Ajker Patrika

দ্য ওয়্যারের নিবন্ধ

ভারতীয় কূটনীতির গেরুয়াকরণ, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া

বাংলাদেশে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, নয়াদিল্লির জন্য ক্ষমতার সঙ্গে নীতির ভারসাম্য রক্ষা করা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার অত্যন্ত জরুরি।

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ১৯
ছবি: দ্য ওয়্যারের সৌজন্যে
ছবি: দ্য ওয়্যারের সৌজন্যে

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জুলাইয়ে চীন সফরে যান। এক সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত থাকলেও তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে ১০ জুলাই হঠাৎ ঢাকায় ফেরেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চীনে এটি তাঁর পঞ্চম রাষ্ট্রীয় সফর ছিল। যেখানে আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও চীন বারবার হাসিনাকে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন জুগিয়েছে।

তবে যাঁরা শেখ হাসিনার প্রতিটি সফরে ‘সুনামের’ ভারী ব্যাগ নিয়ে ফেরার দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত—তাঁদের কাছে এই সফরের ফল ছিল হতাশাজনক। দেশের ক্রমেই জটিল হতে থাকা রিজার্ভ-সংকট কাটানোর জন্য শেখ হাসিনা চীন সফরে ৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার প্রত্যাশা করলেও মাত্র ১৩৭ মিলিয়ন ডলারের ছোট প্রতিশ্রুতি নিয়েই তাঁকে ফিরতে হয়।

এ ছাড়া এই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ স্থায়ী হয় মাত্র ৩০ মিনিট। এমনকি চীন সফরকারী বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতাদের জন্য যে প্রটোকল দেওয়া হয়, সেটি থেকেও বঞ্চিত হন শেখ হাসিনা। চীনের অসন্তোষ স্পষ্ট হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনার সুচারুভাবে নির্মিত তাসের ঘরের ভিত নড়ে ওঠে! এর ঠিক এক মাসের কম সময় পর ৫ আগস্ট তাঁর সেই তাসের ঘর ভেঙে পড়ে।

এরপর, শেখ হাসিনা, যিনি নিজে তাঁর বাহিনীর হাতে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীকে হতাহত করার ঘটনা তদারক করেছেন—ভারতে চলে যান। বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা দক্ষিণ ব্লককে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

অনেক দূরদর্শী বিশ্লেষকের মতে, এই মুহূর্ত দীর্ঘদিন আগেই অনুমেয় ছিল। ভারত দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে ‘হাই–রিস্ক গেম’ বা উচ্চ-ঝুঁকির খেলা খেলেছে—যেকোনো মূল্যে কেবল শেখ হাসিনাকেই সমর্থন করার মধ্য দিয়ে। এই কৌশল গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের আশায় থাকা অন্য সব রাজনৈতিক দল এবং কোটি কোটি বাংলাদেশি নাগরিকের কাছ থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

প্রাথমিকভাবে, ভারতের এই ‘সংকীর্ণ’ অবস্থানকে যথার্থ মনে হয়েছিল। কারণ, শেখ হাসিনা ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি কার্যকরভাবে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে নিষ্ক্রিয় করেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সন্ত্রাস দমনের উদ্বেগ নিরসনে সহায়তা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নজিরবিহীন ঘনিষ্ঠতার সূচনা করেন।

এই চাকচিক্যের বাইরে ভারতের অবিচল সমর্থন শেখ হাসিনাকে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোট কারচুপি ও তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের সুযোগ করে দিয়েছিল। এর ফলে সৃষ্টি হয় এক অত্যন্ত অজনপ্রিয়, অলিগার্কি শাসনব্যবস্থা, যা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নজিরবিহীন মাত্রার দুর্নীতি ও নিপীড়নের পথ বেছে নেয়।

যদিও রাশিয়া ও চীন হাসিনার সমর্থক ছিল, তবে বাংলাদেশিরা ভারত সরকারকে সবচেয়ে বেশি দায়ী মনে করে। অন্যদের তুলনায় ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবচেয়ে সক্রিয় হস্তক্ষেপকারী এবং শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্লজ্জ রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখা হয়।

এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, ভারতকে এক নব্য উপনিবেশবাদী শক্তি হিসেবে দেখা হয়; যারা বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের চেয়ে দেশটিকে শোষণে বেশি আগ্রহী। ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে হাসিনা সরকারের সম্পাদিত একটি অসম বিদ্যুৎ চুক্তি, ফলে বাংলাদেশকে তিন গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করা হয় এবং আদানি নজিরবিহীন মুনাফা অর্জন করে—তেমনই অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে মাত্র একটি।

সাধারণ বাংলাদেশিদের কাছে বিষয়টি ছিল পরিষ্কার—ভারত শেখ হাসিনার ক্ষমতার মসনদ রক্ষা করবে, আর শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন। এমনকি বাংলাদেশের জনগণের করের টাকায় ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্যায়ভাবে লাভবান করার মাধ্যমে হলেও। ফল কী হয়েছে? বাংলাদেশে এখন ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে এবং ভারতের জন্য ১৮ কোটি মানুষের একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ঘটনাবলি ভারত সরকারের জন্য একটি অত্যন্ত দরকারি সতর্কসংকেত হিসেবে কাজ করবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। এটি ভারতের জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছিল, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্মূল্যায়ন করার এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিজেদের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ করার। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে ভারতের কর্মকাণ্ডকে বিপ্লবের চেতনাকে অপমান করার মতো বলেই দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে হাসিনার জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যাপারে জনগণের ব্যাপক দাবির পরও ভারত তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে জনসমক্ষে বিকৃত ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমের প্রচারিত সমন্বিত প্রোপাগান্ডা, যা ভারতের রাষ্ট্রীয় নজরদারির অধীনে চলতে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রচারণায় বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর তথাকথিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অতিরঞ্জিত ও ভ্রান্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এই বিবরণগুলো সরকারিভাবে এবং শাসক দলের নেতাদের উসকানিমূলক মন্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

এদিকে, এই অতিরঞ্জিত দাবির ওপর ভারতের মনোযোগ এবং হাসিনা সরকারের জুলাই মাসে ও তার আগে সংঘটিত রক্তপাত নিয়ে ভারতের নীরবতা—এই দ্বিচারিতা সাধারণ বাংলাদেশিদের চোখ এড়ায়নি। তারা এটিকে তাদের ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের প্রতি একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই দেখছে। যেমন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর তথাকথিত ‘গণহত্যা’ বা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দেশের ‘তালেবানি’ হওয়ার দাবি—এ ধরনের মিথ্যা বর্ণনা প্রচার এবং শেখ হাসিনার উসকানিমূলক রাজনীতির প্রতি ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন—একটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্রের সন্দেহ জাগিয়েছে।

অনেকে বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সংস্কার ও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং তাদের পছন্দের নেত্রীকে পুনঃস্থাপন করতে চাইছে। এই ধরনের ধারণাগুলো কেবল দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্যই নয়, বরং উভয় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরুত্থান সম্ভব এবং এর উদাহরণ হিসেবে ত্রিপুরায় হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির (আরএসএস) সম্পৃক্ত নতুন গঠিত একটি সংগঠন—বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে সাম্প্রতিক হামলা ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে।

এই হামলার পর ভারত সরকারের দ্রুত দুঃখপ্রকাশ, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ঢাকায় ‘সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক পন্থা’ নিয়ে আলোচনার জন্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে একটি সত্যিকারের শক্তিশালী ও পারস্পরিক লাভের সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতের নেতাদের রক্তে দাগ লাগা ‘হাসিনা লেন্স’ থেকে বের হয়ে খোলা চোখে দেখতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের বুঝতে হবে যে একটি অস্থিতিশীল বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত একটি অস্থিতিশীল ভারতই ডেকে আনবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতাকে সমর্থন করা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর তাদের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের জন্ম দেবে; যা ভারত কখনোই সামলাতে পারবে না।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতের উদাসীনতার এবং কিছুটা বৈরিতার ফলে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে ধীরে ধীরে কিন্তু গভীর পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের মধ্য থেকে যে কিছু প্রধান বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ভারতীয় কূটনীতির গেরুয়াকরণ। এ ছাড়া বহুপক্ষীয় অবস্থানের কারণে বর্তমান ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা বৈশ্বিক সম্পর্ককে ক্রমশ বেশি করে ‘লেনদেনের বাজার’ হিসেবে দেখছেন, যেখানে নিজস্ব স্বার্থের নগ্ন অনুসরণে নৈতিকতার কোনো ভান ধরার প্রয়োজন নেই।

মূলত, ভারত এখন সম্পূর্ণরূপে বাস্তববাদী (রিয়েলপলিটিক) পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে এবং পুরোনো নেহরুবাদী ও গান্ধীবাদী শান্তিবাদ এবং ‘নৈতিক নীতি’ পরিত্যাগ করেছে। তাই ভারত আর বিশ্বে ‘ভারতীয় ব্র্যান্ডের নৈতিক নেতৃত্ব’ দেওয়ার প্রতি আগ্রহী নয়।

একটি বহুমুখী এবং অস্থির বিশ্বে—যেখানে ক্ষমতার মানদণ্ড ও মাত্রাগুলো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে—একটি সম্পূর্ণ বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি অযৌক্তিক নয়। এ ছাড়া অতীতে ভারতের শান্তিবাদের প্রচারণা প্রায়শই অগ্রাহ্য হয়েছে। তবে ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা যে ভুল করছেন, তা হলো—‘হার্ড পাওয়ার’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘সফট পাওয়ারের’ প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়া স্থায়ী সাফল্য অর্জন করতে পারে না।

শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতা থেকে সরে যান, তবে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা অন্যদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে, আর দিল্লি পিছিয়ে পড়বে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং এখন বাংলাদেশে ভারতের আঞ্চলিক প্রভাবের পতন এরই ইঙ্গিত দেয়। যেহেতু এই ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত ও অনিশ্চিত বিশ্বে প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণ আর দিল্লিকে একটি নির্ভরযোগ্য পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখছে না। এই বিষয় ভারতের বাস্তববাদী ‘প্রতিবেশী প্রথম’—নীতির ফল এবং এটি মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়।

তবে এটি এমন হওয়ার প্রয়োজন খুব একটা ছিল না। নেহরুবাদী ‘নৈতিক নীতির’ আঞ্চলিক সাফল্যের দৃষ্টান্তও আছে। নথিপত্রে দেখা যায়, ভারত ঐতিহাসিকভাবে এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের গুণাবলিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি—যা ভারতের উদার গণতান্ত্রিক পরিচয়ে নিহিত—অতীতে আঞ্চলিক সংকটের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেগুলো সমাধানের প্রচেষ্টাকে রূপ দিয়েছিল। এর একটি উদাহরণ হলো—২০ বছর আগে নেপালের গণ-আন্দোলনের সময় যখন ভারত বহুত্ববাদকে একমাত্র টেকসই কৌশল হিসেবে সমর্থন করেছিল। স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করার প্রলোভনকে বাদ দিয়ে ভারত তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে নেপালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিল এবং এর মাধ্যমে নেপালিদের আস্থা অর্জন করেছিল।

প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ভারতবিরোধী বা ‘অন্যদের’ প্রতি অনুগত সরকার গঠনের স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকি ভারতীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারেন। তবে বিপরীতে, স্বল্প মেয়াদে যতই লাভজনক বা ‘ভারতপন্থী’ হোক না কেন, স্বৈরাচারী বা অসহিষ্ণু সরকারগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও অস্থিতিশীলতার শিকার হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশের পরিস্থিতি, যা আরও গভীরভাবে বিকশিত হচ্ছে, এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

লেখক:

ক্রিস্তোফ জাফ্রেলো সেরি: ‘সায়েন্স পো’–এর গবেষণা পরিচালক, কিংস কলেজ লন্ডনের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এর নন-রেসিডেন্ট ফেলো।

মানুচেহের শাফি: বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক। যিনি দক্ষিণ এশিয়ায় একটি জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশ গড়ে তুলতে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আগে জাতিসংঘে কাজ করেছেন এবং প্যারিসের সায়েন্স পোর প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

অনুবাদ: আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত