আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে