Ajker Patrika

ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন গাসসান জাকতান

ইজাজুল হক
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০: ৫৬
ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন গাসসান জাকতান

[বেইত জালা—জেরুসালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট এক শহর। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বেথলেহেমের বিপরীতে এবং হেরবন রোডের পশ্চিমে হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ মিটার উঁচু বেইত জালার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা খ্রিষ্টান; বাকি ২০ শতাংশ মুসলমান। জায়নবাদী ইসরায়েলের দখলদারির আগে এটি ফিলিস্তিনের আল-জাকারিয়া জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পুরো আল-জাকারিয়াই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে আল-জাকারিয়ার অন্যান্য অংশ ইসরায়েলের হাতে চলে গেলেও সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বেইত জালা চলে আসে জর্ডানের হাতে। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তা ফের ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এই শহরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম তীরের অন্য এলাকার মতো বেইত জালাও ইসরায়েলি আধিপত্য ও দখলদারির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজ পর্যন্ত। 

১৯৫৩ সালে, এই বেইত জালারই বাসিন্দা কবি খলিল জাকতান ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবিতা লিখে আরবদের মধ্য তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ক্ষুধার্তের কণ্ঠস্বর’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কাব্য বিবেচনা করা হয়। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে কবির জীবনের বড় ঘটনা। তবে সেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ঠিক এক বছর পর, ১৯৫৪ সালে, কবি খলিল জাকতানের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে—তাঁর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; আজকের পৃথিবী যাঁকে গাসসান জাকতান নামে চেনে। গাসসান আজ ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। দারবিশ-আদোনিসদের ছাড়িয়ে যাওয়া গাসসান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কয়েক কিস্তির এ প্রবন্ধে আমরা কবি গাসসান জাকতানের জীবন ও তাঁর কবিতার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস চালাব। ]

এক. 
গাসসান জাকতানের এক ভবঘুরে-মুসাফিরি জীবন। হতাভাগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন জীবন এখন আর কারও কাছেই অস্বাভাবিক কিংবা অপ্রত্যাশিত মনে হয় না। যেন এটিই তাদের নিয়তি! অন্য দশজন ফিলিস্তিনির মতো গাসসানও শিবির থেকে শিবিরে, এক অনাহূত অভিশাপের ঘানি টানতে টানতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সোনালি সময়। সেই শৈশবেই, ১৯৬০ সালে, মাত্র ছয় বছর বয়সের নিষ্পাপ গাসসানকে প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। জন্মমাটির মায়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান সীমান্তের ওপারে, জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবিরে। এক টুকরো মুক্ত আকাশের নিচে মাটির শীতল পাটি ও পাথরের বালিশে মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজতে তখন ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ছুটছে অজানার পথে। 

শরণার্থীশিবিরের ধুলোবালি, পাথুরে উপত্যকা ও জয়তুন গাছের সঙ্গে হেসে-খেলে গাসসান পার করেন পরের সাত বছর। এই সময়ে ক্যাম্পের স্কুল থেকে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ। ১৯৬৭ সালে গাসসানের পরিবার আম্মানের রুসেইফায় চলে যায়। ফলে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষাও সেখানে শেষ করতে হয়। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জর্ডানের নাউরে পাড়ি জমান এবং রিফিউজি রিলিফ এজেন্সি পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শরণার্থী জীবন ও ত্রাণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তিনি রোজগারের পথ ধরেন। জর্ডানের এক স্কুলে শরীরবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। 

তবে কবিতা ও বিপ্লব যাঁর শিরায় প্রবাহিত, তিনি নিশ্চয়ই জর্ডানের কোনো অখ্যাত বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে বন্দী থাকতে পছন্দ করবেন না। কবি খলিল জিবরানের স্মৃতিধন্য বৈরুত তখন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের বিকল্প ‘প্যারিস’ হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বৈরুত তখন ইসরায়েলবিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও প্রধান আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফলে কবিদের দলে যুক্ত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং বিপন্ন ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ত্র ধরার জন্য তরুণ গাসসানের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাঁর ভেতরের আন্দোলিত কবিতারা পরিণত হয় ফুটন্ত বারুদে। এক বুক স্বপ্ন, বেদনা ও ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গাসসান ছুটে যান বৈরুতে। নাম লেখান বৈরুতের কবি দলে। যোগ দেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধেও। 

তখনকার বৈরুতের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাসসান বলেন, ‘সত্তরের দশকের শেষের দিকে, আমরা যখন বৈরুতে পৌঁছাই, তখন তা এক উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মোহনায় পরিণত হয়। এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের সকল স্রোত এখানে এসে মিলিত হতে থাকে—কে আরব, কে কুর্দি কিংবা কে নৈরাজ্যবাদী—সে পার্থক্য করেনি এই শহর। ফলে বৈরুতে সবাই কবি হয়ে ওঠেন—আর এ বৈশিষ্ট্যই শহরটিকে অনন্য করে তোলে। ফিলিস্তিন-লেবাননের জোট, উত্তর সিরিয়ার দিক হয়ে দামেস্ক যাওয়ার উন্মুক্ত করিডোর এবং ইরাকিদের অবাক-করা চরমপন্থার অভিজ্ঞতার স্পর্শে বৈরুত হয়ে ওঠে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব ল্যাবরেটরি।’ 

বৈরুতের সাহিত্যসমাজ, সেনা ছাউনি, বাংকার ও রণাঙ্গনে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৮২ সালে বিপুল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে গাসসান এই মায়ার শহর ত্যাগ করে দামেস্ক চলে যান এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন। 

দুই. 
কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনি গদ্য সাহিত্যিক গাসসান কানাফানির হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এ ধাঁচের সাহিত্য তখন বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম ও তাওফিক আল-জায়াদরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কবিতার শব্দে শব্দে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তখন। জাকতানও তাঁদের পিছু নেন; রচনা করেন নতুন ধাঁচের কবিতা। 

বৈরুতে থাকাকালেই, ১৯৭৭ সালে গাসসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘দেশের হালচাল’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থ যৌথকাব্য হলেও প্রকাশের পরপরই তাঁর কবিতা সাহিত্যবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ওই বছরই কবিতার জন্য তিনি জর্ডানিয়ান রাইটার্স সোসাইটির কবিতা পুরস্কার পান। দুই বছর পর, ১৯৭৯ সালে তাঁর একক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যুষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সংস্কৃতি দপ্তর থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা আল-বাদায়ির-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। 

১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো চুক্তির ফলে নিজের দেশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফেরার সুযোগ পান গাসসান। এর আগে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। রামাল্লায় ফিরে তিনি ফিলিস্তিনি সাহিত্য সমৃদ্ধ করার মিশন অব্যাহত রাখেন। যুক্ত হন ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কবিতার পাশাপাশি হাত দেন গদ্যসাহিত্যেও। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল। 

২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ কাব্যের মাধ্যমে কবিতায় তাঁর অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০০-২০০৪ সালে ফিলিস্তিনের হাউস অব পোয়েট্রি প্রকাশিত আশ-শোআরা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। হাউস অব পোয়েট্রির পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন কিছুকাল। ফিলিস্তিনি দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। দাতব্য সংস্থা আত-তাআউন-এর সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং মাহমুদ দারবিশ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি গাসসান। 

ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের সঙ্গে গাসসান জাকতান

তিন. 
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিতা জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। ‘লাইক আ স্ট্র বার্ড ইট ফলোস মি: অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে তাঁকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ফেদি জওদাহ। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কানাডার শ্রেষ্ঠতম কবিতা পুরস্কার ‘দ্য গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর আন্তর্জাতিক কবিতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেন। একই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায়ও স্থান পান তিনি। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলখ্যাত ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিউস্টাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার’-এর জন্যও দুবার মনোনয়ন পান। 

এভাবেই, ভাষা ও সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে, বেইত জালা ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট গাসসান আজকের পৃথিবীর সব মানুষের কবি হয়ে ওঠেন। তাঁর রচনা অনূদিত হতে থাকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, নরওয়েজীয়, তুর্কি, জার্মানসহ অসংখ্য ভাষায়। আরবি ও ফিলিস্তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ‘দ্য ন্যাশনাল মেডেল অব অনার’, ‘মাহমুদ দারবিশ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘লেবানিজ পোয়েট আনওয়ার সালমানস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য সম্মাননা। 

এ পর্যন্ত তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ২টি সম্পাদিত কাব্য সংকলন এবং ১টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে: 

কাব্যগ্রন্থ—‘দেশের হালচাল’ (মুহাম্মদ আজ-জাহিরের সঙ্গে যৌথকাব্য; ১৯৭৭), ‘প্রত্যুষে’ (১৯৭৯), ‘পুরোনো কারণ’ (১৯৮২), ‘পতাকা’ (১৯৮৪), ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ (১৯৮৮), ‘আমার কারণে নয়’ (১৯৯২), ‘পর্বতের আকর্ষণ’ (১৯৯৯), ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ (২০০৩), ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ (২০০৮), ‘পথচারীরা ভাইদের ডাকে’ (২০১৫), ‘থেকে যায় যে নীরবতা’ (২০১৭), ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’ (২০১৯) এবং ‘পাতলা স্যুটপরা কয়েকজন আগন্তুক’ (২০২১)। 

উপন্যাস—‘হালকা আকাশ’ (১৯৯৩), ‘অতীতের বিবরণ’ (১৯৯৪), ‘পর্দাবৃত পুরোনো ওয়াগন’ (২০১১) এবং ‘যেখানে মাথা গোঁজে পাখি’ (২০১৫)। 

কবিতা সংকলন—‘বর্ণনার পুনর্বিন্যাস’ (১৯৯৮) ও ‘নরকের স্থায়ী অতিথিরা’ (১৯৯৯)। 

নাটক—‘উজ্জ্বল আকাশ’ (২০০৫)। 

পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের কবিতাশৈলী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত