আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

গত এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলেছিলেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের নেতারা। সেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় বা আনুষ্ঠানিক পোশাকে ছিলেন। ছবিটিকে ‘বৈচিত্র্যের উদযাপন’ কিংবা ‘অনৈক্যের প্রতীক’— দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে এই ছবি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনগুলো যেখানে সুসমন্বিত, সেখানে বিমসটেক বেশ স্বতন্ত্র। আসিয়ান সম্মেলনে নেতারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী বাটিক শার্ট পরেন ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে হাত মেলান।
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করেন গত ৪ এপ্রিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্তকারী আঞ্চলিক জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই নেতারা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক হয়েছিলেন। এই সমাবেশ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান টানাপোড়েনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উপস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের এক স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল। তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তাঁকে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন ও মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই মিয়ানমারে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এই সম্মেলনে আরেকটি কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় ছিল—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নির্মম ক্র্যাকডাউন চালানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। মোদি-ইউনূস আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। কারণ, তাঁরা উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান। বিপরীতে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য চাপ দেন।
১৯৯৭ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর নতুন বহুপক্ষীয় উদ্যোগ যখন ব্যাপকভাবে চলছিল, ঠিক সে সময়টাতেই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা কাঠামো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের হাত ধরে এই জোট যাত্রা শুরু করে। জোটের সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ও সংস্কৃতি মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও জটিলতাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ছিল। থাইল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পরিপূরক ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি অনুসরণ করছিল। বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ তৈরির অগ্রণী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় দেশ দুটি।
মিয়ানমার শুরুতেই বিমসটেকে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় নেপাল ও ভুটান। এর মাধ্যমে জোটের সাত সদস্যের সংখ্যা পূর্ণ হয়। জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। সে সময় সদস্য দেশগুলো একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখায় সই করে। কিন্তু আলোচনা আটকে থাকে। এর একটি কারণ ছিল—মিয়ানমারের উপস্থিতি। সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল।
২০১০-এর দশকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। ২০১১ সালে মিয়ানমার বেসামরিক শাসনে ফেরে। এতে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জোয়ার শুরু হয়। ২০১৬ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়। এতে আঞ্চলিক সংহতি নতুন করে শুরু হওয়ার আশা জাগে। একই সময়ে ২০১৪ সালে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে। দেশটি ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে আরও শক্তিশালী ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলে পরিবর্তন করে। একই বছর বিমসটেকের একটি স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করা হয় ঢাকায়। ২০১৬ সালে জোটের নেতারা ভারতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। এটি জোটের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতীকী স্বীকৃতি ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর আঞ্চলিক সহযোগিতার গতি আবারও থমকে যায়। এর পরপরই ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন ফিরে আসে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এসব ঘটনা জোটের দুই প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ও থাইল্যান্ডের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে ‘সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে—আসাম, মিজোরাম ও সিকিমের মতো রাজ্যগুলো। এই রাজ্যগুলো মূল ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এটি এক সরু ভূখণ্ড। সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত।
ভারতের অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দেশটি বহুজাতিক ‘এশিয়ান হাইওয়ে’ প্রকল্প নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভারতকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটি ফের থমকে গেছে। এই রুটে মিয়ানমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ। থাইল্যান্ডও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চিমে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী। এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প ছাড়াও থাইল্যান্ড মিয়ানমারে দাওয়েতে একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে তারা জাপানের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তবে মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা থাইল্যান্ডের ‘লুক ওয়েস্ট’ কৌশলের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে।
এতসব বাধা সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্ম দিয়েছে। সম্মেলনে নেতারা ছয়টি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো—সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিমসটেক যখন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই—২০০০-এর দশক থেকে চীন এই অঞ্চলের জলসীমায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। তথাকথিত ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা ‘মুক্তোর মালা’ কৌশলের মাধ্যমে বেইজিং ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ধরে বন্দর, নৌঘাঁটি ও পরিকাঠামোর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে সমুদ্রপথে তাদের কৌশলগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০০৭ সালে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু বন্দর প্রকল্পে হাত দেয়। এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আংশিক পরিচালনগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সম্প্রতি জানা গেছে, বেইজিং মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে একটি নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করছে। ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমার দ্বীপটি চীনের কাছে লিজ দিয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে শহরে একটি বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সিত্তে বন্দরটি কায়াকপায়ুর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। একই সময়ে ভারত নিজেদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও পরিকাঠামোগত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে তারা একটি সমন্বিত কমান্ড বেস স্থাপন করেছে। কৌশলগতভাবে এটি গ্রেট কোকো দ্বীপ থেকে খুব অল্প দূরত্বেই অবস্থিত।
সমুদ্রে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। বিশ্বব্যাপী নিজেদের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরলেও মিয়ানমারের প্রতি ভারতের নীতি আশঙ্কাজনক। তারা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। এই কৌশলগত হিসাবটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে মোদি মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। যদিও এর ফলে পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার ঝুঁকি ছিল।
ভারতের ক্রমবর্ধমান চীনবিষয়ক অস্বস্তি বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ দিকে বিমসটেক সম্মেলনের ঠিক আগে ইউনূস বেইজিং সফর করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা যায়, ওই সাক্ষাতে ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের সাতটি ‘ভূখণ্ডে আবদ্ধ’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য চীন বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলে কৌশলগত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই মন্তব্য ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের বেদনা এখনও সেখানে বিদ্যমান। সূত্রমতে, সম্মেলনে মোদি ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য এড়িয়ে চলা শ্রেয়।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কূটনৈতিক ফাটল পরিস্থিতি দ্রুত উসকে দেয় এবং দুই দেশ একে অপরের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বঙ্গোপসাগর অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মাতারবাড়ীতে জাপান ২০১৪ সাল থেকে বন্দর উন্নয়ন করছে। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রস্তাব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এটি জাপানকে দেয়। রাশিয়া উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দাওয়েই বন্দর প্রকল্পে নতুন গতি এসেছে। এদিকে থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম আন্দামান সাগর উপকূলে রানংয়ে একটি নতুন বন্দরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এটিকে দাওয়েইয়ের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। এই সংযোগ পথই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম নৌচলাচল পথে তৈরি সুযোগ দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম প্রবেশদ্বার এবং এই প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট। এই পথে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মোট তেল সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়।
তবে লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। টোকিওর সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াসুহিরো কাওয়াকামি বলেন, ‘প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর একটি আপেক্ষিক “ব্ল্যাঙ্ক স্পট বা কালো বিন্দু”, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শূন্যতা অন্যান্য শক্তিকে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং এই জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখা হয়। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। এ ছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড কাঠামোতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এই কাঠামোর অধীনে ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনো বেশ সীমিত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অনেক বেশি। সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনের মতো প্রধান মিত্ররা রয়েছে। তবে ন্যাটো বাহিনী প্রভাবিত আটলান্টিকের চেয়েও এখানে মার্কিন উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানত নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও বঙ্গোপসাগর এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে চলেছে। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
বিমসটেকের সাতটি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৭৩ কোটি। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। উন্নত সামুদ্রিক সংযোগ ও বাণিজ্য উদারীকরণ একসঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সম্ভাবনা তৈরি করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সময়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক ঘোষণার পরপরই। নিরাপত্তা ও বাণিজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ২.০ যুগে যুক্তরাষ্ট্র সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা গঠনে একসময় নিজেই সহায়তা করেছিল। ফলে আঞ্চলিক সংগঠন ও এফটিএগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত আত্মরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকসের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের মহাপরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, মার্কিন নীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা আসিয়ানকে তার দীর্ঘদিনের পূর্বমুখী মনোযোগ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মনোযোগ ফেরাতে উৎসাহিত করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় মোটেও বিস্ময়কর হবে না। সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার বিমসটেকের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখানো। এই দুটি দেশই বঙ্গোপসাগরের সীমানায় অবস্থিত।
ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র একতরফা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি হতে চলেছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বঙ্গোপসাগর বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন শক্তি নিজেদের প্রভাব
০৫ মে ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে