Ajker Patrika

আমার বর, আমার সুদর্শন ডানপিটে

কাং বিয়োং ইউং
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ০২
আমার বর, আমার সুদর্শন ডানপিটে

[১৬ সেপ্টেম্বর আইওয়া সিটি লাইব্রেরির মেইন গ্যালারিতে একটি প্যানেল আলোচনা হবে, বিষয় সাহিত্যিকদের পেশাজীবিতা। মানে, সৃজনশীল লেখালেখি যখন পেশায় পরিণত হয়, তখন সাহিত্যিকদের কী অবস্থা হয়। ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম ২০২২-এর ফল সেশনে অংশগ্রহণকারী ৩১টি দেশের ৩২ জন কবি, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকারের মধ্যে তিনজন থাকবেন আলোচক বা বক্তা; অন্যরা থাকবেন শ্রোতার আসনে। শ্রোতাদের মধ্যে আরও থাকবেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কয়েকজন শিক্ষক এবং সাহিত্যানুরাগী সাধারণ মানুষ। আলোচকদের বক্তব্য শেষ হলে শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন, আলোচকরা জবাব দেবেন।

তিন আলোচকের একজন কোরিয়ান কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্যের অধ্যাপক কাং বিয়োং ইউং। তিনি স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সাহিত্য পড়ান, সেই সুবাদে স্ত্রী-কন্যাসহ লুবলিয়ানা শহরে বাস করেন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জন্মগ্রহণকারী কাং বিয়োং ইউং কোরিয়ায় ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে প্রথমে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তারপর কোরিয়ান সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন এবং তারপর রাশিয়া গিয়ে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রুশ সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন পাঁচ বছর ধরে; রুশ ভাষা তিনি বেশ ভালো জানেন।

স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা থেকে কাং আর বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া সিটিতে পৌঁছি একই দিনে (২২ আগস্ট ২০২২); ঘটনাক্রমে বিমানবন্দরের ভেতরেই আমাদের দেখা হয়ে যায় এবং ইংরেজিতে সম্ভাষণ ও কুশলবিনিময়ের পরই আমাদের কথা বলা শুরু হয় রুশ ভাষায়। তারপর পরস্পরকে জানতে-বুঝতে এবং বন্ধুত্ব দানা বাঁধতে বেশি সময় লাগে না। ১৬ সেপ্টেম্বরের প্যানেল আলোচনায় তিনি কী বলবেন, এ নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন, এরকম কথা তিনি আমাকে বলতে শুরু করেন দশ-বারো দিন আগে থেকে। আলোচনার দিন যতই কাছে আসে ততই তাঁর মুশকিল বাড়তে থাকে।

 বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম ও দক্ষিণ কোরিয়ার কথাসাহিত্যিক কাং বিয়োং ইউং। ছবি: লেখকের সৌজন্যেআলোচনার বিষয়বস্তু তাঁর ঠিক পছন্দ হয়নি (যদিও তিনি নিজেই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন এখানে আসার মাসখানেক আগে), এ বিষয়ে কী বলা যায় তা ভেবেও পাচ্ছিলেন না, কারণ তাঁর পেশা সাহিত্য লেখা নয়, অধ্যাপনা করা। অর্থাৎ সৃজনশীল লেখালেখির প্রফেশনালাইজেশন তাঁর নিজের সমস্যা নয়, এ বিষয়ে তিনি যা-ই বলেন না কেন, তা হবে তাত্ত্বিক কথাবার্তা; কিন্তু অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বের ব্যাপারে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।

আমাকে এসব কথা বলে বলে তিনি দিন পার করতে থাকলেন। তারপর প্যানেল আলোচনার দিন ইংরেজিতে লেখা যে জিনিস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হলেন এবং পড়ে শোনালেন, সেটা আমি বাংলায় অনুবাদ করলাম।]

২০০৩ সালে আমি আমার বরকে বিয়ে করি। পরিচয়ের সময় সে আমাকে বলেছিল সে একজন ঔপন্যাসিক; কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি তাকে বলি যে সে উপন্যাস লেখে ঠিক আছে, কিন্তু সে সেই অর্থে ঔপন্যাসিক নয়, কারণ তাঁর কোনো প্রকাশিত উপন্যাস নেই। আমি এই কথা বলার পর সে বদলে যায়। ৩৪ দিন ধরে প্রতি রাতে ডিনারের পর ৯:২৭ থেকে ১২:০৬ মিনিট পর্যন্ত সে নিজের ঘরে কী যেন লেখে (দুই দিন পরপর সে আমার সঙ্গে সঙ্গম করারও চেষ্টা চালায়। আমাদের সঙ্গম চলে সাধারণত ১২:২৭ থেকে ১২:৩১ মিনিট পর্যন্ত)।

২০০৫ সালে আমার বরের প্রথম উপন্যাস বের হয়। সে উপন্যাসে ১৭টি অধ্যায় ছিল; ৩৪ দিন ধরে সে প্রতি দুই দিনে একটা করে অধ্যায় লিখেছিল। বইটার নাম কল্পনাপ্রসূত লোকজনের কাহিনি (টেলস অব ইমাজিনারি পিপল)। আর ২০০৬ সালে ছাপা হয় তার পর্নোগ্রাফিক ছোটগল্পের একটি সংকলন। সে বলে যে বইটা আমাদের যৌনজীবন নিয়ে; কিন্তু আমি বলব বইটা এত নোংরা আর এতই উরাধুরা যে সেটা আমাদের যৌনজীবনের গল্প হতেই পারে না। এই বইয়ের নাম অফুরন্ত (ইনএগজোটেবল)।

২০১২ সালে আমার বর একটা গল্প লেখে এক কোরিয়ান মধ্যবয়সী দুঃখী চাচাকে নিয়ে, যাকে তার বউ কয়েদ করে রেখেছে। কিন্তু তার সম্পাদক বলে যে গল্পটার সুর ‘মজার-কিন্তু-সত্যি সত্যি-মজার’ নয়; তাই সেটাকে বই করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি চাচ্ছিলাম আমার বর একটা বাস্তবধর্মী গল্প লিখুক। তাই ইচ্ছে না থাকলেও তাকে আমার আটকে রাখতে হয়। আমি তাকে একটা গোসিওনে আটকে রাখি তিন মাস। গোসিওন হলো খুব একটা ছোট্ট ঘর, কোরিয়ার ছাত্রছাত্রীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ রকম ঘরে থাকে। তো আমি আমার হাজবেন্ডকে যে গোসিওনে আটকে রাখলাম, সেটার আয়তন ছিল প্রায় ৩.৫ বর্গমিটার (৩৭ বর্গফুট)। এটা একটা গড়পড়তা আমেরিকান বাথরুমের সমান। আমার বর ১০০ দিন ধরে সেই গোসিওনে ছিল, একবারও বাড়ি আসেনি। ওল্ডবয় নামের কোরিয়ান ফিল্মের মূল চরিত্র ওহ ডায়ে-সু প্রাইভেট জেলে যেভাবে শুধু চায়নিজ ডাম্পলিং খেয়ে বেঁচে ছিল, আমার হাজবেন্ডও তার গোসিওনে ঠিক সে রকম শুধু চায়নিজ খাবার জাজাংমিয়োন খেয়ে থাকত। সেখানে সে যে বইটা লিখেছে, সেটার নাম মিস্টার ওয়াইয়ের অণ্ডকোষ অপসারণ সম্পর্কে সংগৃহীত নথিপত্র (অ্যাসোরটেড রেকর্ডস অব দ্য ক্যাস্ট্রেশন অব মিস্টার ওয়াই)।

২০১৩ সালে আমার বর কোনো বই পড়েনি, শুধু সংবাদপত্র পড়েছে, নিবন্ধ ইত্যাদি পড়েছে আর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের নামে খিস্তি করেছে; সেই প্রেসিডেন্টের ডাকনাম ছিল ‘মিস্তার র্যাত’। আমি তাকে এসব করতে মানা করি, বলি যে একটা উপন্যাস লেখো, যেটা ঔপন্যাসিকের কাজ। সে বলে যে সে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে একটা উপন্যাস লিখবে; কিন্তু যে উপন্যাসটা লিখেছে, সেটার একটা বাক্যও নিজে লেখেনি। সেই উপন্যাসের প্রত্যেকটা বাক্য সে নিয়েছে বা কপি করেছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের আর্টিকেল থেকে। সে বলে তার উপন্যাসটা হলো কম্পিউটারের মাউস দিয়ে লেখা একটা ফিকশন, কোনো কি-বোর্ড ব্যবহার করেনি। এই বইটার নাম হলো, আপনারা জানেন এগুলো সব মিছা কথা, ঠিক আছে? (ইউ নো দিজ অল আর লাইজ, রাইট?) বইটার প্রচ্ছদে ছিল প্রেসিডেন্টের মতো দেখতে একটা ইঁদুরের ছবি।

২০১৮ সালে আমার বর আমাকে বলে যে তাকে যদি মাত্র একটা সপ্তাহ সময় দেওয়া হতো, তাহলে সে একটা উপন্যাস লিখে ফেলত। আমি বলি, চেষ্টা করে দ্যাখো। সে গিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের অফিসারকে বলে তার পেটব্যথা; এ কথা বলে সে এক সপ্তাহ কাজে গেল না (অবাক কথা হলো, তার পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা)। কাজে না গিয়ে সে গিয়ে ঢুকল একটা ঘরে, তারপর ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল। সেখানে একমাত্র যে কাজটা সে করত তা হলো উপন্যাস লেখা। সত্যি বলতে, আমি জানি না পুরো একটা সপ্তাহ ধরে সে কী খেয়ে ছিল, কোথায় প্রস্রাব-পায়খানা করেছিল। এক সপ্তাহ পর সে কথামতো বেরিয়ে এল একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে, আর ঘরের ভেতরটায় রইল আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ। সে এই বইটার নাম দিয়েছে আমার চুলকানিপ্রবণ মধ্যমা (মাই ইচি মিডলফিংগার)।

২০২২ সালে আমার বর ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের (আইডব্লিউপি) হ্যাট মাথায় পরে আমাকে বলে যে সে আইওয়া সিটি লাইব্রেরিতে ‘পেশাজীবিতার ভূত’ (স্পেকটর অব প্রফেশনালাইজেশন) নিয়ে বক্তৃতা দেবে। এ কথা শুনে, সত্যি বলছি, আমি চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু সে বলে চিন্তার কিছু নাই। কারণ, সে মনে করে সে একটা ডিলিজেন্ট জিনিয়াস, মানে, শিল্পদেবী তাকে চুমু দিয়েছে। কিন্তু আমি হানড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত যে সে একটা অলস, একটা মাথামোটা নির্বোধ। ‘শিল্পীর পেশাজীবিতা’ কী জিনিস তা কোনোভাবেই তার জানার কথা নয়।

তার সম্পর্কে আমি যেটুকু জানি, সে নিছকই একজন লেখক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসে। সাহিত্যে পৌঁছতে নিজের রাস্তাটা খুঁজে পাওয়ার জন্য সে কখনো এটা-সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, কখনো নিজেই পরীক্ষার বিষয়বস্তু হয়। সে একটা ডানপিটে, যে সাহিত্য ভালোবাসে।

কিন্তু সত্যি বলছি, তার ‘সাহিত্য’ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমি তাকে এ জন্য বিয়ে করিনি যে সে একজন ভালো লেখক। বিয়ে করেছিলাম সে দেখতে হ্যান্ডসাম ছিল বলে।

মূল: কাং বিয়োং ইউং
ভূমিকা ও অনুবাদ: মশিউল আলম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত