জাহীদ রেজা নূর

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। তাতেই আমি অনেকক্ষণ উড়ছিলাম কল্পনার আকাশে।
আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
করোনা তার হাত প্রসারিত করছিল যখন, তখন থেকেই সন্জীদা খাতুনের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য। সে সময় মাঝে মাঝেই তিনি ফোন করতেন আমাকে। ২০২০ সালে করোনার বিভীষিকার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান কীভাবে করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এতগুলো মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর মত ছিল না। যখন কথাগুলো বলছিলেন আমাকে, বোঝা যাচ্ছিল, তিনি চাইছেন তাঁর এই ভাবনাকে যেন আমি সমর্থন করি। আমিও নির্দ্বিধায় বলেছি, যেভাবে রোগটা ছড়াচ্ছে তাতে এত দিন একসঙ্গে এত মানুষের রিহার্সাল করা ঠিক হবে না। সেবার রমনার বটমূলে অনুষ্ঠান হয়নি। ভার্চুয়ালি হয়েছিল।
তখন সারা বিশ্বেই কেমন সময় আমরা সবাই মিলে কাটিয়েছি, সেটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে না। প্রত্যেকেই ভুক্তভোগী। কাউকে বলে দিতে হবে না, তখন থেকে একের পর এক মানুষ মুড়ি-মুড়কির মতো মারা যেতে থাকলেন। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মৃত্যুতালিকায় যোগ হতে থাকলেন কাছের মানুষেরা। মনে হচ্ছিল, এভাবেই ভয়াল রোগটা তার থাবা বাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে গ্রাস করবে বলে। কেউ একজন মারা গেছেন, সে কথা জানাতে ফোন করেছি যাঁকে, তিনিও তার কিছুদিন পর এই একই অতিমারিতে ভুগে মারা গেছেন।
তখন মাঝে মাঝেই কথা বলতেন তিনি। এক একটা মৃত্যু তাঁকে বিমর্ষ করে দিচ্ছিল। সে বছর তাঁর যে দুটো বই বের হয়েছিল, সে দুটো আমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাইরের মানুষের সামনে দরজা খোলা মানা। তাই ফোনে বলেছিলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানের কাছে বই দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে নিয়ে যাবি।’
আমি নিয়ে এসেছিলাম।
এরপর ২০২১ সালে একেবারে নিকটাত্মীয়দের হারাতে শুরু করলাম যখন, তখন থেকে আমার নিজেরও কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে হতো না। সন্জীদা খাতুনও আর খুব বেশি ফোন করতেন না। এ সময় তিনি জানতে পারলেন, তাঁর চোখে এই বয়সে আর অপারেশন করা সম্ভব নয়। অপারেশন করার পর যা যা মানতে হবে, শরীর তাতে সায় দেবে না। তাই পড়ার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হলো। হাঁটতে সমস্যা হতে শুরু করল। প্রচণ্ডরকমভাবে জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা মানুষটি নিজের ওপর বিরক্ত হলেন।
সেই মানুষটি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে একবার তাঁকে চোখে দেখা সম্ভব।
২.
সেই পরিচিত বাড়ি! যখন বলেছেন, তখনই এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছি। কখনো কখনো তাঁর কথা রেকর্ড করেছি মোবাইল ফোনে। জন্মদিনগুলোতে তিনি যদি কথা বলতে রাজি হতেন, তাহলে কী যে আনন্দে ভরে যেত মন! আমরা সতীর্থ অনেকেই একসঙ্গে গিয়ে হাজির হতাম তাঁর বাড়িতে। লুচি আর তরকারি ছাড়াও আরও অনেক খাবারে ভরা থাকত টেবিল। কারও ইচ্ছে হলে খেয়ে নিত। কেউ তাঁকে শোনাত গান, কেউ করত আবৃত্তি। এবার সে সুযোগ ছিল না।
আমি যখন পৌঁছলাম, তখন নিচ থেকে বোঝা যাচ্ছিল না, লিফটের সাতে আসলে কী হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ানদের বললাম, ‘কেউ কি এসেছে?’
তাঁরা বললেন, ‘একজন ওপরে গেছেন।’
আমি আগের দিনের কথামতো ঠিক করে রেখেছি, দরজা খোলা হলে কেকটা বাড়ির ভেতর রেখে তাঁকে একবার দূর থেকে দেখে ফিরে আসব।
সেভাবেই দরজায় দোরঘণ্টি বাজালাম। দরজা খুলে গেল। দেখলাম, আপা বসে আছেন। সামনে বসে আছেন ওয়াদুদ ভাই।
আমি দরজায় দাঁড়িয়েই বললাম, ‘শুভ জন্মদিন। বহুদিন পর দেখা হলো আপনার সঙ্গে!’
কোমল স্বরে তিনি বললেন, ‘ভেতরে আয়।’
আগের দিন বলেছিলেন, করোনা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় এখন আগের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেন না।
ঘরে ঢুকেই বুঝলাম একটু বেশি সকালে চলে এসেছি। তিনি তখনো শাড়ি বদলে পরিপাটি হয়ে বসেননি।
চোখে চশমা নেই।
আমি আমার অধিকার খাটিয়ে বললাম, ‘চশমা কোথায়?’
দেখিয়ে দিলেন সামনেই রয়েছে চশমার বাক্সটা।
বললাম, ‘আপনাকে চশমা ছাড়া ভালো লাগে না।’
এবার চশমা দিলেন চোখে। বললেন, ‘কাল রুচিরা শাড়ি বের করে দিয়ে গেছে। এখনো পরতে পারিনি।’
‘ছায়ানটের কর্মীরা কখন আসবে?’
‘নটার পর। বোধ হয়, সাড়ে নটার দিকে। পার্থ এসে ঘরদোর সব ঠিকঠাক করে গেছে। সে সময় পার্থ আবার আসবে। লিসার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ও সকালে সেখানে গেছে।’
৩.
ওয়াদুদ ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত নিয়ে কিছু কথা বললেন তিনি। তার একটা হলো, স্বাভাবিকভাবে যারা গান শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উচ্চাঙ্গসংগীতের জুজু ঢুকিয়ে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু এখনকার শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সহজাত ভঙ্গির মধ্যে জোর করে উচ্চাঙ্গসংগীত ঢুকিয়ে দিতে চান বলে অনেক নতুন শিল্পীই গানের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
গান হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত।
কথার ফাঁকে ফাঁকে টেলিফোন আসতে থাকে। তিনি আজ সবগুলো ফোন ধরবেন। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা গভীর ভালোবাসা থেকেই আজকের দিনটিতে তাঁকে স্মরণ করছেন। তিনি সবার সঙ্গেই একটু একটু করে কথা বলছেন।
গতকাল বলেছিলেন, পড়তে অসুবিধা হয়, হাঁটতে অসুবিধা হয়। আজ দেখলাম, কে ফোন করছে সেটাও টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে পড়ে ফেলতে পারছেন। বললেন, বেশিক্ষণ কোনো দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। ছোট মেয়ে রুচিরা একটা জিনিস কিনে দিয়েছেন, যা দিয়ে দেখলে অক্ষরগুলো বড় দেখা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর ‘৫০টি গল্প’ নামে একটি বই মাঝে মাঝে পড়ছেন এখন। গল্পগুলোর কোনো কোনোটি ভালো হলেও কোনো কোনোটি ভালো লাগেনি তাঁর, সে কথাও বললেন।
৪.
এ সময় একেবারেই যুক্তিহীনভাবে আমি তাঁকে বললাম, ‘একটা গান করেন।’
চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললেন, ‘না।’
বললাম, ‘আমার জন্য দুটো লাইন গান। ভালো লাগবে।’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। গান করবেন কি করবেন না, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন গানের কয়েকটি লাইন তুলে আনলেন কণ্ঠে, তখন বুঝলাম, এদিনের সঙ্গে যায়, এমন একটি গানই খুঁজছিলেন এই মৌনতার সময়।
গাইলেন:
‘কী গাব আমি, কী শোনাব আজি আনন্দধামে’।
৫.
তাঁর দুটো ফোনে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসতে শুরু করল।
এর মধ্যে কানাডা থেকে ফোন করলেন পার্থ সারথি শিকদার। মস্কোতে পার্থদার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। চিঠি চালাচালি হতো। এরপর ফোন করলেন মাছওয়ালা। বাড়ির কাজের সহযোগী মেয়েটা কড়া ভাষায় জানাল, এখন মাছ কেনার দরকার নেই।
মাছওয়ালা লোভ দেখাচ্ছিল বড় মাছের। কিন্তু এর আগে সম্ভবত মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অসততা করায় সে কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। একটু পরে মনে হলো মনটা নরম হয়েছে, বাড়ির সহযোগীকে বললেন, ‘গুলশা মাছ দিতে চাইছে, নেব?’
ওয়াদুদ ভাইয়ের আনা ফুল গোছাতে গোছাতে এবার সেই রাগত মেয়েটাও নরম সুরে বলল, ‘দিতে বলেন।’
একটু পরেই ছায়ানটের কর্মীরা আসবে। তাই আমি বললাম, ‘আজ আসি!’
তারপর বললাম, ‘আপনি তো জানেন আমি প্রণাম, সালাম কিছুই করি না। কিন্তু মন থেকে যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা এমনিতেই আসে, তাঁদের পা ছুঁই!’
‘না না’ করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘আমার হাতটা ধর তাহলে!’
তাঁর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ গালের সঙ্গে ধরে রাখলাম। তারপর বললাম, ‘কাল টেলিফোনে যা যা বললেন, তা আমার ভালো লাগেনি। আপনাকে বাঁচতে হবে। অনেক দিন বাঁচতে হবে। মৃত্যুর কথা বলা চলবে না।’
হেসে বললেন, ‘আবার আসিস!’

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। তাতেই আমি অনেকক্ষণ উড়ছিলাম কল্পনার আকাশে।
আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
করোনা তার হাত প্রসারিত করছিল যখন, তখন থেকেই সন্জীদা খাতুনের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য। সে সময় মাঝে মাঝেই তিনি ফোন করতেন আমাকে। ২০২০ সালে করোনার বিভীষিকার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান কীভাবে করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এতগুলো মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর মত ছিল না। যখন কথাগুলো বলছিলেন আমাকে, বোঝা যাচ্ছিল, তিনি চাইছেন তাঁর এই ভাবনাকে যেন আমি সমর্থন করি। আমিও নির্দ্বিধায় বলেছি, যেভাবে রোগটা ছড়াচ্ছে তাতে এত দিন একসঙ্গে এত মানুষের রিহার্সাল করা ঠিক হবে না। সেবার রমনার বটমূলে অনুষ্ঠান হয়নি। ভার্চুয়ালি হয়েছিল।
তখন সারা বিশ্বেই কেমন সময় আমরা সবাই মিলে কাটিয়েছি, সেটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে না। প্রত্যেকেই ভুক্তভোগী। কাউকে বলে দিতে হবে না, তখন থেকে একের পর এক মানুষ মুড়ি-মুড়কির মতো মারা যেতে থাকলেন। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মৃত্যুতালিকায় যোগ হতে থাকলেন কাছের মানুষেরা। মনে হচ্ছিল, এভাবেই ভয়াল রোগটা তার থাবা বাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে গ্রাস করবে বলে। কেউ একজন মারা গেছেন, সে কথা জানাতে ফোন করেছি যাঁকে, তিনিও তার কিছুদিন পর এই একই অতিমারিতে ভুগে মারা গেছেন।
তখন মাঝে মাঝেই কথা বলতেন তিনি। এক একটা মৃত্যু তাঁকে বিমর্ষ করে দিচ্ছিল। সে বছর তাঁর যে দুটো বই বের হয়েছিল, সে দুটো আমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাইরের মানুষের সামনে দরজা খোলা মানা। তাই ফোনে বলেছিলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানের কাছে বই দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে নিয়ে যাবি।’
আমি নিয়ে এসেছিলাম।
এরপর ২০২১ সালে একেবারে নিকটাত্মীয়দের হারাতে শুরু করলাম যখন, তখন থেকে আমার নিজেরও কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে হতো না। সন্জীদা খাতুনও আর খুব বেশি ফোন করতেন না। এ সময় তিনি জানতে পারলেন, তাঁর চোখে এই বয়সে আর অপারেশন করা সম্ভব নয়। অপারেশন করার পর যা যা মানতে হবে, শরীর তাতে সায় দেবে না। তাই পড়ার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হলো। হাঁটতে সমস্যা হতে শুরু করল। প্রচণ্ডরকমভাবে জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা মানুষটি নিজের ওপর বিরক্ত হলেন।
সেই মানুষটি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে একবার তাঁকে চোখে দেখা সম্ভব।
২.
সেই পরিচিত বাড়ি! যখন বলেছেন, তখনই এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছি। কখনো কখনো তাঁর কথা রেকর্ড করেছি মোবাইল ফোনে। জন্মদিনগুলোতে তিনি যদি কথা বলতে রাজি হতেন, তাহলে কী যে আনন্দে ভরে যেত মন! আমরা সতীর্থ অনেকেই একসঙ্গে গিয়ে হাজির হতাম তাঁর বাড়িতে। লুচি আর তরকারি ছাড়াও আরও অনেক খাবারে ভরা থাকত টেবিল। কারও ইচ্ছে হলে খেয়ে নিত। কেউ তাঁকে শোনাত গান, কেউ করত আবৃত্তি। এবার সে সুযোগ ছিল না।
আমি যখন পৌঁছলাম, তখন নিচ থেকে বোঝা যাচ্ছিল না, লিফটের সাতে আসলে কী হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ানদের বললাম, ‘কেউ কি এসেছে?’
তাঁরা বললেন, ‘একজন ওপরে গেছেন।’
আমি আগের দিনের কথামতো ঠিক করে রেখেছি, দরজা খোলা হলে কেকটা বাড়ির ভেতর রেখে তাঁকে একবার দূর থেকে দেখে ফিরে আসব।
সেভাবেই দরজায় দোরঘণ্টি বাজালাম। দরজা খুলে গেল। দেখলাম, আপা বসে আছেন। সামনে বসে আছেন ওয়াদুদ ভাই।
আমি দরজায় দাঁড়িয়েই বললাম, ‘শুভ জন্মদিন। বহুদিন পর দেখা হলো আপনার সঙ্গে!’
কোমল স্বরে তিনি বললেন, ‘ভেতরে আয়।’
আগের দিন বলেছিলেন, করোনা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় এখন আগের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেন না।
ঘরে ঢুকেই বুঝলাম একটু বেশি সকালে চলে এসেছি। তিনি তখনো শাড়ি বদলে পরিপাটি হয়ে বসেননি।
চোখে চশমা নেই।
আমি আমার অধিকার খাটিয়ে বললাম, ‘চশমা কোথায়?’
দেখিয়ে দিলেন সামনেই রয়েছে চশমার বাক্সটা।
বললাম, ‘আপনাকে চশমা ছাড়া ভালো লাগে না।’
এবার চশমা দিলেন চোখে। বললেন, ‘কাল রুচিরা শাড়ি বের করে দিয়ে গেছে। এখনো পরতে পারিনি।’
‘ছায়ানটের কর্মীরা কখন আসবে?’
‘নটার পর। বোধ হয়, সাড়ে নটার দিকে। পার্থ এসে ঘরদোর সব ঠিকঠাক করে গেছে। সে সময় পার্থ আবার আসবে। লিসার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ও সকালে সেখানে গেছে।’
৩.
ওয়াদুদ ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত নিয়ে কিছু কথা বললেন তিনি। তার একটা হলো, স্বাভাবিকভাবে যারা গান শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উচ্চাঙ্গসংগীতের জুজু ঢুকিয়ে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু এখনকার শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সহজাত ভঙ্গির মধ্যে জোর করে উচ্চাঙ্গসংগীত ঢুকিয়ে দিতে চান বলে অনেক নতুন শিল্পীই গানের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
গান হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত।
কথার ফাঁকে ফাঁকে টেলিফোন আসতে থাকে। তিনি আজ সবগুলো ফোন ধরবেন। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা গভীর ভালোবাসা থেকেই আজকের দিনটিতে তাঁকে স্মরণ করছেন। তিনি সবার সঙ্গেই একটু একটু করে কথা বলছেন।
গতকাল বলেছিলেন, পড়তে অসুবিধা হয়, হাঁটতে অসুবিধা হয়। আজ দেখলাম, কে ফোন করছে সেটাও টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে পড়ে ফেলতে পারছেন। বললেন, বেশিক্ষণ কোনো দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। ছোট মেয়ে রুচিরা একটা জিনিস কিনে দিয়েছেন, যা দিয়ে দেখলে অক্ষরগুলো বড় দেখা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর ‘৫০টি গল্প’ নামে একটি বই মাঝে মাঝে পড়ছেন এখন। গল্পগুলোর কোনো কোনোটি ভালো হলেও কোনো কোনোটি ভালো লাগেনি তাঁর, সে কথাও বললেন।
৪.
এ সময় একেবারেই যুক্তিহীনভাবে আমি তাঁকে বললাম, ‘একটা গান করেন।’
চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললেন, ‘না।’
বললাম, ‘আমার জন্য দুটো লাইন গান। ভালো লাগবে।’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। গান করবেন কি করবেন না, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন গানের কয়েকটি লাইন তুলে আনলেন কণ্ঠে, তখন বুঝলাম, এদিনের সঙ্গে যায়, এমন একটি গানই খুঁজছিলেন এই মৌনতার সময়।
গাইলেন:
‘কী গাব আমি, কী শোনাব আজি আনন্দধামে’।
৫.
তাঁর দুটো ফোনে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসতে শুরু করল।
এর মধ্যে কানাডা থেকে ফোন করলেন পার্থ সারথি শিকদার। মস্কোতে পার্থদার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। চিঠি চালাচালি হতো। এরপর ফোন করলেন মাছওয়ালা। বাড়ির কাজের সহযোগী মেয়েটা কড়া ভাষায় জানাল, এখন মাছ কেনার দরকার নেই।
মাছওয়ালা লোভ দেখাচ্ছিল বড় মাছের। কিন্তু এর আগে সম্ভবত মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অসততা করায় সে কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। একটু পরে মনে হলো মনটা নরম হয়েছে, বাড়ির সহযোগীকে বললেন, ‘গুলশা মাছ দিতে চাইছে, নেব?’
ওয়াদুদ ভাইয়ের আনা ফুল গোছাতে গোছাতে এবার সেই রাগত মেয়েটাও নরম সুরে বলল, ‘দিতে বলেন।’
একটু পরেই ছায়ানটের কর্মীরা আসবে। তাই আমি বললাম, ‘আজ আসি!’
তারপর বললাম, ‘আপনি তো জানেন আমি প্রণাম, সালাম কিছুই করি না। কিন্তু মন থেকে যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা এমনিতেই আসে, তাঁদের পা ছুঁই!’
‘না না’ করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘আমার হাতটা ধর তাহলে!’
তাঁর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ গালের সঙ্গে ধরে রাখলাম। তারপর বললাম, ‘কাল টেলিফোনে যা যা বললেন, তা আমার ভালো লাগেনি। আপনাকে বাঁচতে হবে। অনেক দিন বাঁচতে হবে। মৃত্যুর কথা বলা চলবে না।’
হেসে বললেন, ‘আবার আসিস!’

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে