আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’

ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১৪ মে ২০২৫
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে