আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
লেখক:
রুদাবেহ শাহিদ, আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ননরেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো।
নাজমুস সাকিব, যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস অনার্স কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
লেখক:
রুদাবেহ শাহিদ, আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ননরেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো।
নাজমুস সাকিব, যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস অনার্স কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
লেখক:
রুদাবেহ শাহিদ, আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ননরেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো।
নাজমুস সাকিব, যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস অনার্স কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
এই দেশগুলো হলো—বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।
বাংলাদেশ
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—পূর্ববর্তী সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা/নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন।
জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হওয়ায় ঢাকা আরও স্বাধীন বা এমনকি (ভারত) বিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন’স নেক) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এটিকে মানবিক উদ্যোগ বলা হলেও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে ভারতের কৌশলগত অঙ্গনে বাইরের হস্তক্ষেপের বিস্তৃত প্রবণতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। বাংলাদেশ এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে দেশটি চীনের সাহায্যে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকেই সার্বভৌমত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারে। গত সপ্তাহে ভারত অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে অন্তত ২৬০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ দেখে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত চীনের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ যদি বহুমুখী অংশীদারত্ব এবং ‘সফট ব্যালান্সিং’—এর মাধ্যমে কৌশলগত আত্মনিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, তাহলে বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিবর্তনকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে এই অঞ্চলকে।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।
একই সময়ে, চীন হামবানটোটা বন্দর থেকে কলম্বো পোর্ট সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত নানা প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা হয়তো আঞ্চলিক সংহতি আশা করেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দেশটির কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার জন্য কেবল উত্তম কূটনৈতিক পছন্দই নয়, বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পন্থা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীলতা। তারা এই অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রতি সংবেদনশীল। ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করে। বিজেপির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) নামে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এবং নরেন্দ্র মোদি নিজেও আরএসএসের বর্তমান বা সাবেক সদস্য।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘বোধু বালা সেনার’ নেতা বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি চরমপন্থা মোকাবিলায় আরএসএসের সঙ্গে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ শান্তি অঞ্চল’ গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অবশ্য আরএসএস এই দাবি অস্বীকার করেছে। বৌদ্ধ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান সখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করছে যে, এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরুবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য তৈরি করে বাকিদের ‘অপর’ করে ফেলার বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর সংকটের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোট কলম্বোর সীমিত কৌশলগত পরিধিকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নেপাল
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।
কাঠমান্ডু খুব ভালো করেই জানে, তারা যখন পরম সার্বভৌমত্ব দাবি করে তখন কী ঘটে। ২০১৫ সালে নেপাল নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় ভারত এর বিরোধিতা করে। দিল্লি এই অভিযোগ তোলে যে, সংবিধানে মধেসি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। মধেসি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব গভীর। এরপরই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী অবরোধ শুরু হয়। যদিও ভারত এই অস্থিরতার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে। তবে নেপালে এটিকে ব্যাপকভাবে ভারতের জবরদস্তি হিসেবেই দেখা হয়।
মধেশী বা মধেসি জাতি নেপালের দক্ষিণভাগে ও বিহারের উত্তরাংশের সমতলে বসবাসকারী মানুষদের বলা হয়। ভারত ও নেপালের যে অংশে মধেসি জাতি বাস করে একত্রে সেই অঞ্চলকে মধেশ বলা হয়। মধেশ শব্দটি মধ্যদেশ শব্দের অপভ্রংশ রূপ। নেপাল ও বিহারের মধেসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শারীরিক গঠনগত কোনো তফাৎ নেই।
ভারত এর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেপালের ওপর আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ জ্বালানি ও ওষুধের ব্যাপক সংকট তৈরি করেছিল। তখনই নেপালজুড়ে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি, ভারত ও নেপাল মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উত্তেজনা উসকে দেয় এবং নেপালের পার্লামেন্ট নিজস্ব সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এটি নেপালের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুর সমদূরত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা নয়াদিল্লি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে জাতীয়তাবাদ বাড়ছে, তখন নেপালের কৌশলগত পন্থা অবলম্বনের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। যে অস্পষ্টতা একসময় দেশটিকে সুবিধা দিত—যেমন অবকাঠামো চুক্তি, সীমান্ত বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বার্তাগুলোর ভারসাম্য, তা ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত আঞ্চলিক পরিবেশে দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে সরকার স্পষ্ট ও দৃশ্যমান অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে।
ভুটান
ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
থিম্পুর পররাষ্ট্রনীতি সতর্ক মনে হলেও বাস্তবতা আরও জটিল। তবে এই চাপ প্রশমনে ভুটান ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশটি ন্যূনতম কূটনীতি এবং ধীর গতির রক্ষণশীল নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ধারণ করে। কাশ্মীরের মতো সংকট ভুটানের পররাষ্ট্র নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না আনলেও, থিম্পুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, দেশটি নীরবে তার কৌশলগত পরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। বিশেষ করে, যখন ভারতের আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত হচ্ছে এবং উত্তরে চীনের তৎপরতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ভারত সফরের মাধ্যমে অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে উপলক্ষ করে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা এই সংকটকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখাতে পারে। যেখানে মালদ্বীপের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম।
একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব মালদ্বীপকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। দেশটির কৌশল মূলত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু সুরক্ষায় নেতৃত্ব তৈরি করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাত সেই সুযোগকে সংকুচিত করতে পারে।
চাপের মুখে কৌশলগত উপায়
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিপরীতে এই দেশগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে একটি সাধারণ কৌশলের আলোকে তুলে ধরা যায়। সেটি হলো—ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই পাঁচটি ‘সুইং স্টেট’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সুচিন্তিত অস্পষ্টতার’ শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। তারা একাধিক শক্তির—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়, তবে কোনো জোটে আবদ্ধ হতে চায় না। এটি তাদের সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা, সামরিক চাপ বা অবকাঠামোগত জটিলতার ফাঁদে পড়া এড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংকট এই সম্পর্ক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করে পরীক্ষায় ফেলেছে। প্রতিটি ঘটনা এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ তাদের পছন্দের ইঙ্গিত দিতে, বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থান নিতে বা জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাধ্য করেছে। প্রায়শই এ ধরনের সংকট দেশগুলোর পছন্দনীয় নীরব কৌশল অবলম্বনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্তম্ভ বা মূল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব কেবল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিবারই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ ভারতবিরোধী মনোভাবাপন্ন করলে বা চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে ঠেলে দিলে তা এই অঞ্চলকে তুলনামূলক অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সমুদ্রকেন্দ্রিক পন্থা এবং কোয়াডের মতো জোটগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই কৌশলে মূলত সমুদ্রপথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেই মূল ক্ষেত্রটিকে উপেক্ষা করছে, যেখানে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এরই মধ্যে তুঙ্গে। স্থলসংযোগ, উপ-আঞ্চলিক কূটনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে কেবল সরব খেলোয়াড়দেরই নয়, বরং নীরব কৌশলী অর্থাৎ পাঁচটি ‘সুইং স্টেটকেও’ বুঝতে হবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতির ফল এই উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
লেখক:
রুদাবেহ শাহিদ, আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ননরেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো।
নাজমুস সাকিব, যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস অনার্স কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে...
১৮ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে...
১৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে...
১৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে...
১৮ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে