আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে