মিডল ইস্ট আই–এর নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

কিছুদিন আগে ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি বা বিআইএ নামে পরিচিত এই সমঝোতা দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে সহায়তা করবে।
৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, ‘এই চুক্তি ভারতীয় ও ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দেবে, ইসরায়েলি রপ্তানি জোরদার করবে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চিত পরিবেশ ও উন্নয়নের হাতিয়ার দেবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, আর সহযোগিতা ইসরায়েলের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
শুধু তা-ই নয়, এটি ভারতের সঙ্গে কোনো ‘পশ্চিমা দেশ’ তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রের প্রথম চুক্তি। এ ছাড়া, এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথও তৈরি করছে। এবং অতি অবশ্যই, এই চুক্তির মূল বিষয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা।
অনেকে মনে করছেন, ভারতের তরফ থেকে এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদানির হাইফা বন্দর বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া এবং একই সঙ্গে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি) টিকিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আইএমইসি ভারতের জন্য পশ্চিমা বাজারে পণ্য পাঠানোর প্রধান রুট, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর থেকে করিডরটি নানা বাধার মুখে পড়েছে।
তবু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এটি শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনীতি, কূটনীতি এবং শক্তি ও আস্থার প্রদর্শনও বটে। এটি ভারত ও ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অর্থনৈতিক একীকরণের চলমান প্রকল্পেরই একটি অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই লাখ মানুষকে হত্যা, আহত বা পঙ্গু করেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি অবরোধ ও অবরুদ্ধ নীতির কারণে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সারা বিশ্বে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
অনেক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। কোনো কোনো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে, শত শত সাধারণ মানুষ এখনো নৌকায় করে খাদ্য ও ওষুধ গাজায় পাঠাতে চেষ্টা করছে অবরোধ ভাঙার আশায়।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী স্মতরিচকে আতিথ্য দিয়ে এবং চুক্তি স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই জানায়নি, বরং নিজের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দেশটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, স্মতরিচ হচ্ছেন সেই ইসরায়েলি নেতা যিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অন্তত পাঁচটি পশ্চিমা দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। ফলে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ আরও ভয়ংকর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার মুখে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ভারত কার্যত এগিয়ে এসেছে। গত এক দশক এবং চলমান গণহত্যার সময়কালেও ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতি বাতিলের পর ভারতীয় শ্রমিক পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং মূলধারার ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে গাজায় হত্যাযজ্ঞ ঢেকে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক এগিয়েছে।
দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। গাজার গণহত্যা সেই সম্পর্ক বদলায়নি। গত দুই বছরে দুই দেশ পানি প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে একাধিক চুক্তি করেছে—যেখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো শিল্প গড়ে তুলেছে।
২০২৪ সালে ভারত-ইসরায়েল বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছে। ভারত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে রত্ন, গয়না, রাসায়নিক ও প্রকৌশলপণ্য। অন্যদিকে ইসরায়েল থেকে এসেছে অস্ত্র, সার ও যন্ত্রপাতি।
কিন্তু ভারত এখন ক্রমেই নিজ দেশে ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদন করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ড্রোন, রকেট ও বিস্ফোরক পাঠাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা একটি ভারতীয় ও ইসরায়েলি কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করেছে।
অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, রপ্তানি সব সময়ই ‘জাতীয় স্বার্থে’ নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে ইসরায়েল সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তখন জয়শঙ্কর জানান, ভারত আইসিসির সদস্য নয়, তাই এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই।
এই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (বিআইটি) মূলত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে অর্থনৈতিক চুক্তিগুলো আরও কার্যকর হতে পারে। সব মিলিয়ে, এটি একটি বড় চিত্রের অংশ।
সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ—জায়নবাদ ও হিন্দুত্ববাদ—দ্বারা চালিত রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও ইসরায়েল একই ধরনের বর্জনবাদী ও সম্প্রসারণবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে শুধু ইসরায়েলিদের জন্য বসতি গড়া থেকে শুরু করে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দুদের জন্য বিশেষ বসতি তৈরির প্রচেষ্টা পর্যন্ত এর প্রমাণ মিলছে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের ‘ল অব রিটার্ন’ বা ‘নেশন স্টেট ল’ এবং ভারতের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ’—সবই ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকত্ব দেওয়ার উদাহরণ। দুই দেশের স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে ব্যাপক নজরদারি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন প্রয়োগ এবং সেনাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতার মধ্য দিয়ে।
কাশ্মীরে ভারত সরকার সিসিটিভি ক্যামেরা, স্থানীয় সংবাদদাতা ও সাংবাদিক-অ্যাকটিভিস্টদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বাড়িঘর ভাঙা এবং ধর্মীয় স্থাপনা টার্গেট করেও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল এই পদ্ধতিগুলোকে নিজেদের জাতিগত জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়ার অগ্রগতি হিসেবে দেখে।
এই চুক্তির মাধ্যমে সেই বন্ধন আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। এটি বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিচ্ছে: গণহত্যা চালানো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইসরায়েলের ভবিষ্যতের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রকাশ করছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি একটি বড় মাইলফলক।
কিন্তু যারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে, তাদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে—গ্লোবাল সাউথের তথাকথিত নেতা হিসেবে পরিচিত ভারত আসলে বেছে নিয়েছে বাণিজ্য, অস্ত্র ও সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে। বিশ্বের কাছে এটি সেই বার্তা দেয় যে নিপীড়ন শুধু লাভজনক নয়, বরং গাজার গণহত্যার ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু যা সংরক্ষণ করাও জরুরি মনে করছে ভারত।
লেখক: আজাদ ইসা, মিডল ইস্ট আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব থেকে শুরু করে ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি ২০১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত আল-জাজিরার দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর লেখা বইয়ের নাম, ‘হস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়েন্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

কিছুদিন আগে ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি বা বিআইএ নামে পরিচিত এই সমঝোতা দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে সহায়তা করবে।
৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, ‘এই চুক্তি ভারতীয় ও ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দেবে, ইসরায়েলি রপ্তানি জোরদার করবে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চিত পরিবেশ ও উন্নয়নের হাতিয়ার দেবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, আর সহযোগিতা ইসরায়েলের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
শুধু তা-ই নয়, এটি ভারতের সঙ্গে কোনো ‘পশ্চিমা দেশ’ তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রের প্রথম চুক্তি। এ ছাড়া, এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথও তৈরি করছে। এবং অতি অবশ্যই, এই চুক্তির মূল বিষয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা।
অনেকে মনে করছেন, ভারতের তরফ থেকে এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদানির হাইফা বন্দর বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া এবং একই সঙ্গে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি) টিকিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আইএমইসি ভারতের জন্য পশ্চিমা বাজারে পণ্য পাঠানোর প্রধান রুট, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর থেকে করিডরটি নানা বাধার মুখে পড়েছে।
তবু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এটি শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনীতি, কূটনীতি এবং শক্তি ও আস্থার প্রদর্শনও বটে। এটি ভারত ও ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অর্থনৈতিক একীকরণের চলমান প্রকল্পেরই একটি অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই লাখ মানুষকে হত্যা, আহত বা পঙ্গু করেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি অবরোধ ও অবরুদ্ধ নীতির কারণে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সারা বিশ্বে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
অনেক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। কোনো কোনো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে, শত শত সাধারণ মানুষ এখনো নৌকায় করে খাদ্য ও ওষুধ গাজায় পাঠাতে চেষ্টা করছে অবরোধ ভাঙার আশায়।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী স্মতরিচকে আতিথ্য দিয়ে এবং চুক্তি স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই জানায়নি, বরং নিজের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দেশটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, স্মতরিচ হচ্ছেন সেই ইসরায়েলি নেতা যিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অন্তত পাঁচটি পশ্চিমা দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। ফলে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ আরও ভয়ংকর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার মুখে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ভারত কার্যত এগিয়ে এসেছে। গত এক দশক এবং চলমান গণহত্যার সময়কালেও ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতি বাতিলের পর ভারতীয় শ্রমিক পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং মূলধারার ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে গাজায় হত্যাযজ্ঞ ঢেকে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক এগিয়েছে।
দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। গাজার গণহত্যা সেই সম্পর্ক বদলায়নি। গত দুই বছরে দুই দেশ পানি প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে একাধিক চুক্তি করেছে—যেখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো শিল্প গড়ে তুলেছে।
২০২৪ সালে ভারত-ইসরায়েল বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছে। ভারত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে রত্ন, গয়না, রাসায়নিক ও প্রকৌশলপণ্য। অন্যদিকে ইসরায়েল থেকে এসেছে অস্ত্র, সার ও যন্ত্রপাতি।
কিন্তু ভারত এখন ক্রমেই নিজ দেশে ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদন করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ড্রোন, রকেট ও বিস্ফোরক পাঠাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা একটি ভারতীয় ও ইসরায়েলি কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করেছে।
অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, রপ্তানি সব সময়ই ‘জাতীয় স্বার্থে’ নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে ইসরায়েল সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তখন জয়শঙ্কর জানান, ভারত আইসিসির সদস্য নয়, তাই এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই।
এই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (বিআইটি) মূলত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে অর্থনৈতিক চুক্তিগুলো আরও কার্যকর হতে পারে। সব মিলিয়ে, এটি একটি বড় চিত্রের অংশ।
সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ—জায়নবাদ ও হিন্দুত্ববাদ—দ্বারা চালিত রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও ইসরায়েল একই ধরনের বর্জনবাদী ও সম্প্রসারণবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে শুধু ইসরায়েলিদের জন্য বসতি গড়া থেকে শুরু করে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দুদের জন্য বিশেষ বসতি তৈরির প্রচেষ্টা পর্যন্ত এর প্রমাণ মিলছে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের ‘ল অব রিটার্ন’ বা ‘নেশন স্টেট ল’ এবং ভারতের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ’—সবই ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকত্ব দেওয়ার উদাহরণ। দুই দেশের স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে ব্যাপক নজরদারি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন প্রয়োগ এবং সেনাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতার মধ্য দিয়ে।
কাশ্মীরে ভারত সরকার সিসিটিভি ক্যামেরা, স্থানীয় সংবাদদাতা ও সাংবাদিক-অ্যাকটিভিস্টদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বাড়িঘর ভাঙা এবং ধর্মীয় স্থাপনা টার্গেট করেও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল এই পদ্ধতিগুলোকে নিজেদের জাতিগত জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়ার অগ্রগতি হিসেবে দেখে।
এই চুক্তির মাধ্যমে সেই বন্ধন আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। এটি বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিচ্ছে: গণহত্যা চালানো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইসরায়েলের ভবিষ্যতের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রকাশ করছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি একটি বড় মাইলফলক।
কিন্তু যারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে, তাদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে—গ্লোবাল সাউথের তথাকথিত নেতা হিসেবে পরিচিত ভারত আসলে বেছে নিয়েছে বাণিজ্য, অস্ত্র ও সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে। বিশ্বের কাছে এটি সেই বার্তা দেয় যে নিপীড়ন শুধু লাভজনক নয়, বরং গাজার গণহত্যার ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু যা সংরক্ষণ করাও জরুরি মনে করছে ভারত।
লেখক: আজাদ ইসা, মিডল ইস্ট আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব থেকে শুরু করে ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি ২০১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত আল-জাজিরার দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর লেখা বইয়ের নাম, ‘হস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়েন্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
মিডল ইস্ট আই–এর নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

কিছুদিন আগে ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি বা বিআইএ নামে পরিচিত এই সমঝোতা দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে সহায়তা করবে।
৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, ‘এই চুক্তি ভারতীয় ও ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দেবে, ইসরায়েলি রপ্তানি জোরদার করবে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চিত পরিবেশ ও উন্নয়নের হাতিয়ার দেবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, আর সহযোগিতা ইসরায়েলের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
শুধু তা-ই নয়, এটি ভারতের সঙ্গে কোনো ‘পশ্চিমা দেশ’ তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রের প্রথম চুক্তি। এ ছাড়া, এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথও তৈরি করছে। এবং অতি অবশ্যই, এই চুক্তির মূল বিষয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা।
অনেকে মনে করছেন, ভারতের তরফ থেকে এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদানির হাইফা বন্দর বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া এবং একই সঙ্গে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি) টিকিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আইএমইসি ভারতের জন্য পশ্চিমা বাজারে পণ্য পাঠানোর প্রধান রুট, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর থেকে করিডরটি নানা বাধার মুখে পড়েছে।
তবু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এটি শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনীতি, কূটনীতি এবং শক্তি ও আস্থার প্রদর্শনও বটে। এটি ভারত ও ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অর্থনৈতিক একীকরণের চলমান প্রকল্পেরই একটি অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই লাখ মানুষকে হত্যা, আহত বা পঙ্গু করেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি অবরোধ ও অবরুদ্ধ নীতির কারণে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সারা বিশ্বে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
অনেক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। কোনো কোনো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে, শত শত সাধারণ মানুষ এখনো নৌকায় করে খাদ্য ও ওষুধ গাজায় পাঠাতে চেষ্টা করছে অবরোধ ভাঙার আশায়।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী স্মতরিচকে আতিথ্য দিয়ে এবং চুক্তি স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই জানায়নি, বরং নিজের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দেশটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, স্মতরিচ হচ্ছেন সেই ইসরায়েলি নেতা যিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অন্তত পাঁচটি পশ্চিমা দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। ফলে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ আরও ভয়ংকর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার মুখে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ভারত কার্যত এগিয়ে এসেছে। গত এক দশক এবং চলমান গণহত্যার সময়কালেও ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতি বাতিলের পর ভারতীয় শ্রমিক পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং মূলধারার ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে গাজায় হত্যাযজ্ঞ ঢেকে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক এগিয়েছে।
দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। গাজার গণহত্যা সেই সম্পর্ক বদলায়নি। গত দুই বছরে দুই দেশ পানি প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে একাধিক চুক্তি করেছে—যেখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো শিল্প গড়ে তুলেছে।
২০২৪ সালে ভারত-ইসরায়েল বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছে। ভারত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে রত্ন, গয়না, রাসায়নিক ও প্রকৌশলপণ্য। অন্যদিকে ইসরায়েল থেকে এসেছে অস্ত্র, সার ও যন্ত্রপাতি।
কিন্তু ভারত এখন ক্রমেই নিজ দেশে ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদন করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ড্রোন, রকেট ও বিস্ফোরক পাঠাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা একটি ভারতীয় ও ইসরায়েলি কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করেছে।
অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, রপ্তানি সব সময়ই ‘জাতীয় স্বার্থে’ নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে ইসরায়েল সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তখন জয়শঙ্কর জানান, ভারত আইসিসির সদস্য নয়, তাই এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই।
এই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (বিআইটি) মূলত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে অর্থনৈতিক চুক্তিগুলো আরও কার্যকর হতে পারে। সব মিলিয়ে, এটি একটি বড় চিত্রের অংশ।
সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ—জায়নবাদ ও হিন্দুত্ববাদ—দ্বারা চালিত রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও ইসরায়েল একই ধরনের বর্জনবাদী ও সম্প্রসারণবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে শুধু ইসরায়েলিদের জন্য বসতি গড়া থেকে শুরু করে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দুদের জন্য বিশেষ বসতি তৈরির প্রচেষ্টা পর্যন্ত এর প্রমাণ মিলছে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের ‘ল অব রিটার্ন’ বা ‘নেশন স্টেট ল’ এবং ভারতের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ’—সবই ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকত্ব দেওয়ার উদাহরণ। দুই দেশের স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে ব্যাপক নজরদারি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন প্রয়োগ এবং সেনাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতার মধ্য দিয়ে।
কাশ্মীরে ভারত সরকার সিসিটিভি ক্যামেরা, স্থানীয় সংবাদদাতা ও সাংবাদিক-অ্যাকটিভিস্টদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বাড়িঘর ভাঙা এবং ধর্মীয় স্থাপনা টার্গেট করেও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল এই পদ্ধতিগুলোকে নিজেদের জাতিগত জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়ার অগ্রগতি হিসেবে দেখে।
এই চুক্তির মাধ্যমে সেই বন্ধন আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। এটি বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিচ্ছে: গণহত্যা চালানো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইসরায়েলের ভবিষ্যতের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রকাশ করছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি একটি বড় মাইলফলক।
কিন্তু যারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে, তাদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে—গ্লোবাল সাউথের তথাকথিত নেতা হিসেবে পরিচিত ভারত আসলে বেছে নিয়েছে বাণিজ্য, অস্ত্র ও সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে। বিশ্বের কাছে এটি সেই বার্তা দেয় যে নিপীড়ন শুধু লাভজনক নয়, বরং গাজার গণহত্যার ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু যা সংরক্ষণ করাও জরুরি মনে করছে ভারত।
লেখক: আজাদ ইসা, মিডল ইস্ট আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব থেকে শুরু করে ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি ২০১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত আল-জাজিরার দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর লেখা বইয়ের নাম, ‘হস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়েন্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

কিছুদিন আগে ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি বা বিআইএ নামে পরিচিত এই সমঝোতা দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে সহায়তা করবে।
৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, ‘এই চুক্তি ভারতীয় ও ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দেবে, ইসরায়েলি রপ্তানি জোরদার করবে এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চিত পরিবেশ ও উন্নয়নের হাতিয়ার দেবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, আর সহযোগিতা ইসরায়েলের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
শুধু তা-ই নয়, এটি ভারতের সঙ্গে কোনো ‘পশ্চিমা দেশ’ তথা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রের প্রথম চুক্তি। এ ছাড়া, এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথও তৈরি করছে। এবং অতি অবশ্যই, এই চুক্তির মূল বিষয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা।
অনেকে মনে করছেন, ভারতের তরফ থেকে এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদানির হাইফা বন্দর বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া এবং একই সঙ্গে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি) টিকিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আইএমইসি ভারতের জন্য পশ্চিমা বাজারে পণ্য পাঠানোর প্রধান রুট, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর থেকে করিডরটি নানা বাধার মুখে পড়েছে।
তবু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এটি শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনীতি, কূটনীতি এবং শক্তি ও আস্থার প্রদর্শনও বটে। এটি ভারত ও ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অর্থনৈতিক একীকরণের চলমান প্রকল্পেরই একটি অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই লাখ মানুষকে হত্যা, আহত বা পঙ্গু করেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি অবরোধ ও অবরুদ্ধ নীতির কারণে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সারা বিশ্বে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
অনেক দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। কোনো কোনো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে, শত শত সাধারণ মানুষ এখনো নৌকায় করে খাদ্য ও ওষুধ গাজায় পাঠাতে চেষ্টা করছে অবরোধ ভাঙার আশায়।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী স্মতরিচকে আতিথ্য দিয়ে এবং চুক্তি স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই জানায়নি, বরং নিজের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দেশটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, স্মতরিচ হচ্ছেন সেই ইসরায়েলি নেতা যিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অন্তত পাঁচটি পশ্চিমা দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। ফলে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ আরও ভয়ংকর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার মুখে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে ভারত কার্যত এগিয়ে এসেছে। গত এক দশক এবং চলমান গণহত্যার সময়কালেও ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতি বাতিলের পর ভারতীয় শ্রমিক পাঠানো থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং মূলধারার ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে গাজায় হত্যাযজ্ঞ ঢেকে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক এগিয়েছে।
দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। গাজার গণহত্যা সেই সম্পর্ক বদলায়নি। গত দুই বছরে দুই দেশ পানি প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে একাধিক চুক্তি করেছে—যেখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো শিল্প গড়ে তুলেছে।
২০২৪ সালে ভারত-ইসরায়েল বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছে। ভারত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে রত্ন, গয়না, রাসায়নিক ও প্রকৌশলপণ্য। অন্যদিকে ইসরায়েল থেকে এসেছে অস্ত্র, সার ও যন্ত্রপাতি।
কিন্তু ভারত এখন ক্রমেই নিজ দেশে ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদন করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ড্রোন, রকেট ও বিস্ফোরক পাঠাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থা একটি ভারতীয় ও ইসরায়েলি কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করেছে।
অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, রপ্তানি সব সময়ই ‘জাতীয় স্বার্থে’ নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে ইসরায়েল সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তখন জয়শঙ্কর জানান, ভারত আইসিসির সদস্য নয়, তাই এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই।
এই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (বিআইটি) মূলত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে অর্থনৈতিক চুক্তিগুলো আরও কার্যকর হতে পারে। সব মিলিয়ে, এটি একটি বড় চিত্রের অংশ।
সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ—জায়নবাদ ও হিন্দুত্ববাদ—দ্বারা চালিত রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও ইসরায়েল একই ধরনের বর্জনবাদী ও সম্প্রসারণবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে শুধু ইসরায়েলিদের জন্য বসতি গড়া থেকে শুরু করে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দুদের জন্য বিশেষ বসতি তৈরির প্রচেষ্টা পর্যন্ত এর প্রমাণ মিলছে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের ‘ল অব রিটার্ন’ বা ‘নেশন স্টেট ল’ এবং ভারতের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ’—সবই ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকত্ব দেওয়ার উদাহরণ। দুই দেশের স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে ব্যাপক নজরদারি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন প্রয়োগ এবং সেনাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতার মধ্য দিয়ে।
কাশ্মীরে ভারত সরকার সিসিটিভি ক্যামেরা, স্থানীয় সংবাদদাতা ও সাংবাদিক-অ্যাকটিভিস্টদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বাড়িঘর ভাঙা এবং ধর্মীয় স্থাপনা টার্গেট করেও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল এই পদ্ধতিগুলোকে নিজেদের জাতিগত জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়ার অগ্রগতি হিসেবে দেখে।
এই চুক্তির মাধ্যমে সেই বন্ধন আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। এটি বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিচ্ছে: গণহত্যা চালানো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইসরায়েলের ভবিষ্যতের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রকাশ করছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি একটি বড় মাইলফলক।
কিন্তু যারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে, তাদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে—গ্লোবাল সাউথের তথাকথিত নেতা হিসেবে পরিচিত ভারত আসলে বেছে নিয়েছে বাণিজ্য, অস্ত্র ও সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে। বিশ্বের কাছে এটি সেই বার্তা দেয় যে নিপীড়ন শুধু লাভজনক নয়, বরং গাজার গণহত্যার ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু যা সংরক্ষণ করাও জরুরি মনে করছে ভারত।
লেখক: আজাদ ইসা, মিডল ইস্ট আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব থেকে শুরু করে ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি ২০১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত আল-জাজিরার দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর লেখা বইয়ের নাম, ‘হস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়েন্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে