
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীর সফর করেছেন।
১৯৯৩ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই আব্বাস। ওই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা জাগিয়েছিল। তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। কেউ কেউ তাঁর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। অনেক ফিলিস্তিনি এখন তাঁর প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অগণতান্ত্রিক এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে।২০০৫ সাল থেকে যেটি আব্বাস পরিচালনা করেছেন
তবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি দেখতে চান পুনরুজ্জীবিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, গাজায় সংঘাত শেষ ফিলিস্তিনকে একত্র করে দায়িত্ব দিতে চান এই কর্তৃপক্ষরই হাতে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত শুক্রবার আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ফিলিস্তিন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ মুখ্য মার্কিন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন সুলিভান। এর আগে সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত নভেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিনি এই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সুশীল সমাজের ক্ষমতায়ন এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রকে সমর্থনের জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিন ফিলিস্তিনি এবং একজন জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা কথোপকথনের বিষয়ে ব্রিফ করে বলেছেন, রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আব্বাস কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিষয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি ও আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের অধীনে আব্বাস একজন ডেপুটি নিয়োগ করতে পারেন, তাঁর প্রেসিডেন্টর কাছে বৃহত্তর নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে পারেন। এই ক্ষেত্রে যুক্তররাষ্ট্র ও ইসরায়েল- দুই দেশেরই পছন্দের পিএলওর শীর্ষ নেতা হুসেইন আল শেখকে বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
এবিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, নেতৃত্বের পছন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন ছিল। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
রামাল্লায় রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নতুন নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ২০০৬ সালে হামাস সর্বশেষ ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা থেকে একপ্রকার নির্বাসিত পিএ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলেছে, যা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
যদিও এখনো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর উগ্র ডানপন্থী জোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আব্বাস সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে বলেছিলেন, সমস্যাটি ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদদের পরিবর্তন এবং একটি নতুন সরকার গঠন করা নয়, সমস্যাটি ইসরায়েলি সরকারের নীতি।
যদিও আব্বাস মেনে নিতে পারেন যে তাঁর দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি ঘটছে, তিনি এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান কৌশলগত মিত্র। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রকেই গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপ দিতে হবে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ওয়াশিংটনের এক ব্যক্তির মতে, আব্বাস ব্যক্তিগতভাবে পিএর সংস্কারের জন্য কিছু মার্কিন প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে টেকনোক্র্যাট দক্ষতার সঙ্গে ‘নতুন মুখ’ আনা এবং প্রেসিডেন্টর কার্যালয়কে নতুন নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তাঁরা আব্বাসের কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। আঞ্চলিক সূত্র এবং কূটনীতিকেরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন পিএলও কর্মকর্তা হোসেইন আল-শেখকে সম্ভাব্য ডেপুটি এবং ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন করেন।
দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চারটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাসকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য রাজি করাতে ওয়াশিংটন জর্ডান, মিসর এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছে। তবে জর্ডান, মিসর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসন সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। তাই সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা আবারও আব্বাসের সংস্কারের মনোভাব পরীক্ষার জন্য চাপ দিতে থাকবেন এবং অপেক্ষা করবেন, তিনি কী করেন তা দেখার জন্য।
মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অজনপ্রিয় এবং ইসরায়েলের বিশ্বাসভাজন না হওয়া সত্ত্বেও আব্বাসই আপাতত একমাত্র বাস্তববাদী ফিলিস্তিনি নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, বাইডেনের সহযোগীরা গোপনে ইসরায়েলি নেতাদের পিএর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিরোধী আচরণ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছেন। একবার পিএ পুনরুজ্জীবিত হলে গাজা-পরবর্তী সংঘর্ষে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
মার্কিন সূত্রের অন্য একজন বলেছেন, ‘শহরে অন্য কিছু নিয়েই এত ব্যতিব্যস্ততা নেই, যতটা এখন পিএ নিয়ে।’ মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে ইসরায়েলকে পিএতে আরও ট্যাক্স স্থানান্তরের সুযোগ দিতে হবে, যা ৭ অক্টোবরের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ রয়েছে, যাতে এটি বেতন দিতে পারে।
গোঁয়ার গোবিন্দ ইসরায়েল
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি এবং মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রে আব্বাসের কাছে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।
ফিলিস্তিনে নারী-শিশু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সারা বিশ্বে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক নিন্দা বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ হাজার নিরপরাধ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। এরপরও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত, জিম্মিদের মুক্তির আগপর্যন্ত এবং ইসরায়েল ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
দুই মাসের বেশি সময় আগে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণকে নমনীয় করতে গত বৃহস্পতিবার সুলিভান নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে বলছে, যুদ্ধের পরে পিএ নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় উপস্থিতি থাকতে হবে, যেমন তাঁরা এরই মধ্যে পশ্চিম তীরের কিছু অংশে করেছে।
নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার বলেছেন, গাজায় পিএর শাসন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য রয়েছে। গাজা কোনো হামাস-স্তান বা ফাতাহ-স্তান হবে না।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পরে প্রতিষ্ঠিত আব্বাসের ফাতাহ পার্টি নিয়ন্ত্রিত পিএ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এরপর ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বাধীনতা না এলেও আব্বাস পিএ পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, আব্বাসের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করেন, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের সুযোগ দেন, যুদ্ধের পরে গাজা পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্য নেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বিদেশে সমর্থন তৈরি করতে পারেন।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আব্বাস ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত পদক্ষেপে সম্মত হওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কর্তৃক ডাকা ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের মডেলে এটি হতে পারে।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনের ধারণাটি অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, তবে প্রস্তাবটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
আব্বাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বিশ্বাস করেন, গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে আরও কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, এটাই একমাত্র শক্তি যে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং তাঁর দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা করে না।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাতায়েহ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর সত্যিকারের চাপ প্রয়োগের জন্য ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্লিঙ্কেন এই মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছেন। এরপরও মার্কিন সরকার জাতিসংঘে ইসরায়েলের কট্টর রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়েছেন।
নখ-দন্তহীন এক কর্তৃপক্ষ
জেরুজালেমের একজন মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি ও আল কুদস ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি সারি নুসিবেহ বলেছেন, ক্ষমতার ওপর পিএর একচেটিয়া আধিপত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। এটি মূলত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সায় না দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
দর্শনের অধ্যাপক নুসিবেহ বলেন, ‘সমস্যা শুধু আব্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; কারণ, আব্বাস যদি চলে যায়, তাহলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত যে-ই হোক, কিছুই করতে পারবে না।’
এমনকি পশ্চিম তীরে পিএ এখন অজনপ্রিয়; কারণ, এটিকে ইসরায়েলি দখলদারির দালাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই রামাল্লাসহ পিএ শাসনাধীন এলাকায় অভিযান চালায়।
গত বুধবার প্রকাশিত ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং আব্বাস অজনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এমনকি হামাস বর্তমানে ফিলিস্তিনের যেকোনো অঞ্চলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারে।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সঠিক হবে না। মার্কিন কর্মকর্তাদের ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের কথা ভালোভাবেই মনে আছে। ওই নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকার হামাসের জয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অবশ্যই হামাসকে বাদ দিতে হবে।
পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি বসতি এবং নিরাপত্তা চেকপয়েন্টগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরা কঠিন করে তুলছে। অনেকেই হিংসাত্মক হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। গত দুই মাসে ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরে অন্তত ২৮৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসা স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ড. মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, এটি কর্তৃত্বহীন এক কর্তৃত্ব। পিএ নিজে রাজস্ব বা নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে কিছুই করে না, অভ্যন্তরীণ সংস্কারও নয়, যা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে বৈধতা দেবে।
বারঘৌতি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারির দালালি করা কোনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই টিকতে পারবে না। তারা অসম্মানিত এবং অবৈধ হবে বলে গণ্য হবে।’
কিছু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, পিএ কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে জাতীয় ঐক্য প্রশাসনের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে, এর মধ্যে অবশ্যই হামাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন হামাস নেতাদের যেকোনো ভূমিকার বিরুদ্ধে অনড়, এমনকি জুনিয়র পার্টনার হিসেবেও। তাঁরা আরও বলেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি অনির্দিষ্ট ‘ক্রান্তিকালীন’ সময়ের বেশি গাজায় থাকা উচিত নয়।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের গাজায় কিছু দরকার। সেটি হামাসের সঙ্গে হতে পারে না, যা গাজার জনগণের জন্য খারাপ এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি। ইসরায়েল এর পক্ষে দাঁড়াবে না। শূন্যতাও কোনো সমাধান নয়; কারণ, এটি ভয়ানক হবে এবং হামাসকে ফিরে যাওয়ার জায়গা দিতে পারে।’

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীর সফর করেছেন।
১৯৯৩ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই আব্বাস। ওই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা জাগিয়েছিল। তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। কেউ কেউ তাঁর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। অনেক ফিলিস্তিনি এখন তাঁর প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অগণতান্ত্রিক এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে।২০০৫ সাল থেকে যেটি আব্বাস পরিচালনা করেছেন
তবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি দেখতে চান পুনরুজ্জীবিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, গাজায় সংঘাত শেষ ফিলিস্তিনকে একত্র করে দায়িত্ব দিতে চান এই কর্তৃপক্ষরই হাতে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত শুক্রবার আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ফিলিস্তিন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ মুখ্য মার্কিন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন সুলিভান। এর আগে সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত নভেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিনি এই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সুশীল সমাজের ক্ষমতায়ন এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রকে সমর্থনের জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিন ফিলিস্তিনি এবং একজন জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা কথোপকথনের বিষয়ে ব্রিফ করে বলেছেন, রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আব্বাস কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিষয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি ও আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের অধীনে আব্বাস একজন ডেপুটি নিয়োগ করতে পারেন, তাঁর প্রেসিডেন্টর কাছে বৃহত্তর নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে পারেন। এই ক্ষেত্রে যুক্তররাষ্ট্র ও ইসরায়েল- দুই দেশেরই পছন্দের পিএলওর শীর্ষ নেতা হুসেইন আল শেখকে বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
এবিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, নেতৃত্বের পছন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন ছিল। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
রামাল্লায় রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নতুন নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ২০০৬ সালে হামাস সর্বশেষ ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা থেকে একপ্রকার নির্বাসিত পিএ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলেছে, যা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
যদিও এখনো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর উগ্র ডানপন্থী জোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আব্বাস সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে বলেছিলেন, সমস্যাটি ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদদের পরিবর্তন এবং একটি নতুন সরকার গঠন করা নয়, সমস্যাটি ইসরায়েলি সরকারের নীতি।
যদিও আব্বাস মেনে নিতে পারেন যে তাঁর দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি ঘটছে, তিনি এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান কৌশলগত মিত্র। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রকেই গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপ দিতে হবে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ওয়াশিংটনের এক ব্যক্তির মতে, আব্বাস ব্যক্তিগতভাবে পিএর সংস্কারের জন্য কিছু মার্কিন প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে টেকনোক্র্যাট দক্ষতার সঙ্গে ‘নতুন মুখ’ আনা এবং প্রেসিডেন্টর কার্যালয়কে নতুন নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তাঁরা আব্বাসের কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। আঞ্চলিক সূত্র এবং কূটনীতিকেরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন পিএলও কর্মকর্তা হোসেইন আল-শেখকে সম্ভাব্য ডেপুটি এবং ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন করেন।
দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চারটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাসকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য রাজি করাতে ওয়াশিংটন জর্ডান, মিসর এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছে। তবে জর্ডান, মিসর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসন সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। তাই সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা আবারও আব্বাসের সংস্কারের মনোভাব পরীক্ষার জন্য চাপ দিতে থাকবেন এবং অপেক্ষা করবেন, তিনি কী করেন তা দেখার জন্য।
মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অজনপ্রিয় এবং ইসরায়েলের বিশ্বাসভাজন না হওয়া সত্ত্বেও আব্বাসই আপাতত একমাত্র বাস্তববাদী ফিলিস্তিনি নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, বাইডেনের সহযোগীরা গোপনে ইসরায়েলি নেতাদের পিএর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিরোধী আচরণ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছেন। একবার পিএ পুনরুজ্জীবিত হলে গাজা-পরবর্তী সংঘর্ষে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
মার্কিন সূত্রের অন্য একজন বলেছেন, ‘শহরে অন্য কিছু নিয়েই এত ব্যতিব্যস্ততা নেই, যতটা এখন পিএ নিয়ে।’ মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে ইসরায়েলকে পিএতে আরও ট্যাক্স স্থানান্তরের সুযোগ দিতে হবে, যা ৭ অক্টোবরের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ রয়েছে, যাতে এটি বেতন দিতে পারে।
গোঁয়ার গোবিন্দ ইসরায়েল
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি এবং মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রে আব্বাসের কাছে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।
ফিলিস্তিনে নারী-শিশু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সারা বিশ্বে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক নিন্দা বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ হাজার নিরপরাধ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। এরপরও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত, জিম্মিদের মুক্তির আগপর্যন্ত এবং ইসরায়েল ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
দুই মাসের বেশি সময় আগে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণকে নমনীয় করতে গত বৃহস্পতিবার সুলিভান নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে বলছে, যুদ্ধের পরে পিএ নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় উপস্থিতি থাকতে হবে, যেমন তাঁরা এরই মধ্যে পশ্চিম তীরের কিছু অংশে করেছে।
নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার বলেছেন, গাজায় পিএর শাসন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য রয়েছে। গাজা কোনো হামাস-স্তান বা ফাতাহ-স্তান হবে না।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পরে প্রতিষ্ঠিত আব্বাসের ফাতাহ পার্টি নিয়ন্ত্রিত পিএ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এরপর ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বাধীনতা না এলেও আব্বাস পিএ পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, আব্বাসের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করেন, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের সুযোগ দেন, যুদ্ধের পরে গাজা পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্য নেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বিদেশে সমর্থন তৈরি করতে পারেন।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আব্বাস ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত পদক্ষেপে সম্মত হওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কর্তৃক ডাকা ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের মডেলে এটি হতে পারে।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনের ধারণাটি অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, তবে প্রস্তাবটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
আব্বাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বিশ্বাস করেন, গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে আরও কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, এটাই একমাত্র শক্তি যে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং তাঁর দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা করে না।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাতায়েহ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর সত্যিকারের চাপ প্রয়োগের জন্য ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্লিঙ্কেন এই মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছেন। এরপরও মার্কিন সরকার জাতিসংঘে ইসরায়েলের কট্টর রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়েছেন।
নখ-দন্তহীন এক কর্তৃপক্ষ
জেরুজালেমের একজন মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি ও আল কুদস ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি সারি নুসিবেহ বলেছেন, ক্ষমতার ওপর পিএর একচেটিয়া আধিপত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। এটি মূলত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সায় না দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
দর্শনের অধ্যাপক নুসিবেহ বলেন, ‘সমস্যা শুধু আব্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; কারণ, আব্বাস যদি চলে যায়, তাহলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত যে-ই হোক, কিছুই করতে পারবে না।’
এমনকি পশ্চিম তীরে পিএ এখন অজনপ্রিয়; কারণ, এটিকে ইসরায়েলি দখলদারির দালাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই রামাল্লাসহ পিএ শাসনাধীন এলাকায় অভিযান চালায়।
গত বুধবার প্রকাশিত ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং আব্বাস অজনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এমনকি হামাস বর্তমানে ফিলিস্তিনের যেকোনো অঞ্চলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারে।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সঠিক হবে না। মার্কিন কর্মকর্তাদের ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের কথা ভালোভাবেই মনে আছে। ওই নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকার হামাসের জয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অবশ্যই হামাসকে বাদ দিতে হবে।
পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি বসতি এবং নিরাপত্তা চেকপয়েন্টগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরা কঠিন করে তুলছে। অনেকেই হিংসাত্মক হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। গত দুই মাসে ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরে অন্তত ২৮৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসা স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ড. মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, এটি কর্তৃত্বহীন এক কর্তৃত্ব। পিএ নিজে রাজস্ব বা নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে কিছুই করে না, অভ্যন্তরীণ সংস্কারও নয়, যা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে বৈধতা দেবে।
বারঘৌতি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারির দালালি করা কোনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই টিকতে পারবে না। তারা অসম্মানিত এবং অবৈধ হবে বলে গণ্য হবে।’
কিছু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, পিএ কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে জাতীয় ঐক্য প্রশাসনের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে, এর মধ্যে অবশ্যই হামাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন হামাস নেতাদের যেকোনো ভূমিকার বিরুদ্ধে অনড়, এমনকি জুনিয়র পার্টনার হিসেবেও। তাঁরা আরও বলেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি অনির্দিষ্ট ‘ক্রান্তিকালীন’ সময়ের বেশি গাজায় থাকা উচিত নয়।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের গাজায় কিছু দরকার। সেটি হামাসের সঙ্গে হতে পারে না, যা গাজার জনগণের জন্য খারাপ এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি। ইসরায়েল এর পক্ষে দাঁড়াবে না। শূন্যতাও কোনো সমাধান নয়; কারণ, এটি ভয়ানক হবে এবং হামাসকে ফিরে যাওয়ার জায়গা দিতে পারে।’

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে