আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এ ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
এরপর ২০১৯ সালে আবার একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।
এর আগেও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।
প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন।
সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো, পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।
বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’
এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।
দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক, সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।
হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।
বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।
সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’
২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার এক দিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।
পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
এদিকে ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।
সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসার করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’
এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দী প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।
এরপর ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসের কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল...ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে একধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’
বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।
বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য; তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে, যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।
বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এ ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
এরপর ২০১৯ সালে আবার একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।
এর আগেও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।
প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন।
সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো, পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।
বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’
এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।
দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক, সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।
হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।
বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।
সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’
২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার এক দিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।
পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
এদিকে ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।
সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসার করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’
এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দী প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।
এরপর ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসের কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল...ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে একধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’
বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।
বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য; তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে, যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।
বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এ ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
এরপর ২০১৯ সালে আবার একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।
এর আগেও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।
প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন।
সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো, পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।
বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’
এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।
দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক, সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।
হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।
বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।
সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’
২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার এক দিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।
পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
এদিকে ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।
সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসার করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’
এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দী প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।
এরপর ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসের কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল...ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে একধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’
বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।
বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য; তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে, যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।
বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত সপ্তাহে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক প্রাণ হারান। এ ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও কূটনীতিকদের মনে ‘দেজা ভ্যু’ বা পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তির এক ভয়াবহ অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতি বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ঘাঁটিগুলো।
এরপর ২০১৯ সালে আবার একই ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলওয়ামায় বোমা হামলায় দেশটির ৪০ আধা সামরিক জওয়ান নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।
এর আগেও ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। হোটেল, রেলস্টেশন ও একটি ইহুদি কেন্দ্র ৬০ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। এতে প্রাণ হারায় ১৬৬ জন।
প্রতিবারই ভারত এসব হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে—এমন অভিযোগ এনেছে। পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির মাত্রা নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে বা আকাশপথে পাকিস্তানে ভারতের হামলা চালানো এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জবাবে পাকিস্তানের দিক থেকেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর স্মৃতিকথা ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন।
সর্বশেষ হামলার ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘পুলওয়ামা বোমা হামলা ও পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে।’ তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, পেহেলগাম হামলা একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে। সেটি হলো, পুলওয়ামা ও উরি হামলা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হয়েছিল। এবারে হামলার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিক।
বিসারিয়ার মতে, এই হামলা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় পুলওয়ামার কিছু উপাদান আছে, তবে মুম্বাইয়ের প্রভাব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি এবং ঘটনা আগের মতোই একই রকমভাবে ঘটছে।’
এক সপ্তাহ আগে, পেহেলগাম হামলার পরপরই দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দিল্লি। প্রধান সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনারা একে অপরকে লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চালিয়েছে।
দিল্লি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক, সামরিকসহ সব ধরনের বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর আগে ইসলামাবাদও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভিসা স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে ১৯৭২ সালের সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর দাবি করলেও নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দু। অজয় বিসারিয়া তাঁর স্মৃতিকথায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের পদক্ষেপের কথা লিখেছেন।
হামলার পরের দিন সকালে অজয় বিসারিয়াকে দিল্লিতে তলব করা হয়। ভারত সরকার দ্রুত পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট-ফেভার্ড-নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনগুলোতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করে, যা কার্যত আমদানি বন্ধ করে দেয়। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে স্থলপথে বাণিজ্যও স্থগিত করা হয়।
বিসারিয়া উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পরে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল আন্তসীমান্ত চলাচলকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং দিল্লি ও লাহোরের মধ্যে চলাচলকারী বাস পরিষেবা স্থগিত করা; উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলোচনা এবং শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থান করতারপুর করিডর নিয়ে আলোচনা পেছানো; ভিসা বন্ধ করা; সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা; ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করা।
সাবেক কূটনীতিক বিসারিয়া লিখেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা কতটা কঠিন, আর তা ভাঙা কতটা সহজ! এই কঠিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত, আলোচিত ও বাস্তবায়িত সব আস্থা-নির্মাণ পদক্ষেপ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হলুদ নোটপ্যাডে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে!’
২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মীর সংখ্যা ১১০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছিল। পেহেলগাম হামলার পর এখন তা ৩০ জনে নেমেছে। সে সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক আক্রমণও শুরু করে। পুলওয়ামা হামলার এক দিন পর তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশের দূতদের এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জয়শ-ই-মুহাম্মদের (জেএম) ভূমিকা সম্পর্কে জানান। তিনি পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ভারত, জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জেএমকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ভারতের কূটনৈতিক আক্রমণ হামলার ১০ দিন পরও অব্যাহত ছিল। হামলার পর সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটি জেএম প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও যাতে ‘সন্ত্রাসী তালিকায়’ তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে সে জন্য ভারত তদবির করে।
পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকারের ওপর সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত সেটি না করে চুক্তির শর্ত নির্ধারিত থাকলেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময় মোট ৪৮টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছিল ভারত। দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
এদিকে ভারত কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা রাখলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় ছিল। বিশেষ করে, দুই দেশের মিলিটারি অপারেশনস মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) হটলাইন ও উভয় দেশের হাইকমিশন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। ২০১৯ সালেও এখনকার মতোই পাকিস্তান বলেছিল, হামলাটি ‘ভুয়া’ বা ‘সাজানো’।
সে সময় এবারের মতোই ভারত কাশ্মীরে দমনপীড়ন চালায় এবং ৮০ জনের বেশি কথিত ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’কে—স্থানীয় যারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য, আশ্রয় এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়— তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীর সফর করেন এবং হামলা ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিয়ে ডোসিয়ার (দলিল) তৈরি করা হয়।
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অজয় বিসারিয়া তাঁকে জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় ভারতের কূটনৈতিক বিকল্প সীমিত। বিসারিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘তিনি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে এই ধারণা দিয়েছিলেন যে, কঠিন পদক্ষেপ আসন্ন এবং এর পরে আমরা কূটনীতির ভূমিকা প্রসার করতে পারব বলে আশা করা উচিত।’
এরপর, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ভারতের প্রথম সামরিক হামলা। ভারত দাবি করে, বালোকোটে জয়শ-ই-মুহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
হামলার ছয় ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঘোষণা করেন, এতে বিপুলসংখ্যক জঙ্গি ও কমান্ডার নিহত হয়েছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্রুত এই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দিল্লিতে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি সংকট আরও তীব্র হয়। সেদিন সকালে পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় এবং এর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হন। তাঁর আটক হওয়া নিয়ে ভারতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এটি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, এরপর ভারত একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতেরা ইসলামাবাদকে চাপ দেন। ভারতের বার্তা ছিল পরিষ্কার—পাকিস্তান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলে বা পাইলটের ক্ষতি করলে ভারত কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। যুদ্ধবন্দী প্রটোকল মেনে ১ মার্চ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে এক ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে তুলে ধরেছিল।
এরপর ৫ মার্চের মধ্যে পুলওয়ামা, বালোকোট ও পাইলটের প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে। ভারতের রাজনৈতিক উত্তেজনাও কমে আসে। নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে আবার পাঠানো হবে। এটি কূটনীতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
অজয় বিসারিয়া লিখেছেন, ‘আমি ১০ মার্চ ইসলামাবাদে পৌঁছেছিলাম। পুলওয়ামার ঘটনার পর ২২ দিন সেখানে ছিলাম না। কারগিলের পর সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সংঘাত এক মাসের কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারত পুরোনো কায়দার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিল...ভারত একটি কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের দেশের মানুষের কাছে একধরনের বিজয়ের দাবি করেছিল।’
বিসারিয়া এটিকে কূটনীতিক হিসেবে একটি ‘পরীক্ষার ও আকর্ষণীয় সময়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তবে এবারে মূল পার্থক্য ছিল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক। আরও বড় বিষয় হলো, হামলা এমন সময় হয়, যখন কাশ্মীরের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।
বিসারিয়া মনে করেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি অনিবার্য; তবে এর পাশাপাশি ‘উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতাও’ থাকে। এমন সংঘাতের সময় যখন নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠক করে, তখন তারা সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে। তারা এমন পদক্ষেপ খোঁজে, যা পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত আসবে না।
বিসারিয়া বলেন, ‘এবারও (ভারতের) শরীরী ভাষা ও পরিস্থিতি একই রকম।’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ভারতের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিলের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি এটি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর পরিণতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা তখনো একটি সংকটের মধ্যেই ছিলাম। আমরা তখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ (কাইনেটিক অ্যাকশন) দেখিনি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
০৩ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
০৩ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
০৩ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারত আবারও ‘সংঘাত উসকে দেওয়া ও সংযম দেখানো’র মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। এটি হলো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের এক ভঙ্গুর ভারসাম্য। এই পুনরাবৃত্ত চক্রটি যারা উপলব্ধি করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অজয় বিসারিয়া। পুলওয়ামা হামলার সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
০৩ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে