Ajker Patrika

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ১৮ বছর বিমানবন্দরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনালের ডিপারচার লাউঞ্জে মেহরান কারিমি নাসেরি। ছবি: এএফপি
শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনালের ডিপারচার লাউঞ্জে মেহরান কারিমি নাসেরি। ছবি: এএফপি

জীবনের ১৮টি বছর বিমানবন্দরের বেঞ্চে কাটিয়েছেন এক ব্যক্তি! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই ঘটেছে ইরানি নাগরিক মেহরান কারিমি নাসেরির জীবনে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দরে এত দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে ছিলেন তিনি।

টম হ্যাঙ্কসের ‘দ্য টার্মিনাল’ চলচ্চিত্রটি দেখেছেন নিশ্চয়ই। জানেন কি, নাসেরির সেই ঘটনা অবলম্বনেই নির্মাণ করা হয়েছে এই সিনেমা?

১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট, প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে পৌঁছান ৪২ বছর বয়সী নাসেরি। তাঁর গন্তব্য ছিল লন্ডন। সে জন্য ফ্রান্সে ট্রানজিট নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঁধে বিপত্তি। তাঁর কাছে বৈধ পাসপোর্ট ছিল না। এ কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে কোনো ফ্লাইটে উঠতে দেয়নি। ফলস্বরূপ তিনি আটকা পড়ে যান সেখানেই।

এদিকে, ফ্রান্সে থাকার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলোও ছিল না নাসেরির। যেকারণে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে তাঁকে। তাই শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কূটনৈতিকভাবে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’। সেখানে থাকার জন্য কোনো বৈধ নথিপত্রের দরকার হয় না।

বিমানবন্দরে থাকার সময়কার প্রত্যেকটা দিনের খুঁটিনাটি লিখে রাখতেন নাসেরি। এই ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি অবলম্বেই পরে আস্ত একটি বই লেখেন ব্রিটিশ লেখক এন্ড্রু ডনকিন, নাম দেন ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’। বই প্রকাশিত হয় নাসেরি বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায়ই।

এই বই অবলম্বনেই পরবর্তীতে নির্মিত হয় হলিউড চলচ্চিত্র দ্য টার্মিনাল। বইটির লেখক বলেন, ‘আমার মনে হয় তিনি (নাসেরি) ভেবেছিলেন, এভাবে বিমানবন্দরের বেঞ্চে কয়েকটা দিন থাকলে, কেউ একদিন এসে বলবে—ঠিক আছে, আপনি এখন যেতে পারেন। তিনি ভেবেছিলেন, এমন নীরব প্রতিবাদ তাঁকে হয়তো শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পথ খুলে দেবে।’

১৯৪৫ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন নাসেরি। তবে, ফরাসি বিমানবন্দরে আটকে পড়ার আগে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বেলজিয়ামে। তাঁর বাবা ইরানি হলেও মা ছিলেন ব্রিটিশ। তিনি মূলত লন্ডনে মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলেন।

ডনকিন জানান, ২০০৪ সালে এক বন্ধুর মাধ্যমে নাসেরির ব্যাপারে জানতে পারেন তিনি। নাসেরির এই কৌতূহলোদ্দীপক জীবন সম্পর্কে জানতে তিনি প্রায় আড়াই সপ্তাহ প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে নাসেরির সঙ্গে বিমানবন্দরে সময় কাটান।

এন্ড্রু ডনকিন বলেন, নাসেরি অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। বিমানবন্দর সব সময় খুব ব্যস্ত এলাকা। সারাক্ষণ শব্দ, মাইকে ঘোষণা, লোকজনের যাতায়াত—এসব চলতেই থাকে। নাসেরির সেখানে কোনো প্রাইভেসি ছিল না। অনেক কষ্ট করে সেখানে থাকতে হয়েছে। আশপাশে লোকদের দিক থেকেও নানা বিপদের ঝুঁকি ছিল।’

ডনকিন আরও বলেন, ‘নাসেরি সব সময় মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তখন সারা দুনিয়ার কোথায় কী ঘটছে সেসব ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিলেন। যার সঙ্গেই কথা বলতেন, খুব মনোযোগ দিয়ে বাইরের খবর শুনতেন।’

নাসেরি আলফ্রেড নামেও পরিচিত ছিলেন। নাগরিকত্ব চেয়ে ব্রিটিশ দূতাবাসকে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন নাসেরি। সেই চিঠির জবাবে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে যা লিখেছিল সেখাকে তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছিল—ডিয়ার স্যার অথবা ডিয়ার আলফ্রেড। এ নিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৌতুক করে নাসেরি বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকার আমাকে নাগরিকত্ব দেয়নি, কিন্তু নাইটহুড দিয়েছে!’

দীর্ঘ ১৮ বছর বিমানবন্দরে কীভাবে জীবন কাটালেন নাসেরি তা এক বিস্ময়! কারণ তাঁর আয়ের কোনো উৎস ছিল না। থাকার কোনো ঘর ছিল না। কীভাবে সেখানে এত দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়ে দিলেন!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডনকিন বিবিসিকে বলেন, বিমানবন্দরে থাকতে থাকতে সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে নাসেরির সখ্য তৈরি হয়। তাঁরা খাবারের জন্য যে মিল ভাউচার পেতেন, সেখান থেকে নাসেরিকেও দিতেন। ওই ভাউচার দিয়েই অনায়াসে নাসেরির তিন বেলা খাবার জুটে যেত।

ডনকিনের দেওয়া তথ্যমতে, বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনালের ডিপারচার লাউঞ্জে ছোট একটা লাল বেঞ্চই ছিল নাসেরির ‘ঘর’। সেখানেই ১৮ বছর কাটিয়েছেন তিনি। সকালে যখন মাইকে শিডিউল ঘোষণা শুরু হতো তখনই ঘুম থেকে উঠে পড়তেন। ওয়াশরুমে ভিড় লেগে যাওয়ার আগেই হাত–মুখ ধুয়ে নিতেন। এপর নাশতা সেরে যাত্রী–কর্মীদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গল্প করতেন। সময় পেলেই দিনলিপি লিখতেন।

দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা ও আইনি লড়াইয়ের পর মেহরান কারিমি নাসেরি ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে শরণার্থীর মর্যাদা পান। তবে সেখানে থাকতে চাননি। তাঁর মতে, দীর্ঘদিন ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় একটি বিমানবন্দরে আটকে থাকাটা ছিল চরম অবিচার। এ জন্য ফ্রান্স সরকারের দয়া তিনি নিতে চাননি।

এ সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ পেতে শুরু করেন নাসেরি। তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে ‘দ্য টার্মিনাল’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন অস্কারজয়ী পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। নাসেরির চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। এর জন্য পৌনে ৩ লাখ ডলার পান নাসেরি। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তিনি। বহু শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে চিঠি পাঠান। ডনকিন বলেন, ‘নাসেরি পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া এক মানুষ, যার গল্প সবার হৃদয় ছুঁয়েছে।’

নাসেরি ২০০৬ সালে শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে কথিত বাড়িটি ছেড়ে চলে যান। কয়েক দিন পরই ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পরে নাসেরিকে আর বিমানবন্দরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁর জিনিসপত্র প্যারিসে গৃহহীনদের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। তবে ২০২২ সালে আবার বিমানবন্দরে ফিরে আসেন নাসেরি। এর কয়েক সপ্তাহ পর ১২ নভেম্বরে নাসেরি মারা যান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজবাড়ী বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রাজবাড়ী বধ্যভূমি

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। এমনকি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন থামলে সেই ট্রেন থেকেও সন্দেহভাজন মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে আসত লোকোশেড ক্যাম্পে। তাদের সহায়তা করতে দোসররা তো ছিলই। আর ক্যাম্পে আনা বাঙালিদের ভাগ্যে জুটত নির্মম নির্যাতন। এরপর হত্যা। এবং মৃতদেহগুলোর জায়গা হতো সেই পুকুরেই। দুই দশক আগে সরকারি অর্থায়নে সেই শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বধ্যভূমি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিশৌধ।

ছবি: মো. সাকিবুল হাসান, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

সম্পাদকীয়
লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!

...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?

...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।

আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...

সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত