মারুফ ইসলাম

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে