আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে