ইজাজুল হক

[বেইত জালা—জেরুসালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট এক শহর। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বেথলেহেমের বিপরীতে এবং হেরবন রোডের পশ্চিমে হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ মিটার উঁচু বেইত জালার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা খ্রিষ্টান; বাকি ২০ শতাংশ মুসলমান। জায়নবাদী ইসরায়েলের দখলদারির আগে এটি ফিলিস্তিনের আল-জাকারিয়া জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পুরো আল-জাকারিয়াই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে আল-জাকারিয়ার অন্যান্য অংশ ইসরায়েলের হাতে চলে গেলেও সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বেইত জালা চলে আসে জর্ডানের হাতে। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তা ফের ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এই শহরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম তীরের অন্য এলাকার মতো বেইত জালাও ইসরায়েলি আধিপত্য ও দখলদারির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজ পর্যন্ত।
১৯৫৩ সালে, এই বেইত জালারই বাসিন্দা কবি খলিল জাকতান ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবিতা লিখে আরবদের মধ্য তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ক্ষুধার্তের কণ্ঠস্বর’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কাব্য বিবেচনা করা হয়। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে কবির জীবনের বড় ঘটনা। তবে সেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ঠিক এক বছর পর, ১৯৫৪ সালে, কবি খলিল জাকতানের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে—তাঁর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; আজকের পৃথিবী যাঁকে গাসসান জাকতান নামে চেনে। গাসসান আজ ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। দারবিশ-আদোনিসদের ছাড়িয়ে যাওয়া গাসসান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কয়েক কিস্তির এ প্রবন্ধে আমরা কবি গাসসান জাকতানের জীবন ও তাঁর কবিতার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস চালাব। ]
এক.
গাসসান জাকতানের এক ভবঘুরে-মুসাফিরি জীবন। হতাভাগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন জীবন এখন আর কারও কাছেই অস্বাভাবিক কিংবা অপ্রত্যাশিত মনে হয় না। যেন এটিই তাদের নিয়তি! অন্য দশজন ফিলিস্তিনির মতো গাসসানও শিবির থেকে শিবিরে, এক অনাহূত অভিশাপের ঘানি টানতে টানতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সোনালি সময়। সেই শৈশবেই, ১৯৬০ সালে, মাত্র ছয় বছর বয়সের নিষ্পাপ গাসসানকে প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। জন্মমাটির মায়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান সীমান্তের ওপারে, জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবিরে। এক টুকরো মুক্ত আকাশের নিচে মাটির শীতল পাটি ও পাথরের বালিশে মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজতে তখন ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ছুটছে অজানার পথে।
শরণার্থীশিবিরের ধুলোবালি, পাথুরে উপত্যকা ও জয়তুন গাছের সঙ্গে হেসে-খেলে গাসসান পার করেন পরের সাত বছর। এই সময়ে ক্যাম্পের স্কুল থেকে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ। ১৯৬৭ সালে গাসসানের পরিবার আম্মানের রুসেইফায় চলে যায়। ফলে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষাও সেখানে শেষ করতে হয়। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জর্ডানের নাউরে পাড়ি জমান এবং রিফিউজি রিলিফ এজেন্সি পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শরণার্থী জীবন ও ত্রাণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তিনি রোজগারের পথ ধরেন। জর্ডানের এক স্কুলে শরীরবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।
তবে কবিতা ও বিপ্লব যাঁর শিরায় প্রবাহিত, তিনি নিশ্চয়ই জর্ডানের কোনো অখ্যাত বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে বন্দী থাকতে পছন্দ করবেন না। কবি খলিল জিবরানের স্মৃতিধন্য বৈরুত তখন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের বিকল্প ‘প্যারিস’ হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বৈরুত তখন ইসরায়েলবিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও প্রধান আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফলে কবিদের দলে যুক্ত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং বিপন্ন ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ত্র ধরার জন্য তরুণ গাসসানের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাঁর ভেতরের আন্দোলিত কবিতারা পরিণত হয় ফুটন্ত বারুদে। এক বুক স্বপ্ন, বেদনা ও ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গাসসান ছুটে যান বৈরুতে। নাম লেখান বৈরুতের কবি দলে। যোগ দেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধেও।
তখনকার বৈরুতের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাসসান বলেন, ‘সত্তরের দশকের শেষের দিকে, আমরা যখন বৈরুতে পৌঁছাই, তখন তা এক উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মোহনায় পরিণত হয়। এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের সকল স্রোত এখানে এসে মিলিত হতে থাকে—কে আরব, কে কুর্দি কিংবা কে নৈরাজ্যবাদী—সে পার্থক্য করেনি এই শহর। ফলে বৈরুতে সবাই কবি হয়ে ওঠেন—আর এ বৈশিষ্ট্যই শহরটিকে অনন্য করে তোলে। ফিলিস্তিন-লেবাননের জোট, উত্তর সিরিয়ার দিক হয়ে দামেস্ক যাওয়ার উন্মুক্ত করিডোর এবং ইরাকিদের অবাক-করা চরমপন্থার অভিজ্ঞতার স্পর্শে বৈরুত হয়ে ওঠে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব ল্যাবরেটরি।’
বৈরুতের সাহিত্যসমাজ, সেনা ছাউনি, বাংকার ও রণাঙ্গনে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৮২ সালে বিপুল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে গাসসান এই মায়ার শহর ত্যাগ করে দামেস্ক চলে যান এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
দুই.
কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনি গদ্য সাহিত্যিক গাসসান কানাফানির হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এ ধাঁচের সাহিত্য তখন বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম ও তাওফিক আল-জায়াদরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কবিতার শব্দে শব্দে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তখন। জাকতানও তাঁদের পিছু নেন; রচনা করেন নতুন ধাঁচের কবিতা।
বৈরুতে থাকাকালেই, ১৯৭৭ সালে গাসসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘দেশের হালচাল’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থ যৌথকাব্য হলেও প্রকাশের পরপরই তাঁর কবিতা সাহিত্যবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ওই বছরই কবিতার জন্য তিনি জর্ডানিয়ান রাইটার্স সোসাইটির কবিতা পুরস্কার পান। দুই বছর পর, ১৯৭৯ সালে তাঁর একক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যুষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সংস্কৃতি দপ্তর থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা আল-বাদায়ির-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো চুক্তির ফলে নিজের দেশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফেরার সুযোগ পান গাসসান। এর আগে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। রামাল্লায় ফিরে তিনি ফিলিস্তিনি সাহিত্য সমৃদ্ধ করার মিশন অব্যাহত রাখেন। যুক্ত হন ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কবিতার পাশাপাশি হাত দেন গদ্যসাহিত্যেও। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল।
২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ কাব্যের মাধ্যমে কবিতায় তাঁর অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০০-২০০৪ সালে ফিলিস্তিনের হাউস অব পোয়েট্রি প্রকাশিত আশ-শোআরা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। হাউস অব পোয়েট্রির পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন কিছুকাল। ফিলিস্তিনি দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। দাতব্য সংস্থা আত-তাআউন-এর সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং মাহমুদ দারবিশ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি গাসসান।

তিন.
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিতা জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। ‘লাইক আ স্ট্র বার্ড ইট ফলোস মি: অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে তাঁকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ফেদি জওদাহ। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কানাডার শ্রেষ্ঠতম কবিতা পুরস্কার ‘দ্য গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর আন্তর্জাতিক কবিতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেন। একই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায়ও স্থান পান তিনি। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলখ্যাত ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিউস্টাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার’-এর জন্যও দুবার মনোনয়ন পান।
এভাবেই, ভাষা ও সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে, বেইত জালা ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট গাসসান আজকের পৃথিবীর সব মানুষের কবি হয়ে ওঠেন। তাঁর রচনা অনূদিত হতে থাকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, নরওয়েজীয়, তুর্কি, জার্মানসহ অসংখ্য ভাষায়। আরবি ও ফিলিস্তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ‘দ্য ন্যাশনাল মেডেল অব অনার’, ‘মাহমুদ দারবিশ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘লেবানিজ পোয়েট আনওয়ার সালমানস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য সম্মাননা।
এ পর্যন্ত তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ২টি সম্পাদিত কাব্য সংকলন এবং ১টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ—‘দেশের হালচাল’ (মুহাম্মদ আজ-জাহিরের সঙ্গে যৌথকাব্য; ১৯৭৭), ‘প্রত্যুষে’ (১৯৭৯), ‘পুরোনো কারণ’ (১৯৮২), ‘পতাকা’ (১৯৮৪), ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ (১৯৮৮), ‘আমার কারণে নয়’ (১৯৯২), ‘পর্বতের আকর্ষণ’ (১৯৯৯), ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ (২০০৩), ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ (২০০৮), ‘পথচারীরা ভাইদের ডাকে’ (২০১৫), ‘থেকে যায় যে নীরবতা’ (২০১৭), ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’ (২০১৯) এবং ‘পাতলা স্যুটপরা কয়েকজন আগন্তুক’ (২০২১)।
উপন্যাস—‘হালকা আকাশ’ (১৯৯৩), ‘অতীতের বিবরণ’ (১৯৯৪), ‘পর্দাবৃত পুরোনো ওয়াগন’ (২০১১) এবং ‘যেখানে মাথা গোঁজে পাখি’ (২০১৫)।
কবিতা সংকলন—‘বর্ণনার পুনর্বিন্যাস’ (১৯৯৮) ও ‘নরকের স্থায়ী অতিথিরা’ (১৯৯৯)।
নাটক—‘উজ্জ্বল আকাশ’ (২০০৫)।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের কবিতাশৈলী

[বেইত জালা—জেরুসালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট এক শহর। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বেথলেহেমের বিপরীতে এবং হেরবন রোডের পশ্চিমে হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ মিটার উঁচু বেইত জালার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা খ্রিষ্টান; বাকি ২০ শতাংশ মুসলমান। জায়নবাদী ইসরায়েলের দখলদারির আগে এটি ফিলিস্তিনের আল-জাকারিয়া জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পুরো আল-জাকারিয়াই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে আল-জাকারিয়ার অন্যান্য অংশ ইসরায়েলের হাতে চলে গেলেও সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বেইত জালা চলে আসে জর্ডানের হাতে। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তা ফের ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এই শহরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম তীরের অন্য এলাকার মতো বেইত জালাও ইসরায়েলি আধিপত্য ও দখলদারির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজ পর্যন্ত।
১৯৫৩ সালে, এই বেইত জালারই বাসিন্দা কবি খলিল জাকতান ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবিতা লিখে আরবদের মধ্য তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ক্ষুধার্তের কণ্ঠস্বর’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কাব্য বিবেচনা করা হয়। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে কবির জীবনের বড় ঘটনা। তবে সেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ঠিক এক বছর পর, ১৯৫৪ সালে, কবি খলিল জাকতানের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে—তাঁর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; আজকের পৃথিবী যাঁকে গাসসান জাকতান নামে চেনে। গাসসান আজ ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। দারবিশ-আদোনিসদের ছাড়িয়ে যাওয়া গাসসান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কয়েক কিস্তির এ প্রবন্ধে আমরা কবি গাসসান জাকতানের জীবন ও তাঁর কবিতার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস চালাব। ]
এক.
গাসসান জাকতানের এক ভবঘুরে-মুসাফিরি জীবন। হতাভাগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন জীবন এখন আর কারও কাছেই অস্বাভাবিক কিংবা অপ্রত্যাশিত মনে হয় না। যেন এটিই তাদের নিয়তি! অন্য দশজন ফিলিস্তিনির মতো গাসসানও শিবির থেকে শিবিরে, এক অনাহূত অভিশাপের ঘানি টানতে টানতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সোনালি সময়। সেই শৈশবেই, ১৯৬০ সালে, মাত্র ছয় বছর বয়সের নিষ্পাপ গাসসানকে প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। জন্মমাটির মায়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান সীমান্তের ওপারে, জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবিরে। এক টুকরো মুক্ত আকাশের নিচে মাটির শীতল পাটি ও পাথরের বালিশে মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজতে তখন ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ছুটছে অজানার পথে।
শরণার্থীশিবিরের ধুলোবালি, পাথুরে উপত্যকা ও জয়তুন গাছের সঙ্গে হেসে-খেলে গাসসান পার করেন পরের সাত বছর। এই সময়ে ক্যাম্পের স্কুল থেকে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ। ১৯৬৭ সালে গাসসানের পরিবার আম্মানের রুসেইফায় চলে যায়। ফলে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষাও সেখানে শেষ করতে হয়। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জর্ডানের নাউরে পাড়ি জমান এবং রিফিউজি রিলিফ এজেন্সি পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শরণার্থী জীবন ও ত্রাণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তিনি রোজগারের পথ ধরেন। জর্ডানের এক স্কুলে শরীরবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।
তবে কবিতা ও বিপ্লব যাঁর শিরায় প্রবাহিত, তিনি নিশ্চয়ই জর্ডানের কোনো অখ্যাত বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে বন্দী থাকতে পছন্দ করবেন না। কবি খলিল জিবরানের স্মৃতিধন্য বৈরুত তখন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের বিকল্প ‘প্যারিস’ হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বৈরুত তখন ইসরায়েলবিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও প্রধান আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফলে কবিদের দলে যুক্ত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং বিপন্ন ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ত্র ধরার জন্য তরুণ গাসসানের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাঁর ভেতরের আন্দোলিত কবিতারা পরিণত হয় ফুটন্ত বারুদে। এক বুক স্বপ্ন, বেদনা ও ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গাসসান ছুটে যান বৈরুতে। নাম লেখান বৈরুতের কবি দলে। যোগ দেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধেও।
তখনকার বৈরুতের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাসসান বলেন, ‘সত্তরের দশকের শেষের দিকে, আমরা যখন বৈরুতে পৌঁছাই, তখন তা এক উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মোহনায় পরিণত হয়। এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের সকল স্রোত এখানে এসে মিলিত হতে থাকে—কে আরব, কে কুর্দি কিংবা কে নৈরাজ্যবাদী—সে পার্থক্য করেনি এই শহর। ফলে বৈরুতে সবাই কবি হয়ে ওঠেন—আর এ বৈশিষ্ট্যই শহরটিকে অনন্য করে তোলে। ফিলিস্তিন-লেবাননের জোট, উত্তর সিরিয়ার দিক হয়ে দামেস্ক যাওয়ার উন্মুক্ত করিডোর এবং ইরাকিদের অবাক-করা চরমপন্থার অভিজ্ঞতার স্পর্শে বৈরুত হয়ে ওঠে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব ল্যাবরেটরি।’
বৈরুতের সাহিত্যসমাজ, সেনা ছাউনি, বাংকার ও রণাঙ্গনে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৮২ সালে বিপুল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে গাসসান এই মায়ার শহর ত্যাগ করে দামেস্ক চলে যান এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
দুই.
কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনি গদ্য সাহিত্যিক গাসসান কানাফানির হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এ ধাঁচের সাহিত্য তখন বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম ও তাওফিক আল-জায়াদরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কবিতার শব্দে শব্দে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তখন। জাকতানও তাঁদের পিছু নেন; রচনা করেন নতুন ধাঁচের কবিতা।
বৈরুতে থাকাকালেই, ১৯৭৭ সালে গাসসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘দেশের হালচাল’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থ যৌথকাব্য হলেও প্রকাশের পরপরই তাঁর কবিতা সাহিত্যবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ওই বছরই কবিতার জন্য তিনি জর্ডানিয়ান রাইটার্স সোসাইটির কবিতা পুরস্কার পান। দুই বছর পর, ১৯৭৯ সালে তাঁর একক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যুষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সংস্কৃতি দপ্তর থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা আল-বাদায়ির-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো চুক্তির ফলে নিজের দেশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফেরার সুযোগ পান গাসসান। এর আগে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। রামাল্লায় ফিরে তিনি ফিলিস্তিনি সাহিত্য সমৃদ্ধ করার মিশন অব্যাহত রাখেন। যুক্ত হন ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কবিতার পাশাপাশি হাত দেন গদ্যসাহিত্যেও। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল।
২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ কাব্যের মাধ্যমে কবিতায় তাঁর অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০০-২০০৪ সালে ফিলিস্তিনের হাউস অব পোয়েট্রি প্রকাশিত আশ-শোআরা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। হাউস অব পোয়েট্রির পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন কিছুকাল। ফিলিস্তিনি দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। দাতব্য সংস্থা আত-তাআউন-এর সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং মাহমুদ দারবিশ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি গাসসান।

তিন.
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিতা জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। ‘লাইক আ স্ট্র বার্ড ইট ফলোস মি: অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে তাঁকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ফেদি জওদাহ। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কানাডার শ্রেষ্ঠতম কবিতা পুরস্কার ‘দ্য গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর আন্তর্জাতিক কবিতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেন। একই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায়ও স্থান পান তিনি। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলখ্যাত ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিউস্টাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার’-এর জন্যও দুবার মনোনয়ন পান।
এভাবেই, ভাষা ও সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে, বেইত জালা ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট গাসসান আজকের পৃথিবীর সব মানুষের কবি হয়ে ওঠেন। তাঁর রচনা অনূদিত হতে থাকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, নরওয়েজীয়, তুর্কি, জার্মানসহ অসংখ্য ভাষায়। আরবি ও ফিলিস্তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ‘দ্য ন্যাশনাল মেডেল অব অনার’, ‘মাহমুদ দারবিশ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘লেবানিজ পোয়েট আনওয়ার সালমানস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য সম্মাননা।
এ পর্যন্ত তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ২টি সম্পাদিত কাব্য সংকলন এবং ১টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ—‘দেশের হালচাল’ (মুহাম্মদ আজ-জাহিরের সঙ্গে যৌথকাব্য; ১৯৭৭), ‘প্রত্যুষে’ (১৯৭৯), ‘পুরোনো কারণ’ (১৯৮২), ‘পতাকা’ (১৯৮৪), ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ (১৯৮৮), ‘আমার কারণে নয়’ (১৯৯২), ‘পর্বতের আকর্ষণ’ (১৯৯৯), ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ (২০০৩), ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ (২০০৮), ‘পথচারীরা ভাইদের ডাকে’ (২০১৫), ‘থেকে যায় যে নীরবতা’ (২০১৭), ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’ (২০১৯) এবং ‘পাতলা স্যুটপরা কয়েকজন আগন্তুক’ (২০২১)।
উপন্যাস—‘হালকা আকাশ’ (১৯৯৩), ‘অতীতের বিবরণ’ (১৯৯৪), ‘পর্দাবৃত পুরোনো ওয়াগন’ (২০১১) এবং ‘যেখানে মাথা গোঁজে পাখি’ (২০১৫)।
কবিতা সংকলন—‘বর্ণনার পুনর্বিন্যাস’ (১৯৯৮) ও ‘নরকের স্থায়ী অতিথিরা’ (১৯৯৯)।
নাটক—‘উজ্জ্বল আকাশ’ (২০০৫)।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের কবিতাশৈলী
ইজাজুল হক

[বেইত জালা—জেরুসালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট এক শহর। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বেথলেহেমের বিপরীতে এবং হেরবন রোডের পশ্চিমে হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ মিটার উঁচু বেইত জালার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা খ্রিষ্টান; বাকি ২০ শতাংশ মুসলমান। জায়নবাদী ইসরায়েলের দখলদারির আগে এটি ফিলিস্তিনের আল-জাকারিয়া জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পুরো আল-জাকারিয়াই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে আল-জাকারিয়ার অন্যান্য অংশ ইসরায়েলের হাতে চলে গেলেও সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বেইত জালা চলে আসে জর্ডানের হাতে। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তা ফের ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এই শহরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম তীরের অন্য এলাকার মতো বেইত জালাও ইসরায়েলি আধিপত্য ও দখলদারির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজ পর্যন্ত।
১৯৫৩ সালে, এই বেইত জালারই বাসিন্দা কবি খলিল জাকতান ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবিতা লিখে আরবদের মধ্য তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ক্ষুধার্তের কণ্ঠস্বর’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কাব্য বিবেচনা করা হয়। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে কবির জীবনের বড় ঘটনা। তবে সেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ঠিক এক বছর পর, ১৯৫৪ সালে, কবি খলিল জাকতানের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে—তাঁর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; আজকের পৃথিবী যাঁকে গাসসান জাকতান নামে চেনে। গাসসান আজ ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। দারবিশ-আদোনিসদের ছাড়িয়ে যাওয়া গাসসান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কয়েক কিস্তির এ প্রবন্ধে আমরা কবি গাসসান জাকতানের জীবন ও তাঁর কবিতার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস চালাব। ]
এক.
গাসসান জাকতানের এক ভবঘুরে-মুসাফিরি জীবন। হতাভাগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন জীবন এখন আর কারও কাছেই অস্বাভাবিক কিংবা অপ্রত্যাশিত মনে হয় না। যেন এটিই তাদের নিয়তি! অন্য দশজন ফিলিস্তিনির মতো গাসসানও শিবির থেকে শিবিরে, এক অনাহূত অভিশাপের ঘানি টানতে টানতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সোনালি সময়। সেই শৈশবেই, ১৯৬০ সালে, মাত্র ছয় বছর বয়সের নিষ্পাপ গাসসানকে প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। জন্মমাটির মায়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান সীমান্তের ওপারে, জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবিরে। এক টুকরো মুক্ত আকাশের নিচে মাটির শীতল পাটি ও পাথরের বালিশে মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজতে তখন ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ছুটছে অজানার পথে।
শরণার্থীশিবিরের ধুলোবালি, পাথুরে উপত্যকা ও জয়তুন গাছের সঙ্গে হেসে-খেলে গাসসান পার করেন পরের সাত বছর। এই সময়ে ক্যাম্পের স্কুল থেকে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ। ১৯৬৭ সালে গাসসানের পরিবার আম্মানের রুসেইফায় চলে যায়। ফলে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষাও সেখানে শেষ করতে হয়। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জর্ডানের নাউরে পাড়ি জমান এবং রিফিউজি রিলিফ এজেন্সি পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শরণার্থী জীবন ও ত্রাণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তিনি রোজগারের পথ ধরেন। জর্ডানের এক স্কুলে শরীরবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।
তবে কবিতা ও বিপ্লব যাঁর শিরায় প্রবাহিত, তিনি নিশ্চয়ই জর্ডানের কোনো অখ্যাত বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে বন্দী থাকতে পছন্দ করবেন না। কবি খলিল জিবরানের স্মৃতিধন্য বৈরুত তখন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের বিকল্প ‘প্যারিস’ হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বৈরুত তখন ইসরায়েলবিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও প্রধান আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফলে কবিদের দলে যুক্ত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং বিপন্ন ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ত্র ধরার জন্য তরুণ গাসসানের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাঁর ভেতরের আন্দোলিত কবিতারা পরিণত হয় ফুটন্ত বারুদে। এক বুক স্বপ্ন, বেদনা ও ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গাসসান ছুটে যান বৈরুতে। নাম লেখান বৈরুতের কবি দলে। যোগ দেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধেও।
তখনকার বৈরুতের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাসসান বলেন, ‘সত্তরের দশকের শেষের দিকে, আমরা যখন বৈরুতে পৌঁছাই, তখন তা এক উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মোহনায় পরিণত হয়। এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের সকল স্রোত এখানে এসে মিলিত হতে থাকে—কে আরব, কে কুর্দি কিংবা কে নৈরাজ্যবাদী—সে পার্থক্য করেনি এই শহর। ফলে বৈরুতে সবাই কবি হয়ে ওঠেন—আর এ বৈশিষ্ট্যই শহরটিকে অনন্য করে তোলে। ফিলিস্তিন-লেবাননের জোট, উত্তর সিরিয়ার দিক হয়ে দামেস্ক যাওয়ার উন্মুক্ত করিডোর এবং ইরাকিদের অবাক-করা চরমপন্থার অভিজ্ঞতার স্পর্শে বৈরুত হয়ে ওঠে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব ল্যাবরেটরি।’
বৈরুতের সাহিত্যসমাজ, সেনা ছাউনি, বাংকার ও রণাঙ্গনে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৮২ সালে বিপুল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে গাসসান এই মায়ার শহর ত্যাগ করে দামেস্ক চলে যান এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
দুই.
কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনি গদ্য সাহিত্যিক গাসসান কানাফানির হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এ ধাঁচের সাহিত্য তখন বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম ও তাওফিক আল-জায়াদরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কবিতার শব্দে শব্দে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তখন। জাকতানও তাঁদের পিছু নেন; রচনা করেন নতুন ধাঁচের কবিতা।
বৈরুতে থাকাকালেই, ১৯৭৭ সালে গাসসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘দেশের হালচাল’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থ যৌথকাব্য হলেও প্রকাশের পরপরই তাঁর কবিতা সাহিত্যবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ওই বছরই কবিতার জন্য তিনি জর্ডানিয়ান রাইটার্স সোসাইটির কবিতা পুরস্কার পান। দুই বছর পর, ১৯৭৯ সালে তাঁর একক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যুষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সংস্কৃতি দপ্তর থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা আল-বাদায়ির-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো চুক্তির ফলে নিজের দেশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফেরার সুযোগ পান গাসসান। এর আগে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। রামাল্লায় ফিরে তিনি ফিলিস্তিনি সাহিত্য সমৃদ্ধ করার মিশন অব্যাহত রাখেন। যুক্ত হন ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কবিতার পাশাপাশি হাত দেন গদ্যসাহিত্যেও। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল।
২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ কাব্যের মাধ্যমে কবিতায় তাঁর অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০০-২০০৪ সালে ফিলিস্তিনের হাউস অব পোয়েট্রি প্রকাশিত আশ-শোআরা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। হাউস অব পোয়েট্রির পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন কিছুকাল। ফিলিস্তিনি দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। দাতব্য সংস্থা আত-তাআউন-এর সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং মাহমুদ দারবিশ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি গাসসান।

তিন.
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিতা জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। ‘লাইক আ স্ট্র বার্ড ইট ফলোস মি: অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে তাঁকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ফেদি জওদাহ। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কানাডার শ্রেষ্ঠতম কবিতা পুরস্কার ‘দ্য গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর আন্তর্জাতিক কবিতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেন। একই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায়ও স্থান পান তিনি। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলখ্যাত ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিউস্টাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার’-এর জন্যও দুবার মনোনয়ন পান।
এভাবেই, ভাষা ও সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে, বেইত জালা ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট গাসসান আজকের পৃথিবীর সব মানুষের কবি হয়ে ওঠেন। তাঁর রচনা অনূদিত হতে থাকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, নরওয়েজীয়, তুর্কি, জার্মানসহ অসংখ্য ভাষায়। আরবি ও ফিলিস্তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ‘দ্য ন্যাশনাল মেডেল অব অনার’, ‘মাহমুদ দারবিশ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘লেবানিজ পোয়েট আনওয়ার সালমানস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য সম্মাননা।
এ পর্যন্ত তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ২টি সম্পাদিত কাব্য সংকলন এবং ১টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ—‘দেশের হালচাল’ (মুহাম্মদ আজ-জাহিরের সঙ্গে যৌথকাব্য; ১৯৭৭), ‘প্রত্যুষে’ (১৯৭৯), ‘পুরোনো কারণ’ (১৯৮২), ‘পতাকা’ (১৯৮৪), ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ (১৯৮৮), ‘আমার কারণে নয়’ (১৯৯২), ‘পর্বতের আকর্ষণ’ (১৯৯৯), ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ (২০০৩), ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ (২০০৮), ‘পথচারীরা ভাইদের ডাকে’ (২০১৫), ‘থেকে যায় যে নীরবতা’ (২০১৭), ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’ (২০১৯) এবং ‘পাতলা স্যুটপরা কয়েকজন আগন্তুক’ (২০২১)।
উপন্যাস—‘হালকা আকাশ’ (১৯৯৩), ‘অতীতের বিবরণ’ (১৯৯৪), ‘পর্দাবৃত পুরোনো ওয়াগন’ (২০১১) এবং ‘যেখানে মাথা গোঁজে পাখি’ (২০১৫)।
কবিতা সংকলন—‘বর্ণনার পুনর্বিন্যাস’ (১৯৯৮) ও ‘নরকের স্থায়ী অতিথিরা’ (১৯৯৯)।
নাটক—‘উজ্জ্বল আকাশ’ (২০০৫)।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের কবিতাশৈলী

[বেইত জালা—জেরুসালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট এক শহর। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বেথলেহেমের বিপরীতে এবং হেরবন রোডের পশ্চিমে হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ মিটার উঁচু বেইত জালার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা খ্রিষ্টান; বাকি ২০ শতাংশ মুসলমান। জায়নবাদী ইসরায়েলের দখলদারির আগে এটি ফিলিস্তিনের আল-জাকারিয়া জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পুরো আল-জাকারিয়াই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে আল-জাকারিয়ার অন্যান্য অংশ ইসরায়েলের হাতে চলে গেলেও সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে বেইত জালা চলে আসে জর্ডানের হাতে। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তা ফের ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর এই শহরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম তীরের অন্য এলাকার মতো বেইত জালাও ইসরায়েলি আধিপত্য ও দখলদারির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজ পর্যন্ত।
১৯৫৩ সালে, এই বেইত জালারই বাসিন্দা কবি খলিল জাকতান ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবিতা লিখে আরবদের মধ্য তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ক্ষুধার্তের কণ্ঠস্বর’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কাব্য বিবেচনা করা হয়। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে কবির জীবনের বড় ঘটনা। তবে সেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ঠিক এক বছর পর, ১৯৫৪ সালে, কবি খলিল জাকতানের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে—তাঁর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে ছেলে; আজকের পৃথিবী যাঁকে গাসসান জাকতান নামে চেনে। গাসসান আজ ফিলিস্তিনি কবিতার আধুনিকতম বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। দারবিশ-আদোনিসদের ছাড়িয়ে যাওয়া গাসসান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। কয়েক কিস্তির এ প্রবন্ধে আমরা কবি গাসসান জাকতানের জীবন ও তাঁর কবিতার সুলুক সন্ধানের প্রয়াস চালাব। ]
এক.
গাসসান জাকতানের এক ভবঘুরে-মুসাফিরি জীবন। হতাভাগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন জীবন এখন আর কারও কাছেই অস্বাভাবিক কিংবা অপ্রত্যাশিত মনে হয় না। যেন এটিই তাদের নিয়তি! অন্য দশজন ফিলিস্তিনির মতো গাসসানও শিবির থেকে শিবিরে, এক অনাহূত অভিশাপের ঘানি টানতে টানতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সোনালি সময়। সেই শৈশবেই, ১৯৬০ সালে, মাত্র ছয় বছর বয়সের নিষ্পাপ গাসসানকে প্রিয় জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। জন্মমাটির মায়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান সীমান্তের ওপারে, জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবিরে। এক টুকরো মুক্ত আকাশের নিচে মাটির শীতল পাটি ও পাথরের বালিশে মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজতে তখন ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ছুটছে অজানার পথে।
শরণার্থীশিবিরের ধুলোবালি, পাথুরে উপত্যকা ও জয়তুন গাছের সঙ্গে হেসে-খেলে গাসসান পার করেন পরের সাত বছর। এই সময়ে ক্যাম্পের স্কুল থেকে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ। ১৯৬৭ সালে গাসসানের পরিবার আম্মানের রুসেইফায় চলে যায়। ফলে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষাও সেখানে শেষ করতে হয়। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জর্ডানের নাউরে পাড়ি জমান এবং রিফিউজি রিলিফ এজেন্সি পরিচালিত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শরণার্থী জীবন ও ত্রাণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তিনি রোজগারের পথ ধরেন। জর্ডানের এক স্কুলে শরীরবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।
তবে কবিতা ও বিপ্লব যাঁর শিরায় প্রবাহিত, তিনি নিশ্চয়ই জর্ডানের কোনো অখ্যাত বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে বন্দী থাকতে পছন্দ করবেন না। কবি খলিল জিবরানের স্মৃতিধন্য বৈরুত তখন শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের বিকল্প ‘প্যারিস’ হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বৈরুত তখন ইসরায়েলবিরোধী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও প্রধান আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফলে কবিদের দলে যুক্ত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং বিপন্ন ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ত্র ধরার জন্য তরুণ গাসসানের হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তাঁর ভেতরের আন্দোলিত কবিতারা পরিণত হয় ফুটন্ত বারুদে। এক বুক স্বপ্ন, বেদনা ও ক্রোধ সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে গাসসান ছুটে যান বৈরুতে। নাম লেখান বৈরুতের কবি দলে। যোগ দেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধেও।
তখনকার বৈরুতের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাসসান বলেন, ‘সত্তরের দশকের শেষের দিকে, আমরা যখন বৈরুতে পৌঁছাই, তখন তা এক উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মোহনায় পরিণত হয়। এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের সকল স্রোত এখানে এসে মিলিত হতে থাকে—কে আরব, কে কুর্দি কিংবা কে নৈরাজ্যবাদী—সে পার্থক্য করেনি এই শহর। ফলে বৈরুতে সবাই কবি হয়ে ওঠেন—আর এ বৈশিষ্ট্যই শহরটিকে অনন্য করে তোলে। ফিলিস্তিন-লেবাননের জোট, উত্তর সিরিয়ার দিক হয়ে দামেস্ক যাওয়ার উন্মুক্ত করিডোর এবং ইরাকিদের অবাক-করা চরমপন্থার অভিজ্ঞতার স্পর্শে বৈরুত হয়ে ওঠে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব ল্যাবরেটরি।’
বৈরুতের সাহিত্যসমাজ, সেনা ছাউনি, বাংকার ও রণাঙ্গনে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৮২ সালে বিপুল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে গাসসান এই মায়ার শহর ত্যাগ করে দামেস্ক চলে যান এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় পুরোদমে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
দুই.
কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনি গদ্য সাহিত্যিক গাসসান কানাফানির হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এ ধাঁচের সাহিত্য তখন বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। মাহমুদ দারবিশ, সামিহ আল-কাসিম ও তাওফিক আল-জায়াদরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কবিতার শব্দে শব্দে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তখন। জাকতানও তাঁদের পিছু নেন; রচনা করেন নতুন ধাঁচের কবিতা।
বৈরুতে থাকাকালেই, ১৯৭৭ সালে গাসসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘দেশের হালচাল’ নামের সেই কাব্যগ্রন্থ যৌথকাব্য হলেও প্রকাশের পরপরই তাঁর কবিতা সাহিত্যবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ওই বছরই কবিতার জন্য তিনি জর্ডানিয়ান রাইটার্স সোসাইটির কবিতা পুরস্কার পান। দুই বছর পর, ১৯৭৯ সালে তাঁর একক কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যুষে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সংস্কৃতি দপ্তর থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা আল-বাদায়ির-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো চুক্তির ফলে নিজের দেশ ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফেরার সুযোগ পান গাসসান। এর আগে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। রামাল্লায় ফিরে তিনি ফিলিস্তিনি সাহিত্য সমৃদ্ধ করার মিশন অব্যাহত রাখেন। যুক্ত হন ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কবিতার পাশাপাশি হাত দেন গদ্যসাহিত্যেও। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল।
২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ কাব্যের মাধ্যমে কবিতায় তাঁর অবস্থান আরও পোক্ত হয়। ২০০০-২০০৪ সালে ফিলিস্তিনের হাউস অব পোয়েট্রি প্রকাশিত আশ-শোআরা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। হাউস অব পোয়েট্রির পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন কিছুকাল। ফিলিস্তিনি দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। দাতব্য সংস্থা আত-তাআউন-এর সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং মাহমুদ দারবিশ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি গাসসান।

তিন.
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিতা জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। ‘লাইক আ স্ট্র বার্ড ইট ফলোস মি: অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে তাঁকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ফেদি জওদাহ। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কানাডার শ্রেষ্ঠতম কবিতা পুরস্কার ‘দ্য গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর আন্তর্জাতিক কবিতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেন। একই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাথমিক তালিকায়ও স্থান পান তিনি। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের নোবেলখ্যাত ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিউস্টাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার’-এর জন্যও দুবার মনোনয়ন পান।
এভাবেই, ভাষা ও সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে, বেইত জালা ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট গাসসান আজকের পৃথিবীর সব মানুষের কবি হয়ে ওঠেন। তাঁর রচনা অনূদিত হতে থাকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, নরওয়েজীয়, তুর্কি, জার্মানসহ অসংখ্য ভাষায়। আরবি ও ফিলিস্তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ‘দ্য ন্যাশনাল মেডেল অব অনার’, ‘মাহমুদ দারবিশ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘লেবানিজ পোয়েট আনওয়ার সালমানস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য সম্মাননা।
এ পর্যন্ত তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ২টি সম্পাদিত কাব্য সংকলন এবং ১টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ—‘দেশের হালচাল’ (মুহাম্মদ আজ-জাহিরের সঙ্গে যৌথকাব্য; ১৯৭৭), ‘প্রত্যুষে’ (১৯৭৯), ‘পুরোনো কারণ’ (১৯৮২), ‘পতাকা’ (১৯৮৪), ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ (১৯৮৮), ‘আমার কারণে নয়’ (১৯৯২), ‘পর্বতের আকর্ষণ’ (১৯৯৯), ‘কয়লার আত্মকাহিনি’ (২০০৩), ‘খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়’ (২০০৮), ‘পথচারীরা ভাইদের ডাকে’ (২০১৫), ‘থেকে যায় যে নীরবতা’ (২০১৭), ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’ (২০১৯) এবং ‘পাতলা স্যুটপরা কয়েকজন আগন্তুক’ (২০২১)।
উপন্যাস—‘হালকা আকাশ’ (১৯৯৩), ‘অতীতের বিবরণ’ (১৯৯৪), ‘পর্দাবৃত পুরোনো ওয়াগন’ (২০১১) এবং ‘যেখানে মাথা গোঁজে পাখি’ (২০১৫)।
কবিতা সংকলন—‘বর্ণনার পুনর্বিন্যাস’ (১৯৯৮) ও ‘নরকের স্থায়ী অতিথিরা’ (১৯৯৯)।
নাটক—‘উজ্জ্বল আকাশ’ (২০০৫)।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের কবিতাশৈলী

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

কবির ঘরে যাঁর জন্ম, কবিতার মাঝে যাঁর বসবাস এবং পুরো জীবনটাই যাঁর কবিতার উপাদানে ঠাসা, তিনি কবিতা লিখবেন না, তা কী করে হয়? গাসসান বাবার উত্তরাধিকার-চিন্তা, পড়াশোনা ও লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর কবি হয়ে ওঠেন। তা ছিল ফিলিস্তিনি কবিতার নবজাগরণের সময়। প্রতিরোধ সাহিত্যই তখন গাসসানদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে