জাহাঙ্গীর আলম

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!
জাহাঙ্গীর আলম

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর মানবজীবনের অর্থহীনতার এক অতল নৈরাশ্য গ্রাস করে বসে তাঁর মন। রাজকাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্য—মৃত্যুকে পরাজিত করে চিরঞ্জীব হওয়া। সুমেরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি উপকথার দেবতা উতনাপিশতিমকে খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত অগাধ জীবনের দেখা পাননি। মৃত্যুর কাছেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের গল্পটি মোটামুটি এ রকমই। এই মহাকাব্যের নায়ক সুমেরীয় উরুক রাজের রাজা গিলগামেশ। সুমেরীয় ভাষায় উচ্চারণ বিলগামেস। সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় এই মহাকাব্য রচিত হয় ২১৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ, আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল এই মহাকাব্য। কিউনিফর্ম (কিলক) লিপিতে লেখা সেই মহাকাব্যের ফলক উদ্ধার হয়েছে আধুনিককালে।
এই মহাকাব্যেই উঠে এসেছে মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের আড়ির গল্প। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এ প্রজাতি যেভাবে অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত কিছু যে করেছে! মৃত্যু নিয়ে গিলগামেশের ভয় মূলত জীবনের অর্থহীনতা নিয়েই তাঁর ভীতির প্রকাশ। তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবনের মানে। আর এ কারণেই লেখক, কবি, দার্শনিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল প্রাচীনতম এ মহাকাব্য।
এই মহাকাব্যের মধ্যে এমন একটি সজ্জা এবং কাহিনি বর্ণনার অস্পষ্ট ও হেঁয়ালি আছে, যা হোমারের মহাকাব্য এবং এমনকি বাইবেলের (গিলগামেশের বন্যার বিবরণটি বাইবেলের আদি পুস্তকে বর্ণিত নূহের বন্যার অনুরূপ) ভিত্তি হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই ধারণ করে। সভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গিলগামেশ আর বন্যতার প্রতিনিধিত্বকারী এনকিদুর মাধ্যমে যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে, সেটিকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়াই এ মহাকাব্যের মূল সুর, আর সেটি হলো মৃত্যু।
গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী। তাঁরা প্রাণী বা বস্তুতে নরত্ব আরোপ করে দেব-দেবির প্রতিরূপ বলে ভাবত। একেক দেব-দেবি একেক ধরনের শক্তি ধারণ করে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের ধরনটি পরবর্তীকালের গ্রিক পুরাণে অহরহ দেখা মেলে।
গিলগামেশ মহাকাব্যটি ১৮৪৯ সালে ব্যাবিলনীয় রাজা আশুরবানিপালের লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করা হয়। এটির মোট চরণ সংখ্যা ৩ হাজার। ১৮৭০-এর দশকেই এটি অনুবাদ করা হয়। ওই সময় হিব্রু বাইবেলের অনেক অংশের সঙ্গে এর কিছু গল্প মিলে যাওয়ায় ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিলগামেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এ মহাকাব্য।

অনেকে মনে করেন, এই মহাকাব্যের পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত ও ধ্রুব বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার শুরুর দিক থেকে মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা ক্রমেই বিবর্তিত হয়েছে। একটি শিকারি ও সংগ্রাহক সমাজ থেকে কৃষি সভ্যতায় মানবজাতির উত্তরণের সময় মৃত্যুর ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, এনকিদু এই ভেবে আক্ষেপ করতে থাকেন যে, তিনি তাঁর বন্য স্বভাব হারিয়ে ফলেছেন। গিলগামেশের পীড়াপীড়িতে তিনি ভয়ংকর বনদেবতা হাম্বাবাকে হত্যার গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে বেড়ান। এখানেই হয়তো একজন বন্য ‘মানব পশুর’ মৃত্যু আর সভ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যের ইঙ্গিত রয়েছে। পার্থক্যটি হলো, বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা নেই; কিন্তু সভ্য মানুষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং সন্ত্রস্ত। এনকিদু, তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে, পশু থেকে মানুষে উত্তরণ নিয়ে আক্ষেপ করতে থাকেন। তিনি জীবনের ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে ‘বিচ্যুত’ হয়ে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা নিয়ে শোক করেন। যদিও এই জ্ঞানই তাঁকে গৌরব অর্জনের মতো আনন্দগুলো উপভোগের ক্ষমতা দেয়। একই সঙ্গে এটি তাঁকে নিয়তি সম্পর্কে সন্ত্রস্তও করে তোলে।
সেই সময় রাজাদের রাজা গিলগামেশ। ক্ষমতা, ধন, জন—সবকিছুতে সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবন নিয়ে অতৃপ্ত। একদিন মরতে হবে এই ভাবনা তাঁকে অস্থির করে তোলে। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনন্ত জীবন লাভের যে সাধনা সেটিও ছিল অকারণ। এমনকি তারুণ্যের বিশল্যকরণী শেষ মুহূর্তে একটি সাপ তার কাছ থেকে যে চুরি করে নিয়ে যায়, সেটিরও কি কোনো কারণ ছিল? সব শেষে ‘জীবনের সব আয়োজনই অপচয়’ এই হতাশাই গ্রাস করে বসে মানুষকে।
এই মহাকাব্যের আকর্ষণীয় (সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) অংশটি হলো: পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়ে যখন উরুকের পথে গিলগামেশ, শূন্য হাত, ক্লান্ত, শ্রান্ত, দুঃখ ভারাক্রান্ত, শোক স্তব্ধ। তিনি বিমর্ষ বদনে বসে আছেন উরশানাবির ফেরিতে। তিনি শহরের বিশাল দেয়ালগুলো দেখছেন, আর প্রশস্তি গাইছেন। এটি মহাকাব্যটির সর্বার্থক মুহূর্ত। মহাকাব্যটির আসল সমাপ্তি হলো—একজন পরাক্রমশালী রাজার এমন দশা, যিনি অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর যৌবন ব্যয় করে পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। আর শূন্য হস্ত, বিধ্বস্ত রাজা বিস্মিত হয়ে তাঁর মহান উরুক শহরের দেয়াল দেখছেন।
গিলগামেশের এই উপলব্ধি হয়েছিল যে, সভ্য মানুষ হিসেবে মৃত্যুর অসহনীয় জ্ঞানের বোঝা আমাদের বইতে হয়, কিন্তু কাজের মাহাত্ম্যই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। সত্য যে, আমাদের সভ্যতা এবং এর অন্য অংশগুলো আমাদের জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। এটি অতি তুচ্ছ ও তিক্ত হলেও রাজাদের রাজার জন্যও এটি অবধারিত। জীবনের শেষ অঙ্কে সবই শূন্য—এটাই ধ্রুব সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়।
চার হাজার বছর আগে মানব সভ্যতার উষালগ্নে রচিত একটি মহাকাব্য এভাবেই একটি প্রজাতির অনন্ত উদ্বেগের সাক্ষী। যে প্রজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাশবিক অজ্ঞতা থেকে নিজেকে একটি মহাজাগতিক জ্ঞানে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা তারকার গতিপথ দেখে তাদের পথ নির্ধারণ করতে পারে এবং সমস্ত ধরনের যন্ত্রকৌশল আয়ত্ত করতে পারে, যা তাদের নতুন জীবন দেয়, জীবনের হেফাজত করে আবার সময়ে-অসময়ে কেড়েও নেয়। যে উদ্বেগ থেকে এই উত্তরণের পথ সৃষ্টি হয়েছে জীবিত থাকতে, সেই উদ্বেগ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই!

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

গিলগামেশ মূলত মেসোপটেমীয় পুরাণ। এটি লেখা হয়েছে আক্কাদীয় ভাষায়। পরে অবশ্য উপকথাটির নতুন নতুন বর্ণনা ও বয়ান তৈরি হয়েছে সুমেরীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় যুগে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীর মাঝে অবস্থিত। সুমেরীয়রা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী।
২২ আগস্ট ২০২১
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে