Ajker Patrika

রাজা কংসনারায়ণের দুর্গাপূজা, যার শুরু সাড়ে ৫০০ বছর আগে

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৫৭
রাজা কংসনারায়ণের দুর্গাপূজা, যার শুরু সাড়ে ৫০০ বছর আগে

মহাষষ্ঠীর সকালে ঢাকি সুকেশ স্যানাল ঢাকে কাঠির বাড়ি দিয়েই যাচ্ছেন। পূজার জোগালি কানাই হালদার, আর পুরোহিত গোপাল চক্রবর্তী এটা-ওটা গোছাতে ভীষণ ব্যস্ত। কথা বলতে চাইলে করজোড় করে পুরোহিত বললেন, ‘এখন পারব না যে দাদা। ষষ্ঠী কল্পরাম্ভের বেলা বয়ে যাচ্ছে। এখনই পুজো করতে হবে।’ 

যে মণ্ডপ নিয়ে কথা, সেটির নাম শ্রীশ্রী গোবিন্দ ও দুর্গামাতা মন্দির। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে এই মন্দির। এটি এখন বাগমারার একটি পৌর এলাকা। রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরের এই তাহেরপুরের আদিনাম ছিল ‘তাহিরপুর’। আজ থেকে ৫৪০ বছর আগে এখান থেকেই সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু বলে ধারণা করা হয়। সে আমলে রাজা কংস নারায়ণ রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ করে রাজবাড়িতে ওই আয়োজন করেছিলেন। এখনকার আমলে ওই টাকার পরিমাণ ৩০০ কোটিরও বেশি। একবার দুর্গোৎসবের আয়োজনে কোনো মণ্ডপে এত টাকা খরচ আর হয়েছে বলে জানা যায়নি। সম্রাট আকবরের আমলে বাংলার ‘বারো ভূঁইয়া’-এর এক ভূঁইয়া রাজা কংসনারায়ণ রায় ব্যয় করেছিলেন এ অর্থ। 

এর আগে মহাশক্তির আরাধনা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করে কোনো রাজবাড়িতে দুর্গাপূজার প্রথম আয়োজনটা সম্ভবত করেছিলেন রাজা কংসনারায়ণ। তাঁর সৌজন্যে মানুষ দেখেছিল অকালবোধনে আধুনিক দুর্গাপূজা। 

তাহিরপুরের রাজবংশ ছিল বাংলার প্রাচীন রাজবংশগুলোর অন্যতম। এই রাজবংশের আদিপুরুষ মৌন ভট্ট। বংশের শ্রেষ্ঠ সামন্ত ছিলেন কংসনারায়ণ রায়। মোগল-পূর্ব সময়ে চট্টগ্রামের মগ দমন, ফৌজদারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজা টোডরমলের সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালান করেন কংসনারায়ণ। তিনি ভেবেছিলেন, সম্রাট তাঁকে বাংলার সুবেদার করবেন। কিন্তু সম্রাট তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি মনঃক্ষুণ্ন হয়ে বয়স বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে সে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেন সবিনয়ে। 

কংসনারায়ণ এমন কিছু করতে চাইলেন, যার জন্য হিন্দুসমাজ তাঁকে আজীবন মনে রাখবে। রাজা পণ্ডিতদের ডাকলেন রাজসভায়। জানালেন, তিনি আয়োজন করতে চান অশ্বমেধ যজ্ঞ। পণ্ডিতেরা রাজার এ ইচ্ছে নাকচ করে দিলেন প্রথমেই। তাঁরা বললেন, কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞের বিধান শাস্ত্রে নেই। এ কথা শুনে রাজার তো মন খারাপ। 

ঠিক তখনই পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী দিলেন দুর্গাপূজার পরামর্শ। কারণ, দেবী দুর্গতিনাশিনীর পূজা নিজেই এক মহাযজ্ঞ। এতে সমস্ত মহাযজ্ঞের সমান ফল পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, যেকোনো যুগে যে কেউ করতে পারে এই পূজা। পরামর্শ পছন্দ হলো রাজার। তিনি আদেশ করলেন, এই শরতেই যেন আয়োজন হয় এ উৎসবের। কথামতো কাজ। সব প্রস্তুতি শেষ। 

মহাসমারোহে হলো দুর্গোৎসব। ষোলো শতকের সে উৎসবে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ, মতান্তরে ৯ লাখ টাকা। বিরাট ওই উৎসব হয়েছিল রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে দেখে গেল এই উৎসব। রাজা কংসনারায়ণের প্রপৌত্র (চতুর্থ পুরুষ) লক্ষ্মীনারায়ণের সময় সুবেদার শাহ সুজার সৈন্যদল বারণই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের রাজা কংসনারায়ণের প্রসাদটি ধ্বংস করে দেয়। 

লক্ষ্মীনারায়ণ পরবর্তী সময়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবের অনুকম্পায় নদীর পশ্চিম তীরে লাভ করেন একটি পরগনা। তিনি সেখানে একটি রাজবাড়িও নির্মাণ করেন। ১৮৬২ সালে পরবর্তী রাজা বীরেশ্বর রায়ের স্ত্রী জয়সুন্দরী দেবী নির্মাণ করেন দুর্গামন্দির। এটি এখনো আছে আগের মতো। শুধু ভেতরে টাইলস লাগানো হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার কিছু আগে এখানেই পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পুরোহিত। 

রাজা কংসনারায়ণ রায়ের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন মন্দিরটির নতুন ফলকমন্দিরেই পাওয়া গেল কমিটির সাধারণ সম্পাদক চিরঞ্জীব রায়কে। তাঁর দাদা রসিক রায় ছিলেন শেষ রাজার ম্যানেজার। চিরঞ্জীব রায় জানালেন, তাহিরপুর (বর্তমানে তাহেরপুর) রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন শিব শেখরেশ্বর রায়। তাঁর বাবা শশী শেখরেশ্বর রায়ের সময় থেকেই রাজবংশের লোকেরা কলকাতায় তৈরি করেন তাঁদের নতুন ঠিকানা। 

এরপর তাঁরা শুধু বছরে একবার পূজার সময় আসতেন। ১৯২৭ সালে তাঁরা শেষবারের মতো তাহিরপুরে এসেছিলেন। একসময় তাঁরাও যাতায়াত বন্ধ করে দেন। পরে ১৯৬৭ সালে রাজবাড়িটি তাহিরপুর ডিগ্রি কলেজে পরিণত হয়। তবে ১৯৮৩ সালের দিকে এসে আবারও কলেজের পাশের ওই মন্দিরে পূজা-অর্চনা শুরু হয়। মন্দিরের ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই হাতের ডানে পড়বে শিবমন্দির। তারপর গোবিন্দ মন্দির, এরপর দুর্গামন্দির। চিরঞ্জীবের ধারণা, দুর্গামন্দিরের চেয়েও পুরোনো শিবমন্দির ও গোবিন্দ মন্দির। এসবই এক ঐতিহ্যের স্মারক। 

চিরঞ্জীব রায় বলেন, ‘ইতিহাস কখনো মুছে যাওয়ার নয়। এখান থেকেই দুর্গাপূজা সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। তাই এটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। তার আগে মন্দিরের চারপাশে যে রাজবংশের সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে, তা উদ্ধার করা দরকার। কারণ, এগুলো তো মন্দিরেরই অংশ। সেগুলো ছাড়া মন্দিরটির অঙ্গহানি হয়ে আছে।’ 

মন্দিরের ভেতর ঢুকে দেখা গেল, কয়েকজন তরুণী গাঁদা ফুলের মালা গাঁথতে ব্যস্ত। কয়েকজন নারী ব্যস্ত ধোয়া-মোছার কাজে। কানাই হালদার পূজার জোগালি হিসেবে এ মন্দিরে কাজ করছেন ২৪ বছর ধরে। তিনি বললেন, ‘এখনো দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। গত বছর করোনার কারণে ভক্তদের মুখে আনন্দ দেখিনি। এবার আনন্দ হবে।’ 

মন্দিরটিতে এখন আর মাটির প্রতিমায় দুর্গাপূজা হয় না। প্রতিমা বিসর্জনও করা হয় না। ২০১৮ সালে স্থানীয় সাংসদ এনামুল হক প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে অষ্টধাতুর প্রতিমা বানিয়ে দিয়েছেন। এই মন্দিরে এখন রাজা নেই। নেই রাজাদের বংশধরেরাও। কিন্তু এই মন্দিরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের উৎপত্তির ইতিহাস। যে ইতিহাস আর কখনো পুরোনো হওয়ার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত