
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। আর স্বপ্ন পূরণে হতে হয় নাছোড়বান্দা! কঠোর শ্রম, অধ্যবসায় আর সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা একটি মানুষকে স্বপ্নের মঞ্জিলে পৌঁছে দিতে পারে। এপিজে আব্দুল কালামের কথায়, ‘সেটিই প্রকৃত স্বপ্ন যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’
কিন্তু স্বপ্নই যদি হয় অশান্তির কারণ! স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে দুশ্চিন্তা এবং নিদ্রাহীনতা যদি অস্বাস্থ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কী করা উচিত?
এ প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি রেডিওর দৈনিক আয়োজন উইমেন্স আওয়ারের লিসেনার উইকে এক শ্রোতা মণিকা ই–মেইল বার্তায় স্বপ্ন নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ঔপন্যাসিক হওয়া তাঁর আজীবনের স্বপ্ন। তিনি সত্তর বছর বয়সে এসে সে আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
স্বপ্ন পূরণে হাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তিনি বেদনাদায়ক বা দুঃখজনক বলার বদলে ‘মুক্তি’ হিসেবেই দেখছেন। এমনকি ‘আমি লেখক নই’–এখন তাঁর পছন্দের বুলি হয়ে উঠেছে।
ওই শ্রোতা বলেন, ‘আমি কল্পনাবিলাসী ছিলাম, কল্পনার রাজ্যেই থাকতাম। খুব ছোটকালে এক শিক্ষক যখন আমাকে বলেন যে, আমি লেখক হতে পারি, কথাটি আমার মনে ধরে। আমি অবশ্যই লেখক হতে চেয়েছি—এ বিষয়ে সবকিছুই আমি খুব ভালো লাগত।’
লেখক হওয়ার স্বপ্ন যে একেবারে অধরা রয়ে গেছে তা নয়। ওই শ্রোতা মেনোপজের ওপর একটি নন–ফিকশন বই প্রকাশ করেছে। তবে একটা উপন্যাস লেখার তীব্র ইচ্ছা তাঁকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
মণিকা বলেন, ‘শুরুতে স্বপ্ন বেশ বড় ছিল, এ নিয়ে আমার বেশ কয়েকটি পরিকল্পনাও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। একবার এক এজেন্সির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করার সময় তাঁরা বলেন, এক মিনিটে আপনার উপন্যাস সম্পর্কে বলুন। ১৫ মিনিট পর তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু আমি তাও কথা বলছিলাম! আমি থামতে পারছিলাম না। আমার কাছে এ অভিজ্ঞতা অত্যন্ত লজ্জাজনক মনে হয়।’
এবিসিকে মণিকা বলেন, ‘আমি পেশায় শিক্ষিকা ছিলাম। প্রত্যেক ছুটির দিনে আমার মনে হতো, আমার লেখা উচিত। উপন্যাস লেখার চিন্তা আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছিল, অসুস্থ লাগছিল।’
বয়স যখন সত্তরের কোটায়, তখন হাল ছেড়ে দেন মণিকা। ‘আমি জানি আমি ঔপন্যাসিক নই। আমি শুরু আর শেষটা জানি, তবে মধ্যভাগটাই হলো এমন এক অংশ যেটি আমি মেলাতে পারি না।’ যোগ করেন মণিকা।
ঔপন্যাসিক হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে মণিকা এখন একটি স্কুলে চাকরি নেন। তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ অভিজ্ঞতা, কারণ আমি এখন শিশুদের কল্পনার সঙ্গী হতে পারি।’
মণিকা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুঝতে পেরেছেন তাঁর এখন স্বপ্ন পূরণের জেদ ছেড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
তবে আজীবন লালিত স্বপ্নের পেছনে ছোটা কখন ছেড়ে দেওয়া উচিত তা কি বুঝতে পারা আদৌ সম্ভব?
চার্টার্ড মনোবিজ্ঞানী ক্যাথরিন হ্যালিসি বলেন, ‘এ প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় শুনি: সবার একটা লক্ষ্য স্থির থাকা উচিত। তবে কেউ আপনাদের বলে না যে, এ লক্ষ্যগুলোকে সময়ে সময়ে পর্যালোচনাও করা দরকার। এ ক্ষেত্রে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে—এ লক্ষ্য কি এখনো আপনার জন্য ঠিক?’
ক্যাথরিন বলেন, ‘আপনার লক্ষ্য এখনো আপনার জীবন এবং আপনার জন্য উপযুক্ত কি না ভেবে দেখুন। আপনি কি এখনো এটাই অর্জন করতে চান?’
স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
একই সঙ্গে লক্ষ্যটি এখনো বাস্তবসম্মত কি না সেটিও ভেবে দেখতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ধাপের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাথরিন বলেন, ‘আপনার বিনিয়োগ ও লাভের বিশ্লেষণ করাও প্রয়োজন। নিজেকে প্রশ্ন করুন এ লক্ষ্যের পেছনে দৌড়ানো ঠিক হচ্ছে কি না। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, আপনাকে এ লক্ষ্যের জন্য প্রকৃত মূল্য যাচাই করতে হবে। যেমন—এ লক্ষ্যের কারণে কি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? আর এ লক্ষ্য ছেড়ে দিলে কী হতে পারে?’
আশার ভ্রান্তি মানুষকে মাঝপথে লক্ষ্য ত্যাগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একে বলা হয় ‘সাংক কস্ট ফ্যালাসি’। এর মানে হলো, কোনো একটা লক্ষ্যের জন্য সময় ও শক্তি ক্ষয়ের কথা চিন্তা করে সেটি ত্যাগ করার যৌক্তিকতা স্পষ্ট হওয়ার পরও সেই লক্ষ্য পূরণে লেগে থাকা। অবশ্য এ ধরনের বিনিয়োগকে সম্পূর্ণ অপচয় বলা যায় না। কারণ সময় ও শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া অভিজ্ঞতাই আপনাকে আজকের মানুষ হতে সাহায্য করেছে।
ক্যাথরিনের মতে, ‘লক্ষ্য সমন্বয় সক্ষমতা’ নিয়েও চিন্তা করতে হবে। এর মানে হলো নতুন কোনো তথ্য গ্রহণ করার মানসিকতা এবং সে তথ্য অনুসারে নিজের লক্ষ্য সমন্বয় করা। অলভ্য লক্ষ্য ছেড়ে দেওয়া এবং নতুন লক্ষ্যে মনযোগ দিতে পারা মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি।
ক্যাথরিন বলেন, ‘নিয়মিত লক্ষ্য পর্যালোচনা করা এবং এর উন্নতি মূল্যায়ন করা জরুরি। এ ছাড়া লক্ষ্যটি আপনার জন্য এখনো উপযুক্ত কি না তা মূল্যায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন হলে কিছু কিছু কাজ ছেঁটে ফেলতে হবে। লক্ষ্যের প্রতি নমনীয় হতে হবে।’
সময়ের সঙ্গে আমরা বেড়ে উঠি, আমাদের মানসিক উন্নতি হয় এবং আমাদের পরিবর্তনও হয়—এটা মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য মানে এ নয় যে, যেকোনো মূল্য লক্ষ্য আঁকড়ে থাকতে হবে। সাফল্য হলো সে লক্ষ্য অর্জনে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে পারা।
লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে একটা দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে না থেকে বরং নিজেকে নতুন সম্ভাবনার পথে মেলে ধরার মধ্যেই থাকে মুক্ত ও প্রশস্ত হৃদয় আর সৃজনশীলতা।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। আর স্বপ্ন পূরণে হতে হয় নাছোড়বান্দা! কঠোর শ্রম, অধ্যবসায় আর সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা একটি মানুষকে স্বপ্নের মঞ্জিলে পৌঁছে দিতে পারে। এপিজে আব্দুল কালামের কথায়, ‘সেটিই প্রকৃত স্বপ্ন যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’
কিন্তু স্বপ্নই যদি হয় অশান্তির কারণ! স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে দুশ্চিন্তা এবং নিদ্রাহীনতা যদি অস্বাস্থ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কী করা উচিত?
এ প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি রেডিওর দৈনিক আয়োজন উইমেন্স আওয়ারের লিসেনার উইকে এক শ্রোতা মণিকা ই–মেইল বার্তায় স্বপ্ন নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ঔপন্যাসিক হওয়া তাঁর আজীবনের স্বপ্ন। তিনি সত্তর বছর বয়সে এসে সে আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
স্বপ্ন পূরণে হাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তিনি বেদনাদায়ক বা দুঃখজনক বলার বদলে ‘মুক্তি’ হিসেবেই দেখছেন। এমনকি ‘আমি লেখক নই’–এখন তাঁর পছন্দের বুলি হয়ে উঠেছে।
ওই শ্রোতা বলেন, ‘আমি কল্পনাবিলাসী ছিলাম, কল্পনার রাজ্যেই থাকতাম। খুব ছোটকালে এক শিক্ষক যখন আমাকে বলেন যে, আমি লেখক হতে পারি, কথাটি আমার মনে ধরে। আমি অবশ্যই লেখক হতে চেয়েছি—এ বিষয়ে সবকিছুই আমি খুব ভালো লাগত।’
লেখক হওয়ার স্বপ্ন যে একেবারে অধরা রয়ে গেছে তা নয়। ওই শ্রোতা মেনোপজের ওপর একটি নন–ফিকশন বই প্রকাশ করেছে। তবে একটা উপন্যাস লেখার তীব্র ইচ্ছা তাঁকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
মণিকা বলেন, ‘শুরুতে স্বপ্ন বেশ বড় ছিল, এ নিয়ে আমার বেশ কয়েকটি পরিকল্পনাও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। একবার এক এজেন্সির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করার সময় তাঁরা বলেন, এক মিনিটে আপনার উপন্যাস সম্পর্কে বলুন। ১৫ মিনিট পর তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু আমি তাও কথা বলছিলাম! আমি থামতে পারছিলাম না। আমার কাছে এ অভিজ্ঞতা অত্যন্ত লজ্জাজনক মনে হয়।’
এবিসিকে মণিকা বলেন, ‘আমি পেশায় শিক্ষিকা ছিলাম। প্রত্যেক ছুটির দিনে আমার মনে হতো, আমার লেখা উচিত। উপন্যাস লেখার চিন্তা আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছিল, অসুস্থ লাগছিল।’
বয়স যখন সত্তরের কোটায়, তখন হাল ছেড়ে দেন মণিকা। ‘আমি জানি আমি ঔপন্যাসিক নই। আমি শুরু আর শেষটা জানি, তবে মধ্যভাগটাই হলো এমন এক অংশ যেটি আমি মেলাতে পারি না।’ যোগ করেন মণিকা।
ঔপন্যাসিক হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে মণিকা এখন একটি স্কুলে চাকরি নেন। তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ অভিজ্ঞতা, কারণ আমি এখন শিশুদের কল্পনার সঙ্গী হতে পারি।’
মণিকা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুঝতে পেরেছেন তাঁর এখন স্বপ্ন পূরণের জেদ ছেড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
তবে আজীবন লালিত স্বপ্নের পেছনে ছোটা কখন ছেড়ে দেওয়া উচিত তা কি বুঝতে পারা আদৌ সম্ভব?
চার্টার্ড মনোবিজ্ঞানী ক্যাথরিন হ্যালিসি বলেন, ‘এ প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় শুনি: সবার একটা লক্ষ্য স্থির থাকা উচিত। তবে কেউ আপনাদের বলে না যে, এ লক্ষ্যগুলোকে সময়ে সময়ে পর্যালোচনাও করা দরকার। এ ক্ষেত্রে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে—এ লক্ষ্য কি এখনো আপনার জন্য ঠিক?’
ক্যাথরিন বলেন, ‘আপনার লক্ষ্য এখনো আপনার জীবন এবং আপনার জন্য উপযুক্ত কি না ভেবে দেখুন। আপনি কি এখনো এটাই অর্জন করতে চান?’
স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
একই সঙ্গে লক্ষ্যটি এখনো বাস্তবসম্মত কি না সেটিও ভেবে দেখতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ধাপের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাথরিন বলেন, ‘আপনার বিনিয়োগ ও লাভের বিশ্লেষণ করাও প্রয়োজন। নিজেকে প্রশ্ন করুন এ লক্ষ্যের পেছনে দৌড়ানো ঠিক হচ্ছে কি না। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, আপনাকে এ লক্ষ্যের জন্য প্রকৃত মূল্য যাচাই করতে হবে। যেমন—এ লক্ষ্যের কারণে কি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? আর এ লক্ষ্য ছেড়ে দিলে কী হতে পারে?’
আশার ভ্রান্তি মানুষকে মাঝপথে লক্ষ্য ত্যাগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একে বলা হয় ‘সাংক কস্ট ফ্যালাসি’। এর মানে হলো, কোনো একটা লক্ষ্যের জন্য সময় ও শক্তি ক্ষয়ের কথা চিন্তা করে সেটি ত্যাগ করার যৌক্তিকতা স্পষ্ট হওয়ার পরও সেই লক্ষ্য পূরণে লেগে থাকা। অবশ্য এ ধরনের বিনিয়োগকে সম্পূর্ণ অপচয় বলা যায় না। কারণ সময় ও শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া অভিজ্ঞতাই আপনাকে আজকের মানুষ হতে সাহায্য করেছে।
ক্যাথরিনের মতে, ‘লক্ষ্য সমন্বয় সক্ষমতা’ নিয়েও চিন্তা করতে হবে। এর মানে হলো নতুন কোনো তথ্য গ্রহণ করার মানসিকতা এবং সে তথ্য অনুসারে নিজের লক্ষ্য সমন্বয় করা। অলভ্য লক্ষ্য ছেড়ে দেওয়া এবং নতুন লক্ষ্যে মনযোগ দিতে পারা মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি।
ক্যাথরিন বলেন, ‘নিয়মিত লক্ষ্য পর্যালোচনা করা এবং এর উন্নতি মূল্যায়ন করা জরুরি। এ ছাড়া লক্ষ্যটি আপনার জন্য এখনো উপযুক্ত কি না তা মূল্যায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন হলে কিছু কিছু কাজ ছেঁটে ফেলতে হবে। লক্ষ্যের প্রতি নমনীয় হতে হবে।’
সময়ের সঙ্গে আমরা বেড়ে উঠি, আমাদের মানসিক উন্নতি হয় এবং আমাদের পরিবর্তনও হয়—এটা মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য মানে এ নয় যে, যেকোনো মূল্য লক্ষ্য আঁকড়ে থাকতে হবে। সাফল্য হলো সে লক্ষ্য অর্জনে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে পারা।
লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে একটা দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে না থেকে বরং নিজেকে নতুন সম্ভাবনার পথে মেলে ধরার মধ্যেই থাকে মুক্ত ও প্রশস্ত হৃদয় আর সৃজনশীলতা।

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
১৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৬ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
০৯ অক্টোবর ২০২৩
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৬ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
০৯ অক্টোবর ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
১৯ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৬ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
০৯ অক্টোবর ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
১৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

স্বপ্নের পেছনে ছোটা কি এখনো আপনাকে আনন্দ দেয়—সেটিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাথরিন। শুরুর আবেগ আর উদ্যম এখনো পুরোদমে আছে কি না সেটিও মাঝেমধ্যে পরখ করে নেওয়া দরকার।
০৯ অক্টোবর ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
১৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৫ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৬ দিন আগে