে এদের দানের ওপর অবরোধ আরোপ করে এবং তীর্থ কর আরোপ করে। উদ্দেশ্য ছিল, এই ভ্রাম্যমাণ ফকিরদের স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণ করা। তবে ফকিরদের থেকে কর আদায় দুরূহ ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। 

এই ফকিরদের অনেকেই মুঘল দরবারের ফৌজি থাকার দরুন নিষ্কর ভূমি ভোগদখল করত। অতিরিক্ত করের বোঝায় এরা ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়। তাদের ব্যবসা (রেশম, মসলা, তৈজসপত্র) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চাষের ভূমি করায়ত্ত করা এবং নতুন শাসকদের চরিত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মূলত এই ভূখণ্ডের আর্য ও অনার্যদের বিভাজিত করেছিল। ঠিক একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে বাঙালির, যারা এই ভূমিকে চাষযোগ্য করেছে, শতাব্দীর ভাঁজে নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচেছে। ফকিরদের ওপর স্থানীয় রায়ত-প্রজা, জমিদার ও মহাজনের বেশ শ্রদ্ধা ও সমীহ ছিল। ১৭৫৭ সালে প্রশাসনিক সংস্কারের ফলে ফকিরদের জীবনযাত্রায় চাপ বাড়তে থাকে। তাদের অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা, তীর্থ কর আদায় আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। বক্সারের যুদ্ধে সন্ন্যাসীরা অযোধ্যার নবাবের পক্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। 

 ১৭৭০ সালের মন্বন্তরে কৃষক, মজুর ও বিপন্ন মানুষদের দলে ভেড়াতে ফকিরদের উৎসাহী করে। এর সঙ্গে মুঘল ও নবাবি জমানার বেকার বুভুক্ষু ফৌজিরাও ফকিরদের দলে ভিড়ে যায়। উল্লেখ্য, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ছাড়া আরও ছয়টি দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা পেতে হয়েছিল কোম্পানি আমলে বাংলা প্রদেশের মানুষদের। খাদ্য শস্যের মজুত সুবিধা ভোগীদের জন্য এত বেশি করা হয়েছিল যে নিম্ন শ্রেণির মানুষের জন্য খাদ্য ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়। দেওয়ানি শাসনামলে রাজা ও প্রজার পারস্পরিক বোঝাপড়াটা খুব সংকটের জায়গায় পৌঁছে। রাজস্ব আদায়ে মরিয়া ইংরেজ বেনিয়ারা উৎপাদন সীমাবদ্ধতা অনুধাবনে একদমই নারাজি, বিধায় একের পর এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে মানুষ। 

 ১৭৬৫ থেকে ১৭৯১ সাল পর্যন্ত কোম্পানি বিভিন্ন কলা কৌশল উদ্ভাবনে ব্যয় করে কীভাবে কম ঝামেলায় মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় করা যায় স্থানীয় ইজারাদার, জমিদার ও সামন্ত শক্তিকে ব্যবহার করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে পিংকি সাহা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মূলত বহুস্তরীয় একটি মধ্যস্বত্বভোগী সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অর্থব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর বিলেতে মুদ্রাস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। আঠারো শতকের সর্বহারা কৃষকেরা খাজনা মওকুফের জন্য করুণা ভিক্ষা করলেও ঔপনিবেশিক শক্তি জবাব দিয়েছিল রক্ত আর বারুদের ভাষায়! 

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর চরম সামাজিক স্খলন আর অবক্ষয় ডেকে আনে বাংলায়। খাদ্যের সংস্থানে মানুষ পুত্র কন্যাকে দাসদের মতো বিক্রি করে দিয়েছিল। রংপুরে অত্যাচারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে রায়ত প্রজা জমিদারের সম্মিলিত বিদ্রোহ ছিল ১৭৭০ সালের দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের অন্যতম চরিত্র দেবী সিংহ বাংলার মাটিকে যে শ্মশান বানিয়ে ফেলেছিল তাঁর ধুলোমলিন প্রাসাদ ও খাজাঞ্চিখানার অনাদায়ি ঋণের খেড়খাতা আজও সে বিস্মৃতি বহন করে। এই কৃত্রিম খাদ্যসংকট ঔপনিবেশিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে। বাংলার বিপুল ধনভান্ডার লুটে নিয়ে ইউরোপে নিজেদের যান্ত্রিক শিল্প গড়াই ছিল ইংরেজদের একমাত্র লক্ষ্য। 

সমৃদ্ধ কিছু অনুবাদ প্রবন্ধ পাঠের সুযোগ আছে এই সংখ্যাটিতে। প্রখ্যাত গবেষক জন ই. উইলসনের প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে বর্গাচাষিদের চিন্তার জগতের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসকের মৌলিক বৈরিতার জায়গাগুলো। কৃষক বিদ্রোহের শক্তিপীঠগুলোর বিস্তৃত বুদ্ধিবৃত্তিক ও অর্থনৈতিক মিথস্ক্রিয়ার একটি পর্যালোচনা আছে এই পাঠে। কোম্পানির শাসনাধীন অঞ্চলগুলোতে আমলাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত অগ্রাধিকারের মাঝে দ্বন্দ্ব ও তাৎপর্য জেমস লিসের অনুবাদ প্রবন্ধে বর্ণিত রিচার্ড গুডল্যাড এবং তাঁর ব্যক্তিগত দালিলিক অভিজ্ঞতার আলোকে। 

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে কালজয়ী নাটকগুলো, যেমন ইডিপাস রেক্স, প্রমিথিউস বাউন্ড, ম্যাকবেথের পাশাপাশি ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ কাব্যনাটকটির চমৎকার তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন মফিদুল হক। সৈয়দ হকের এই মৌলিক সৃষ্টির ভিত্তি আমাদের বহুকালের মুক্তি আন্দোলনকে উসকে দেয় বারবার অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ কাব্য নাটকটি নিয়ে দুটি সাক্ষাৎকার পাব এই সংখ্যায়। এদের একজন বিশিষ্ট বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লাকী ইনাম এবং অন্যজন ভারতের কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাট্য নির্দেশক কিশোর সেনগুপ্তের। লাকী ইনাম নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের মঞ্চায়নের সূত্র ধরে অভিনেতা আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, আতাউর রহমান প্রমুখের স্মৃতিচারণ করেন। আমরা জেনেছি, সৈয়দ হক লন্ডনে বসে কোন প্রেক্ষাপটে নূরলদীনকে আবিষ্কার করলেন এবং কাব্যনাট্যটি বাংলা সাহিত্যের এক মৌলিক সংযোজনে পরিণত হলো। 

 ‘লুট’ শব্দটি নাটকটিতে অনেকবার উচ্চারিত হয়েছে শোণিত অস্ত্রের মতো, ভিন্ন ভিন্ন স্থানিকের বঞ্চিত ব্যক্তিদের জীবনকথার মতো। নাট্যব্যক্তিত্বরা বলেছেন এর নির্মাণ, বলিষ্ঠ শব্দশৈলী, মঞ্চ আলোকসজ্জাসহ প্রতিটি মুহূর্তে রয়েছে মুনশিয়ানার ছাপ। ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে এবং স্বৈরতন্ত্র ও একচেটিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ স্বর হিসেবে শক্তি যুগিয়ে চলেছে। 

আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাক্রমে বা উচ্চশিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে কৃষক আন্দোলনের বিস্তারিত ইতিহাস চর্চা নেই বললেই চলে। কৃষক বিদ্রোহের কোনো ইতিহাসই প্রচলিত অর্থে অর্থনৈতিক ইতিহাস নয় বরং এটি সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসেরই বয়ান। কৃষক বিদ্রোহের মর্ম নিহিত আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণে। শোষক শোষিতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্বরূপ ও আধিপত্যের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের সুযোগ রয়েছে এতে। প্রাক ঔপনিবেশিক সমাজ প্রসঙ্গে যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস প্রচলিত তা যতটাই সমৃদ্ধ হোক না কেন, কৃষক বিদ্রোহের সামগ্রিক ইতিহাস তাতে চিত্রিত হয় না। ‘মনন রেখা’র এই সংখ্যা সুযোগ করে দিয়েছে আঠারো শতকের বাংলার এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস পর্বকে তুলনামূলক পাঠের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত