দীপংকর গৌতম

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক্ত করবে। কিন্তু এ কোন দুর্যোগে পড়ল সে। ভেবে পায় না। ঘরের দ্বারে বসে লুঙ্গির কাছার ভেতরে পলিথিনে বাঁধা একটা ৫৫০ মার্কা বিড়িতে টান দেয়। বিড়িতেও কড়কড়া স্বাদ নেই। কেমন ড্যাম ড্যাম ভাব গলা পোড়ায়। মাত্রই শুকুর দোকান থেকে আনা বিড়ি কীভাবে ড্যাম হলো, বুঝতে পারে না অবিনাশ। বিড়িতে সুখটান দিতে দিতে ধান নিয়ে কী করবে ভাবতে থাকে। এই কৃষিকাজ করতে আর তার ইচ্ছা করে না। কত ঝামেলা আজকাল। সারের ডিলার পর্যন্ত অনেক ক্ষমতাধর। কোনো কিছুতেই কিছু বলার উপায় নেই। কথায় কথায় পুলিশের ভয় দেখায়। কীটনাশক থেকে সেচের জল, সবখানে রাজনীতি। এতসব কি অবিনাশ সামলাতে পারে? সবকিছুতে দাম বেশি। দাম নেই তার ফসলের। অবিনাশ শীতকালে এবার মেয়ের বাসাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। নাতি হয়েছে। না গেলে কেমন দেখায়। ঘরের বউ থেকে পাড়াপড়শি সবাই বললে, অবিনাশ নলিনী খুড়ার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে গাড়িতে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় পাশে বসা এক লোক তাকে বুঝিয়েছিল। এই সেতুতে তারও ভাগ আছে। তাতে অবিনাশ বিস্মিত হয়েছিল। তার যদি ভাগ থাকে, সে এই সেতুতে একটু দাঁড়াবে। তার মেয়ের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ফটো তুলবে। কিন্তু এসব চিন্তা তার শেষ হয়ে যায় গুলিস্তানে নেমে। বরিশাল থেকে গুলিস্তান নেমে জামাইয়ের দেখা পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত অবিনাশ। অবিনাশ মেয়ের জন্য সবজি কিনতে গেলে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সব সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তার বোনা সবজি এত দামে বিক্রি হয় আর তার জমি চাষের কিস্তি দিতে জীবন যায়। এ কেমন বিচার? ঢাকায় যে কদিন ছিল, সে কদিন খুবই মনমরা ছিল। মেয়ে ময়না বারবার জিজ্ঞেস করে, বাবা তোমার কী অইছে? খাও না কেন?
অবিনাশ চুপ করে বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে।
এ কেমন দেশ সে বুঝে পায় না। অবিনাশের দাদু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের দাঙ্গায় আহত হয়ে দেশে এসে ছেলে মন্মথ বিশ্বাসকে বলেছিলেন, জিন্নাহ-মহাত্মা গান্ধী দেশভাগ করলেও মাটি ভাগ করতে পারবে না। এই মাটি আমাদের মা। আমাদের ভবিষ্যৎ। মাটি ছাড়বি না। বাবার মুখে বারবার সে এ কথা শুনেছে। তার বাবা মাটির সঙ্গে কথা বলত। মাটির ভাষা বুঝত। মাটির ডাকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী ক্যাম্পে মন্মথের বাবা-মা ডায়রিয়ায় মারা যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে এলে অবিনাশের জন্ম। অবিনাশও তার বাবার মতো মাটির ভাষা বোঝে। মাটির সুখ-দুঃখ বোঝে, মাটির সঙ্গে কথা বলে। জমিতে ফসলের বীজ বুনে সে জমিনের ওপর শুয়ে মাটিতে কান দিত। অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে অন্যান্য কৃষকদের বলত, মাটির ডাক শুনেছি। এবার ফসল ভালো হবে। বেশি বৃষ্টি হলে বা ফসলে লু হাওয়া বইলেও সে বলতে পারত। চাষিরা তাই সন্ধ্যা হলে অবিনাশের বাড়িতে এসে তামাক খেত, তাসের আসর জমিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করত—ও অবিনাশ, মাটির কথা শুনেছিস? কী কইল মাটি? ভালো হবে?
অবিনাশের কথা খুব হেরফের হতো না। তাই কৃষক বিশ্বাস করত অবিনাশের কথা। কিন্তু ইদানীং সময় কেমন বদলে যাচ্ছে। সে ঋণ করে ফসল চাষ করে আর লাভ নিয়ে যায় কারা? তার উৎপাদিত ফসল যেন তাকে চেনে না। ৫ টাকার টমেটো এখন ৮০ টাকা। এতসব ভাবতে ভাবতে দেখে, পাশের বাড়ি শুকদেব টিন নিয়ে আসছে বৃষ্টির মধ্যে। মন্মথ জিজ্ঞেস করে—ও বেডা, টিন দিয়া কী হরবা?
শুকদেব বলে, গাদলা শুরু হইছে, দেখছ না। বইসকা থাকলে তো ধান নষ্ট হবে। তাই গাদলার মধ্যেই ধানের মলন দেব। টিনের ছাপড়া বানাইয়া ধানের মলন দেব। গাদলা হয় হউক। এয়ার মধ্যেই কাজ শেষ করব।
প্রতিবছর গাদলা আসে। তিন-চার দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হয়। গাদলায় জনজীবনে দুর্ভোগ অন্তহীন। তারপর সদ্য ধান কাটা কৃষকের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও করুণ। বেশি বৃষ্টিতে নেতিয়ে যাচ্ছে ধান। ধানের আঁটিতে ছত্রাক পড়ছে। শুকদেব এতক্ষণে অবিনাশের উঠানে ছাপড়া দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ছাপড়া হলেই শুরু হলো ধানের মলন। গরু দিয়ে ধান মলতে মলতে অবিনাশের মনে পড়ছে, এমনি এক দিনে পাশের বাড়ির ধাত্রী সুরবালা এসে চিৎকার করতে করতে তাকে ডাকছিল, ও অবিনাশ, তাড়াতাড়ি আয়, তোর ছাওয়াল হইছে। বাড়ির বিটিগো ক, ঝাহে ঝাহে জোকার দিতে।
অবিনাশ গিয়ে আঁতুড়ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিল চাঁদের মতো ছেলে তার। তার ঘরে কোন ভুলে এসেছে কে জানে? কিন্তু জন্মের তিন দিন পর ছেলেটা মারা গেল। শহরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার বলেছিল, বাঁশের যে চটা দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিল, সে চটায় ধনুষ্টঙ্কারের জীবাণু ছিল। তার মায়ের কতজন সন্তান, তাদের জন্ম এভাবেই। শুধু তাই কেন, বাড়ির আশপাশে কত বাচ্চাই তো হচ্ছে এভাবে দিনের পর দিন। অথচ কপাল পোড়া গেল শুধু তার? তার সন্তান ধনুষ্টঙ্কারে মারা গেল, এটা অবিনাশ বিশ্বাসই করতে পারে না। ছেলেসন্তান বলে কথা। সন্তান মারা যাওয়ায় অবিনাশ বজ্রপড়া বৃক্ষের মতো শোকে চুপ হয়ে গেল। এরপরে এক এক করে ছেলে, মেয়ে এসে তার ঘর ভরিয়েছে, তবুও প্রথম সন্তানের কথা সে কোনোমতেই ভুলতে পারে না। এর মধ্যেই এল লক্ষ্মীদীঘা ধানের মৌসুম। এ সময় এলেই তার মাথা ঠিক থাকে না। তার গোঁসাই তাকে বলেছে, এই ছেলে বেঁচে থাকলে তার কোনো দুঃখ থাকত না। তার সংসার ধনে-জনে পূর্ণ হতো। কিন্তু কোন পাপে তার এই রাজসন্তান তার ঘরে থাকল না। তার স্ত্রী সুরবালা তাকে বারবার বুঝিয়েছে, তার জীবনে অপূর্ণ তো কিছু নেই। ধন-জন সবই তো আছে তার। কিন্তু কোনো কথায় তার বুঝ মানে না অবিনাশ। বারবার বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে, একটার পিছে একটা বিড়ি ধরায়। ভাত খাওয়া প্রায় বন্ধ। এবার মেয়ের কাছ থেকে এসে সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলেছে, —তুই কস বউ আমার ধনে-জনে পূর্ণ। শহরে যাইয়া দেখ, আমার ৫ টাকার টমেটো আমার কাছে ৮০ টাকা চায়। কত সবজি! সব সবজি আমার দিকে চাইয়া থাহে। আমার খ্যাতের ফসল, আমারে চেনে দূর শহরে যাইয়াও। আমার লগে তারা কথা কয়। আর দোকানদার দাম চাইতেই থাহে। এট্টা লোক নাই এট্টু উচিত কথা কবে। এই কষ্টের কথা আমি কোথায় কই? ধার শোধ করতে পারি না। আর আমার ঘাম ঝরানো, বৃষ্টিভেজা ফসলে অন্য মানুষ সুখ নেয়।
এবারে শুকদেবের জন্য ভালোয় ভালোয় অবিনাশেরও মলন শেষ হয়। ভালো ধান পেয়ে দুজনের দিন ভালোই যাবে মনে হচ্ছে। এখনো সবার ধান কাটা হয়নি। বৃষ্টির জল বাড়ছে। ভাসছে খেত। গাছপালা, বৃক্ষরাজি সব যেন অপরিচিত লাগে অবিনাশের। বৃষ্টিতে রং ধুয়ে আরও ঘন হয়ে উঠেছে। পূর্ণিমার লগ্ন এলে এই বৃষ্টি সহজে থামবে না। বন্যা এলে বড় সংকট হবে। ভাবতে ভাবতে কয়বার হাই তুলে বৃষ্টির মধ্যে শেষ বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতরে অবিনাশ দেখে, জোছনার ভেতরে তার বাবা বলছে অবিনাশ, মাটির কথা শুনতে পাস না। মাটি তো কান্দে। কৃষকের অধিকার ছাড়া দেশ বাঁচে না। লাঠি নিয়া বাইর হ অবিনাশ। বজ্জাতে দ্যাশ ভইরে গেছে। লাঠি হাতে ল। ঘুম থেকে উঠে পড়ে অবিনাশ। মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। হাতে লাঠি নিয়ে বের হয়। কেমন ধবল জোছনায় ভেসে যাচ্ছে মাঠ। সে মাটিতে কান পাতে। আবার উঠে দাঁড়ায়। অবিনাশ ঘামছে। তার বউ এসে বলে, তোমার কী অইছে? অবিনাশ বলে, বউ দ্যাশ ভালো নাই, বাজারে নষ্ট লোকের রাজত্ব। মাটির ডাক শোন। পাড়ার সবাইরে ডাক দে। আমাগো সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। আমাগো স্বপ্ন লুট করে নিচ্ছে। সুরবালা কাঁদে—তোমার কী অইল? এই রাজনীতি বোঝার দরকার নাই। এসব আমাগো জন্য না। তুমি ঘুমাও। ঘরে আসো। এবার অবিনাশ দেখে জোছনার ভেতরে তার ছায়া যত দূর চোখ যায়, তত দূর দীর্ঘ। বউকে কাছে ডেকে এবার অবিনাশ বলে, আমার বাবা কইত, মানুষের চেয়ে ছায়া বড় হলে সে আর বাঁচে না। আমার ছেলে-মেয়ে-জমি সব তোর রইল। মাটি ডাক দিছে, সবাইরে কইস। আমার বুকে ব্যথা উঠছে, বৃষ্টির মধ্যে তার ঘাম ভেজা আঠালো শরীরের অসুস্থতা কেউ না বুঝলেও অবিনাশ বুঝে ফেলে। সে বুক চেপে ধরে বউকে বলে, আমি চলে গেলাম বউ, মরণব্যথা আমারে ডাক দিছে। গলা কাটা মুরগির মতো অবিনাশ উঠোনের কাদা-জলে গড়াগড়ি খেতে থাকে। টিনের চালে আতাগাছে একটা প্যাঁচা ডাকতে থাকে। দূর থেকে শিয়ালের ডাক আসে। কাউরিয়া বিলের পাশে স্বর্ণগ্রামে কুপির আলো একটার পর একটা জ্বলছে। অবিনাশের চিৎকারে জেগে ওঠে পাড়া। তার সঙ্গে সুরবালার দিশেহারা কান্না অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলে দিগ্বিদিক।
গ্রামের পর গ্রাম নিম্নবর্গের কৃষকেরা সব ছুটে আসতে থাকে। এই ভর রাত্তিরে কৃষক অবিনাশের কী হলো? মানুষের দীর্ঘ সারি ক্রমশ দীর্ঘ হয় অবিনাশ ও সুরবালার চিৎকারে। কুপির আলোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কৃষকেরা সে আলোতে গাদলায় অসহায় ফসলের খেত দেখতে থাকে। দিনের পর দিন এই ফসল তারা ফলায় আর তাদের ভাগ্য বদলায় না। ধনী হয়ে যায় অন্য মানুষ-মধ্যস্বত্বভোগীরা। এসব দেখে অবিনাশ আগেই সবাইকে বলেছিল—লাঠি হাতে বজ্জাত তাড়াও, নয় সারা জীবন দুঃখের সাগরে ভেসে মানুষের পেটের খাবার ফলাতে হবে—এ বড় অন্যায়। অবিনাশের কাতরানো এক সময় কমে আসে। তাগড়া শরীরটা নিস্তেজ হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। সুরবালা তারস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে—ভগবান, এ কেমন বিচার তোমার। আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। গাদলার বৃষ্টি অঝোরে ঝরতে থাকে। অজস্র মানুষ এসে অবিনাশকে চাপড়ায় শুইয়ে নিয়ে চলে। কেঁদে ওঠে সবাই। বৃষ্টির শব্দে তখন আর কিছু শোনা যায় না। বৃষ্টির গতি বাড়ে। অন্ধকার চারদিক। বিল, বৃক্ষ সব যেন কালো পর্দায় ঢেকে আছে। তার মধ্যে সোনালি রঙের আলোর মিছিল বাড়তেই থাকে। শ্মশানে প্রশান্তির বৃষ্টি বয়ে চলে। অবিনাশকেও দাহ করার প্রস্তুতি চলে। গাদলা তখনো শেষ হয় না।

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক্ত করবে। কিন্তু এ কোন দুর্যোগে পড়ল সে। ভেবে পায় না। ঘরের দ্বারে বসে লুঙ্গির কাছার ভেতরে পলিথিনে বাঁধা একটা ৫৫০ মার্কা বিড়িতে টান দেয়। বিড়িতেও কড়কড়া স্বাদ নেই। কেমন ড্যাম ড্যাম ভাব গলা পোড়ায়। মাত্রই শুকুর দোকান থেকে আনা বিড়ি কীভাবে ড্যাম হলো, বুঝতে পারে না অবিনাশ। বিড়িতে সুখটান দিতে দিতে ধান নিয়ে কী করবে ভাবতে থাকে। এই কৃষিকাজ করতে আর তার ইচ্ছা করে না। কত ঝামেলা আজকাল। সারের ডিলার পর্যন্ত অনেক ক্ষমতাধর। কোনো কিছুতেই কিছু বলার উপায় নেই। কথায় কথায় পুলিশের ভয় দেখায়। কীটনাশক থেকে সেচের জল, সবখানে রাজনীতি। এতসব কি অবিনাশ সামলাতে পারে? সবকিছুতে দাম বেশি। দাম নেই তার ফসলের। অবিনাশ শীতকালে এবার মেয়ের বাসাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। নাতি হয়েছে। না গেলে কেমন দেখায়। ঘরের বউ থেকে পাড়াপড়শি সবাই বললে, অবিনাশ নলিনী খুড়ার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে গাড়িতে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় পাশে বসা এক লোক তাকে বুঝিয়েছিল। এই সেতুতে তারও ভাগ আছে। তাতে অবিনাশ বিস্মিত হয়েছিল। তার যদি ভাগ থাকে, সে এই সেতুতে একটু দাঁড়াবে। তার মেয়ের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ফটো তুলবে। কিন্তু এসব চিন্তা তার শেষ হয়ে যায় গুলিস্তানে নেমে। বরিশাল থেকে গুলিস্তান নেমে জামাইয়ের দেখা পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত অবিনাশ। অবিনাশ মেয়ের জন্য সবজি কিনতে গেলে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সব সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তার বোনা সবজি এত দামে বিক্রি হয় আর তার জমি চাষের কিস্তি দিতে জীবন যায়। এ কেমন বিচার? ঢাকায় যে কদিন ছিল, সে কদিন খুবই মনমরা ছিল। মেয়ে ময়না বারবার জিজ্ঞেস করে, বাবা তোমার কী অইছে? খাও না কেন?
অবিনাশ চুপ করে বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে।
এ কেমন দেশ সে বুঝে পায় না। অবিনাশের দাদু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের দাঙ্গায় আহত হয়ে দেশে এসে ছেলে মন্মথ বিশ্বাসকে বলেছিলেন, জিন্নাহ-মহাত্মা গান্ধী দেশভাগ করলেও মাটি ভাগ করতে পারবে না। এই মাটি আমাদের মা। আমাদের ভবিষ্যৎ। মাটি ছাড়বি না। বাবার মুখে বারবার সে এ কথা শুনেছে। তার বাবা মাটির সঙ্গে কথা বলত। মাটির ভাষা বুঝত। মাটির ডাকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী ক্যাম্পে মন্মথের বাবা-মা ডায়রিয়ায় মারা যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে এলে অবিনাশের জন্ম। অবিনাশও তার বাবার মতো মাটির ভাষা বোঝে। মাটির সুখ-দুঃখ বোঝে, মাটির সঙ্গে কথা বলে। জমিতে ফসলের বীজ বুনে সে জমিনের ওপর শুয়ে মাটিতে কান দিত। অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে অন্যান্য কৃষকদের বলত, মাটির ডাক শুনেছি। এবার ফসল ভালো হবে। বেশি বৃষ্টি হলে বা ফসলে লু হাওয়া বইলেও সে বলতে পারত। চাষিরা তাই সন্ধ্যা হলে অবিনাশের বাড়িতে এসে তামাক খেত, তাসের আসর জমিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করত—ও অবিনাশ, মাটির কথা শুনেছিস? কী কইল মাটি? ভালো হবে?
অবিনাশের কথা খুব হেরফের হতো না। তাই কৃষক বিশ্বাস করত অবিনাশের কথা। কিন্তু ইদানীং সময় কেমন বদলে যাচ্ছে। সে ঋণ করে ফসল চাষ করে আর লাভ নিয়ে যায় কারা? তার উৎপাদিত ফসল যেন তাকে চেনে না। ৫ টাকার টমেটো এখন ৮০ টাকা। এতসব ভাবতে ভাবতে দেখে, পাশের বাড়ি শুকদেব টিন নিয়ে আসছে বৃষ্টির মধ্যে। মন্মথ জিজ্ঞেস করে—ও বেডা, টিন দিয়া কী হরবা?
শুকদেব বলে, গাদলা শুরু হইছে, দেখছ না। বইসকা থাকলে তো ধান নষ্ট হবে। তাই গাদলার মধ্যেই ধানের মলন দেব। টিনের ছাপড়া বানাইয়া ধানের মলন দেব। গাদলা হয় হউক। এয়ার মধ্যেই কাজ শেষ করব।
প্রতিবছর গাদলা আসে। তিন-চার দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হয়। গাদলায় জনজীবনে দুর্ভোগ অন্তহীন। তারপর সদ্য ধান কাটা কৃষকের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও করুণ। বেশি বৃষ্টিতে নেতিয়ে যাচ্ছে ধান। ধানের আঁটিতে ছত্রাক পড়ছে। শুকদেব এতক্ষণে অবিনাশের উঠানে ছাপড়া দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ছাপড়া হলেই শুরু হলো ধানের মলন। গরু দিয়ে ধান মলতে মলতে অবিনাশের মনে পড়ছে, এমনি এক দিনে পাশের বাড়ির ধাত্রী সুরবালা এসে চিৎকার করতে করতে তাকে ডাকছিল, ও অবিনাশ, তাড়াতাড়ি আয়, তোর ছাওয়াল হইছে। বাড়ির বিটিগো ক, ঝাহে ঝাহে জোকার দিতে।
অবিনাশ গিয়ে আঁতুড়ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিল চাঁদের মতো ছেলে তার। তার ঘরে কোন ভুলে এসেছে কে জানে? কিন্তু জন্মের তিন দিন পর ছেলেটা মারা গেল। শহরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার বলেছিল, বাঁশের যে চটা দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিল, সে চটায় ধনুষ্টঙ্কারের জীবাণু ছিল। তার মায়ের কতজন সন্তান, তাদের জন্ম এভাবেই। শুধু তাই কেন, বাড়ির আশপাশে কত বাচ্চাই তো হচ্ছে এভাবে দিনের পর দিন। অথচ কপাল পোড়া গেল শুধু তার? তার সন্তান ধনুষ্টঙ্কারে মারা গেল, এটা অবিনাশ বিশ্বাসই করতে পারে না। ছেলেসন্তান বলে কথা। সন্তান মারা যাওয়ায় অবিনাশ বজ্রপড়া বৃক্ষের মতো শোকে চুপ হয়ে গেল। এরপরে এক এক করে ছেলে, মেয়ে এসে তার ঘর ভরিয়েছে, তবুও প্রথম সন্তানের কথা সে কোনোমতেই ভুলতে পারে না। এর মধ্যেই এল লক্ষ্মীদীঘা ধানের মৌসুম। এ সময় এলেই তার মাথা ঠিক থাকে না। তার গোঁসাই তাকে বলেছে, এই ছেলে বেঁচে থাকলে তার কোনো দুঃখ থাকত না। তার সংসার ধনে-জনে পূর্ণ হতো। কিন্তু কোন পাপে তার এই রাজসন্তান তার ঘরে থাকল না। তার স্ত্রী সুরবালা তাকে বারবার বুঝিয়েছে, তার জীবনে অপূর্ণ তো কিছু নেই। ধন-জন সবই তো আছে তার। কিন্তু কোনো কথায় তার বুঝ মানে না অবিনাশ। বারবার বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে, একটার পিছে একটা বিড়ি ধরায়। ভাত খাওয়া প্রায় বন্ধ। এবার মেয়ের কাছ থেকে এসে সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলেছে, —তুই কস বউ আমার ধনে-জনে পূর্ণ। শহরে যাইয়া দেখ, আমার ৫ টাকার টমেটো আমার কাছে ৮০ টাকা চায়। কত সবজি! সব সবজি আমার দিকে চাইয়া থাহে। আমার খ্যাতের ফসল, আমারে চেনে দূর শহরে যাইয়াও। আমার লগে তারা কথা কয়। আর দোকানদার দাম চাইতেই থাহে। এট্টা লোক নাই এট্টু উচিত কথা কবে। এই কষ্টের কথা আমি কোথায় কই? ধার শোধ করতে পারি না। আর আমার ঘাম ঝরানো, বৃষ্টিভেজা ফসলে অন্য মানুষ সুখ নেয়।
এবারে শুকদেবের জন্য ভালোয় ভালোয় অবিনাশেরও মলন শেষ হয়। ভালো ধান পেয়ে দুজনের দিন ভালোই যাবে মনে হচ্ছে। এখনো সবার ধান কাটা হয়নি। বৃষ্টির জল বাড়ছে। ভাসছে খেত। গাছপালা, বৃক্ষরাজি সব যেন অপরিচিত লাগে অবিনাশের। বৃষ্টিতে রং ধুয়ে আরও ঘন হয়ে উঠেছে। পূর্ণিমার লগ্ন এলে এই বৃষ্টি সহজে থামবে না। বন্যা এলে বড় সংকট হবে। ভাবতে ভাবতে কয়বার হাই তুলে বৃষ্টির মধ্যে শেষ বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতরে অবিনাশ দেখে, জোছনার ভেতরে তার বাবা বলছে অবিনাশ, মাটির কথা শুনতে পাস না। মাটি তো কান্দে। কৃষকের অধিকার ছাড়া দেশ বাঁচে না। লাঠি নিয়া বাইর হ অবিনাশ। বজ্জাতে দ্যাশ ভইরে গেছে। লাঠি হাতে ল। ঘুম থেকে উঠে পড়ে অবিনাশ। মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। হাতে লাঠি নিয়ে বের হয়। কেমন ধবল জোছনায় ভেসে যাচ্ছে মাঠ। সে মাটিতে কান পাতে। আবার উঠে দাঁড়ায়। অবিনাশ ঘামছে। তার বউ এসে বলে, তোমার কী অইছে? অবিনাশ বলে, বউ দ্যাশ ভালো নাই, বাজারে নষ্ট লোকের রাজত্ব। মাটির ডাক শোন। পাড়ার সবাইরে ডাক দে। আমাগো সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। আমাগো স্বপ্ন লুট করে নিচ্ছে। সুরবালা কাঁদে—তোমার কী অইল? এই রাজনীতি বোঝার দরকার নাই। এসব আমাগো জন্য না। তুমি ঘুমাও। ঘরে আসো। এবার অবিনাশ দেখে জোছনার ভেতরে তার ছায়া যত দূর চোখ যায়, তত দূর দীর্ঘ। বউকে কাছে ডেকে এবার অবিনাশ বলে, আমার বাবা কইত, মানুষের চেয়ে ছায়া বড় হলে সে আর বাঁচে না। আমার ছেলে-মেয়ে-জমি সব তোর রইল। মাটি ডাক দিছে, সবাইরে কইস। আমার বুকে ব্যথা উঠছে, বৃষ্টির মধ্যে তার ঘাম ভেজা আঠালো শরীরের অসুস্থতা কেউ না বুঝলেও অবিনাশ বুঝে ফেলে। সে বুক চেপে ধরে বউকে বলে, আমি চলে গেলাম বউ, মরণব্যথা আমারে ডাক দিছে। গলা কাটা মুরগির মতো অবিনাশ উঠোনের কাদা-জলে গড়াগড়ি খেতে থাকে। টিনের চালে আতাগাছে একটা প্যাঁচা ডাকতে থাকে। দূর থেকে শিয়ালের ডাক আসে। কাউরিয়া বিলের পাশে স্বর্ণগ্রামে কুপির আলো একটার পর একটা জ্বলছে। অবিনাশের চিৎকারে জেগে ওঠে পাড়া। তার সঙ্গে সুরবালার দিশেহারা কান্না অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলে দিগ্বিদিক।
গ্রামের পর গ্রাম নিম্নবর্গের কৃষকেরা সব ছুটে আসতে থাকে। এই ভর রাত্তিরে কৃষক অবিনাশের কী হলো? মানুষের দীর্ঘ সারি ক্রমশ দীর্ঘ হয় অবিনাশ ও সুরবালার চিৎকারে। কুপির আলোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কৃষকেরা সে আলোতে গাদলায় অসহায় ফসলের খেত দেখতে থাকে। দিনের পর দিন এই ফসল তারা ফলায় আর তাদের ভাগ্য বদলায় না। ধনী হয়ে যায় অন্য মানুষ-মধ্যস্বত্বভোগীরা। এসব দেখে অবিনাশ আগেই সবাইকে বলেছিল—লাঠি হাতে বজ্জাত তাড়াও, নয় সারা জীবন দুঃখের সাগরে ভেসে মানুষের পেটের খাবার ফলাতে হবে—এ বড় অন্যায়। অবিনাশের কাতরানো এক সময় কমে আসে। তাগড়া শরীরটা নিস্তেজ হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। সুরবালা তারস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে—ভগবান, এ কেমন বিচার তোমার। আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। গাদলার বৃষ্টি অঝোরে ঝরতে থাকে। অজস্র মানুষ এসে অবিনাশকে চাপড়ায় শুইয়ে নিয়ে চলে। কেঁদে ওঠে সবাই। বৃষ্টির শব্দে তখন আর কিছু শোনা যায় না। বৃষ্টির গতি বাড়ে। অন্ধকার চারদিক। বিল, বৃক্ষ সব যেন কালো পর্দায় ঢেকে আছে। তার মধ্যে সোনালি রঙের আলোর মিছিল বাড়তেই থাকে। শ্মশানে প্রশান্তির বৃষ্টি বয়ে চলে। অবিনাশকেও দাহ করার প্রস্তুতি চলে। গাদলা তখনো শেষ হয় না।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫