আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
চলতি বছরের নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া আইএমএফের গভর্নেন্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ) পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রকে এক অচল, বিধ্বস্ত কাঠামো হিসেবে চিত্রিত করেছে। যে কাঠামো নিয়মকানুন প্রয়োগ করতে পারে না, এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতেও অক্ষম। ১৮৬ পাতার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে দুর্নীতি ‘স্থায়ী ও ক্ষয়কারী।’ এই দুর্নীতি বাজারকে বিপথে ঠেলে, জনগণের আস্থা নষ্ট করে দেয় এবং আর্থিক স্থিতি ভেঙে ফেলে।
পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে তৈরি এই মূল্যায়নে সতর্ক করা হয়েছে যে, ‘অভিজাতদের সুবিধা দেওয়ার’ এই কাঠামো ভেঙে না ফেললে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজের নিম্ন থেকে উচ্চ—সব স্তরেই দুর্নীতির ঝুঁকি আছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি ঘটে সেখানে, ‘যেখানে রাষ্ট্র সম্পৃক্ত বা রাষ্ট্রায়ত্ত শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো মূল অর্থনৈতিক খাতগুলোকে নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করে।’
গভর্নেন্স ও জবাবদিহি শক্তিশালী হলে পাকিস্তান উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক লাভ পেতে পারে বলে মনে করে আইএমএফ। ২০২৪ সালে দেশটির জিডিপি ছিল ৩৪০ বিলিয়ন ডলার। উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে আইএমএফ বলেছে, সুশাসন সংস্কারের পূর্ণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা গেলে পাঁচ বছরে পাকিস্তানের জিডিপি ৫ থেকে ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে অর্থনীতি পুনর্গঠনে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি বলছেন জবাবদিহির অভাব দেশটির সম্ভাবনাকে ভেতর থেকে ক্ষয় করছে। তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগ ও জবাবদিহির নীতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা ক্ষমতাধর গোষ্ঠীগুলোকে সীমাহীন সুযোগ দেয়। অর্থনৈতিক সংস্কারের কেন্দ্রে এ সমস্যাকেই লক্ষ্য করা জরুরি।’
১৯৫৮ সালের পর থেকে পাকিস্তান আইএমএফের সহায়তা নিয়েছে মোট ২৫ বার। সামরিক বা বেসামরিক—প্রায় সব প্রশাসনই আইএমএফের কাছে গিয়েছে, যা দেশটির দীর্ঘস্থায়ী বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সময়ে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যার এক মাস পরেই আইএমএফের নির্বাহী পরিষদ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্থ ৩৭ মাসব্যাপী ৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচির অংশ। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য দেউলিয়া হতে হতে বেঁচে যায়। আইএমএফ সে সময় ৯ মাসের জরুরি সহায়তা কর্মসূচির হাত বাড়িয়ে দেয়, যার পরপরই শুরু হয় বর্তমান দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম।
জিসিডিএ জানায়, বৈশ্বিক শাসন সূচকে পাকিস্তান বহু বছর ধরেই নিচের দিকেই অবস্থান করছে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সূচকে দেশটির অবস্থান প্রায় অপরিবর্তিত, দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে খারাপ পারফরমারদের তালিকায়ই রয়ে গেছে।
আইএমএফের পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘স্টেট ক্যাপচার’ ধারণা। যেখানে দুর্নীতি ব্যতিক্রম নয়, বরং শাসনের প্রধান চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়। প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কিছু গোষ্ঠীকে সম্পদশালী করার জন্য। জনস্বার্থ সেখানে অগ্রাধিকার পায় না। প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানের এলিট শ্রেণি ভর্তুকি, কর ছাড় ও লাভজনক রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে বিশেষ গোষ্ঠীর একচ্ছত্র প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশটির অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বের করে নেয়। অন্যদিকে কর ফাঁকি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগকে চুষে খায়।
এই প্রতিবেদনের আগে, ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিও একই ধরনের চিত্র তুলে ধরেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী সামরিক গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শক্তির প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধার পরিমাণ দেশটির মোট অর্থনীতির প্রায় ৬ শতাংশ।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক আলি হাসানাইন আইএমএফের এই প্রতিবেদনকে যথাযথ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তাঁর মতে, এটি ‘কোনো নতুন কথা নয়।’ তিনি বলেন, ২০২১ সালের ইউএনডিপি প্রতিবেদনসহ বহু দেশীয় গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো বছরের বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর সুবিধা রক্ষা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আলি হাসনাইন বলেন, ‘আইএমএফ আবারও সেই কথাই বলেছে, যা বহু দেশীয় গবেষণা, বিশ্বব্যাংক এবং পাকিস্তানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো আগেই দেখিয়েছে—প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে নিয়মকানুনকেই বদলে নেয়।’
আইএমএফের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিয়েল এস্টেট, উৎপাদন খাত ও জ্বালানির মতো প্রভাবশালী খাতগুলোর জন্য দেওয়া কর-ছাড় ও নানা ছাড়ের ফলে শুধু ২০২৩ অর্থবছরেই রাষ্ট্রের জিডিপির ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ সমপরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে সরকারি চুক্তিতে প্রভাবশালী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ সুবিধা বন্ধ করার আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের (এসআইএফসি) কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনার তাগিদ দিয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রথম মেয়াদকালে গঠিত এসআইএফসি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা। বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব গঠিত এই সংস্থার উদ্দেশ্য হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো। সরকার ও সামরিক নেতৃত্বের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে একে তুলে ধরা হলেও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে এটি শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআইএফসির কর্মকর্তাদের—যাদের অনেকেই সামরিক বাহিনী থেকে আসা—ব্যাপক আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি বড় ধরনের শাসনসংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি করছে। এই নিরাপত্তা এবং প্রকল্পকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা মিলিয়ে ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
স্বচ্ছতার অভাব তুলে ধরে জিসিডিএ বলেছে, এসআইএফসিকে প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। তাতে কোন কোন বিনিয়োগ সহজ করা হয়েছে, কী ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর যুক্তি কী—এসব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলকে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো এখনো পরীক্ষিত নয়।’
প্রতিবেদনটি পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থাকে আরেকটি গুরুতর জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাকিস্তানের আদালতগুলোতে ২০ লাখের বেশি মামলা ঝুলে আছে। শুধু ২০২৩ সালেই সুপ্রিম কোর্টে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৭ শতাংশ বেড়েছে। গত এক বছরে পাকিস্তান দুটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে, যেগুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।
সমালোচকদের মতে এগুলো ‘সংবিধানিক আত্মসমর্পণের’ শামিল। সর্বশেষ সংশোধনী একটি সমান্তরাল ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট তৈরির পথ তৈরি করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমাতে পারে। একই সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগ ও বদলির নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা সমালোচকদের মতে নির্বাহী বিভাগকে বিচার বিভাগে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেবে। সরকার অবশ্য বলেছে, এসব পরিবর্তন বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই করা হয়েছে।
একই ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা-সংকটে ভুগছে দুর্নীতি তদন্তকারী দুটি প্রধান সংস্থা—ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) ও ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)। জিসিডিএ ২০২৪ সালের এক সরকারি টাস্কফোর্সের কথা তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাব মাঝে মাঝে তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছে। এই বেছে বেছে জবাবদিহির প্রক্রিয়া জনআস্থার ক্ষতি করেছে এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে, যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্বাভাবিক ধীর গতি দেখা দিয়েছে।
ন্যাব বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন রুপি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দণ্ডাদেশের হার এখনো খুব কম। প্রতিবেদনটি ন্যাবের নিয়োগ ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ পরিবর্তে ‘নিয়মভিত্তিক প্রয়োগে’ ফিরতে হবে।
সরকার কী করতে পারে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির যে চেহারা আমরা আজ দেখি, তার মূল ভিত্তি বা পথ বহুদিন ধরেই তৈরি করেছেন রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো। তারা জমি, ঋণ, শুল্ক থেকে শুরু করে নানা নিয়ন্ত্রণ সুবিধায় অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। আইএমএফের পর্যবেক্ষণ তাই নতুন কিছু নয়।
হাসানাইন মনে করেন, দুর্নীতি এবং বাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও জননীতিতে অভিজাতদের দখল রাজনৈতিক প্রকৃতির। তাই গভীরতর সংস্কার ছাড়া এগুলো মোকাবিলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘বিস্তৃত রাজনৈতিক জাগরণ ছাড়া শাসনব্যবস্থার সংস্কার কেবলই প্রযুক্তিগত টুকরো-টাকরা, যা দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। শেষ পর্যন্ত অভিজাত দখল ভাঙে তখনই, যখন রাজনৈতিক প্রণোদনার ধারা পাল্টে যায়।’
অন্যদিকে ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাংক সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের সাজিদ আমিন জাভেদ ইঙ্গিত করেন আরেকটি সমস্যার দিকে। তাঁর ভাষায় এটি হলো—নীতি প্রণয়ন ব্যবস্থা দখল। যারা শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের খসড়া তৈরি করেন, তারাই প্রায়শই সেই অভিজাত গোষ্ঠীর অংশ।
তাঁর ভাষায়, ‘নীতিনির্ধারণের পর্যায়ে অভিজাতদের দখলই হলো মূল শক্তি, যা পুরো দখল কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে। প্রতিবেদনের সুপারিশ পরিষ্কার বলে দেয়, বর্তমান সংকট থেকে বেরোতে আমাদের অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির দিকে যেতে হবে।’
হাসানাইনের কাছে সবচেয়ে জরুরি সংস্কার হলো—একটি একীভূত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা, যা প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ আওতাধীন থাকবে এবং স্পষ্টভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। তাঁর মতে, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ‘কমিটি, কাউন্সিল, টাস্কফোর্স আর একের পর এক ওভারল্যাপিং মন্ত্রণালয়ের জটলায়’ ডুবে আছে। প্রতিটি দলই দায়বদ্ধতা ছাড়া নিজস্ব নথি তৈরি করে।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে এসব ছড়ানো কাঠামো একত্র করতে হবে। স্পষ্ট অগ্রাধিকার, সময়সীমা ও পরিমাপযোগ্য ফলাফলের ভিত্তিতে একটি সুসংহত সংস্কার প্ল্যাটফর্ম গড়া দরকার। অগ্রগতি মাসে মাসে প্রকাশ হতে হবে, জনসমক্ষে আলোচিত হতে হবে এবং স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় আসতে হবে।’ হাসানাইনের মতে, এই একীকরণ সমন্বয় বাড়াবে, জনআস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে দৃঢ়তার সংকেত দেবে।
জাভেদের কাছে সবচেয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার হলো—সরকারি ক্রয়ব্যবস্থা পুনর্গঠন। সরকারি দপ্তরগুলো যে পদ্ধতিতে পণ্য ও সেবা কেনে, সেটির মাধ্যমেই পাবলিক অর্থ ব্যয় হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রয়ব্যবস্থা মুদ্রার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এখানে মানের মূল্যায়ন নয়, বরং অর্থের পরিমাণই মুখ্য। সর্বনিম্ন দরদাতা সাধারণত বিড জিতে যায়।’ তাঁর মতে, এই ব্যবস্থায় দক্ষ ও যোগ্য প্রতিষ্ঠানের হাতে কাজ না গিয়ে কমদামি, কিন্তু অদক্ষ হাতে চলে যায়। এই ব্যবস্থা দ্রুত আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
জাভেদ আরও বলেন, ‘যদি আমরা স্বচ্ছ ও সজীব অর্থনীতি চাই, তবে পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোই সংস্কারের মুখোমুখি করতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
আল–জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
চলতি বছরের নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া আইএমএফের গভর্নেন্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ) পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রকে এক অচল, বিধ্বস্ত কাঠামো হিসেবে চিত্রিত করেছে। যে কাঠামো নিয়মকানুন প্রয়োগ করতে পারে না, এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতেও অক্ষম। ১৮৬ পাতার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে দুর্নীতি ‘স্থায়ী ও ক্ষয়কারী।’ এই দুর্নীতি বাজারকে বিপথে ঠেলে, জনগণের আস্থা নষ্ট করে দেয় এবং আর্থিক স্থিতি ভেঙে ফেলে।
পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে তৈরি এই মূল্যায়নে সতর্ক করা হয়েছে যে, ‘অভিজাতদের সুবিধা দেওয়ার’ এই কাঠামো ভেঙে না ফেললে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজের নিম্ন থেকে উচ্চ—সব স্তরেই দুর্নীতির ঝুঁকি আছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি ঘটে সেখানে, ‘যেখানে রাষ্ট্র সম্পৃক্ত বা রাষ্ট্রায়ত্ত শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো মূল অর্থনৈতিক খাতগুলোকে নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করে।’
গভর্নেন্স ও জবাবদিহি শক্তিশালী হলে পাকিস্তান উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক লাভ পেতে পারে বলে মনে করে আইএমএফ। ২০২৪ সালে দেশটির জিডিপি ছিল ৩৪০ বিলিয়ন ডলার। উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে আইএমএফ বলেছে, সুশাসন সংস্কারের পূর্ণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা গেলে পাঁচ বছরে পাকিস্তানের জিডিপি ৫ থেকে ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে অর্থনীতি পুনর্গঠনে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি বলছেন জবাবদিহির অভাব দেশটির সম্ভাবনাকে ভেতর থেকে ক্ষয় করছে। তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগ ও জবাবদিহির নীতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা ক্ষমতাধর গোষ্ঠীগুলোকে সীমাহীন সুযোগ দেয়। অর্থনৈতিক সংস্কারের কেন্দ্রে এ সমস্যাকেই লক্ষ্য করা জরুরি।’
১৯৫৮ সালের পর থেকে পাকিস্তান আইএমএফের সহায়তা নিয়েছে মোট ২৫ বার। সামরিক বা বেসামরিক—প্রায় সব প্রশাসনই আইএমএফের কাছে গিয়েছে, যা দেশটির দীর্ঘস্থায়ী বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সময়ে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যার এক মাস পরেই আইএমএফের নির্বাহী পরিষদ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্থ ৩৭ মাসব্যাপী ৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচির অংশ। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য দেউলিয়া হতে হতে বেঁচে যায়। আইএমএফ সে সময় ৯ মাসের জরুরি সহায়তা কর্মসূচির হাত বাড়িয়ে দেয়, যার পরপরই শুরু হয় বর্তমান দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম।
জিসিডিএ জানায়, বৈশ্বিক শাসন সূচকে পাকিস্তান বহু বছর ধরেই নিচের দিকেই অবস্থান করছে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সূচকে দেশটির অবস্থান প্রায় অপরিবর্তিত, দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে খারাপ পারফরমারদের তালিকায়ই রয়ে গেছে।
আইএমএফের পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘স্টেট ক্যাপচার’ ধারণা। যেখানে দুর্নীতি ব্যতিক্রম নয়, বরং শাসনের প্রধান চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়। প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কিছু গোষ্ঠীকে সম্পদশালী করার জন্য। জনস্বার্থ সেখানে অগ্রাধিকার পায় না। প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানের এলিট শ্রেণি ভর্তুকি, কর ছাড় ও লাভজনক রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে বিশেষ গোষ্ঠীর একচ্ছত্র প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশটির অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বের করে নেয়। অন্যদিকে কর ফাঁকি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগকে চুষে খায়।
এই প্রতিবেদনের আগে, ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিও একই ধরনের চিত্র তুলে ধরেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী সামরিক গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শক্তির প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধার পরিমাণ দেশটির মোট অর্থনীতির প্রায় ৬ শতাংশ।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক আলি হাসানাইন আইএমএফের এই প্রতিবেদনকে যথাযথ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তাঁর মতে, এটি ‘কোনো নতুন কথা নয়।’ তিনি বলেন, ২০২১ সালের ইউএনডিপি প্রতিবেদনসহ বহু দেশীয় গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো বছরের বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর সুবিধা রক্ষা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আলি হাসনাইন বলেন, ‘আইএমএফ আবারও সেই কথাই বলেছে, যা বহু দেশীয় গবেষণা, বিশ্বব্যাংক এবং পাকিস্তানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো আগেই দেখিয়েছে—প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে নিয়মকানুনকেই বদলে নেয়।’
আইএমএফের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিয়েল এস্টেট, উৎপাদন খাত ও জ্বালানির মতো প্রভাবশালী খাতগুলোর জন্য দেওয়া কর-ছাড় ও নানা ছাড়ের ফলে শুধু ২০২৩ অর্থবছরেই রাষ্ট্রের জিডিপির ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ সমপরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে সরকারি চুক্তিতে প্রভাবশালী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ সুবিধা বন্ধ করার আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলের (এসআইএফসি) কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনার তাগিদ দিয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রথম মেয়াদকালে গঠিত এসআইএফসি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা। বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব গঠিত এই সংস্থার উদ্দেশ্য হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো। সরকার ও সামরিক নেতৃত্বের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে একে তুলে ধরা হলেও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে এটি শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআইএফসির কর্মকর্তাদের—যাদের অনেকেই সামরিক বাহিনী থেকে আসা—ব্যাপক আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি বড় ধরনের শাসনসংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি করছে। এই নিরাপত্তা এবং প্রকল্পকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা মিলিয়ে ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
স্বচ্ছতার অভাব তুলে ধরে জিসিডিএ বলেছে, এসআইএফসিকে প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। তাতে কোন কোন বিনিয়োগ সহজ করা হয়েছে, কী ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর যুক্তি কী—এসব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলকে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো এখনো পরীক্ষিত নয়।’
প্রতিবেদনটি পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থাকে আরেকটি গুরুতর জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাকিস্তানের আদালতগুলোতে ২০ লাখের বেশি মামলা ঝুলে আছে। শুধু ২০২৩ সালেই সুপ্রিম কোর্টে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৭ শতাংশ বেড়েছে। গত এক বছরে পাকিস্তান দুটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে, যেগুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।
সমালোচকদের মতে এগুলো ‘সংবিধানিক আত্মসমর্পণের’ শামিল। সর্বশেষ সংশোধনী একটি সমান্তরাল ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট তৈরির পথ তৈরি করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমাতে পারে। একই সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগ ও বদলির নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা সমালোচকদের মতে নির্বাহী বিভাগকে বিচার বিভাগে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেবে। সরকার অবশ্য বলেছে, এসব পরিবর্তন বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই করা হয়েছে।
একই ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা-সংকটে ভুগছে দুর্নীতি তদন্তকারী দুটি প্রধান সংস্থা—ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) ও ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)। জিসিডিএ ২০২৪ সালের এক সরকারি টাস্কফোর্সের কথা তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাব মাঝে মাঝে তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছে। এই বেছে বেছে জবাবদিহির প্রক্রিয়া জনআস্থার ক্ষতি করেছে এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে, যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্বাভাবিক ধীর গতি দেখা দিয়েছে।
ন্যাব বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন রুপি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দণ্ডাদেশের হার এখনো খুব কম। প্রতিবেদনটি ন্যাবের নিয়োগ ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ পরিবর্তে ‘নিয়মভিত্তিক প্রয়োগে’ ফিরতে হবে।
সরকার কী করতে পারে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির যে চেহারা আমরা আজ দেখি, তার মূল ভিত্তি বা পথ বহুদিন ধরেই তৈরি করেছেন রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো। তারা জমি, ঋণ, শুল্ক থেকে শুরু করে নানা নিয়ন্ত্রণ সুবিধায় অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। আইএমএফের পর্যবেক্ষণ তাই নতুন কিছু নয়।
হাসানাইন মনে করেন, দুর্নীতি এবং বাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও জননীতিতে অভিজাতদের দখল রাজনৈতিক প্রকৃতির। তাই গভীরতর সংস্কার ছাড়া এগুলো মোকাবিলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘বিস্তৃত রাজনৈতিক জাগরণ ছাড়া শাসনব্যবস্থার সংস্কার কেবলই প্রযুক্তিগত টুকরো-টাকরা, যা দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। শেষ পর্যন্ত অভিজাত দখল ভাঙে তখনই, যখন রাজনৈতিক প্রণোদনার ধারা পাল্টে যায়।’
অন্যদিকে ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাংক সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের সাজিদ আমিন জাভেদ ইঙ্গিত করেন আরেকটি সমস্যার দিকে। তাঁর ভাষায় এটি হলো—নীতি প্রণয়ন ব্যবস্থা দখল। যারা শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের খসড়া তৈরি করেন, তারাই প্রায়শই সেই অভিজাত গোষ্ঠীর অংশ।
তাঁর ভাষায়, ‘নীতিনির্ধারণের পর্যায়ে অভিজাতদের দখলই হলো মূল শক্তি, যা পুরো দখল কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে। প্রতিবেদনের সুপারিশ পরিষ্কার বলে দেয়, বর্তমান সংকট থেকে বেরোতে আমাদের অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির দিকে যেতে হবে।’
হাসানাইনের কাছে সবচেয়ে জরুরি সংস্কার হলো—একটি একীভূত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা, যা প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ আওতাধীন থাকবে এবং স্পষ্টভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। তাঁর মতে, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ‘কমিটি, কাউন্সিল, টাস্কফোর্স আর একের পর এক ওভারল্যাপিং মন্ত্রণালয়ের জটলায়’ ডুবে আছে। প্রতিটি দলই দায়বদ্ধতা ছাড়া নিজস্ব নথি তৈরি করে।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে এসব ছড়ানো কাঠামো একত্র করতে হবে। স্পষ্ট অগ্রাধিকার, সময়সীমা ও পরিমাপযোগ্য ফলাফলের ভিত্তিতে একটি সুসংহত সংস্কার প্ল্যাটফর্ম গড়া দরকার। অগ্রগতি মাসে মাসে প্রকাশ হতে হবে, জনসমক্ষে আলোচিত হতে হবে এবং স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় আসতে হবে।’ হাসানাইনের মতে, এই একীকরণ সমন্বয় বাড়াবে, জনআস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে দৃঢ়তার সংকেত দেবে।
জাভেদের কাছে সবচেয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার হলো—সরকারি ক্রয়ব্যবস্থা পুনর্গঠন। সরকারি দপ্তরগুলো যে পদ্ধতিতে পণ্য ও সেবা কেনে, সেটির মাধ্যমেই পাবলিক অর্থ ব্যয় হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রয়ব্যবস্থা মুদ্রার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এখানে মানের মূল্যায়ন নয়, বরং অর্থের পরিমাণই মুখ্য। সর্বনিম্ন দরদাতা সাধারণত বিড জিতে যায়।’ তাঁর মতে, এই ব্যবস্থায় দক্ষ ও যোগ্য প্রতিষ্ঠানের হাতে কাজ না গিয়ে কমদামি, কিন্তু অদক্ষ হাতে চলে যায়। এই ব্যবস্থা দ্রুত আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
জাভেদ আরও বলেন, ‘যদি আমরা স্বচ্ছ ও সজীব অর্থনীতি চাই, তবে পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোই সংস্কারের মুখোমুখি করতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
আল–জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
২৫ নভেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
২৫ নভেম্বর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
২৫ নভেম্বর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৫ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক নতুন মূল্যায়ন বলছে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। দেশটি এমন এক ‘স্টেট ক্যাপচার বা রাষ্ট্র দখল’ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছোট্ট একটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে, আর তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি প্রায়ই বদলে যায়।
২৫ নভেম্বর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে