আশিকুর রিমেল, ঢাকা

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
কথাগুলো রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করা শিক্ষার্থী বিপ্লবের (ছদ্মনাম)। শিক্ষাগত যোগ্যতাই যেন তাঁর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার আর সমাজের প্রত্যাশা পূরণে দায় যেন কাঁধে তুলে নিয়েছে একা! এই মানসিক যন্ত্রণা জীবন থেকে সব শখ আহ্লাদ কেড়ে নিয়েছে। ঈদেও বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না!
বিপ্লবের বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে ঈদের আগের দিন যাই, পারলে ঈদের পরের দিন চলে আসার কথা চিন্তা করি। কিন্তু তখনো খাবারের জন্য হোটেলগুলা খোলে না। মেসে খালাও কয়েক দিন পরে কাজে আসে, সে জন্য যাইতে পারি না। যে কয়দিন বাড়িতে থাকি, খুব কম বের হই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন পারভেজ (ছদ্মনাম)। তাঁর অবস্থাও বিপ্লবের মতোই। তিনটি প্রাইভেট টিউশনি করে ঢাকায় কোনো রকমে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। বাকি সময় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেন। চাকরির বয়সও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এ বছরের শেষ পর্যন্ত চাকরির আবেদন করার যোগ্যতা থাকবে। এ পর্যন্ত ৬-৭টা চাকরির ভাইভা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয় না। বেকারত্বের বোঝা আর সইতে পারছেন না। এখন চতুর্থ শ্রেণির আবেদনও মিস করেন না। পারভেজও বাধ্য না হলে বাড়িতে যান না। দুইটা ছোট ভাই-বোন, বাবা-মার জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারেন না—এই ব্যর্থ তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। খুবই হীনম্মন্যতায় ভোগেন।
চলতি বছর এপ্রিলের শেষ দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। সংস্থাটির ২০১৬-১৭ সালের জরিপে এই সংখ্যাটা ছিল ২৭ লাখ। সেই তুলনায় কর্মহীন মানুষ সংখ্যায় কমেছে। কিন্তু বর্তমান সময় ও বাস্তবতায় পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে কর্মসংস্থান না পাওয়া শিক্ষার্থীদের হতাশাব্যঞ্জক অবস্থাটা প্রায় একই রয়ে গেছে।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়, এর অন্যতম কারণ সরকারি চাকরির পেছনে লেগে থাকা। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেটি স্পষ্ট।
ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যার ছাত্র পারভেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হতেই চাকরির পড়াশোনায় উঠেপড়ে লাগেন। প্রথম দিকে বেছে বেছে চাকরির আবেদন করতে থাকেন। একটুর জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। নিজের থাকা–খাওয়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। সময় যত বাড়তে থাকে, পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। দু’বছর পর থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে থাকেন। কিন্তু এবার বিপত্তি বাঁধে লিখিত পরীক্ষাগুলোতে গিয়ে। একপর্যায়ে লিখিত পরীক্ষাতেও ভালো করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হয় না।
পারভেজ বলেন, ‘কয়েকটা পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত দিয়েছি, হয়নি। ভাবি আমার থেকেও যোগ্য লোক আছে। তারাই হয়তো টেকে!’
কিন্তু বেসরকারি চাকরি বা অন্য কোনো কর্মসংস্থানের দিকে কখনোই ঝোঁকেননি পারভেজ। তিনি বলেন, ‘বিডি জবস ও অন্যান্য বেশ কিছু সাইটে আবেদনের খবর পাওয়ার সোর্স আছে। প্রাইভেট জবগুলাতে অভিজ্ঞতা চায়, সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতাও চায়। আমার তো সেসব কিছু নাই। বিভাগে ভালো ফলের জন্য পড়াশোনা করছি। খেলাধুলায় একটা ঝোঁক ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলতাম। কিন্তু সে দিয়ে তো আর চাকরি হয় না।’
এ দিকে বিপ্লব বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় আলাদা করে কোনো কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা। পরিবারের কাছে সরকারি চাকরি মানেই সবচেয়ে নিরাপদ কর্মসংস্থান। আমার নিজেরও মনে হয়েছে, যেহেতু সুযোগ আছে চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু এখন মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান (২০১৪-২০১৫) শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তাশরিফ (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন একটু একটু করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষ করার পরের দুই বছর পর থেকে বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় টিকছেন। এখনো তিন বছর সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন।
তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসছি। ছোটবেলা থেকে এলাকায় ভালো ছাত্র ছিলাম। সমাজের মানুষেরও একটা প্রত্যাশা যে ভালো একটা সরকারি চাকরি করব। তা ছাড়া পরিবার এখনো প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা পাঠায়। পরিবার থেকে বলে, ভালো করে পরীক্ষা দিতে থাকো। আমি তো জানি পরিবারের দায়িত্বটা আমাকে নিতে হবে। সে কারণে পড়াশোনা শেষ করেই পরীক্ষা দেওয়া শুরু করছি।’
জামালপুরের তাশরিফও জানালেন পরিবার অপেক্ষা করলেও পারিপার্শ্বিকতা যেন সেই অপেক্ষা মানছে না!
তাশরিফ বলেন, ‘বাড়িতে গেলে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন—কী করছ এখন? আর কত দিন লাগবে? কয়েক বছরে এই প্রশ্ন এতবার শুনেছি যে, মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি, নিজেকে অযোগ্য মনে হয়। আবার এও ঠিক যে, তাদের ওই প্রশ্নই আমাকে আরও গতিশীল করে তোলে।’
নানামুখী বাস্তবতার মাঝেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের চেয়ে চাকরিপ্রত্যাশী রয়েছে বহুগুণ বেশি। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও তাঁরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হিসেবে সরকারি চাকরিকেই বেছে নিচ্ছেন, যেখানে যোগ্যতা বা দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয় না! এই যে নিরাপদ কর্মসংস্থান হিসেবে সরকারি চাকরির প্রতি অতিনির্ভরতা, এটি অর্থনীতির দুর্বল সূচকের দিকেই ইঙ্গিত করে কি না ভেবে দেখা দরকার!
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
কথাগুলো রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করা শিক্ষার্থী বিপ্লবের (ছদ্মনাম)। শিক্ষাগত যোগ্যতাই যেন তাঁর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার আর সমাজের প্রত্যাশা পূরণে দায় যেন কাঁধে তুলে নিয়েছে একা! এই মানসিক যন্ত্রণা জীবন থেকে সব শখ আহ্লাদ কেড়ে নিয়েছে। ঈদেও বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না!
বিপ্লবের বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে ঈদের আগের দিন যাই, পারলে ঈদের পরের দিন চলে আসার কথা চিন্তা করি। কিন্তু তখনো খাবারের জন্য হোটেলগুলা খোলে না। মেসে খালাও কয়েক দিন পরে কাজে আসে, সে জন্য যাইতে পারি না। যে কয়দিন বাড়িতে থাকি, খুব কম বের হই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন পারভেজ (ছদ্মনাম)। তাঁর অবস্থাও বিপ্লবের মতোই। তিনটি প্রাইভেট টিউশনি করে ঢাকায় কোনো রকমে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। বাকি সময় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেন। চাকরির বয়সও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এ বছরের শেষ পর্যন্ত চাকরির আবেদন করার যোগ্যতা থাকবে। এ পর্যন্ত ৬-৭টা চাকরির ভাইভা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয় না। বেকারত্বের বোঝা আর সইতে পারছেন না। এখন চতুর্থ শ্রেণির আবেদনও মিস করেন না। পারভেজও বাধ্য না হলে বাড়িতে যান না। দুইটা ছোট ভাই-বোন, বাবা-মার জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারেন না—এই ব্যর্থ তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। খুবই হীনম্মন্যতায় ভোগেন।
চলতি বছর এপ্রিলের শেষ দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। সংস্থাটির ২০১৬-১৭ সালের জরিপে এই সংখ্যাটা ছিল ২৭ লাখ। সেই তুলনায় কর্মহীন মানুষ সংখ্যায় কমেছে। কিন্তু বর্তমান সময় ও বাস্তবতায় পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে কর্মসংস্থান না পাওয়া শিক্ষার্থীদের হতাশাব্যঞ্জক অবস্থাটা প্রায় একই রয়ে গেছে।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়, এর অন্যতম কারণ সরকারি চাকরির পেছনে লেগে থাকা। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেটি স্পষ্ট।
ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যার ছাত্র পারভেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হতেই চাকরির পড়াশোনায় উঠেপড়ে লাগেন। প্রথম দিকে বেছে বেছে চাকরির আবেদন করতে থাকেন। একটুর জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। নিজের থাকা–খাওয়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। সময় যত বাড়তে থাকে, পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। দু’বছর পর থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হতে থাকেন। কিন্তু এবার বিপত্তি বাঁধে লিখিত পরীক্ষাগুলোতে গিয়ে। একপর্যায়ে লিখিত পরীক্ষাতেও ভালো করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হয় না।
পারভেজ বলেন, ‘কয়েকটা পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত দিয়েছি, হয়নি। ভাবি আমার থেকেও যোগ্য লোক আছে। তারাই হয়তো টেকে!’
কিন্তু বেসরকারি চাকরি বা অন্য কোনো কর্মসংস্থানের দিকে কখনোই ঝোঁকেননি পারভেজ। তিনি বলেন, ‘বিডি জবস ও অন্যান্য বেশ কিছু সাইটে আবেদনের খবর পাওয়ার সোর্স আছে। প্রাইভেট জবগুলাতে অভিজ্ঞতা চায়, সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতাও চায়। আমার তো সেসব কিছু নাই। বিভাগে ভালো ফলের জন্য পড়াশোনা করছি। খেলাধুলায় একটা ঝোঁক ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলতাম। কিন্তু সে দিয়ে তো আর চাকরি হয় না।’
এ দিকে বিপ্লব বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় আলাদা করে কোনো কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা। পরিবারের কাছে সরকারি চাকরি মানেই সবচেয়ে নিরাপদ কর্মসংস্থান। আমার নিজেরও মনে হয়েছে, যেহেতু সুযোগ আছে চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু এখন মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান (২০১৪-২০১৫) শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তাশরিফ (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন একটু একটু করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষ করার পরের দুই বছর পর থেকে বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় টিকছেন। এখনো তিন বছর সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন।
তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসছি। ছোটবেলা থেকে এলাকায় ভালো ছাত্র ছিলাম। সমাজের মানুষেরও একটা প্রত্যাশা যে ভালো একটা সরকারি চাকরি করব। তা ছাড়া পরিবার এখনো প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা পাঠায়। পরিবার থেকে বলে, ভালো করে পরীক্ষা দিতে থাকো। আমি তো জানি পরিবারের দায়িত্বটা আমাকে নিতে হবে। সে কারণে পড়াশোনা শেষ করেই পরীক্ষা দেওয়া শুরু করছি।’
জামালপুরের তাশরিফও জানালেন পরিবার অপেক্ষা করলেও পারিপার্শ্বিকতা যেন সেই অপেক্ষা মানছে না!
তাশরিফ বলেন, ‘বাড়িতে গেলে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন—কী করছ এখন? আর কত দিন লাগবে? কয়েক বছরে এই প্রশ্ন এতবার শুনেছি যে, মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি, নিজেকে অযোগ্য মনে হয়। আবার এও ঠিক যে, তাদের ওই প্রশ্নই আমাকে আরও গতিশীল করে তোলে।’
নানামুখী বাস্তবতার মাঝেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের চেয়ে চাকরিপ্রত্যাশী রয়েছে বহুগুণ বেশি। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও তাঁরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হিসেবে সরকারি চাকরিকেই বেছে নিচ্ছেন, যেখানে যোগ্যতা বা দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয় না! এই যে নিরাপদ কর্মসংস্থান হিসেবে সরকারি চাকরির প্রতি অতিনির্ভরতা, এটি অর্থনীতির দুর্বল সূচকের দিকেই ইঙ্গিত করে কি না ভেবে দেখা দরকার!
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৩৪ মিনিট আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
০৭ আগস্ট ২০২৩
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
০৭ আগস্ট ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৩৪ মিনিট আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
০৭ আগস্ট ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৩৪ মিনিট আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

‘খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছা করলেও যাই না। বাড়ি গেলে এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনেরা জিজ্ঞেস করে, কী করি এখন? উত্তর দিতে পারি না। এলাকার দু-একজনের চাকরি হলে, সেটা আবার বাড়ির লোকজনই শোনায়। পরিবারটাকে অপরিচিত লাগে তখন, হতাশ লাগে!’
০৭ আগস্ট ২০২৩
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৩৪ মিনিট আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে