মন্টি বৈষ্ণব

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ। এ ছাড়া এখানে আছে শিরীষতলা নামে অনেক বড় প্রশস্ত মাঠ। যেখানে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, রবীন্দ্র–নজরুল জয়ন্তীসহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মূল কথা, এই সিআরবি হলো বহু গাছের কেন্দ্রভূমি। চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস বলা যায় একে। এখানে পাখিদের পাশাপাশি খেলা করে শিশুরা। শত শত মানুষ, মন আর শরীরকে সুস্থ রাখতে সিআরবিতে হাঁটতে যায়। গত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফুসফুসে করাত চালানোর তথ্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কথা উপেক্ষা করে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কেটে ফেলা হবে ৭০টির বেশি গাছ। এরই মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। তারা এই চুক্তি করেছিল ২০২০ সালের ১৮ মার্চে। প্রশ্ন হলো—তাহলে এখন কেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? চুক্তির সময়ও পরিবেশবাদী ও চট্টগ্রামের সচেতন মহল প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি সিআরবি এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। ফলে টিকে থাকা গুটিকয় সবুজ ভূমির একটিতে করাত চালানোর বিষয়টি এখন অনেক বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য।
সিআরবির খোলা প্রান্তরে হাসপাতাল তৈরি করা হবে শুনে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামবাসী। শুধু পরিবেশবাদী বা সংস্কৃতিকর্মী নন, রেলকর্মীরাও এর প্রতিবাদ করছেন। কারণ, অনেক পুরোনো জায়গা এই সিআরবি। আর সিআরবিজুড়ে রয়েছে অনেক গাছের মেলা। সেখানে হাঁটলেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এটি। চিরসবুজ সিআরবি থেকে আকাশকেও মাঝেমাঝে মনে হয় সবুজ রঙের। তাই এই খবর শোনার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে শিশুদের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে, বড়দের হাঁটার জন্য থাকবে না খোলা মাঠ, অনুষ্ঠিত হবে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোনা যাবে না পাখিদের কলতান। আর বেশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ে তোলপাড় এই সময়ের ধ্রূপদী প্রশ্নগুলো তো রয়েছেই।
আজকের দুনিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সারা দুনিয়া বিশ্বেক উষ্ণায়ণ কমানো নিয়ে সোচ্চার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সংকটের বিষয় সামনে আসছে। আর এই সূত্রেই বনায়নের প্রসঙ্গ যেমন উঠছে, তেমনি উঠছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। বাংলাদেশও প্রতিবার পরিবেশ সম্মেলন কিংবা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা মিলছে এমন বহু প্রকল্পের, যা পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে।
হাসপাতাল প্রসঙ্গে বলতে হয়, হাসপাতাল মানে কিন্তু হাসপাতাল। কোনো সিনেমা হল নয়, যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরপর দর্শক আসবে, আবার চলে যাবে। মানুষ হাসপাতালে খুব শখের বসে যায় না। অসুস্থ হলে টানা চিকিৎসার জন্য যেতে হয় হাসপাতাল নামক জায়গায়। হাসপাতালে প্রতিদিন আসবে হাজার হাজার রোগী, আর তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে থাকতে হবে। আবার এসব মানুষের জন্য হাসপাতালের আশপাশে থাকবে অনেক ওষুধপত্র, চা আর খাবার দাবারের দোকান। আরও থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি। এতে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে পরিবেশের ক্ষতি হবে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যেমন রাজধানীর ফুসফুস বলা হয়, তেমনি অনেক বেশি গাছ-গাছালির জন্য চট্টগ্রামের সিআরবিকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস। ফুসফুসের কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ যেমন মৃত্যুবরণ করে। সিআরবিতে হাসপাতাল হলে ঠিক তেমনি অবস্থা হবে মানুষের।
আবার অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে, শতবর্ষী বৃক্ষ কাটা পড়বে না। হাসপাতাল হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। হাসপাতালের গঠন আর কার্যক্রম এ বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাসপাতালে থাকবে অনেক মানুষ। এতগুলো মানুষের বর্জ্য কোথায় যাবে? এতে কি গাছেদের ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন?
গাছ কাটা আমাদের পুরোনো অভ্যাস। গাছেদের সঙ্গে কিছু কিছু মানুষের এত শত্রুতা কেন বোঝা মুশকিল। কেন আমরা এই শতবর্ষী গাছেদের বাঁচতে দিচ্ছি না? সিআরবিতে হাসপাতাল হলে তো চট্টগ্রামবাসীকে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। প্রকৃতিতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ। আমরা প্রকৃতির অংশ। যে প্রাণ–প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার উৎস, সেই প্রকৃতিকে আজ আমরা কেটে ফেলার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।।
গত দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। প্রতিদিন সামান্য একটু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময়টাতে সিলিন্ডারের অক্সিজেন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর পরও কি আমরা গাছেদের কথা চিন্তা করব না?
এরই মধ্যে এই হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদে সোচ্চার আছেন পরিবেশবিদ, সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলসচিব, রেলের মহাপরিচালকসহ আটজনকে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ (আইনি নোটিশ) পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। প্রশ্ন হলো—সবাই কি তবে হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে?
না, এত সরল সমীকরণ করা চলে না। প্রসঙ্গটি একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, কেন এই প্রশ্ন অবান্তর। হাসপাতাল রোগের চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ধুঁকতে থাকা বর্তমান বিশ্ব জানে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ থাকার জন্য কতটা জরুরি। আমরা আমাদের হাসপাতালের চাহিদাটি মেটাতে গিয়ে সেই সুস্থতার সহযোগীকেই হত্যা করতে যাচ্ছি। সংকটটি এখানেই। আমাদের প্রবণতা সুস্থ থাকা নয়, অসুস্থতার চিকিৎসা। অথচ আজকের দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য নীতি বলে, আগে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান নিশ্চিত করা হোক। চিকিৎসার সুব্যবস্থার প্রসঙ্গটি এর পরের ধাপ। আমরা প্রথম ধাপটির দিকে না তাকিয়ে দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অনেকটা গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো বিষয়। চট্টগ্রামের সিআরবির গাছ কাটার ক্ষেত্রে আমরা আক্ষরিক অর্থেই সেদিকে এগোচ্ছি।
তাই যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের কেউ হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে নয়। তাদের মূল বক্তব্য, হাসপাতাল অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সেটা সিআরবিতে নয়। চট্টগ্রামে অনেক খালি জমি আছে। একটু খুঁজলে হাসপাতালের জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে। সেখানে হাসপাতাল তৈরি করলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। সিআরবি এলাকা তার প্রাণ-প্রকৃতিকে নিয়ে বেঁচে থাকুক। অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে সিআরবি মাথা উঁচু করে বাঁচুক।

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ। এ ছাড়া এখানে আছে শিরীষতলা নামে অনেক বড় প্রশস্ত মাঠ। যেখানে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, রবীন্দ্র–নজরুল জয়ন্তীসহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মূল কথা, এই সিআরবি হলো বহু গাছের কেন্দ্রভূমি। চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস বলা যায় একে। এখানে পাখিদের পাশাপাশি খেলা করে শিশুরা। শত শত মানুষ, মন আর শরীরকে সুস্থ রাখতে সিআরবিতে হাঁটতে যায়। গত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফুসফুসে করাত চালানোর তথ্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কথা উপেক্ষা করে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কেটে ফেলা হবে ৭০টির বেশি গাছ। এরই মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। তারা এই চুক্তি করেছিল ২০২০ সালের ১৮ মার্চে। প্রশ্ন হলো—তাহলে এখন কেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? চুক্তির সময়ও পরিবেশবাদী ও চট্টগ্রামের সচেতন মহল প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি সিআরবি এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। ফলে টিকে থাকা গুটিকয় সবুজ ভূমির একটিতে করাত চালানোর বিষয়টি এখন অনেক বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য।
সিআরবির খোলা প্রান্তরে হাসপাতাল তৈরি করা হবে শুনে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামবাসী। শুধু পরিবেশবাদী বা সংস্কৃতিকর্মী নন, রেলকর্মীরাও এর প্রতিবাদ করছেন। কারণ, অনেক পুরোনো জায়গা এই সিআরবি। আর সিআরবিজুড়ে রয়েছে অনেক গাছের মেলা। সেখানে হাঁটলেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এটি। চিরসবুজ সিআরবি থেকে আকাশকেও মাঝেমাঝে মনে হয় সবুজ রঙের। তাই এই খবর শোনার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে শিশুদের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে, বড়দের হাঁটার জন্য থাকবে না খোলা মাঠ, অনুষ্ঠিত হবে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোনা যাবে না পাখিদের কলতান। আর বেশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ে তোলপাড় এই সময়ের ধ্রূপদী প্রশ্নগুলো তো রয়েছেই।
আজকের দুনিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সারা দুনিয়া বিশ্বেক উষ্ণায়ণ কমানো নিয়ে সোচ্চার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সংকটের বিষয় সামনে আসছে। আর এই সূত্রেই বনায়নের প্রসঙ্গ যেমন উঠছে, তেমনি উঠছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। বাংলাদেশও প্রতিবার পরিবেশ সম্মেলন কিংবা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা মিলছে এমন বহু প্রকল্পের, যা পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে।
হাসপাতাল প্রসঙ্গে বলতে হয়, হাসপাতাল মানে কিন্তু হাসপাতাল। কোনো সিনেমা হল নয়, যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরপর দর্শক আসবে, আবার চলে যাবে। মানুষ হাসপাতালে খুব শখের বসে যায় না। অসুস্থ হলে টানা চিকিৎসার জন্য যেতে হয় হাসপাতাল নামক জায়গায়। হাসপাতালে প্রতিদিন আসবে হাজার হাজার রোগী, আর তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে থাকতে হবে। আবার এসব মানুষের জন্য হাসপাতালের আশপাশে থাকবে অনেক ওষুধপত্র, চা আর খাবার দাবারের দোকান। আরও থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি। এতে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে পরিবেশের ক্ষতি হবে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যেমন রাজধানীর ফুসফুস বলা হয়, তেমনি অনেক বেশি গাছ-গাছালির জন্য চট্টগ্রামের সিআরবিকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস। ফুসফুসের কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ যেমন মৃত্যুবরণ করে। সিআরবিতে হাসপাতাল হলে ঠিক তেমনি অবস্থা হবে মানুষের।
আবার অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে, শতবর্ষী বৃক্ষ কাটা পড়বে না। হাসপাতাল হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। হাসপাতালের গঠন আর কার্যক্রম এ বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাসপাতালে থাকবে অনেক মানুষ। এতগুলো মানুষের বর্জ্য কোথায় যাবে? এতে কি গাছেদের ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন?
গাছ কাটা আমাদের পুরোনো অভ্যাস। গাছেদের সঙ্গে কিছু কিছু মানুষের এত শত্রুতা কেন বোঝা মুশকিল। কেন আমরা এই শতবর্ষী গাছেদের বাঁচতে দিচ্ছি না? সিআরবিতে হাসপাতাল হলে তো চট্টগ্রামবাসীকে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। প্রকৃতিতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ। আমরা প্রকৃতির অংশ। যে প্রাণ–প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার উৎস, সেই প্রকৃতিকে আজ আমরা কেটে ফেলার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।।
গত দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। প্রতিদিন সামান্য একটু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময়টাতে সিলিন্ডারের অক্সিজেন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর পরও কি আমরা গাছেদের কথা চিন্তা করব না?
এরই মধ্যে এই হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদে সোচ্চার আছেন পরিবেশবিদ, সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলসচিব, রেলের মহাপরিচালকসহ আটজনকে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ (আইনি নোটিশ) পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। প্রশ্ন হলো—সবাই কি তবে হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে?
না, এত সরল সমীকরণ করা চলে না। প্রসঙ্গটি একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, কেন এই প্রশ্ন অবান্তর। হাসপাতাল রোগের চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ধুঁকতে থাকা বর্তমান বিশ্ব জানে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ থাকার জন্য কতটা জরুরি। আমরা আমাদের হাসপাতালের চাহিদাটি মেটাতে গিয়ে সেই সুস্থতার সহযোগীকেই হত্যা করতে যাচ্ছি। সংকটটি এখানেই। আমাদের প্রবণতা সুস্থ থাকা নয়, অসুস্থতার চিকিৎসা। অথচ আজকের দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য নীতি বলে, আগে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান নিশ্চিত করা হোক। চিকিৎসার সুব্যবস্থার প্রসঙ্গটি এর পরের ধাপ। আমরা প্রথম ধাপটির দিকে না তাকিয়ে দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অনেকটা গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো বিষয়। চট্টগ্রামের সিআরবির গাছ কাটার ক্ষেত্রে আমরা আক্ষরিক অর্থেই সেদিকে এগোচ্ছি।
তাই যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের কেউ হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে নয়। তাদের মূল বক্তব্য, হাসপাতাল অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সেটা সিআরবিতে নয়। চট্টগ্রামে অনেক খালি জমি আছে। একটু খুঁজলে হাসপাতালের জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে। সেখানে হাসপাতাল তৈরি করলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। সিআরবি এলাকা তার প্রাণ-প্রকৃতিকে নিয়ে বেঁচে থাকুক। অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে সিআরবি মাথা উঁচু করে বাঁচুক।
মন্টি বৈষ্ণব

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ। এ ছাড়া এখানে আছে শিরীষতলা নামে অনেক বড় প্রশস্ত মাঠ। যেখানে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, রবীন্দ্র–নজরুল জয়ন্তীসহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মূল কথা, এই সিআরবি হলো বহু গাছের কেন্দ্রভূমি। চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস বলা যায় একে। এখানে পাখিদের পাশাপাশি খেলা করে শিশুরা। শত শত মানুষ, মন আর শরীরকে সুস্থ রাখতে সিআরবিতে হাঁটতে যায়। গত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফুসফুসে করাত চালানোর তথ্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কথা উপেক্ষা করে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কেটে ফেলা হবে ৭০টির বেশি গাছ। এরই মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। তারা এই চুক্তি করেছিল ২০২০ সালের ১৮ মার্চে। প্রশ্ন হলো—তাহলে এখন কেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? চুক্তির সময়ও পরিবেশবাদী ও চট্টগ্রামের সচেতন মহল প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি সিআরবি এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। ফলে টিকে থাকা গুটিকয় সবুজ ভূমির একটিতে করাত চালানোর বিষয়টি এখন অনেক বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য।
সিআরবির খোলা প্রান্তরে হাসপাতাল তৈরি করা হবে শুনে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামবাসী। শুধু পরিবেশবাদী বা সংস্কৃতিকর্মী নন, রেলকর্মীরাও এর প্রতিবাদ করছেন। কারণ, অনেক পুরোনো জায়গা এই সিআরবি। আর সিআরবিজুড়ে রয়েছে অনেক গাছের মেলা। সেখানে হাঁটলেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এটি। চিরসবুজ সিআরবি থেকে আকাশকেও মাঝেমাঝে মনে হয় সবুজ রঙের। তাই এই খবর শোনার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে শিশুদের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে, বড়দের হাঁটার জন্য থাকবে না খোলা মাঠ, অনুষ্ঠিত হবে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোনা যাবে না পাখিদের কলতান। আর বেশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ে তোলপাড় এই সময়ের ধ্রূপদী প্রশ্নগুলো তো রয়েছেই।
আজকের দুনিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সারা দুনিয়া বিশ্বেক উষ্ণায়ণ কমানো নিয়ে সোচ্চার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সংকটের বিষয় সামনে আসছে। আর এই সূত্রেই বনায়নের প্রসঙ্গ যেমন উঠছে, তেমনি উঠছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। বাংলাদেশও প্রতিবার পরিবেশ সম্মেলন কিংবা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা মিলছে এমন বহু প্রকল্পের, যা পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে।
হাসপাতাল প্রসঙ্গে বলতে হয়, হাসপাতাল মানে কিন্তু হাসপাতাল। কোনো সিনেমা হল নয়, যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরপর দর্শক আসবে, আবার চলে যাবে। মানুষ হাসপাতালে খুব শখের বসে যায় না। অসুস্থ হলে টানা চিকিৎসার জন্য যেতে হয় হাসপাতাল নামক জায়গায়। হাসপাতালে প্রতিদিন আসবে হাজার হাজার রোগী, আর তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে থাকতে হবে। আবার এসব মানুষের জন্য হাসপাতালের আশপাশে থাকবে অনেক ওষুধপত্র, চা আর খাবার দাবারের দোকান। আরও থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি। এতে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে পরিবেশের ক্ষতি হবে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যেমন রাজধানীর ফুসফুস বলা হয়, তেমনি অনেক বেশি গাছ-গাছালির জন্য চট্টগ্রামের সিআরবিকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস। ফুসফুসের কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ যেমন মৃত্যুবরণ করে। সিআরবিতে হাসপাতাল হলে ঠিক তেমনি অবস্থা হবে মানুষের।
আবার অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে, শতবর্ষী বৃক্ষ কাটা পড়বে না। হাসপাতাল হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। হাসপাতালের গঠন আর কার্যক্রম এ বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাসপাতালে থাকবে অনেক মানুষ। এতগুলো মানুষের বর্জ্য কোথায় যাবে? এতে কি গাছেদের ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন?
গাছ কাটা আমাদের পুরোনো অভ্যাস। গাছেদের সঙ্গে কিছু কিছু মানুষের এত শত্রুতা কেন বোঝা মুশকিল। কেন আমরা এই শতবর্ষী গাছেদের বাঁচতে দিচ্ছি না? সিআরবিতে হাসপাতাল হলে তো চট্টগ্রামবাসীকে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। প্রকৃতিতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ। আমরা প্রকৃতির অংশ। যে প্রাণ–প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার উৎস, সেই প্রকৃতিকে আজ আমরা কেটে ফেলার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।।
গত দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। প্রতিদিন সামান্য একটু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময়টাতে সিলিন্ডারের অক্সিজেন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর পরও কি আমরা গাছেদের কথা চিন্তা করব না?
এরই মধ্যে এই হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদে সোচ্চার আছেন পরিবেশবিদ, সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলসচিব, রেলের মহাপরিচালকসহ আটজনকে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ (আইনি নোটিশ) পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। প্রশ্ন হলো—সবাই কি তবে হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে?
না, এত সরল সমীকরণ করা চলে না। প্রসঙ্গটি একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, কেন এই প্রশ্ন অবান্তর। হাসপাতাল রোগের চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ধুঁকতে থাকা বর্তমান বিশ্ব জানে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ থাকার জন্য কতটা জরুরি। আমরা আমাদের হাসপাতালের চাহিদাটি মেটাতে গিয়ে সেই সুস্থতার সহযোগীকেই হত্যা করতে যাচ্ছি। সংকটটি এখানেই। আমাদের প্রবণতা সুস্থ থাকা নয়, অসুস্থতার চিকিৎসা। অথচ আজকের দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য নীতি বলে, আগে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান নিশ্চিত করা হোক। চিকিৎসার সুব্যবস্থার প্রসঙ্গটি এর পরের ধাপ। আমরা প্রথম ধাপটির দিকে না তাকিয়ে দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অনেকটা গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো বিষয়। চট্টগ্রামের সিআরবির গাছ কাটার ক্ষেত্রে আমরা আক্ষরিক অর্থেই সেদিকে এগোচ্ছি।
তাই যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের কেউ হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে নয়। তাদের মূল বক্তব্য, হাসপাতাল অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সেটা সিআরবিতে নয়। চট্টগ্রামে অনেক খালি জমি আছে। একটু খুঁজলে হাসপাতালের জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে। সেখানে হাসপাতাল তৈরি করলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। সিআরবি এলাকা তার প্রাণ-প্রকৃতিকে নিয়ে বেঁচে থাকুক। অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে সিআরবি মাথা উঁচু করে বাঁচুক।

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ। এ ছাড়া এখানে আছে শিরীষতলা নামে অনেক বড় প্রশস্ত মাঠ। যেখানে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, রবীন্দ্র–নজরুল জয়ন্তীসহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মূল কথা, এই সিআরবি হলো বহু গাছের কেন্দ্রভূমি। চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস বলা যায় একে। এখানে পাখিদের পাশাপাশি খেলা করে শিশুরা। শত শত মানুষ, মন আর শরীরকে সুস্থ রাখতে সিআরবিতে হাঁটতে যায়। গত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফুসফুসে করাত চালানোর তথ্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কথা উপেক্ষা করে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কেটে ফেলা হবে ৭০টির বেশি গাছ। এরই মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে রেলওয়ে। তারা এই চুক্তি করেছিল ২০২০ সালের ১৮ মার্চে। প্রশ্ন হলো—তাহলে এখন কেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? চুক্তির সময়ও পরিবেশবাদী ও চট্টগ্রামের সচেতন মহল প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি সিআরবি এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। ফলে টিকে থাকা গুটিকয় সবুজ ভূমির একটিতে করাত চালানোর বিষয়টি এখন অনেক বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য।
সিআরবির খোলা প্রান্তরে হাসপাতাল তৈরি করা হবে শুনে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামবাসী। শুধু পরিবেশবাদী বা সংস্কৃতিকর্মী নন, রেলকর্মীরাও এর প্রতিবাদ করছেন। কারণ, অনেক পুরোনো জায়গা এই সিআরবি। আর সিআরবিজুড়ে রয়েছে অনেক গাছের মেলা। সেখানে হাঁটলেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এটি। চিরসবুজ সিআরবি থেকে আকাশকেও মাঝেমাঝে মনে হয় সবুজ রঙের। তাই এই খবর শোনার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে শিশুদের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে, বড়দের হাঁটার জন্য থাকবে না খোলা মাঠ, অনুষ্ঠিত হবে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোনা যাবে না পাখিদের কলতান। আর বেশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ে তোলপাড় এই সময়ের ধ্রূপদী প্রশ্নগুলো তো রয়েছেই।
আজকের দুনিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সারা দুনিয়া বিশ্বেক উষ্ণায়ণ কমানো নিয়ে সোচ্চার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সংকটের বিষয় সামনে আসছে। আর এই সূত্রেই বনায়নের প্রসঙ্গ যেমন উঠছে, তেমনি উঠছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। বাংলাদেশও প্রতিবার পরিবেশ সম্মেলন কিংবা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা মিলছে এমন বহু প্রকল্পের, যা পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে।
হাসপাতাল প্রসঙ্গে বলতে হয়, হাসপাতাল মানে কিন্তু হাসপাতাল। কোনো সিনেমা হল নয়, যেখানে কয়েক ঘণ্টা পরপর দর্শক আসবে, আবার চলে যাবে। মানুষ হাসপাতালে খুব শখের বসে যায় না। অসুস্থ হলে টানা চিকিৎসার জন্য যেতে হয় হাসপাতাল নামক জায়গায়। হাসপাতালে প্রতিদিন আসবে হাজার হাজার রোগী, আর তাঁদের আত্মীয়স্বজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালে থাকতে হবে। আবার এসব মানুষের জন্য হাসপাতালের আশপাশে থাকবে অনেক ওষুধপত্র, চা আর খাবার দাবারের দোকান। আরও থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি। এতে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে পরিবেশের ক্ষতি হবে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যেমন রাজধানীর ফুসফুস বলা হয়, তেমনি অনেক বেশি গাছ-গাছালির জন্য চট্টগ্রামের সিআরবিকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস। ফুসফুসের কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ যেমন মৃত্যুবরণ করে। সিআরবিতে হাসপাতাল হলে ঠিক তেমনি অবস্থা হবে মানুষের।
আবার অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে, শতবর্ষী বৃক্ষ কাটা পড়বে না। হাসপাতাল হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। হাসপাতালের গঠন আর কার্যক্রম এ বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাসপাতালে থাকবে অনেক মানুষ। এতগুলো মানুষের বর্জ্য কোথায় যাবে? এতে কি গাছেদের ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন?
গাছ কাটা আমাদের পুরোনো অভ্যাস। গাছেদের সঙ্গে কিছু কিছু মানুষের এত শত্রুতা কেন বোঝা মুশকিল। কেন আমরা এই শতবর্ষী গাছেদের বাঁচতে দিচ্ছি না? সিআরবিতে হাসপাতাল হলে তো চট্টগ্রামবাসীকে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। প্রকৃতিতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ। আমরা প্রকৃতির অংশ। যে প্রাণ–প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার উৎস, সেই প্রকৃতিকে আজ আমরা কেটে ফেলার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।।
গত দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। প্রতিদিন সামান্য একটু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময়টাতে সিলিন্ডারের অক্সিজেন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর পরও কি আমরা গাছেদের কথা চিন্তা করব না?
এরই মধ্যে এই হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদে সোচ্চার আছেন পরিবেশবিদ, সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলসচিব, রেলের মহাপরিচালকসহ আটজনকে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ (আইনি নোটিশ) পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। প্রশ্ন হলো—সবাই কি তবে হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে?
না, এত সরল সমীকরণ করা চলে না। প্রসঙ্গটি একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, কেন এই প্রশ্ন অবান্তর। হাসপাতাল রোগের চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ধুঁকতে থাকা বর্তমান বিশ্ব জানে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ থাকার জন্য কতটা জরুরি। আমরা আমাদের হাসপাতালের চাহিদাটি মেটাতে গিয়ে সেই সুস্থতার সহযোগীকেই হত্যা করতে যাচ্ছি। সংকটটি এখানেই। আমাদের প্রবণতা সুস্থ থাকা নয়, অসুস্থতার চিকিৎসা। অথচ আজকের দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য নীতি বলে, আগে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান নিশ্চিত করা হোক। চিকিৎসার সুব্যবস্থার প্রসঙ্গটি এর পরের ধাপ। আমরা প্রথম ধাপটির দিকে না তাকিয়ে দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অনেকটা গাছের ডালে বসে গোড়া কাটার মতো বিষয়। চট্টগ্রামের সিআরবির গাছ কাটার ক্ষেত্রে আমরা আক্ষরিক অর্থেই সেদিকে এগোচ্ছি।
তাই যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের কেউ হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে নয়। তাদের মূল বক্তব্য, হাসপাতাল অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সেটা সিআরবিতে নয়। চট্টগ্রামে অনেক খালি জমি আছে। একটু খুঁজলে হাসপাতালের জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে। সেখানে হাসপাতাল তৈরি করলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। সিআরবি এলাকা তার প্রাণ-প্রকৃতিকে নিয়ে বেঁচে থাকুক। অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে সিআরবি মাথা উঁচু করে বাঁচুক।

৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা।
৪ মিনিট আগে
এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত।
১৪ মিনিট আগে
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১ দিন আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা। সেখান থেকে আবার আরেকটি উড়োজাহাজ ধরে শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো। যুগপৎ আনন্দ ও বিরক্তিকর সে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার মধ্যেই মাথায় মাঝে মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি কথা—এত লম্বা পথে প্রায় ৪০০ মানুষ আর তাদের ব্যাগেজ নিয়ে এই মহাযানকে উড়ান দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫০০ মাইল বেগে ছুটে চলতে কী পরিমাণ শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে! আর সে শক্তির জন্য কী পরিমাণ জ্বালানি বয়ে নিতে হচ্ছে, তা পোড়াতেও হচ্ছে।
সব সময় তো আমরা পৃথিবীর বুকে চলা লাখ লাখ গাড়িকে দুষছি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর অন্যতম প্রধান খলনায়ক হিসেবে, উড়োজাহাজগুলোর কথা কি আমরা কখনো সেভাবে ভাবি? উড়োজাহাজগুলো কি সত্যিই পরিবেশ দূষণ করছে? সরল জবাব হলো, হ্যাঁ, করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে উড়োজাহাজগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বায়ুমণ্ডলে নন-কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে। উড়োজাহাজগুলো পরিবেশের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে। কী পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি সেসব যান পুড়িয়ে কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করছে, তাতে জলবায়ু পরিবর্তনে তার প্রভাব পড়ছে কতটুকু—এসব প্রশ্নও মাথার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল। জানা গেল, উড়োজাহাজগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনে প্রায় আড়াই শতাংশ অবদান রয়েছে উড়োজাহাজ চলাচলে, যা মোট জলবায়ু প্রভাব হিসাবে ৪ শতাংশ নিরূপিত হয়েছে।
এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে মুহূর্তেই সেসব উত্তর পাওয়া যায়। এমনকি কোন ফ্লাইট এখন আকাশের কোথায় অবস্থান করছে, গন্তব্যে পৌঁছাতে কতটুকু সময় লাগবে, তা-ও মানচিত্রে দেখা যায়। কয়েক দিন আগে এ রকম একটি ফ্লাইট নম্বর দিয়ে একটি অ্যাপসের সাহায্যে অনুসন্ধান করতেই ফ্লাইট চলাচলের যে ছবিটি মোবাইল ফোনের পর্দায় ভেসে উঠল, তা দেখে মনে হলো বিশাল আকাশে আসলে খালি জায়গা কোথায়? সব তো দখল করে ফেলেছে নিত্য চলাচল করা উড়োজাহাজগুলো। জানা গেল, রোজ মানে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর আকাশে প্রায় এক লাখ ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। রোজ ১৫ থেকে ২০ হাজার উড়োজাহাজ এসব ফ্লাইট পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে যাত্রী ও মালামাল বহন, সামরিক ও ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংখ্যাই যে সবচেয়ে বেশি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন সারা বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ যাত্রী উড়োজাহাজে চলাচল করে। উড়োজাহাজের এই পরিষেবা দিতে বছরে ৮৫০০ লাখ টনের বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটছে, ২০৫০ সালে যা আরও অনেক বাড়বে। পৃথিবীতে প্রধান ১০টি কার্বন নিঃসরণকারীর মধ্যে উড়োজাহাজশিল্প একটি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চতায় থাকায় সেখানকার বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে, সেখানকার বায়ুমণ্ডল ঠান্ডা। উড়োজাহাজে চড়ে তার বাইরের তাপমাত্রা কত, তা-ও মনিটরে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখছি, এয়ারক্রাফটের বাইরে বাতাসের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরূপ ঠান্ডায় উড়োজাহাজের ইঞ্জিন থেকে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ও গ্যাস নির্গত হচ্ছে, সেগুলো ঘন মেঘের মতো জমে যাচ্ছে। পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে গভীর আকাশে মাঝে মাঝে উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার পর আমরা যেসব ঘন সাদা মেঘের মতো সরল রেখা বা দীর্ঘ দাগ দেখি, এগুলো হলো তাই। ইংরেজিতে এগুলোকে বলে কন্ট্রেইল।
ভূপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চতায় থাকার কারণে সেসব উড়োজাহাজ থেকে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য নির্গত হয়, তা এককভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে বরং বেশি দূষণ ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটায়। বিশেষ করে নাইট্রাস অক্সাইড। উড়োজাহাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া এসব জমাটবদ্ধ বাষ্পের রেখাগুলো তাপ আটকে রাখতে পারে। এ সম্পর্কে আমাদের আগে যেসব ধারণা ছিল, বাস্তবে এখন গবেষণা করে তার চেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া উড়োজাহাজ থেকে নির্গত অন্যান্য বায়ুদূষণের মধ্যে রয়েছে জলীয় বাষ্প, স্যুট এবং সালফেটজাতীয় অ্যারোসল। এগুলোও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে ও ঘন মেঘ গঠন করে। এর কারণে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যেখানে ওজোনস্তর রয়েছে সেখানেও এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয় যা এসব উড়োজাহাজ চলাচলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলোও পরিবেশদূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
হাসির কথা হলো, আমরা গবেষণা করে যত বেশি আধুনিক উড়োজাহাজ তৈরি করছি, সেগুলো প্রাচীন উড়োজাহাজের চেয়ে বরং বেশি দূষণ ঘটাচ্ছে। এগুলো যত বেশি উচ্চতা দিয়ে উড়ছে, তত বেশি দীর্ঘস্থায়ী কন্ট্রেইল বা জমাটবদ্ধ ঘন মেঘের রেখা তৈরি করছে, যা তাপ বাড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক মেঘের মতোই এসব কন্ট্রেইল বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত তাপ ধরে রাখে এবং জেট জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে সৃষ্ট কার্বনের চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি অবদান রাখে। এ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণাকাজও করা হয়েছে। সে গবেষণা দলের প্রধান গবেষক ও গবেষণাপত্রের লেখক ড. এডওয়ার্ড গ্রিসপেয়ার্ডট বলেছেন, অনেকে বোঝেন না যে কন্ট্রেইল ও জেট ফুয়েলের কার্বন নির্গমন জলবায়ুকে দ্বিগুণভাবে উষ্ণ করছে।
জেট প্লেনগুলো ওড়ে ৪০ হাজার ফুটের ওপর দিয়ে, আধুনিক প্লেনগুলো ওড়ে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার ফুটের মধ্যে এবং প্রাচীন প্লেনগুলো ওড়ে ৩১ থেকে ৩৮ হাজার ফুটের মধ্যে। উঁচুতে থাকা প্লেনগুলো বেশি কন্ট্রেইল তৈরি করে, নিচুতে থাকাগুলো করে কম। সে গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে কন্ট্রেইল পরিবেশের জন্য উড়োজাহাজের কার্বন নির্গমনের চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতিকর, যার কারণে উড়োজাহাজ চলাচলের মোট জলবাযু প্রভাবের প্রায় ৬০ শতাংশ ঘটে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিম লাইনারের মতো আধুনিক উড়োজাহাজের কন্ট্রেইল পুরোনো মডেলের চেয়ে বেশি তৈরি হয়। এই গবেষণায় গবেষকেরা নাসার জিওইএস-আর উপগ্রহ থেকে নেওয়া স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করেছেন, যা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজগুলোর ৬৪ হাজারের বেশি কন্ট্রেইল ট্র্যাক করতে সাহায্য করেছে।
এ দৃশ্যের বাইরেও রয়েছে আরও এক দৃশ্য। রোজ প্রায় ১৩ লাখ যাত্রীর খাবার থেকে কী পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, সেটি কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? উড়োজাহাজভিত্তিক অন-বোর্ড পরিষেবা, টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণ, উড়োজাহাজ শিল্পজনিত বর্জ্য ইত্যাদি কারণেও পরিবেশদূষণ বাড়ছে। এ থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পাওয়ার সহজ কোনো রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। কার্বনমুক্ত উড়োজাহাজ চালনা এখনো এক স্বপ্নের ব্যাপার। কেননা, গাড়ির মতো আমরা ইলেকট্রিক উড়োজাহাজ আবিষ্কার করতে পারিনি, সেখানে সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগও তৈরি হয়নি। কেননা, উড়োজাহাজ চালাতে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি লাগে সেটি কখনো ব্যাটারি দিয়ে সম্ভব নয়। উড়োজাহাজের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কেউ কেউ হাইড্রোজেন ব্যবহারের কথা ভাবছেন। কিন্তু জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের ঝুঁকি আছে অনেক বেশি। এতে দাহ্যতার কারণে হাইড্রোজেন ব্যবহারের ফলে উড়োজাহাজে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। উড়োজাহাজ চালনার জন্য টেকসই জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং উৎপাদনের জন্য ব্যাপক জমি ও পানিসম্পদের দরকার হয়। এ মুহূর্তে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষাও দরকার। কাজেই সে লাইনেও যাওয়া ঠিক হবে না।
আশঙ্কার কথা হলো, দিন দিন অন্যান্য পরিবহন খাতের তুলনায় প্রয়োজনেই উড়োজাহাজের চলাচল দ্রুত হারে বাড়ছে। যদি তা কমানো বা নিয়ন্ত্রণের কোনো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনে বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তার প্রভাবও বাড়বে। গবেষকদের মতে, এখনই ভাবার সময় এসেছে উড়োজাহাজের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উড়ানে আরও বেশি দক্ষ ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার এবং বিমান চলাচলকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পরিবেশদূষণের ক্ষতিপূরণ আদায় করে তা পরিবেশ উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা। সেখান থেকে আবার আরেকটি উড়োজাহাজ ধরে শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো। যুগপৎ আনন্দ ও বিরক্তিকর সে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার মধ্যেই মাথায় মাঝে মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি কথা—এত লম্বা পথে প্রায় ৪০০ মানুষ আর তাদের ব্যাগেজ নিয়ে এই মহাযানকে উড়ান দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫০০ মাইল বেগে ছুটে চলতে কী পরিমাণ শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে! আর সে শক্তির জন্য কী পরিমাণ জ্বালানি বয়ে নিতে হচ্ছে, তা পোড়াতেও হচ্ছে।
সব সময় তো আমরা পৃথিবীর বুকে চলা লাখ লাখ গাড়িকে দুষছি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর অন্যতম প্রধান খলনায়ক হিসেবে, উড়োজাহাজগুলোর কথা কি আমরা কখনো সেভাবে ভাবি? উড়োজাহাজগুলো কি সত্যিই পরিবেশ দূষণ করছে? সরল জবাব হলো, হ্যাঁ, করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে উড়োজাহাজগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বায়ুমণ্ডলে নন-কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে। উড়োজাহাজগুলো পরিবেশের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে। কী পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি সেসব যান পুড়িয়ে কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করছে, তাতে জলবায়ু পরিবর্তনে তার প্রভাব পড়ছে কতটুকু—এসব প্রশ্নও মাথার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল। জানা গেল, উড়োজাহাজগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনে প্রায় আড়াই শতাংশ অবদান রয়েছে উড়োজাহাজ চলাচলে, যা মোট জলবায়ু প্রভাব হিসাবে ৪ শতাংশ নিরূপিত হয়েছে।
এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে মুহূর্তেই সেসব উত্তর পাওয়া যায়। এমনকি কোন ফ্লাইট এখন আকাশের কোথায় অবস্থান করছে, গন্তব্যে পৌঁছাতে কতটুকু সময় লাগবে, তা-ও মানচিত্রে দেখা যায়। কয়েক দিন আগে এ রকম একটি ফ্লাইট নম্বর দিয়ে একটি অ্যাপসের সাহায্যে অনুসন্ধান করতেই ফ্লাইট চলাচলের যে ছবিটি মোবাইল ফোনের পর্দায় ভেসে উঠল, তা দেখে মনে হলো বিশাল আকাশে আসলে খালি জায়গা কোথায়? সব তো দখল করে ফেলেছে নিত্য চলাচল করা উড়োজাহাজগুলো। জানা গেল, রোজ মানে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর আকাশে প্রায় এক লাখ ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। রোজ ১৫ থেকে ২০ হাজার উড়োজাহাজ এসব ফ্লাইট পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে যাত্রী ও মালামাল বহন, সামরিক ও ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংখ্যাই যে সবচেয়ে বেশি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন সারা বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ যাত্রী উড়োজাহাজে চলাচল করে। উড়োজাহাজের এই পরিষেবা দিতে বছরে ৮৫০০ লাখ টনের বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটছে, ২০৫০ সালে যা আরও অনেক বাড়বে। পৃথিবীতে প্রধান ১০টি কার্বন নিঃসরণকারীর মধ্যে উড়োজাহাজশিল্প একটি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চতায় থাকায় সেখানকার বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে, সেখানকার বায়ুমণ্ডল ঠান্ডা। উড়োজাহাজে চড়ে তার বাইরের তাপমাত্রা কত, তা-ও মনিটরে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখছি, এয়ারক্রাফটের বাইরে বাতাসের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরূপ ঠান্ডায় উড়োজাহাজের ইঞ্জিন থেকে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ও গ্যাস নির্গত হচ্ছে, সেগুলো ঘন মেঘের মতো জমে যাচ্ছে। পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে গভীর আকাশে মাঝে মাঝে উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার পর আমরা যেসব ঘন সাদা মেঘের মতো সরল রেখা বা দীর্ঘ দাগ দেখি, এগুলো হলো তাই। ইংরেজিতে এগুলোকে বলে কন্ট্রেইল।
ভূপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চতায় থাকার কারণে সেসব উড়োজাহাজ থেকে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য নির্গত হয়, তা এককভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে বরং বেশি দূষণ ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটায়। বিশেষ করে নাইট্রাস অক্সাইড। উড়োজাহাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া এসব জমাটবদ্ধ বাষ্পের রেখাগুলো তাপ আটকে রাখতে পারে। এ সম্পর্কে আমাদের আগে যেসব ধারণা ছিল, বাস্তবে এখন গবেষণা করে তার চেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া উড়োজাহাজ থেকে নির্গত অন্যান্য বায়ুদূষণের মধ্যে রয়েছে জলীয় বাষ্প, স্যুট এবং সালফেটজাতীয় অ্যারোসল। এগুলোও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে ও ঘন মেঘ গঠন করে। এর কারণে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যেখানে ওজোনস্তর রয়েছে সেখানেও এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয় যা এসব উড়োজাহাজ চলাচলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলোও পরিবেশদূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
হাসির কথা হলো, আমরা গবেষণা করে যত বেশি আধুনিক উড়োজাহাজ তৈরি করছি, সেগুলো প্রাচীন উড়োজাহাজের চেয়ে বরং বেশি দূষণ ঘটাচ্ছে। এগুলো যত বেশি উচ্চতা দিয়ে উড়ছে, তত বেশি দীর্ঘস্থায়ী কন্ট্রেইল বা জমাটবদ্ধ ঘন মেঘের রেখা তৈরি করছে, যা তাপ বাড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক মেঘের মতোই এসব কন্ট্রেইল বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত তাপ ধরে রাখে এবং জেট জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে সৃষ্ট কার্বনের চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি অবদান রাখে। এ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণাকাজও করা হয়েছে। সে গবেষণা দলের প্রধান গবেষক ও গবেষণাপত্রের লেখক ড. এডওয়ার্ড গ্রিসপেয়ার্ডট বলেছেন, অনেকে বোঝেন না যে কন্ট্রেইল ও জেট ফুয়েলের কার্বন নির্গমন জলবায়ুকে দ্বিগুণভাবে উষ্ণ করছে।
জেট প্লেনগুলো ওড়ে ৪০ হাজার ফুটের ওপর দিয়ে, আধুনিক প্লেনগুলো ওড়ে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার ফুটের মধ্যে এবং প্রাচীন প্লেনগুলো ওড়ে ৩১ থেকে ৩৮ হাজার ফুটের মধ্যে। উঁচুতে থাকা প্লেনগুলো বেশি কন্ট্রেইল তৈরি করে, নিচুতে থাকাগুলো করে কম। সে গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে কন্ট্রেইল পরিবেশের জন্য উড়োজাহাজের কার্বন নির্গমনের চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতিকর, যার কারণে উড়োজাহাজ চলাচলের মোট জলবাযু প্রভাবের প্রায় ৬০ শতাংশ ঘটে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিম লাইনারের মতো আধুনিক উড়োজাহাজের কন্ট্রেইল পুরোনো মডেলের চেয়ে বেশি তৈরি হয়। এই গবেষণায় গবেষকেরা নাসার জিওইএস-আর উপগ্রহ থেকে নেওয়া স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করেছেন, যা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজগুলোর ৬৪ হাজারের বেশি কন্ট্রেইল ট্র্যাক করতে সাহায্য করেছে।
এ দৃশ্যের বাইরেও রয়েছে আরও এক দৃশ্য। রোজ প্রায় ১৩ লাখ যাত্রীর খাবার থেকে কী পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, সেটি কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? উড়োজাহাজভিত্তিক অন-বোর্ড পরিষেবা, টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণ, উড়োজাহাজ শিল্পজনিত বর্জ্য ইত্যাদি কারণেও পরিবেশদূষণ বাড়ছে। এ থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পাওয়ার সহজ কোনো রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। কার্বনমুক্ত উড়োজাহাজ চালনা এখনো এক স্বপ্নের ব্যাপার। কেননা, গাড়ির মতো আমরা ইলেকট্রিক উড়োজাহাজ আবিষ্কার করতে পারিনি, সেখানে সৌরশক্তি ব্যবহারের সুযোগও তৈরি হয়নি। কেননা, উড়োজাহাজ চালাতে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি লাগে সেটি কখনো ব্যাটারি দিয়ে সম্ভব নয়। উড়োজাহাজের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কেউ কেউ হাইড্রোজেন ব্যবহারের কথা ভাবছেন। কিন্তু জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের ঝুঁকি আছে অনেক বেশি। এতে দাহ্যতার কারণে হাইড্রোজেন ব্যবহারের ফলে উড়োজাহাজে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। উড়োজাহাজ চালনার জন্য টেকসই জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং উৎপাদনের জন্য ব্যাপক জমি ও পানিসম্পদের দরকার হয়। এ মুহূর্তে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষাও দরকার। কাজেই সে লাইনেও যাওয়া ঠিক হবে না।
আশঙ্কার কথা হলো, দিন দিন অন্যান্য পরিবহন খাতের তুলনায় প্রয়োজনেই উড়োজাহাজের চলাচল দ্রুত হারে বাড়ছে। যদি তা কমানো বা নিয়ন্ত্রণের কোনো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনে বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তার প্রভাবও বাড়বে। গবেষকদের মতে, এখনই ভাবার সময় এসেছে উড়োজাহাজের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উড়ানে আরও বেশি দক্ষ ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার এবং বিমান চলাচলকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পরিবেশদূষণের ক্ষতিপূরণ আদায় করে তা পরিবেশ উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ
১৪ জুলাই ২০২১
এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত।
১৪ মিনিট আগে
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১ দিন আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সবাই দেখেছেন। কে এই আততায়ী, তা নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে। কেউ কেউ বলছেন, মোটরসাইকেলে থাকা দুই দুর্বৃত্ত ওসমান হাদির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশও নিয়েছিল।
তফসিল ঘোষণার পরদিন এ রকম এক সহিংসতার ঘটনা ঘটায় অনেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। যে উৎসবের নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, সে নির্বাচনের পথে যাত্রার সময়টা এ রকম ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে উঠল কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। ওসমান হাদির মতো একজন সুপরিচিত নেতার জীবনের নিরাপত্তা নেই, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আমরা এই হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।
টার্গেট কিলিং নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। একজন নেতা বলেছেন, অন্তত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ৫০ জন নেতা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন। এ ধরনের তথ্য দেওয়া হলে তার উৎস ও প্রমাণও হাজির করা উচিত। যদি কেউ সে রকম ষড়যন্ত্র করে থাকে, তবে তার মুখোশ উন্মোচন করাও জরুরি।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন কাজ। কিন্তু সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজগুলো করা হলে এবং যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো পরিচালনা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি সত্যিই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করার অনুকূল হয়ে উঠতে পেরেছে—এই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে তাদের নৈতিক মনোবল যে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে, তাতে তাদের কাছ থেকে সত্যিই কি দক্ষ সেবা পাওয়া সম্ভব? মনোবলহীন একটি বাহিনী কতটা সাহসী পদক্ষেপ রাখতে পারে?
কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপরও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের পর বিষয়টিকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। নির্বাচনী ময়দানকে বিশৃঙ্খল করে তোলার জন্য শক্তিশালী কোনো মহল কি এসব কাজে মদদ দিচ্ছে? কারা এসব ঘটাচ্ছে, তা নিয়ে নিবিড় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কোনো গায়েবি হত্যাকারীর গল্প তৈরি করে সত্যিকারের খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা হলে এই সহিংসতা আরও বাড়বে। সত্যিকারের অপরাধীরা ধরা পড়লেই কেবল তাদের লক্ষ্য, তাদের পেছনে কারা সক্রিয় ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে। আর সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে কীভাবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, সে কৌশল নিয়ে ভাবতে পারবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থীকে ঘিরে তাঁর সমর্থকদেরও একটা নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে বলিষ্ঠভাবে—এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে না।

এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সবাই দেখেছেন। কে এই আততায়ী, তা নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে। কেউ কেউ বলছেন, মোটরসাইকেলে থাকা দুই দুর্বৃত্ত ওসমান হাদির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশও নিয়েছিল।
তফসিল ঘোষণার পরদিন এ রকম এক সহিংসতার ঘটনা ঘটায় অনেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। যে উৎসবের নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, সে নির্বাচনের পথে যাত্রার সময়টা এ রকম ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে উঠল কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। ওসমান হাদির মতো একজন সুপরিচিত নেতার জীবনের নিরাপত্তা নেই, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আমরা এই হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।
টার্গেট কিলিং নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। একজন নেতা বলেছেন, অন্তত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ৫০ জন নেতা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন। এ ধরনের তথ্য দেওয়া হলে তার উৎস ও প্রমাণও হাজির করা উচিত। যদি কেউ সে রকম ষড়যন্ত্র করে থাকে, তবে তার মুখোশ উন্মোচন করাও জরুরি।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন কাজ। কিন্তু সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজগুলো করা হলে এবং যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো পরিচালনা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি সত্যিই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করার অনুকূল হয়ে উঠতে পেরেছে—এই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে তাদের নৈতিক মনোবল যে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে, তাতে তাদের কাছ থেকে সত্যিই কি দক্ষ সেবা পাওয়া সম্ভব? মনোবলহীন একটি বাহিনী কতটা সাহসী পদক্ষেপ রাখতে পারে?
কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপরও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের পর বিষয়টিকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। নির্বাচনী ময়দানকে বিশৃঙ্খল করে তোলার জন্য শক্তিশালী কোনো মহল কি এসব কাজে মদদ দিচ্ছে? কারা এসব ঘটাচ্ছে, তা নিয়ে নিবিড় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কোনো গায়েবি হত্যাকারীর গল্প তৈরি করে সত্যিকারের খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা হলে এই সহিংসতা আরও বাড়বে। সত্যিকারের অপরাধীরা ধরা পড়লেই কেবল তাদের লক্ষ্য, তাদের পেছনে কারা সক্রিয় ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে। আর সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে কীভাবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, সে কৌশল নিয়ে ভাবতে পারবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থীকে ঘিরে তাঁর সমর্থকদেরও একটা নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে বলিষ্ঠভাবে—এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে না।

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ
১৪ জুলাই ২০২১
৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা।
৪ মিনিট আগে
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১ দিন আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য উঠেপড়ে লাগবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন একটি সুস্থির সমাজব্যবস্থার দিকে দেশকে পরিচালিত করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। এই দুই উপদেষ্টার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও সক্রিয় দেখা গেছে নানাভাবে। বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে তাঁরা যাচ্ছেন, কথা বলছেন। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। যে চাপের কথা তারেক রহমান নিজেই বলেছেন, সেই চাপ দেশের অভ্যন্তরের নাকি বিদেশি কোনো শক্তির তরফ থেকে—সে কথাও আলোচিত হয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোট সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল সরকার চালানোর অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ডাকসু নেতাদের কিছু কথা, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে মানুষের মনে। তফসিল ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এক নেতাকে একজন ডাকসু নেতার নেতৃত্বে হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়কদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অজস্র মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা হচ্ছে, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত করা, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলাসহ বহু অভিযোগ ছিল। যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্যাতিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে, তারাই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যে রূপে আবির্ভূত হয়েছে, তা মোটেই জনগণের প্রত্যাশিত রূপ নয়। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন দলের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পদ-বাণিজ্য, খুনোখুনির খবর ভেসে আসছে। যে ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখার কথা ভেবেছে তরুণ প্রজন্ম, সেই তরুণেরাও আজ দ্বিধান্বিত। এ রকম এক অস্থির সময়ে আসছে নির্বাচন। আশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যবসায়ীদের অবাধে কাজের সুযোগ, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধ, সাধারণ মানুষের জীবন ও কাজের নিরাপত্তাসহ কল্যাণকর কাজগুলো করবে নির্বাচিত সরকার। তবেই অস্থিরতা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য উঠেপড়ে লাগবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন একটি সুস্থির সমাজব্যবস্থার দিকে দেশকে পরিচালিত করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। এই দুই উপদেষ্টার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও সক্রিয় দেখা গেছে নানাভাবে। বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে তাঁরা যাচ্ছেন, কথা বলছেন। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। যে চাপের কথা তারেক রহমান নিজেই বলেছেন, সেই চাপ দেশের অভ্যন্তরের নাকি বিদেশি কোনো শক্তির তরফ থেকে—সে কথাও আলোচিত হয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোট সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল সরকার চালানোর অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ডাকসু নেতাদের কিছু কথা, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে মানুষের মনে। তফসিল ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এক নেতাকে একজন ডাকসু নেতার নেতৃত্বে হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়কদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অজস্র মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা হচ্ছে, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত করা, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলাসহ বহু অভিযোগ ছিল। যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্যাতিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে, তারাই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যে রূপে আবির্ভূত হয়েছে, তা মোটেই জনগণের প্রত্যাশিত রূপ নয়। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন দলের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পদ-বাণিজ্য, খুনোখুনির খবর ভেসে আসছে। যে ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখার কথা ভেবেছে তরুণ প্রজন্ম, সেই তরুণেরাও আজ দ্বিধান্বিত। এ রকম এক অস্থির সময়ে আসছে নির্বাচন। আশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যবসায়ীদের অবাধে কাজের সুযোগ, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধ, সাধারণ মানুষের জীবন ও কাজের নিরাপত্তাসহ কল্যাণকর কাজগুলো করবে নির্বাচিত সরকার। তবেই অস্থিরতা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ
১৪ জুলাই ২০২১
৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা।
৪ মিনিট আগে
এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত।
১৪ মিনিট আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে, কিন্তু ব্যারিস্টার বা উকিল হলেই দেশের ইতিহাস ভালো জানবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা কটাক্ষের ব্যাপারে তেমন কোনো কড়া কথা আমি অন্তত বলতে শুনিনি।
যতদূর স্মরণ করতে পারি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসকে ছোট করার জন্য সংঘটিত হয়নি। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে শামিল হয়েছিল দেশের আপামর মানুষ। এদের সবাই একই ভাবনা নিয়ে সামনের পথে এগোয়নি। সরকার পতন হলে কী হতে পারে কৌশল—এ রকম ভাবনাও কারও মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। দেশের ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল প্রাণের তাগিদে। যখন লাশ পড়ছিল একের পর এক, তখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এই প্রচণ্ড আলোড়নে সরকার পড়ে যাবে—এ রকম ভাবনা হয়তো তাদের ছিল না। ছিল না সে রকম কোনো প্রস্তুতি। তাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় কিছু প্রগাঢ় নীতিকথার জন্ম দিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিশা দেয়নি। শুধু কি নীতিকথা? অশ্রাব্য উচ্চারণ করে লাইক-কমেন্টে ছেয়ে যাওয়া একদল নেতার সন্ধান আজকাল পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা টিনের চালে কাউয়ার পাশাপাশি আরও কত কিছু দেখছেন! বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে করতে চাঁদাবাজি করার পথে শামিল হচ্ছেন। আর এই ধরনের অরাজকতা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রচার করছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভাবছেন, স্বাধীনতার সব অর্জনকে কটাক্ষ করতে পারলে এ দেশের মানুষ একদিন ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর সহযাত্রী হয়ে উঠবে আবারও।
কী হতে কী হয়ে গেল, এখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বা বিজয় শব্দগুলো কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল নাকি? গত বছর শিল্পকলা একাডেমি যখন বিজয় উৎসব পালন করছিল, তখন ভয়ে ভয়ে তারা ‘বিজয় উৎসব’কে ‘ডিসেম্বর উৎসব’ লিখেছিল, সে কথা কি মনে আছে কারও? পরে প্রবল আপত্তির মুখে আবার তারা ‘বিজয় উৎসব’-এ ফিরে এসেছিল। স্বাধীনতা আর বিজয় শব্দ দুটি উচ্চারণ করার মতো বুকের পাটা নেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের—এটা যে কত বড় দুর্ভাবনার ব্যাপার, তা কি বলে বোঝানো যাবে?
১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, তার ছাপ পাওয়া যায় সারা বিশ্বে। সে সময়কার বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, কোন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। মনে করিয়ে দিই, রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্বের কারণে কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভাঙন, পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনদের বিজয়যাত্রা, সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ, উপনিবেশগুলো ভেঙে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ গঠন এবং তার কোনো কোনো দেশের বাম দিকে ঘেঁষা রাজনীতি, কিছু কিছু দেশে নব্য স্বৈরাচারের আবির্ভাব ইত্যাদি নানা প্যাঁচে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছিল বৈশ্বিক রাজনীতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন আলোচনায় রয়েছে। এ রকমই একটা অবস্থায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন ৬ দফা। সেই ৬ দফা নতুন কিছু ছিল না। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে কিংবা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারেও এই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টির দেখা মেলে। ১৯৬৬ সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চালানো শোষণ-বঞ্চনার বিষয়টি আমূল প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা বাঙালির আবেগকে তাড়িত করেছিল। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের মানুষ জানান দিয়েছিল, মাথায় হাত বোলানোর রাজনীতি আর চলবে না এখানে।
এত বড় বড় দল থাকতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কী করে আওয়ামী লীগ এত বড় বিজয় পেল, সে ইতিহাস নানাভাবে লেখা হয়েছে। এটাই ছিল বাংলার রায়। দেশের জনগণ সেই রায়ে ক্ষমতা দিয়েছিল ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সলিমুল্লাহ খানদের গুরু আহমদ ছফার বিখ্যাত উক্তিটি এখানে প্রযোজ্য। ছফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্য অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমরা রাজি হব না।’ ভুল শোনেননি, ছফা এ কথাই বলেছেন। এবং এখানেই তা শেষ করেননি। তিনি যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম এমন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে, যত পণ্ডিত হোন না কেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিপুণতা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করতে পারবেন না।’
ছফাকে এসব কথা বলতে হলো কেন? তিনি তো তাঁর শিষ্যদের মতোই শেখ মুজিবকে অগ্রাহ্য করে অথবা জাতির ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করতে পারতেন। কেন ছফা সেটা করেননি? আমার মনে হয়, ছফা ভেবে দেখেছেন, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিলে ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা ধরা পড়বেই। তখন আত্মপরিচয়েই টান পড়বে। শেখ মুজিব সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ছফা স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নির্মোহ মতামত দিয়েছেন।
ইতিহাসবিমুখ পাকিস্তানপ্রেমী অর্বাচীনেরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। এতে আমাদের তরুণসমাজ কতটা বিভ্রান্ত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত পাওয়া যাবে না।
বিষয়টি বুঝতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। আমাদের সমাজে এই প্রতীকগুলো কীভাবে আছে, তা বুঝতে পারলেই স্বাধীনতা বা বিজয় আমাদের দেশে এখন কোন মর্যাদায় আছে, তা বোঝা যাবে। স্বাধীনতা বা দেশপ্রেমকে হুমকির মুখে ফেলতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যাতে শুরুতেই ভয় আর আতঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তারপর প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পতাকা, জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে কথা বলা—এভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে।
পাঠক, আপনি মনে করুন একটি পরীক্ষা দিতে বসেছেন। আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যাব, পাঠক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিজেই এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোয় নম্বর দেবেন। তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ।
প্রশ্নগুলো এমন: কেমন আছে দেশের বিচারব্যবস্থা? কেমন আছে নির্বাচন কমিশন? তারা কি স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে? সাংবাদিক-লেখক-গবেষকেরা কি নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে কাজ করার মতো পরিবেশ পাচ্ছেন?
সমাজে কোনো বড় সংঘাত নেই তো? ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। দেশের ডাকসাইটে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সেই ঐক্য কি দেখা যাচ্ছে? বিভাজনের রাজনীতিকে কি সরিয়ে দেওয়া গেছে? সন্দেহ-অবিশ্বাসের রাজনীতি কি আছে, নাকি বিদায় নিয়েছে?
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণ কি সন্তুষ্ট? মব বলুন আর চাপ প্রয়োগের রাজনীতি বলুন, সেগুলো কি জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে?
আপনি কি এমন কিছু লক্ষ করছেন, যেখানে সত্য ও মিথ্যাকে কাছাকাছি রেখে নাগরিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়?
আপনি কি সামাজিক বন্ধন ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করেছেন? আউল-বাউলের দেশে গানবাজনা কি হুমকির মুখে পড়েছে? ‘তৌহিদি জনতা’ আদতে কাদের কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে? সরকার কি এদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তেজনা ছড়ায় যারা, তাদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে, আর যারা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এ রকম কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?
সমষ্টিগত শক্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনো বাঁশিওয়ালা কি বাঁশি বাজাচ্ছে? আপনি কি লক্ষ করেছেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নয়, নানাভাবে যাঁরা সংখ্যালঘু, তাঁদের মারধর করে সংখ্যাগুরু অংশ আখের গুছিয়ে নিচ্ছে?
আপনি কি বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছেন, যাতে তাদের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণ একটি ‘সোনার বাংলা’য় বসবাস করবে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে লিখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করুন। যোগফল মেলান, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
আপনি তখন বুঝতে পারবেন, গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধিতার জায়গায় সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে তরুণেরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে, সে তরুণদের প্রতীক্ষায় আছি।

হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে, কিন্তু ব্যারিস্টার বা উকিল হলেই দেশের ইতিহাস ভালো জানবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা কটাক্ষের ব্যাপারে তেমন কোনো কড়া কথা আমি অন্তত বলতে শুনিনি।
যতদূর স্মরণ করতে পারি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসকে ছোট করার জন্য সংঘটিত হয়নি। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে শামিল হয়েছিল দেশের আপামর মানুষ। এদের সবাই একই ভাবনা নিয়ে সামনের পথে এগোয়নি। সরকার পতন হলে কী হতে পারে কৌশল—এ রকম ভাবনাও কারও মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। দেশের ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল প্রাণের তাগিদে। যখন লাশ পড়ছিল একের পর এক, তখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এই প্রচণ্ড আলোড়নে সরকার পড়ে যাবে—এ রকম ভাবনা হয়তো তাদের ছিল না। ছিল না সে রকম কোনো প্রস্তুতি। তাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় কিছু প্রগাঢ় নীতিকথার জন্ম দিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিশা দেয়নি। শুধু কি নীতিকথা? অশ্রাব্য উচ্চারণ করে লাইক-কমেন্টে ছেয়ে যাওয়া একদল নেতার সন্ধান আজকাল পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা টিনের চালে কাউয়ার পাশাপাশি আরও কত কিছু দেখছেন! বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে করতে চাঁদাবাজি করার পথে শামিল হচ্ছেন। আর এই ধরনের অরাজকতা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রচার করছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভাবছেন, স্বাধীনতার সব অর্জনকে কটাক্ষ করতে পারলে এ দেশের মানুষ একদিন ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর সহযাত্রী হয়ে উঠবে আবারও।
কী হতে কী হয়ে গেল, এখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বা বিজয় শব্দগুলো কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল নাকি? গত বছর শিল্পকলা একাডেমি যখন বিজয় উৎসব পালন করছিল, তখন ভয়ে ভয়ে তারা ‘বিজয় উৎসব’কে ‘ডিসেম্বর উৎসব’ লিখেছিল, সে কথা কি মনে আছে কারও? পরে প্রবল আপত্তির মুখে আবার তারা ‘বিজয় উৎসব’-এ ফিরে এসেছিল। স্বাধীনতা আর বিজয় শব্দ দুটি উচ্চারণ করার মতো বুকের পাটা নেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের—এটা যে কত বড় দুর্ভাবনার ব্যাপার, তা কি বলে বোঝানো যাবে?
১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, তার ছাপ পাওয়া যায় সারা বিশ্বে। সে সময়কার বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, কোন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। মনে করিয়ে দিই, রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্বের কারণে কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভাঙন, পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনদের বিজয়যাত্রা, সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ, উপনিবেশগুলো ভেঙে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ গঠন এবং তার কোনো কোনো দেশের বাম দিকে ঘেঁষা রাজনীতি, কিছু কিছু দেশে নব্য স্বৈরাচারের আবির্ভাব ইত্যাদি নানা প্যাঁচে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছিল বৈশ্বিক রাজনীতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন আলোচনায় রয়েছে। এ রকমই একটা অবস্থায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন ৬ দফা। সেই ৬ দফা নতুন কিছু ছিল না। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে কিংবা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারেও এই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টির দেখা মেলে। ১৯৬৬ সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চালানো শোষণ-বঞ্চনার বিষয়টি আমূল প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা বাঙালির আবেগকে তাড়িত করেছিল। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের মানুষ জানান দিয়েছিল, মাথায় হাত বোলানোর রাজনীতি আর চলবে না এখানে।
এত বড় বড় দল থাকতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কী করে আওয়ামী লীগ এত বড় বিজয় পেল, সে ইতিহাস নানাভাবে লেখা হয়েছে। এটাই ছিল বাংলার রায়। দেশের জনগণ সেই রায়ে ক্ষমতা দিয়েছিল ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সলিমুল্লাহ খানদের গুরু আহমদ ছফার বিখ্যাত উক্তিটি এখানে প্রযোজ্য। ছফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্য অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমরা রাজি হব না।’ ভুল শোনেননি, ছফা এ কথাই বলেছেন। এবং এখানেই তা শেষ করেননি। তিনি যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম এমন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে, যত পণ্ডিত হোন না কেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিপুণতা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করতে পারবেন না।’
ছফাকে এসব কথা বলতে হলো কেন? তিনি তো তাঁর শিষ্যদের মতোই শেখ মুজিবকে অগ্রাহ্য করে অথবা জাতির ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করতে পারতেন। কেন ছফা সেটা করেননি? আমার মনে হয়, ছফা ভেবে দেখেছেন, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিলে ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা ধরা পড়বেই। তখন আত্মপরিচয়েই টান পড়বে। শেখ মুজিব সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ছফা স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নির্মোহ মতামত দিয়েছেন।
ইতিহাসবিমুখ পাকিস্তানপ্রেমী অর্বাচীনেরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। এতে আমাদের তরুণসমাজ কতটা বিভ্রান্ত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত পাওয়া যাবে না।
বিষয়টি বুঝতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। আমাদের সমাজে এই প্রতীকগুলো কীভাবে আছে, তা বুঝতে পারলেই স্বাধীনতা বা বিজয় আমাদের দেশে এখন কোন মর্যাদায় আছে, তা বোঝা যাবে। স্বাধীনতা বা দেশপ্রেমকে হুমকির মুখে ফেলতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যাতে শুরুতেই ভয় আর আতঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তারপর প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পতাকা, জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে কথা বলা—এভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে।
পাঠক, আপনি মনে করুন একটি পরীক্ষা দিতে বসেছেন। আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যাব, পাঠক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিজেই এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোয় নম্বর দেবেন। তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ।
প্রশ্নগুলো এমন: কেমন আছে দেশের বিচারব্যবস্থা? কেমন আছে নির্বাচন কমিশন? তারা কি স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে? সাংবাদিক-লেখক-গবেষকেরা কি নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে কাজ করার মতো পরিবেশ পাচ্ছেন?
সমাজে কোনো বড় সংঘাত নেই তো? ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। দেশের ডাকসাইটে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সেই ঐক্য কি দেখা যাচ্ছে? বিভাজনের রাজনীতিকে কি সরিয়ে দেওয়া গেছে? সন্দেহ-অবিশ্বাসের রাজনীতি কি আছে, নাকি বিদায় নিয়েছে?
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণ কি সন্তুষ্ট? মব বলুন আর চাপ প্রয়োগের রাজনীতি বলুন, সেগুলো কি জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে?
আপনি কি এমন কিছু লক্ষ করছেন, যেখানে সত্য ও মিথ্যাকে কাছাকাছি রেখে নাগরিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়?
আপনি কি সামাজিক বন্ধন ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করেছেন? আউল-বাউলের দেশে গানবাজনা কি হুমকির মুখে পড়েছে? ‘তৌহিদি জনতা’ আদতে কাদের কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে? সরকার কি এদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তেজনা ছড়ায় যারা, তাদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে, আর যারা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এ রকম কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?
সমষ্টিগত শক্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনো বাঁশিওয়ালা কি বাঁশি বাজাচ্ছে? আপনি কি লক্ষ করেছেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নয়, নানাভাবে যাঁরা সংখ্যালঘু, তাঁদের মারধর করে সংখ্যাগুরু অংশ আখের গুছিয়ে নিচ্ছে?
আপনি কি বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছেন, যাতে তাদের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণ একটি ‘সোনার বাংলা’য় বসবাস করবে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে লিখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করুন। যোগফল মেলান, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
আপনি তখন বুঝতে পারবেন, গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধিতার জায়গায় সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে তরুণেরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে, সে তরুণদের প্রতীক্ষায় আছি।

চট্টগ্রাম নগরীর হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এখনো সবুজের দেখা মেলে তার মধ্যে অন্যতম সিআরবি। সিআরবি মানে হলো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর এই সিআরবি। টাইগার পাস এলাকার এই সিআরবিতে রয়েছে বহু শতবর্ষী বৃক্ষ
১৪ জুলাই ২০২১
৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেলাম ঢাকা থেকে কাতারের দোহা। এরপর আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বিশাল এয়ারক্রাফটে ৩৮ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে দোহা থেকে উড়াল দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশে। লম্বা পথ, ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের একটানা চলা।
৪ মিনিট আগে
এই সম্পাদকীয়টি যখন লেখা হচ্ছে, তখনো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ফাঁকে রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে বসা দুর্বৃত্ত।
১৪ মিনিট আগে
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১ দিন আগে