রিক্তা রিচি, ঢাকা

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে