ইশতিয়াক হাসান

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া

লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। জানালা দিয়ে নানা গাছপালা দেখছিলাম আর ট্রেনের শব্দের মধ্যে আলাদা করার চেষ্টা করছিলাম অরণ্যের পশু-পাখির ডাক। হঠাৎ করে মনের পর্দায় ভেসে উঠল বিখ্যাত একটি সিনেমার দৃশ্য, যেটি চিত্রায়িত হয়েছে এই অরণ্যে। হলিউডের ১৯৫৬ সালের ওই দুর্দান্ত ছবির নাম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ। একই নামের কালজয়ী এক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় যেটি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক হিসেবে, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি। তাঁরই অমর সৃষ্টি শুরুতে যে উপন্যাসের কথা বলা হয়েছে সেই ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ বা ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’।
জুল ভার্নের জন্ম ব্যস্ত এক ফরাসি বন্দর নঁতে। বলা চলে, এখানে আসা-যাওয়া করা অজস্র জাহাজই অভিযানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয় বালক জুল ভার্নের মনে । বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় ছোটগল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী বাবার ইচ্ছা ছেলে তাঁকেই অনুসরণ করবে। অতএব আইন অধ্যয়নের জন্য প্যারিসে পাঠানো হলো জুল ভার্নকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য ও থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকল ক্রমেই। ১৮৪৯ সালে আইন ডিগ্রি অর্জনের পর জুল ভার্ন নিজের শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কারণেই রয়ে গেলেন প্যারিসে।
তবে বাবার দিক থেকে আইন পেশায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। ১৮৫২ সালের দিকে বাবার নঁতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন জুল ভার্ন। উল্টো একটি থিয়েটারে স্বল্প বেতনে সেক্রেটারির চাকরি নেন।
জুল ভার্নের জীবনের পরের কাহিনিতে যাওয়ার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। আগে বের হওয়া জুল ভার্নের বইগুলোর অনুবাদ ভলিউম আকারে বের করা শুরু করেছে সেবা প্রকাশনী। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম এ রকম একটি ভলিউম। পাঁচ-পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ছিল। পরের দুই দিন কাটল মোটা ভলিউমটি নিয়েই। নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠল। মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ডের সাবলীল রূপান্তর ‘রহস্যের দ্বীপে’ জুল ভার্নের চরিত্রদের সঙ্গে বেলুনে চেপে হাজির হয়ে গেলাম এক দুর্গম দ্বীপে । আমার চোখের সামনেই যেন দ্বীপের চেহারা পাল্টে দিলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনির আশ্চর্য এক মিশেল বইটি। দ্বীপে টেলিগ্রাফ লাইন বসানো, নিজেরাই কাচ তৈরি করে বাসন বানানো, নৌকা এমনকি জাহাজ তৈরি করার মতো বিষয়গুলো যেন মনের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। পাশাপাশি দেখা না দেওয়া রহস্যময় এক ব্যক্তির সাহায্য, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই সবকিছু মিলিয়ে মজে গেলাম। এদিকে ‘বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ’ বইয়ে হট এয়ার বেলুনে চেপে আফ্রিকার দুর্গম এলাকা চষে বেড়ানোর সময় রোমাঞ্চে, ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল শরীর।
তারপর অবশ্য একে একে জুল ভার্নের সেবা থেকে বের হওয়া সব কটি বই-ই পড়ে ফেলি। এখন অবশ্য আরও কোনো কোনো প্রকাশনী জুল ভার্নের বই অনুবাদ করা শুরু করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদও পাওয়া যায় দোকানে।
যাক, জুল ভার্নের জীবনকাহিনিতে ফিরে যাচ্ছি আবার। ১৮৫৬ সালে হনোরিন দ্যু ভিয়েন নামের এক বিধবা তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৮৫৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর জুল ভার্ন বুঝতে পারলেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটা জরুরি। স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তাই বলে লেখালেখি থেকে দূরে সরে গেলেন না। ১৮৫৭ সালেই প্রথম বই ‘দ্য ১৮৫৭ স্যালন (লা সেলন দ্যু ১৮৫৭)’ প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ সালে, জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ভ্রমণ করেন। এটা তাঁর ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি লেখেন ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে দম্পতির একমাত্র সন্তান, মিশেল জঁ পিয়েরে ভার্নের জন্ম হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক হেতজেলের সঙ্গে পরিচয়ই জুল ভার্নের জীবন পাল্টে দিল। বলা চলে, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতিতেও আছে এই প্রকাশকের বড় ভূমিকা। ১৮৬৩ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’। দুর্দান্ত এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নেয়। হেতজেলের সঙ্গে প্রতিবছর তাঁর জন্য লেখার চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৮৬৪ সালে হেতজেল প্রকাশ করেন জুল ভার্নের আরেক বিখ্যাত বই ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ক্যাপ্টেন হ্যাটরাস’। একগুঁয়ে ও রোমাঞ্চপ্রেমী এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দুর্দান্ত এক সাগর অভিযানে পাঠকের বেরিয়ে পড়ার সুযোগ হয় বইটিতে। একই বছর প্রকাশ পায় জুল ভার্নের আরেক দুর্দান্ত উপন্যাস ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ’। পাতালের এই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া সাবলীল রূপান্তর ‘পাতাল অভিযান’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম বালক বয়সেই।
১৮৬৫ সালটি জুল ভার্নের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলতে পারেন। কারণ এ বছরই বের হয় তাঁর দুনিয়া কাঁপানো বই ফ্রম দ্য আর্থ টু মুন বা ‘চাঁদে অভিযান’। মানুষ চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এর ১০৪ বছর আগেই মানুষকে চাঁদে অভিযানে পাঠিয়ে দেন জুল ভার্ন। বলা চলে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।
ভ্রমণ আর অভিযানের প্রতি আগ্রহ এত প্রবল ছিল জুল ভার্নের যে, একপর্যায়ে একটি জাহাজই কিনে ফেলেন। এই জাহাজের কল্যাণে জুল ভার্ন ও তাঁর স্ত্রী সাগরে চষে বেরিয়ে বড় একটি সময় কাটাতে লাগলেন। বন্দর থেকে বন্দরে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এতে নিজের ছোটগল্প আর উপন্যাসের অনেক মাল-মসলাও পেলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বেরিয়ে এলেন।
১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় জুল ভার্নের আরেক অসাধারণ উপন্যাাস ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’। আর এখানেই আবারও একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাকে।
জুল ভার্নের ওই ভলিউম কেনারও আগের গল্প। সম্ভবত ক্লাস ফোরে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচের অংশটা তখন আমার কাছে রহস্য-রোমাঞ্চের খনিতে প্রবেশের দরজা। গাদাগাদি করে সেখানে রাখা ছিল অনেক বই। নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়ের কাহিনি’, সেবা প্রকাশনীর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ কিংবা ‘উড়ন্ত সসার’-এর মতো বই, করবেট-এন্ডারসনের রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনি কিংবা স্টিভেনসনের ট্রেজার আইল্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় এখানেই। একদিন আব্বুর ওই ভান্ডারেই খুঁজে পাই ‘সাগরতলে’ বইটি। অর্থাৎ ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ।
বলা চলে, ‘সাগরতলে’ আমার সাগর সম্পর্কে ধারণটাই পাল্টে দিল। আমি নিশ্চিত আরও অনেক পাঠকের বেলাতেই এটি সত্যি। সাবমেরিন বলে যে জলের তলে বিচরণে সক্ষম আশ্চর্য এক যান আছে তা-ও জানলাম এই বইয়ে। ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর সঙ্গে সেই সাবমেরিনে চেপে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম সাগরের তলে। তাঁর সেই রহস্যে মোড়া সাবমেরিন, যেটিকে মানুষ ভেবেছিল বিপজ্জনক এক প্রাণী। সাগরের কত প্রাণীর নাম জানলাম বইটি পড়ে। ক্যাপ্টেন নিমোও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে সাগরে মুক্তা খুঁজলাম! আরও কত কী করলাম!
বলা চলে কোমলে-কঠিন মেশানো আশ্চর্য এক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার বালক মনে, যা অটুট আছে এখনো। অবশ্য পরে রহস্যের দ্বীপে ক্যাপ্টেন নিমো আর নটিলাসের পরিণতির কথা ভাবলে এখনো মন কেঁদে ওঠে।
আবার ফিরে আসা যাক জুল ভার্নের জীবনচক্রে। ১৮৬৯-৭০ সালের দিকে অ্যারাউন্ড দ্য মুন এবং ডিসকভারি অব দ্য আর্থ নামের বই দুটিও প্রকাশিত হয়। তত দিনে জুল ভার্নের বই ফরাসি থেকে ইংরেজিতেও রূপান্তরিত হচ্ছে। বলা চলে লিখেই ভালোভাবে চলতে পারেন তখন।
১৮৭২ সালের শেষের দিকে জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ফিলিয়াস ফগের দুঃসাহসিক ভ্রমণ এমন সময়ে পাঠকদের রোমাঞ্চকর এক অভিযানে নিয়ে যায়, যখন ভ্রমণ সহজ এবং লোভনীয় হয়ে উঠছিল। উপন্যাসটি প্রকাশের পর দেড় শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এটি এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও মোহাচ্ছন্ন করে রাখে রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠকদের। পাঠক যেন নিজেকে আবিষ্কার করেন ফিলিয়াস ফগের জায়গায়।
থিয়েটার, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে উঠে আসে ফগের বিশ্বভ্রমণের গল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫৬ সালের সেই ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রটি, যাতে ফিলিয়াস ফগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন অভিনেতা ডেভিড নিভেন। এই ছবির একটি অংশ চিত্রায়িত হয় লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।
জুল ভার্নের সাহিত্য রচনা চলতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ভাতিজা গেসটন গুলি করেন জুল ভার্নের পায়ে। বাকি জীবনটা খোঁড়া থাকতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে মারা যান প্রকাশক হেতজেল। তবে জুল ভার্নের কলম তাতে থেমে গেল না। এইট হান্ড্রেড লিগস অন দ্য আমাজন, দ্য পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল, মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড তাঁর হেতজেল পরবর্তী সময়ে লেখা বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
এই সুযোগে মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে দু-চারটি কথা না বললেই নয়। অসম্ভব প্রতিভাধর কিন্তু একগুঁয়ে ও অহংকারী এক বিজ্ঞানীর গল্প এটি। আর তাঁর সৃষ্টি জল, স্থল আর আকাশে চলতে সক্ষম অদ্ভুত এক যানের কাহিনি। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বজ্রের দিক। পরিণতিটা সম্পর্কে না হয় নাই বললাম।
গোটা জীবনে ৬০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন জুল ভার্ন। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু নাটক ও ছোট গল্প।
উত্তর ফ্রান্সের শহর অ্যামিয়েন্সে বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন জুল ভার্ন। সেখানেই কাটে জীবনের বাকি দিনগুলো। ১৮৮৮ সালে সেখানকার সিটি কাউন্সিলে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তবে পাঠক ভুলে যায়নি এই কল্পবিজ্ঞান লেখককে। অনেকেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক হিসেবে। জুল ভার্ন সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বাধিক অনূদিত লেখক। যে ভাষায় লিখেছেন তা থেকে অন্য ভাষায় লেখা অনুবাদ হওয়ার দিক থেকে তাঁর ওপরে আছেন কেবল রহস্যকাহিনি লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। জুল ভার্নের কাহিনিগুলো পরের সময়ের লেখক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে।
জুল ভার্নের তৈরি করা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটরাসসহ শত শত চরিত্র এখনো সতেজ পাঠকের মনে। তাঁদের রোমাঞ্চকর জগতে এখনো বিচরণ করতে ভালোবাসেন পাঠক।
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, উইকিপিডিয়া

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
১১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

অনেকের কাছেই তিনি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির জনক, তাঁর অসাধারণ সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এখনো আলোড়িত করে পাঠকদের। গল্পটি ফরাসি ঔপন্যাসিক জুল ভার্নের। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসেন তিনি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৩ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৫ দিন আগে