আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৯ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৯ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৯ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৯ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে