জাহাঙ্গীর আলম

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!
জাহাঙ্গীর আলম

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে