আমিনুল ইসলাম নাবিল

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’

ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।

ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।

হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।

শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’

ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।

ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।

হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।

শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম নাবিল

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’

ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।

ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।

হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।

শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’

ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।

ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।

হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।

শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৩ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৭ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পায় করে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।
১৫ অক্টোবর ২০২১
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৩ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৭ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পায় করে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।
১৫ অক্টোবর ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৩ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৭ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পায় করে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।
১৫ অক্টোবর ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৩ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পায় করে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।
১৫ অক্টোবর ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৩ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৭ দিন আগে