আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফেরার পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে যাচ্ছে। রিপাবলিকান প্রশাসন সব সময়ই এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের থেকে ভিন্ন অবস্থান নেয়। তারা সাধারণত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বেসরকারি খাতের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গবৈষম্য ভাঙা বা প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার বিস্তারের মতো বিষয়কে নয়।
তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
বিশ্বজুড়ে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে কংগ্রেস এমন এক আইন পাস করে, যাতে বলা হয়—বিদেশে দেওয়া সহায়তায় নারীদের জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিপাবলিকান সিনেটর চার্লস এইচ পার্সির প্রচেষ্টায় এই ধারা আইনে যুক্ত হয়। এর ফলে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ অফিস।
তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রশাসন এই আইন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। শুরু থেকেই প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ইস্যু বিভাজন তৈরি করেছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান চালু করেন ‘মেক্সিকো সিটি পলিসি’, যার মাধ্যমে গর্ভপাত সংক্রান্ত সেবা দেয় বা গর্ভপাতের পক্ষে কাজ করে—এমন কোনো বিদেশি সংস্থা মার্কিন সহায়তা পেত না। তারপর থেকে প্রতিটি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই নীতি চালু করেছেন এবং প্রতিটি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেছেন।
তবুও দুই দলের নেতারা একমত ছিলেন এই বিষয়ে—বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস, সংক্রামক রোগ মোকাবিলা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে হলে নারীতে বিনিয়োগ অপরিহার্য, কারণ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। রিগ্যানের প্রথম মেয়াদেই ইউএসএআইডি প্রকাশ করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ নীতি। এতে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নারীরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
এই ধারা বজায় রেখে ২০১৯ সালে কংগ্রেস পাস করে দ্বিদলীয় ‘উইমেনস এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাক্ট’। ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনও চালু করে ‘উইমেনস গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো। কিন্তু চলতি বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দ্রুত ইউএসএইড ও এর বেশির ভাগ কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সীমিত হয়ে শুধু সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীভূত, আর এর ব্যবস্থাপনা এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের হাতে।
২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজননস্বাস্থ্য, মা ও শিশুস্বাস্থ্য খাতের সব দ্বিপক্ষীয় অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে—শুধু পোলিও কর্মসূচি ছাড়া। নতুন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতিতেও নারীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমর্থনকেও পিছিয়ে দিয়েছে—যা আগে ছিল মার্কিন গণতন্ত্র সহায়তার দ্বিদলীয় মূল ভিত্তি।
১৯৮৩ সালে রিগ্যান প্রশাসনে গঠিত হয় ‘ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি’ (এনইডি) ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউএসএইডের সঙ্গে মিলে বিদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে কাজ করত। সময়ের সঙ্গে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ—যা কোনো দলীয় প্রকল্প নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক যৌথ প্রতিশ্রুতি ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ২০০৬ সাল থেকে ‘উইমেন্স ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক’-এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে নারী নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। এই এনইডির অংশীদার এবং এটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যদিও এনইডি এখনো পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে তাদের অর্থায়ন ধরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে অর্থায়ন বন্ধ করতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সহায়তার অন্যান্য সব উৎস কেটে দিয়েছে।
বিদেশে সহায়তা কমানোর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতা বিষয়ক কাঠামোটিও ভেঙে দিয়েছে। গত জুলাইয়ে ট্রাম্পের নির্দেশে পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট পুনর্গঠনের সময় বাতিল করা হয় গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ (জিডব্লিউআই) কার্যালয়। একই সঙ্গে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আরও কয়েকটি দপ্তর—যেমন মানব পাচারবিরোধী দপ্তর অফিস অন মনিটর অ্যান্ড কমব্যাট ট্রাফিকিং ইন পারসন এবং ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার—এর কার্যক্রমও সীমিত করে দেওয়া হয়।
অধুনালুপ্ত জিডব্লিউআই দপ্তরটি নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি শুধু নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই নয়, কূটনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হতো। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘মানুষের মন জয়’ করার লড়াইয়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বুঝতে পেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯৬১ সালেই নারীবিষয়ক এক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক ব্যুরোর অধীনে আন্তর্জাতিক নারী কর্মসূচি অফিস গঠন করে। তখন নারীর অধিকারকে বহুপক্ষীয় মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হতো।
১৯৯০-এর দশকে কংগ্রেস এ উদ্যোগকে আরও জোরালো করে। নারীবাদী সংগঠনগুলোর তীব্র চাপের মুখে ১৯৯৪ সালের ফরেন রিলেশন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্টে পররাষ্ট্র দপ্তরকে আন্তর্জাতিক নারী মানবাধিকার বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ‘অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ইস্যুজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও সেটি চালু রাখেন। পরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দপ্তরটিকে উন্নীত করে সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে নিয়ে আসেন এবং গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজের জন্য একজন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ নিয়োগ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জিডব্লিউআই তিন প্রশাসনের সময় ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নারী ও লিঙ্গ বিষয়ে নীতিগত সহায়তা দিয়েছে, এমনকি তাঁর প্রথম মেয়াদকালেও। দপ্তরটি বন্ধের পরিণতি নিয়ে জানতে চাইলে এ বছরের মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কংগ্রেসে জানান, এখন থেকে নারী বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আঞ্চলিক দপ্তরগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজনীয় সম্পদ, জনবল বা দিকনির্দেশনা আর কিছুই এখন আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে নেই।
গত আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নারীর অধিকার নিয়ে থাকা নিয়মিত অংশটি দেখা যায়নি। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করা হতো। তখন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় পররাষ্ট্র দপ্তর সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছিল, নারীর অধিকার ‘বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ পরে ১৯৯৪ সালে পররাষ্ট্র দপ্তর নারীর অধিকারের পরিধি আরও বাড়ায়। তখন গার্হস্থ্য সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও মানবপাচারের মতো বিষয়ও এতে যুক্ত হয়। নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ চলছিল—এই বছর পর্যন্ত।
সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি আসে এপ্রিলে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে পোস্ট দিয়ে জানান, পেন্টাগন ‘গর্বের সঙ্গে উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে।’ এই কর্মসূচিটি ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা নীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সংঘাতকবলিত অঞ্চলে নারীরা কীভাবে প্রভাবিত হন, তা বিবেচনায় নেওয়া। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সংঘাতে নারী ও পুরুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, আর নারীর অংশগ্রহণ শান্তি প্রক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনে।
হেগসেথ দাবি করেন, ডব্লিউপিএস ‘বাইডেনের উদ্যোগ’ এবং ‘সেনারা এটিকে ঘৃণা করে।’ দুটি দাবিই ভুল। কারণ, প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ই ২০১৭ সালে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে পাস হয় ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট।’ তখন এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। সিনেটে মার্কো রুবিও (বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন এর সহ–প্রস্তাবক, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি উত্থাপন করেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে ডব্লিউপিএস কৌশল প্রকাশ করে। হোয়াইট হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘নারীর সমতা অগ্রগতিতে দৃঢ় ও অটল অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করছে। পরে জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে এই কৌশলের বাস্তবায়ন আরও বাড়ানো হয়। এর আওতায় প্রতিরক্ষা দপ্তরে ‘লিঙ্গ উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি, সংঘাত ও সংকটে লিঙ্গভিত্তিক প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা এবং সংঘাতক্ষেত্রে বেসামরিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
ডব্লিউপিএস কর্মসূচির পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেক সমর্থন ছিল। তাদের মতে, এটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। গত এপ্রিলে ফাঁস হওয়া জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক স্মারকে ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়, ডব্লিউপিএস প্রোগ্রাম যেন বাতিল না করা হয়। স্মারকে বলা হয়, এটি ‘কম খরচে উচ্চ ফলাফল এনে দেয়’ এবং ‘প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি সুবিধা দেয়।’ এমনকি এটি উগ্রবাদ রোধ, পাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া ও চীন-রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়ক।
কিন্তু বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন সেই ঐকমত্য থেকে সরে এসেছে যে, বিশ্বাসে নারীর অংশগ্রহণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি ও সামরিক কার্যক্রমে মূল্য যোগ করে। গত মাসে হেগসেথ আবারও নারী অন্তর্ভুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘ডিফেন্স অ্যাডভাইজরি কমিটি অন উইমেন ইন দ্য সার্ভিসেস’ বিলুপ্ত করেন। হেগসেথের অভিযোগ, কমিটিটি ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী নারীবাদী এজেন্ডা চালাচ্ছে।’ অথচ এই কমিটিই নারী সেনাদের জন্য উপযুক্ত বডি আর্মারের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতার যে কোনো উদ্যোগকে ‘চরম বামপন্থী প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে যে দ্বিদলীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেটিকেই এখন হোয়াইট হাউস ভেঙে দিচ্ছে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফেরার পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে যাচ্ছে। রিপাবলিকান প্রশাসন সব সময়ই এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের থেকে ভিন্ন অবস্থান নেয়। তারা সাধারণত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বেসরকারি খাতের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গবৈষম্য ভাঙা বা প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার বিস্তারের মতো বিষয়কে নয়।
তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
বিশ্বজুড়ে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে কংগ্রেস এমন এক আইন পাস করে, যাতে বলা হয়—বিদেশে দেওয়া সহায়তায় নারীদের জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিপাবলিকান সিনেটর চার্লস এইচ পার্সির প্রচেষ্টায় এই ধারা আইনে যুক্ত হয়। এর ফলে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ অফিস।
তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রশাসন এই আইন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। শুরু থেকেই প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ইস্যু বিভাজন তৈরি করেছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান চালু করেন ‘মেক্সিকো সিটি পলিসি’, যার মাধ্যমে গর্ভপাত সংক্রান্ত সেবা দেয় বা গর্ভপাতের পক্ষে কাজ করে—এমন কোনো বিদেশি সংস্থা মার্কিন সহায়তা পেত না। তারপর থেকে প্রতিটি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই নীতি চালু করেছেন এবং প্রতিটি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেছেন।
তবুও দুই দলের নেতারা একমত ছিলেন এই বিষয়ে—বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস, সংক্রামক রোগ মোকাবিলা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে হলে নারীতে বিনিয়োগ অপরিহার্য, কারণ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। রিগ্যানের প্রথম মেয়াদেই ইউএসএআইডি প্রকাশ করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ নীতি। এতে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নারীরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
এই ধারা বজায় রেখে ২০১৯ সালে কংগ্রেস পাস করে দ্বিদলীয় ‘উইমেনস এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাক্ট’। ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনও চালু করে ‘উইমেনস গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো। কিন্তু চলতি বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দ্রুত ইউএসএইড ও এর বেশির ভাগ কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সীমিত হয়ে শুধু সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীভূত, আর এর ব্যবস্থাপনা এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের হাতে।
২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজননস্বাস্থ্য, মা ও শিশুস্বাস্থ্য খাতের সব দ্বিপক্ষীয় অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে—শুধু পোলিও কর্মসূচি ছাড়া। নতুন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতিতেও নারীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমর্থনকেও পিছিয়ে দিয়েছে—যা আগে ছিল মার্কিন গণতন্ত্র সহায়তার দ্বিদলীয় মূল ভিত্তি।
১৯৮৩ সালে রিগ্যান প্রশাসনে গঠিত হয় ‘ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি’ (এনইডি) ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউএসএইডের সঙ্গে মিলে বিদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে কাজ করত। সময়ের সঙ্গে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ—যা কোনো দলীয় প্রকল্প নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক যৌথ প্রতিশ্রুতি ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ২০০৬ সাল থেকে ‘উইমেন্স ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক’-এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে নারী নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। এই এনইডির অংশীদার এবং এটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যদিও এনইডি এখনো পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে তাদের অর্থায়ন ধরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে অর্থায়ন বন্ধ করতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সহায়তার অন্যান্য সব উৎস কেটে দিয়েছে।
বিদেশে সহায়তা কমানোর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতা বিষয়ক কাঠামোটিও ভেঙে দিয়েছে। গত জুলাইয়ে ট্রাম্পের নির্দেশে পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট পুনর্গঠনের সময় বাতিল করা হয় গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ (জিডব্লিউআই) কার্যালয়। একই সঙ্গে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আরও কয়েকটি দপ্তর—যেমন মানব পাচারবিরোধী দপ্তর অফিস অন মনিটর অ্যান্ড কমব্যাট ট্রাফিকিং ইন পারসন এবং ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার—এর কার্যক্রমও সীমিত করে দেওয়া হয়।
অধুনালুপ্ত জিডব্লিউআই দপ্তরটি নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি শুধু নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই নয়, কূটনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হতো। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘মানুষের মন জয়’ করার লড়াইয়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বুঝতে পেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯৬১ সালেই নারীবিষয়ক এক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক ব্যুরোর অধীনে আন্তর্জাতিক নারী কর্মসূচি অফিস গঠন করে। তখন নারীর অধিকারকে বহুপক্ষীয় মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হতো।
১৯৯০-এর দশকে কংগ্রেস এ উদ্যোগকে আরও জোরালো করে। নারীবাদী সংগঠনগুলোর তীব্র চাপের মুখে ১৯৯৪ সালের ফরেন রিলেশন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্টে পররাষ্ট্র দপ্তরকে আন্তর্জাতিক নারী মানবাধিকার বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ‘অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ইস্যুজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও সেটি চালু রাখেন। পরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দপ্তরটিকে উন্নীত করে সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে নিয়ে আসেন এবং গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজের জন্য একজন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ নিয়োগ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জিডব্লিউআই তিন প্রশাসনের সময় ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নারী ও লিঙ্গ বিষয়ে নীতিগত সহায়তা দিয়েছে, এমনকি তাঁর প্রথম মেয়াদকালেও। দপ্তরটি বন্ধের পরিণতি নিয়ে জানতে চাইলে এ বছরের মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কংগ্রেসে জানান, এখন থেকে নারী বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আঞ্চলিক দপ্তরগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজনীয় সম্পদ, জনবল বা দিকনির্দেশনা আর কিছুই এখন আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে নেই।
গত আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নারীর অধিকার নিয়ে থাকা নিয়মিত অংশটি দেখা যায়নি। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করা হতো। তখন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় পররাষ্ট্র দপ্তর সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছিল, নারীর অধিকার ‘বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ পরে ১৯৯৪ সালে পররাষ্ট্র দপ্তর নারীর অধিকারের পরিধি আরও বাড়ায়। তখন গার্হস্থ্য সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও মানবপাচারের মতো বিষয়ও এতে যুক্ত হয়। নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ চলছিল—এই বছর পর্যন্ত।
সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি আসে এপ্রিলে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে পোস্ট দিয়ে জানান, পেন্টাগন ‘গর্বের সঙ্গে উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে।’ এই কর্মসূচিটি ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা নীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সংঘাতকবলিত অঞ্চলে নারীরা কীভাবে প্রভাবিত হন, তা বিবেচনায় নেওয়া। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সংঘাতে নারী ও পুরুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, আর নারীর অংশগ্রহণ শান্তি প্রক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনে।
হেগসেথ দাবি করেন, ডব্লিউপিএস ‘বাইডেনের উদ্যোগ’ এবং ‘সেনারা এটিকে ঘৃণা করে।’ দুটি দাবিই ভুল। কারণ, প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ই ২০১৭ সালে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে পাস হয় ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট।’ তখন এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। সিনেটে মার্কো রুবিও (বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন এর সহ–প্রস্তাবক, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি উত্থাপন করেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে ডব্লিউপিএস কৌশল প্রকাশ করে। হোয়াইট হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘নারীর সমতা অগ্রগতিতে দৃঢ় ও অটল অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করছে। পরে জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে এই কৌশলের বাস্তবায়ন আরও বাড়ানো হয়। এর আওতায় প্রতিরক্ষা দপ্তরে ‘লিঙ্গ উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি, সংঘাত ও সংকটে লিঙ্গভিত্তিক প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা এবং সংঘাতক্ষেত্রে বেসামরিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
ডব্লিউপিএস কর্মসূচির পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেক সমর্থন ছিল। তাদের মতে, এটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। গত এপ্রিলে ফাঁস হওয়া জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক স্মারকে ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়, ডব্লিউপিএস প্রোগ্রাম যেন বাতিল না করা হয়। স্মারকে বলা হয়, এটি ‘কম খরচে উচ্চ ফলাফল এনে দেয়’ এবং ‘প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি সুবিধা দেয়।’ এমনকি এটি উগ্রবাদ রোধ, পাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া ও চীন-রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়ক।
কিন্তু বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন সেই ঐকমত্য থেকে সরে এসেছে যে, বিশ্বাসে নারীর অংশগ্রহণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি ও সামরিক কার্যক্রমে মূল্য যোগ করে। গত মাসে হেগসেথ আবারও নারী অন্তর্ভুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘ডিফেন্স অ্যাডভাইজরি কমিটি অন উইমেন ইন দ্য সার্ভিসেস’ বিলুপ্ত করেন। হেগসেথের অভিযোগ, কমিটিটি ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী নারীবাদী এজেন্ডা চালাচ্ছে।’ অথচ এই কমিটিই নারী সেনাদের জন্য উপযুক্ত বডি আর্মারের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতার যে কোনো উদ্যোগকে ‘চরম বামপন্থী প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে যে দ্বিদলীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেটিকেই এখন হোয়াইট হাউস ভেঙে দিচ্ছে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফেরার পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে যাচ্ছে। রিপাবলিকান প্রশাসন সব সময়ই এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের থেকে ভিন্ন অবস্থান নেয়। তারা সাধারণত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বেসরকারি খাতের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গবৈষম্য ভাঙা বা প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার বিস্তারের মতো বিষয়কে নয়।
তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
বিশ্বজুড়ে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে কংগ্রেস এমন এক আইন পাস করে, যাতে বলা হয়—বিদেশে দেওয়া সহায়তায় নারীদের জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিপাবলিকান সিনেটর চার্লস এইচ পার্সির প্রচেষ্টায় এই ধারা আইনে যুক্ত হয়। এর ফলে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ অফিস।
তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রশাসন এই আইন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। শুরু থেকেই প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ইস্যু বিভাজন তৈরি করেছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান চালু করেন ‘মেক্সিকো সিটি পলিসি’, যার মাধ্যমে গর্ভপাত সংক্রান্ত সেবা দেয় বা গর্ভপাতের পক্ষে কাজ করে—এমন কোনো বিদেশি সংস্থা মার্কিন সহায়তা পেত না। তারপর থেকে প্রতিটি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই নীতি চালু করেছেন এবং প্রতিটি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেছেন।
তবুও দুই দলের নেতারা একমত ছিলেন এই বিষয়ে—বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস, সংক্রামক রোগ মোকাবিলা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে হলে নারীতে বিনিয়োগ অপরিহার্য, কারণ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। রিগ্যানের প্রথম মেয়াদেই ইউএসএআইডি প্রকাশ করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ নীতি। এতে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নারীরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
এই ধারা বজায় রেখে ২০১৯ সালে কংগ্রেস পাস করে দ্বিদলীয় ‘উইমেনস এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাক্ট’। ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনও চালু করে ‘উইমেনস গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো। কিন্তু চলতি বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দ্রুত ইউএসএইড ও এর বেশির ভাগ কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সীমিত হয়ে শুধু সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীভূত, আর এর ব্যবস্থাপনা এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের হাতে।
২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজননস্বাস্থ্য, মা ও শিশুস্বাস্থ্য খাতের সব দ্বিপক্ষীয় অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে—শুধু পোলিও কর্মসূচি ছাড়া। নতুন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতিতেও নারীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমর্থনকেও পিছিয়ে দিয়েছে—যা আগে ছিল মার্কিন গণতন্ত্র সহায়তার দ্বিদলীয় মূল ভিত্তি।
১৯৮৩ সালে রিগ্যান প্রশাসনে গঠিত হয় ‘ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি’ (এনইডি) ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউএসএইডের সঙ্গে মিলে বিদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে কাজ করত। সময়ের সঙ্গে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ—যা কোনো দলীয় প্রকল্প নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক যৌথ প্রতিশ্রুতি ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ২০০৬ সাল থেকে ‘উইমেন্স ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক’-এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে নারী নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। এই এনইডির অংশীদার এবং এটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যদিও এনইডি এখনো পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে তাদের অর্থায়ন ধরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে অর্থায়ন বন্ধ করতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সহায়তার অন্যান্য সব উৎস কেটে দিয়েছে।
বিদেশে সহায়তা কমানোর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতা বিষয়ক কাঠামোটিও ভেঙে দিয়েছে। গত জুলাইয়ে ট্রাম্পের নির্দেশে পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট পুনর্গঠনের সময় বাতিল করা হয় গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ (জিডব্লিউআই) কার্যালয়। একই সঙ্গে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আরও কয়েকটি দপ্তর—যেমন মানব পাচারবিরোধী দপ্তর অফিস অন মনিটর অ্যান্ড কমব্যাট ট্রাফিকিং ইন পারসন এবং ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার—এর কার্যক্রমও সীমিত করে দেওয়া হয়।
অধুনালুপ্ত জিডব্লিউআই দপ্তরটি নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি শুধু নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই নয়, কূটনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হতো। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘মানুষের মন জয়’ করার লড়াইয়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বুঝতে পেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯৬১ সালেই নারীবিষয়ক এক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক ব্যুরোর অধীনে আন্তর্জাতিক নারী কর্মসূচি অফিস গঠন করে। তখন নারীর অধিকারকে বহুপক্ষীয় মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হতো।
১৯৯০-এর দশকে কংগ্রেস এ উদ্যোগকে আরও জোরালো করে। নারীবাদী সংগঠনগুলোর তীব্র চাপের মুখে ১৯৯৪ সালের ফরেন রিলেশন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্টে পররাষ্ট্র দপ্তরকে আন্তর্জাতিক নারী মানবাধিকার বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ‘অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ইস্যুজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও সেটি চালু রাখেন। পরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দপ্তরটিকে উন্নীত করে সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে নিয়ে আসেন এবং গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজের জন্য একজন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ নিয়োগ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জিডব্লিউআই তিন প্রশাসনের সময় ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নারী ও লিঙ্গ বিষয়ে নীতিগত সহায়তা দিয়েছে, এমনকি তাঁর প্রথম মেয়াদকালেও। দপ্তরটি বন্ধের পরিণতি নিয়ে জানতে চাইলে এ বছরের মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কংগ্রেসে জানান, এখন থেকে নারী বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আঞ্চলিক দপ্তরগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজনীয় সম্পদ, জনবল বা দিকনির্দেশনা আর কিছুই এখন আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে নেই।
গত আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নারীর অধিকার নিয়ে থাকা নিয়মিত অংশটি দেখা যায়নি। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করা হতো। তখন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় পররাষ্ট্র দপ্তর সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছিল, নারীর অধিকার ‘বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ পরে ১৯৯৪ সালে পররাষ্ট্র দপ্তর নারীর অধিকারের পরিধি আরও বাড়ায়। তখন গার্হস্থ্য সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও মানবপাচারের মতো বিষয়ও এতে যুক্ত হয়। নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ চলছিল—এই বছর পর্যন্ত।
সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি আসে এপ্রিলে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে পোস্ট দিয়ে জানান, পেন্টাগন ‘গর্বের সঙ্গে উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে।’ এই কর্মসূচিটি ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা নীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সংঘাতকবলিত অঞ্চলে নারীরা কীভাবে প্রভাবিত হন, তা বিবেচনায় নেওয়া। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সংঘাতে নারী ও পুরুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, আর নারীর অংশগ্রহণ শান্তি প্রক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনে।
হেগসেথ দাবি করেন, ডব্লিউপিএস ‘বাইডেনের উদ্যোগ’ এবং ‘সেনারা এটিকে ঘৃণা করে।’ দুটি দাবিই ভুল। কারণ, প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ই ২০১৭ সালে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে পাস হয় ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট।’ তখন এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। সিনেটে মার্কো রুবিও (বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন এর সহ–প্রস্তাবক, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি উত্থাপন করেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে ডব্লিউপিএস কৌশল প্রকাশ করে। হোয়াইট হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘নারীর সমতা অগ্রগতিতে দৃঢ় ও অটল অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করছে। পরে জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে এই কৌশলের বাস্তবায়ন আরও বাড়ানো হয়। এর আওতায় প্রতিরক্ষা দপ্তরে ‘লিঙ্গ উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি, সংঘাত ও সংকটে লিঙ্গভিত্তিক প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা এবং সংঘাতক্ষেত্রে বেসামরিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
ডব্লিউপিএস কর্মসূচির পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেক সমর্থন ছিল। তাদের মতে, এটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। গত এপ্রিলে ফাঁস হওয়া জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক স্মারকে ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়, ডব্লিউপিএস প্রোগ্রাম যেন বাতিল না করা হয়। স্মারকে বলা হয়, এটি ‘কম খরচে উচ্চ ফলাফল এনে দেয়’ এবং ‘প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি সুবিধা দেয়।’ এমনকি এটি উগ্রবাদ রোধ, পাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া ও চীন-রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়ক।
কিন্তু বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন সেই ঐকমত্য থেকে সরে এসেছে যে, বিশ্বাসে নারীর অংশগ্রহণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি ও সামরিক কার্যক্রমে মূল্য যোগ করে। গত মাসে হেগসেথ আবারও নারী অন্তর্ভুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘ডিফেন্স অ্যাডভাইজরি কমিটি অন উইমেন ইন দ্য সার্ভিসেস’ বিলুপ্ত করেন। হেগসেথের অভিযোগ, কমিটিটি ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী নারীবাদী এজেন্ডা চালাচ্ছে।’ অথচ এই কমিটিই নারী সেনাদের জন্য উপযুক্ত বডি আর্মারের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতার যে কোনো উদ্যোগকে ‘চরম বামপন্থী প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে যে দ্বিদলীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেটিকেই এখন হোয়াইট হাউস ভেঙে দিচ্ছে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফেরার পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলে যাচ্ছে। রিপাবলিকান প্রশাসন সব সময়ই এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের থেকে ভিন্ন অবস্থান নেয়। তারা সাধারণত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বেসরকারি খাতের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গবৈষম্য ভাঙা বা প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার বিস্তারের মতো বিষয়কে নয়।
তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
বিশ্বজুড়ে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে কংগ্রেস এমন এক আইন পাস করে, যাতে বলা হয়—বিদেশে দেওয়া সহায়তায় নারীদের জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিপাবলিকান সিনেটর চার্লস এইচ পার্সির প্রচেষ্টায় এই ধারা আইনে যুক্ত হয়। এর ফলে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ অফিস।
তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রশাসন এই আইন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। শুরু থেকেই প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ইস্যু বিভাজন তৈরি করেছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান চালু করেন ‘মেক্সিকো সিটি পলিসি’, যার মাধ্যমে গর্ভপাত সংক্রান্ত সেবা দেয় বা গর্ভপাতের পক্ষে কাজ করে—এমন কোনো বিদেশি সংস্থা মার্কিন সহায়তা পেত না। তারপর থেকে প্রতিটি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই নীতি চালু করেছেন এবং প্রতিটি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেছেন।
তবুও দুই দলের নেতারা একমত ছিলেন এই বিষয়ে—বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস, সংক্রামক রোগ মোকাবিলা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে হলে নারীতে বিনিয়োগ অপরিহার্য, কারণ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। রিগ্যানের প্রথম মেয়াদেই ইউএসএআইডি প্রকাশ করে ‘উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট’ নীতি। এতে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নারীরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
এই ধারা বজায় রেখে ২০১৯ সালে কংগ্রেস পাস করে দ্বিদলীয় ‘উইমেনস এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাক্ট’। ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনও চালু করে ‘উইমেনস গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’, যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো। কিন্তু চলতি বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দ্রুত ইউএসএইড ও এর বেশির ভাগ কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সীমিত হয়ে শুধু সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীভূত, আর এর ব্যবস্থাপনা এখন পররাষ্ট্র দপ্তরের হাতে।
২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজননস্বাস্থ্য, মা ও শিশুস্বাস্থ্য খাতের সব দ্বিপক্ষীয় অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে—শুধু পোলিও কর্মসূচি ছাড়া। নতুন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতিতেও নারীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমর্থনকেও পিছিয়ে দিয়েছে—যা আগে ছিল মার্কিন গণতন্ত্র সহায়তার দ্বিদলীয় মূল ভিত্তি।
১৯৮৩ সালে রিগ্যান প্রশাসনে গঠিত হয় ‘ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি’ (এনইডি) ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউএসএইডের সঙ্গে মিলে বিদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে কাজ করত। সময়ের সঙ্গে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ—যা কোনো দলীয় প্রকল্প নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক যৌথ প্রতিশ্রুতি ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ২০০৬ সাল থেকে ‘উইমেন্স ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক’-এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে নারী নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। এই এনইডির অংশীদার এবং এটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যদিও এনইডি এখনো পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে তাদের অর্থায়ন ধরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে অর্থায়ন বন্ধ করতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সহায়তার অন্যান্য সব উৎস কেটে দিয়েছে।
বিদেশে সহায়তা কমানোর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতা বিষয়ক কাঠামোটিও ভেঙে দিয়েছে। গত জুলাইয়ে ট্রাম্পের নির্দেশে পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট পুনর্গঠনের সময় বাতিল করা হয় গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজ (জিডব্লিউআই) কার্যালয়। একই সঙ্গে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আরও কয়েকটি দপ্তর—যেমন মানব পাচারবিরোধী দপ্তর অফিস অন মনিটর অ্যান্ড কমব্যাট ট্রাফিকিং ইন পারসন এবং ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার—এর কার্যক্রমও সীমিত করে দেওয়া হয়।
অধুনালুপ্ত জিডব্লিউআই দপ্তরটি নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি শুধু নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই নয়, কূটনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হতো। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘মানুষের মন জয়’ করার লড়াইয়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বুঝতে পেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯৬১ সালেই নারীবিষয়ক এক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক ব্যুরোর অধীনে আন্তর্জাতিক নারী কর্মসূচি অফিস গঠন করে। তখন নারীর অধিকারকে বহুপক্ষীয় মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হতো।
১৯৯০-এর দশকে কংগ্রেস এ উদ্যোগকে আরও জোরালো করে। নারীবাদী সংগঠনগুলোর তীব্র চাপের মুখে ১৯৯৪ সালের ফরেন রিলেশন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্টে পররাষ্ট্র দপ্তরকে আন্তর্জাতিক নারী মানবাধিকার বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ‘অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ইস্যুজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও সেটি চালু রাখেন। পরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দপ্তরটিকে উন্নীত করে সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে নিয়ে আসেন এবং গ্লোবাল উইমেন্স ইস্যুজের জন্য একজন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ নিয়োগ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত জিডব্লিউআই তিন প্রশাসনের সময় ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নারী ও লিঙ্গ বিষয়ে নীতিগত সহায়তা দিয়েছে, এমনকি তাঁর প্রথম মেয়াদকালেও। দপ্তরটি বন্ধের পরিণতি নিয়ে জানতে চাইলে এ বছরের মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কংগ্রেসে জানান, এখন থেকে নারী বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আঞ্চলিক দপ্তরগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজনীয় সম্পদ, জনবল বা দিকনির্দেশনা আর কিছুই এখন আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে নেই।
গত আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নারীর অধিকার নিয়ে থাকা নিয়মিত অংশটি দেখা যায়নি। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করা হতো। তখন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় পররাষ্ট্র দপ্তর সব দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছিল, নারীর অধিকার ‘বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ পরে ১৯৯৪ সালে পররাষ্ট্র দপ্তর নারীর অধিকারের পরিধি আরও বাড়ায়। তখন গার্হস্থ্য সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও মানবপাচারের মতো বিষয়ও এতে যুক্ত হয়। নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ চলছিল—এই বছর পর্যন্ত।
সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি আসে এপ্রিলে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে পোস্ট দিয়ে জানান, পেন্টাগন ‘গর্বের সঙ্গে উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে।’ এই কর্মসূচিটি ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চালু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা নীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সংঘাতকবলিত অঞ্চলে নারীরা কীভাবে প্রভাবিত হন, তা বিবেচনায় নেওয়া। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, সংঘাতে নারী ও পুরুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, আর নারীর অংশগ্রহণ শান্তি প্রক্রিয়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনে।
হেগসেথ দাবি করেন, ডব্লিউপিএস ‘বাইডেনের উদ্যোগ’ এবং ‘সেনারা এটিকে ঘৃণা করে।’ দুটি দাবিই ভুল। কারণ, প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ই ২০১৭ সালে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে পাস হয় ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট।’ তখন এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। সিনেটে মার্কো রুবিও (বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন এর সহ–প্রস্তাবক, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি উত্থাপন করেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে ডব্লিউপিএস কৌশল প্রকাশ করে। হোয়াইট হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘নারীর সমতা অগ্রগতিতে দৃঢ় ও অটল অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করছে। পরে জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে এই কৌশলের বাস্তবায়ন আরও বাড়ানো হয়। এর আওতায় প্রতিরক্ষা দপ্তরে ‘লিঙ্গ উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি, সংঘাত ও সংকটে লিঙ্গভিত্তিক প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা এবং সংঘাতক্ষেত্রে বেসামরিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
ডব্লিউপিএস কর্মসূচির পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেক সমর্থন ছিল। তাদের মতে, এটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। গত এপ্রিলে ফাঁস হওয়া জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক স্মারকে ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়, ডব্লিউপিএস প্রোগ্রাম যেন বাতিল না করা হয়। স্মারকে বলা হয়, এটি ‘কম খরচে উচ্চ ফলাফল এনে দেয়’ এবং ‘প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি সুবিধা দেয়।’ এমনকি এটি উগ্রবাদ রোধ, পাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া ও চীন-রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়ক।
কিন্তু বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন সেই ঐকমত্য থেকে সরে এসেছে যে, বিশ্বাসে নারীর অংশগ্রহণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি ও সামরিক কার্যক্রমে মূল্য যোগ করে। গত মাসে হেগসেথ আবারও নারী অন্তর্ভুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘ডিফেন্স অ্যাডভাইজরি কমিটি অন উইমেন ইন দ্য সার্ভিসেস’ বিলুপ্ত করেন। হেগসেথের অভিযোগ, কমিটিটি ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী নারীবাদী এজেন্ডা চালাচ্ছে।’ অথচ এই কমিটিই নারী সেনাদের জন্য উপযুক্ত বডি আর্মারের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে নারী ও লিঙ্গসমতার যে কোনো উদ্যোগকে ‘চরম বামপন্থী প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে যে দ্বিদলীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেটিকেই এখন হোয়াইট হাউস ভেঙে দিচ্ছে।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে