Ajker Patrika

ব্রেক্সিটপন্থীদের প্রত্যাখ্যানেই কনজারভেটিভের ভরাডুবি, লেবারের বিজয়ে ১২ ফ্যাক্টর

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০: ৩৬
ব্রেক্সিটপন্থীদের প্রত্যাখ্যানেই কনজারভেটিভের ভরাডুবি, লেবারের বিজয়ে ১২ ফ্যাক্টর

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ব্রিটেনের শাসনক্ষমতায় আসছে লেবার পার্টি। দেশটির সাধারণ নির্বাচনে দলটি এবার ৪১২টি আসন পেয়েছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে দলটির সবচেয়ে বড় জয়। স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে দলটি গত ২০১৯ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার মাত্র দুই পয়েন্ট বেশি ভোট পেয়েছে। আর তাতেই লেবার পার্টির আসন সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো কনজারভেটিভদের সমর্থন হ্রাস। 

কনজারভেটিভদের দুর্বলতা ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয় লেবারদের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে। রিফর্ম ইউকে পার্টি কনজারভেটিভ বা টরি ভোটের বড় অংশ টেনেছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টিও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। এসব বিষয়ে নিয়ে বিস্তর একটি প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। 

১৯৯৭ সালের পর লেবারের বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা
এবারের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ১৭০ অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য বলছে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রথম মেয়াদের পর এটিই সবচেয়ে বড় জয়। ১৯৯৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে লেবার পার্টি ১৭৮ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেবার টনি ব্লেয়ার সংসদীয় আসনের ৬৩ দশমিক ৪ দখল করেছিলেন। এটি আধুনিক যুগে যেকোনো সরকারের সর্বোচ্চ জয়। এর আগে ক্লিমেন্ট অ্যাটলি ১৯৪৫ সালে ১৪৭ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। 

কনজারভেটিভদের ভরাডুবি ও লেবারের ব্যর্থতা
কনজারভেটিভদের সমর্থন কমে যাওয়ায় এবারের নির্বাচনে দলটির ভরাডুবি হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব ইংল্যান্ড, মিডল্যান্ডস এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে তাঁদের তরী মাঝ নদীতেই ডুবেছে। 

ওয়েলসে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ১৯১৮ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। মাত্র ১৮ শতাংশ ওয়েলশ ভোটাররা দলটিকে ভোট দিয়েছেন। তবে টরি শিবিরে ভরাডুবির সুফল পুরোটা ঘরে তুলতে পারেনি লেবাররা। ২০১৯ সালের নির্বাচনে পশ্চিম মিডল্যান্ডস এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে লেবাররা যেই ভোট পেয়েছিল এবারও তাঁর আশপাশেই ঘুরপাক খেয়েছে দলটি এবং লন্ডনে ভোট কমে গেছে দলটির। 

উল্টো তৃতীয় পক্ষগুলো কনজারভেটিভদের ভোট টেনেছে নিজেদের ঝুলিতে। তবে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে স্কটল্যান্ডে। সেখানে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) ব্যাপক ভরাডুবির মধ্যে লেবার পার্টির ভোট বেড়েছে। 

 রিফর্ম পার্টির চমক ও রক্ষণশীলদের ক্ষতি
কনজারভেটিভদের কম ভোট পাওয়া ও লেবার পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পেছনে প্রধান কারণ ছিল নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টি। দলটি মাত্র চারটি আসন পেলেও ১০৩টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এর মধ্যে ১২টিতে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ভোট। পূর্ববর্তী যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে ফারাজের পার্টির সবচেয়ে বড় চমক এটি। 

ব্রেক্সিট পার্টিটি ২০১৯ সালে মাত্র তিনটি আসনে দ্বিতীয় স্থান দখল করতে পেরেছিল। যদিও সেবার দলটি কনজারভেটিভের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ফারাজের ইউকে ইনডিপিন্ডেন্স পার্টি ২০১৫ সালে মাত্র একটি আসন জিতেছিল। তবে সেবার দলটি ১২০টি আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল। 

ডানপন্থী ভোটারদের মধ্যে বিভক্তির আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। সেই বিভাজনের কারণেই ১৮০টি আসনে মূল্য চোকাতে হয়েছে কনজারভেটিভদের। অন্য কথায়, এই আসনগুলোতে সেসব ভোট রিফর্ম পার্টি পেয়েছে সেগুলো যদি কনজারভেটিভ পার্টি পেত তবে তাঁরা জয়ী হতে পারত। বিজয়ী না হলেও পূর্বে ইংল্যান্ডের আরও ২৫টি আসন কনজারভেটিভ পার্টি পেত। 

পশ্চিম মিডল্যান্ডস, পূর্ব মিডল্যান্ডস, দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং ওয়েলসের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ছিল। রিফর্ম পার্টি ও কনজারভেটিভদের ভোট এক করলে ফলাফলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা দিত ক্যানক চেজ জেলায়। সেখানে রিফর্ম ইউকে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও কনজারভেটিভ পার্টি ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দল দুটির ভোট এক করলে সহজেই লেবারের ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটকে ছাড়িয়ে যায়। 

লেবারের ঘাঁটি পুনরুদ্ধার ও কিছু দুর্বলতা
লেবারদের বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল উত্তর ইংল্যান্ড। এই এলাকাকে লেবার পার্টির হার্টল্যান্ড বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া মধ্য ইংল্যান্ডের আসনগুলোতেও জয় পেয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ান ৩৩টি নতুন নির্বাচনী এলাকা চিহ্নিত করেছে, যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের ‘লাল প্রাচীর’ এলাকায় পড়ে। লেবার পার্টি এসব আসনের মধ্যে ২৫টি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। ‘লাল প্রাচীর’ এলাকার মূল আসনগুলো ফিরে পাওয়া লেবার পার্টির কৌশলবিদদের খুশি করবে। তাঁরা ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে দল থেকে দূরে সরে যাওয়া শ্রমিক শ্রেণি এবং ব্রেক্সিট-ভোটারদের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের আশা করেছিল। 

এই জয়ের কিছু অবশ্য কনজারভেটিভ পার্টির ভোট হ্রাস দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। লেবার ২০১৯ সালের তুলনায় কম ভোট পেয়ে এই আসনগুলোর মধ্যে ছয়টিতে জিতেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বার্নলি, হাইন্ডবার্ন এবং বোল্টন নর্থ ইস্ট। এই তিন আসনে লেবার পার্টির ভোট পাঁচ পয়েন্টের বেশি কমে যাওয়া সত্ত্বেও ফলাফল উল্টে গেছে। 

 কনজারভেটিভ তরী ও ব্রেক্সিট ভোটাররা 
গোটা ইংল্যান্ডেই কনজারভেটিভদের সমর্থন তলানিতে নামায় এবার তাঁদের পতন অনেকটা পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে যেসব আসনে তারা সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে সেসব আসনের ভোটাররা ঋষি সুনাকের দলকে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে জানতে পেরেছে গার্ডিয়ানের একটি সূত্র। 

গার্ডিয়ানের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে বা ব্রেক্সিটে যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোক ভোট দিয়েছিল, সেসব এলাকাতেই কনজারভেটিভ পার্টি গো-হারা হেরেছে। ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে রক্ষণশীল সমর্থনের সঙ্গে ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট ভোটারদের একটি সম্পর্ক ছিল। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেটি উবে গেল। এটি কনজারভেটিভ পার্টির জন্য উদ্বেগজনক কারণ—যেসব ভোটারদের ওপর নির্ভর করে আগেরবার দলটি ক্ষমতায় এসেছিল পরেরবারই তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিল। 

লিবারেল ডেমোক্রেটিকের ৬০ আসন ও কনজারভেটিভের মুখে কালি
যুক্তরাজ্যের এই নির্বাচন লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এক শুভদিন। দলটি কত আসন পেতে পারে তা নিয়ে আগে থেকেই নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। কনজারভেটিভ ও লিব ডেম—উভয়েরই লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমে নিজেদের আসন পুনরুদ্ধার করা এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বের ঐতিহ্যগত রক্ষণশীল এলাকায় জয়লাভ করা। 

তবে লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি এবার কনজারভেটিভদের ৬০ আসন ছিনিয়ে নিতে পারবে সেটি দলটির নেতা এড ডেভিও কল্পনা করেননি। লিব ডেমস শেষ পর্যন্ত মোট ৭১টি আসন জিতেছে। দলটি মূলত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের আসনগুলোতে জয়ী হয়েছে। 

এ ছাড়া দলটি নর্থ শ্রপশায়ার, হোনিটন এবং সিডমাউথ এবং চিচেস্টারের মতো আসনেও জয় পেয়েছে। এসব আসনের সবকটিতেই ২০১৯ সালে কনজারভেটিভ পার্টি জিতেছিল। এসব আসনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ২৫ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে। 

৪৭ আসনে কনজারভেটিভের রেকর্ড ভাঙা পরাজয়
যুক্তরাজ্যের কিছু আসন রয়েছে যেগুলোতে বরাবরই কনজারভেটিভ পার্টি জয়লাভ করে। এসব আসন দেশটির মিডল্যান্ডে। তবে এবারের নির্বাচনে সেসব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ২০২৪ সালের আগে সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে ব্রেন্ট নর্থে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে এখানে কনজারভেটিভদের হারিয়েছিল লেবার পার্টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় চমক। 

সেই রেকর্ডটি এবার রাতারাতি ভেঙে গেছে। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে মিডল্যান্ডের ৪৬টি আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। সবচেয়ে বড় কনজারভেটিভ-টু-লেবার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিম নরফোকে। এই এলাকায় ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে লেবার পার্টি। এতে কনজারভেটিভরা এমন সব আসন হারিয়েছে, যা তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো নির্বাচনে হারায়নি। যেমন—অ্যাল্ডারশট, অল্টরিংহাম, চিচেস্টার, ডোরকিং এবং টুনব্রিজ ওয়েলস। 

২০১০ সাল থেকে স্কটল্যান্ডে জনপ্রিয়তা নেই এসএনপি
আনাস সারওয়ার খুশি হবেন যে লেবার পার্টির স্কটিশ শাখা আবারও স্কটল্যান্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। স্কটল্যান্ডের ৫৭টি আসনের মধ্যে ৩৭টি জিতেছে লেবার পার্টি। বিপরীতে এসএনপি পেয়েছে মাত্র নয়টি। 

২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি ৫৯টি আসনের মধ্যে ৪১টি আসন জিতেছিল, কিন্তু ২০১৫ সালে প্রায় সব আসন হারিয়ে একটিতে জয় দলে রাখতে পেরেছিল। ২০১০ সালের পর লেবার পার্টি স্কটল্যান্ডে ১০ টির বেশি আসন পেতে হিমশিম খেয়েছে। 

এবার এয়ারড্রি, শটস, আল্লোয়া, গ্র্যানগেমোথ এবং লোথিয়ান ইস্টের মতো আসনে জয় তুলে নিয়ে লেবার পার্টি স্কটল্যান্ডে নিজের শক্তির জানান দিয়েছে। 

 ভোটহার কম
এবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভোটারদের উদাসীনতার লক্ষ্য করা হয় এবং এর ফলাফল ভোটহারে দেখা গেছে। গত সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের হার ৬৭ শতাংশ থেকে কমে ৬০ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ম্যানচেস্টার রুশোলমে, লিডস সাউথ এবং কিংস্টন অন হাল ইস্টসহ ৫৯টি নির্বাচনী এলাকায় অর্ধেকেরও কম ভোটার উপস্থিতি ছিল। 

গ্রিনস লক্ষ্যমাত্রা পূরণ
নির্বাচনের আগে গ্রিন পার্টি বলেছিল, দলটি এবারের নির্বাচনে চারটি আসন জয় পাবে। আসনগুলো হলো—ব্রাইটন প্যাভিলিয়ন, ব্রিস্টল সেন্ট্রাল, ওয়েভেনি ভ্যালি এবং নর্থ হেয়ারফোর্ডশায়ার। যেমন কথা তেমন কাজ। দলটি নির্বাচনের ফলাফলেও দেখিয়েছে তাই। 

শেষ পর্যন্ত কার্লা ডেনিয়ার এবং অ্যাড্রিয়ান রামসের দল ঘোষিত সবগুলো আসনে জয় পেয়েছে। পার্টির আসনসংখ্যা চারগুণ করেছে এবং উত্তর হেয়ারফোর্ডশায়ারে দলটি ভোটের হার ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ করেছে। 

একই সঙ্গে গ্রিনস ভোটপ্রাপ্তির হার ২০১৯ সালের ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৭ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। দলটি এবার ৪৭টি আসনে দ্বিতীয় হয়েছে, যা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য বড় শক্তি। 

পোর্টিলো ক্ষণের আগমন
২৬ জন সিনিয়র কনজারভেটিভ এমপি এই নির্বাচনে হেরেছেন, যার মধ্যে কেউ কেউ ৪০ শতাংশ ভোটে হেরেছেন। নির্বাচনের আগে চেলটেনহ্যামে ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও বিচার সচিব অ্যালেক্স চাক ও গডালমিং অ্যান্ড অ্যাশে চ্যান্সেলর জেরেমি হান্টের মতো প্রার্থিরা ‘পোর্টিলো মোমেন্টস’ এর সম্ভাব্য শিকার হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কারণ তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। 

হান্ট আসন ধরে রাখতে সক্ষম হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস লেবার প্রার্থী টেরি জার্মির বিরুদ্ধে আশ্চর্যজনকভাবে পরাজিত হয়েছেন। 

গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত