অনলাইন ডেস্ক
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ। তিনি এখনো যখন তাঁর ভাই মোহাম্মদের মৃত্যুর কথা বর্ণনা করেন তখন শোকের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভেও কাঁপতে থাকেন। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল গত ৭ মে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের সময় মারা যান।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত সেই হামলায় পাকিস্তানের যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে ৬ মে পাকিস্তানে হামলা চালায়। পাকিস্তান অবশ্য এই হামলায় তাদের কোনো ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে। ফারুক আহমেদ জানান, তাঁর ভাই ইকবাল পুঞ্চের জিয়া-উল-উলুম মাদ্রাসায় মারা যান। এই ধর্মীয় কেন্দ্র ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হয়। তিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানেই কাজ করতেন।
তবে ইকবালের মৃত্যুতেই তাঁর পরিবারের ভোগান্তি শেষ হয়ে যায়নি। তাঁর মৃত্যু ছিল ভোগান্তির শুরু মাত্র। ইকবালের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইকবালকে সন্ত্রাসী বলে মিথ্যা অভিযোগ করে। এরপরই পুলিশ এক বিবৃতি দিয়ে এই দাবি খণ্ডন করে।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাই শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তারা (গণমাধ্যম) তাঁর দাড়ি আর টুপি দেখে তাঁকে সন্ত্রাসী তকমা দেয়।’ ফারুক বলেন, ‘এটি ছিল আমাদের কাটা ঘায়ে নুন ছিটানোর মতো। আমরা ইকবালকে হারালাম, তারপর সংবাদমাধ্যম তাঁর বদনাম করল। আফসোস মৃতরা কখনোই নিজেদের রক্ষা করতে পারে না।’
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, বিমান হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৪ দিনের সামরিক সংঘাতে ইকবালসহ মোট ১৬ জন সীমান্ত সংঘাতের কারণে নিহত হন। পাকিস্তান অবশ্য ৪০ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর দাবি করেছে। তবে এর মধ্যে কতজন সরাসরি সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় দেশই হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীরকে আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু পুরোটাকেই নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশ দুটি কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধ করেছে এবং এ মাসের শুরুতে আরও একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে।
তবে সামরিক সংঘাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও ধরন পুরোটাই আলাদা। এই যুদ্ধ হলো—দাবি-পাল্টা দাবির এক ভুল তথ্যের যুদ্ধ, যা অনলাইন ও টিভিতে ছড়িয়ে পড়ে। ইকবালের পরিচয় নিয়ে গুজবের মতোই অন্যান্য বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য কিছু মূলধারার সংবাদ চ্যানেল ও ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করে।
এর মধ্যে ভারত পাকিস্তানের করাচি বন্দর ধ্বংস করে দিয়েছে, এমন দাবিও ছিল। পরে অবশ্য ভারতই সরকার এই দাবি খণ্ডন করে। তবে কিছু জালিয়াতি শনাক্ত করা কঠিন ছিল। যেমন এআই-জেনারেটেড এক ভিডিওতে দেখা যায় এক পাকিস্তান জেনারেল বলছেন, তাঁর দেশ যুদ্ধে দুটি বিমান হারিয়েছে।
ভারতের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম নিউজলন্ড্রির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মনীষা পান্ডে বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্য ও তথ্য-প্রমাণহীন দাবির মাত্রা ছিল মর্মান্তিক।’ তিনি উল্লেখ করেন, দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের জন্য চ্যানেলগুলোর মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি স্বাভাবিক, তবে সংঘাতের ‘উগ্র দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কভারেজের’ তীব্রতা ছিল নজিরবিহীন এবং ‘আমি এর আগে এমন কিছু দেখিনি।’
গণমাধ্যমের এমন আগবাড়ানো দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উগ্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে করা আচরণের ফলাফল কেমন তা ফারুক আহমেদের পরিবারের চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না। তিনি বলেন, ‘সংবাদ চ্যানেলগুলো আমার ভাই সম্পর্কে তথ্য কোথা থেকে পেল, আমি জানি না। তারা কার সঙ্গে কথা বলেছিল? আমার ভাই সন্ত্রাসী ছিল তার কী প্রমাণ তাদের কাছে ছিল?’
ইকবাল আহমেদ মারা যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও পরিবারটি গণমাধ্যম সৃষ্ট এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফারুক জানান, ৭ মে তাঁর ভাই প্রতিদিনের মতো সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু বাড়িতে ফেরেন মরদেহ হিসেবে। দুপুর নাগাদ তাঁরা তাকে নিকটস্থ এক কবরস্থানে দাফন করেন।
প্রথমদিকে, ইকবালের পরিবার বুঝতে পারেনি যে, কিছু সংবাদমাধ্যম ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কারণ, তাঁরা ইকবালের শেষকৃত্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পর এক আত্মীয় একটি হোয়াটসঅ্যাপে একটি বিশিষ্ট সংবাদ চ্যানেলের ভিডিও ক্লিপ পান। যেখানে দাবি করা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে এবং এবং সে সময় ভিডিওতে ইকবালের ছবি দেখানো হচ্ছিল।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। (ইকবাল মারা যাওয়ার) একটু পর মানুষ আমাদের ফোন করতে শুরু করে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কী ঘটছে এবং কেন সংবাদমাধ্যম ইকবালকে সন্ত্রাসী বলছে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ, এবিপি এবং নিউজ-১৮ সহ কিছু বিশিষ্ট চ্যানেল এই ভিডিও শেয়ার করেছিল।
বিবিসি এই বিষয়ে চ্যানেলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, একটি চ্যানেল দাবি করে, ইকবাল পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘একটি সন্ত্রাসী শিবিরে ভারতীয় হামলায়’ নিহত হয়েছেন এবং তিনি পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যবার সদস্য ছিলেন। ফারুক বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্যরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুঞ্চে বসবাস করছে। তারা কীভাবে বলতে পারে যে, আমার ভাই পাকিস্তানে থাকত? তাদের (সংবাদমাধ্যম) লজ্জিত হওয়া উচিত।’
ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগটি এত দ্রুত ও এত ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল যে,৮ মে পুঞ্চ পুলিশ এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে যে ইকবাল তাঁর মাদ্রাসায় সীমান্ত সংঘাতের কারণে মারা গেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পুঞ্চ পুলিশ এমন মিথ্যা বর্ণনা দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করছে। মৃত মাওলানা মোহাম্মদ ইকবাল স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়, যেসব সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তি যারা এই ভুয়া খবর প্রচার করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ফারুক আহমেদ মনে করেন, এই বিবৃতি এসেছে দেরিতে এবং এতে খুব একটা কাজ হয়নি। কারণ, সাধারণত মিথ্যা তথ্য, গুজব যতটা দ্রুত ছড়ায়, সেগুলোকে খণ্ডন করা ভাষ্য ততটা আলো পায় না। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটি প্রমাণিত হয়েছে। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যতক্ষণে পুলিশের বিবৃতি এসেছে, ততক্ষণে মিথ্যা দাবিটি ভারতের লাখো কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।’
কাশ্মীরের এই বাসিন্দা আরও বলেন, নিউজ ১৮ ছাড়া আর কেউই তাঁর পরিবার বা পাঠক-দর্শকদের কাছে ভুলের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি। ফারুক আহমেদ জানান, তিনি চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু পরিবারের অভাব থাকায় প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখতে হবে।
ইকবালের ২ স্ত্রী এবং ৮ সন্তান রয়েছে। তিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। ফারুক আহমেদ বলেন, সরকারের দেওয়া কয়েক লাখ রুপির ক্ষতিপূরণে তাদের পরিবারের এক বা দুই বছরের খরচ চলবে এবং তাদের এখন ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।
ফারুক আহমেদ জানান, ‘পুরো পরিবার আমার ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি শান্ত ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। তিনি শিশুদের পড়াতে ভালোবাসতেন। কিন্তু বিশ্বকে এই কথা কে বলবে? অনেক মানুষের কাছে, আমার ভাই এখনো একজন সন্ত্রাসী—যাকে হত্যা ন্যায্য। তারা আমাদের বেদনা কীভাবে বুঝবে?’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ। তিনি এখনো যখন তাঁর ভাই মোহাম্মদের মৃত্যুর কথা বর্ণনা করেন তখন শোকের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভেও কাঁপতে থাকেন। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল গত ৭ মে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের সময় মারা যান।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত সেই হামলায় পাকিস্তানের যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে ৬ মে পাকিস্তানে হামলা চালায়। পাকিস্তান অবশ্য এই হামলায় তাদের কোনো ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে। ফারুক আহমেদ জানান, তাঁর ভাই ইকবাল পুঞ্চের জিয়া-উল-উলুম মাদ্রাসায় মারা যান। এই ধর্মীয় কেন্দ্র ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হয়। তিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানেই কাজ করতেন।
তবে ইকবালের মৃত্যুতেই তাঁর পরিবারের ভোগান্তি শেষ হয়ে যায়নি। তাঁর মৃত্যু ছিল ভোগান্তির শুরু মাত্র। ইকবালের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইকবালকে সন্ত্রাসী বলে মিথ্যা অভিযোগ করে। এরপরই পুলিশ এক বিবৃতি দিয়ে এই দাবি খণ্ডন করে।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাই শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তারা (গণমাধ্যম) তাঁর দাড়ি আর টুপি দেখে তাঁকে সন্ত্রাসী তকমা দেয়।’ ফারুক বলেন, ‘এটি ছিল আমাদের কাটা ঘায়ে নুন ছিটানোর মতো। আমরা ইকবালকে হারালাম, তারপর সংবাদমাধ্যম তাঁর বদনাম করল। আফসোস মৃতরা কখনোই নিজেদের রক্ষা করতে পারে না।’
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, বিমান হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৪ দিনের সামরিক সংঘাতে ইকবালসহ মোট ১৬ জন সীমান্ত সংঘাতের কারণে নিহত হন। পাকিস্তান অবশ্য ৪০ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর দাবি করেছে। তবে এর মধ্যে কতজন সরাসরি সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় দেশই হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীরকে আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু পুরোটাকেই নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশ দুটি কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধ করেছে এবং এ মাসের শুরুতে আরও একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে।
তবে সামরিক সংঘাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও ধরন পুরোটাই আলাদা। এই যুদ্ধ হলো—দাবি-পাল্টা দাবির এক ভুল তথ্যের যুদ্ধ, যা অনলাইন ও টিভিতে ছড়িয়ে পড়ে। ইকবালের পরিচয় নিয়ে গুজবের মতোই অন্যান্য বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য কিছু মূলধারার সংবাদ চ্যানেল ও ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করে।
এর মধ্যে ভারত পাকিস্তানের করাচি বন্দর ধ্বংস করে দিয়েছে, এমন দাবিও ছিল। পরে অবশ্য ভারতই সরকার এই দাবি খণ্ডন করে। তবে কিছু জালিয়াতি শনাক্ত করা কঠিন ছিল। যেমন এআই-জেনারেটেড এক ভিডিওতে দেখা যায় এক পাকিস্তান জেনারেল বলছেন, তাঁর দেশ যুদ্ধে দুটি বিমান হারিয়েছে।
ভারতের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম নিউজলন্ড্রির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মনীষা পান্ডে বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্য ও তথ্য-প্রমাণহীন দাবির মাত্রা ছিল মর্মান্তিক।’ তিনি উল্লেখ করেন, দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের জন্য চ্যানেলগুলোর মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি স্বাভাবিক, তবে সংঘাতের ‘উগ্র দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কভারেজের’ তীব্রতা ছিল নজিরবিহীন এবং ‘আমি এর আগে এমন কিছু দেখিনি।’
গণমাধ্যমের এমন আগবাড়ানো দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উগ্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে করা আচরণের ফলাফল কেমন তা ফারুক আহমেদের পরিবারের চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না। তিনি বলেন, ‘সংবাদ চ্যানেলগুলো আমার ভাই সম্পর্কে তথ্য কোথা থেকে পেল, আমি জানি না। তারা কার সঙ্গে কথা বলেছিল? আমার ভাই সন্ত্রাসী ছিল তার কী প্রমাণ তাদের কাছে ছিল?’
ইকবাল আহমেদ মারা যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও পরিবারটি গণমাধ্যম সৃষ্ট এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফারুক জানান, ৭ মে তাঁর ভাই প্রতিদিনের মতো সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু বাড়িতে ফেরেন মরদেহ হিসেবে। দুপুর নাগাদ তাঁরা তাকে নিকটস্থ এক কবরস্থানে দাফন করেন।
প্রথমদিকে, ইকবালের পরিবার বুঝতে পারেনি যে, কিছু সংবাদমাধ্যম ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কারণ, তাঁরা ইকবালের শেষকৃত্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পর এক আত্মীয় একটি হোয়াটসঅ্যাপে একটি বিশিষ্ট সংবাদ চ্যানেলের ভিডিও ক্লিপ পান। যেখানে দাবি করা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে এবং এবং সে সময় ভিডিওতে ইকবালের ছবি দেখানো হচ্ছিল।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। (ইকবাল মারা যাওয়ার) একটু পর মানুষ আমাদের ফোন করতে শুরু করে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কী ঘটছে এবং কেন সংবাদমাধ্যম ইকবালকে সন্ত্রাসী বলছে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ, এবিপি এবং নিউজ-১৮ সহ কিছু বিশিষ্ট চ্যানেল এই ভিডিও শেয়ার করেছিল।
বিবিসি এই বিষয়ে চ্যানেলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, একটি চ্যানেল দাবি করে, ইকবাল পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘একটি সন্ত্রাসী শিবিরে ভারতীয় হামলায়’ নিহত হয়েছেন এবং তিনি পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যবার সদস্য ছিলেন। ফারুক বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্যরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুঞ্চে বসবাস করছে। তারা কীভাবে বলতে পারে যে, আমার ভাই পাকিস্তানে থাকত? তাদের (সংবাদমাধ্যম) লজ্জিত হওয়া উচিত।’
ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগটি এত দ্রুত ও এত ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল যে,৮ মে পুঞ্চ পুলিশ এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে যে ইকবাল তাঁর মাদ্রাসায় সীমান্ত সংঘাতের কারণে মারা গেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পুঞ্চ পুলিশ এমন মিথ্যা বর্ণনা দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করছে। মৃত মাওলানা মোহাম্মদ ইকবাল স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়, যেসব সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তি যারা এই ভুয়া খবর প্রচার করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ফারুক আহমেদ মনে করেন, এই বিবৃতি এসেছে দেরিতে এবং এতে খুব একটা কাজ হয়নি। কারণ, সাধারণত মিথ্যা তথ্য, গুজব যতটা দ্রুত ছড়ায়, সেগুলোকে খণ্ডন করা ভাষ্য ততটা আলো পায় না। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটি প্রমাণিত হয়েছে। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যতক্ষণে পুলিশের বিবৃতি এসেছে, ততক্ষণে মিথ্যা দাবিটি ভারতের লাখো কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।’
কাশ্মীরের এই বাসিন্দা আরও বলেন, নিউজ ১৮ ছাড়া আর কেউই তাঁর পরিবার বা পাঠক-দর্শকদের কাছে ভুলের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি। ফারুক আহমেদ জানান, তিনি চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু পরিবারের অভাব থাকায় প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখতে হবে।
ইকবালের ২ স্ত্রী এবং ৮ সন্তান রয়েছে। তিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। ফারুক আহমেদ বলেন, সরকারের দেওয়া কয়েক লাখ রুপির ক্ষতিপূরণে তাদের পরিবারের এক বা দুই বছরের খরচ চলবে এবং তাদের এখন ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।
ফারুক আহমেদ জানান, ‘পুরো পরিবার আমার ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি শান্ত ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। তিনি শিশুদের পড়াতে ভালোবাসতেন। কিন্তু বিশ্বকে এই কথা কে বলবে? অনেক মানুষের কাছে, আমার ভাই এখনো একজন সন্ত্রাসী—যাকে হত্যা ন্যায্য। তারা আমাদের বেদনা কীভাবে বুঝবে?’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
উচ্চপ্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতা কেবল যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বেই সীমাবদ্ধ নয়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এখন উচ্চপ্রযুক্তি অস্ত্র কিনছে চীন থেকে। এসব অস্ত্রের মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ও সমুদ্রপথে ব্যবহারের জন্য উন্নত সেন্সর সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ অন্যতম।
৫ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়া ও চীনকে নিয়ে নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনা চলমান। পাকিস্তান, চীন ও প্রতিবেশী অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে। এখানে অবশ্য ভারতের অবস্থান কী হবে সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
১ দিন আগেএশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের গতিপথ যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমশ অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে পুষণ দত্ত বলেন, ‘এতে আসলে চীনের জন্য বিশাল একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার অভিভাবকের মতো ভূমিকা নেওয়ার।’
২ দিন আগেআফগানদের গণহারে বহিষ্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সরকার বলছে, তারা বিশেষভাবে আফগানদের টার্গেট করছে না। যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন যেখানে প্রায় ২ হাজার আফগানকে ফেরত পাঠানো হতো, বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে প্রায় ৩০ হাজারে।
২ দিন আগে