Ajker Patrika

বিবিসির প্রতিবেদন /যুদ্ধ এড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমন, ঐতিহাসিক নজির কেমন?

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ২৩: ৪৬
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তান সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তান সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এ ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।

এরপর ২০১৯ সালে আবার একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।

এর আগেও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।

প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন।

সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো, পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।

বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’

এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।

দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক, সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।

হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।

বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।

সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’

২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার এক দিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।

ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।

পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।

এদিকে ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।

সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসার করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’

এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।

হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।

এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।

এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দী প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।

এরপর ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।

অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসের কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল...ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে একধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’

বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।

বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য; তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে, যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।

বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।

ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।

সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।

তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।

সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত