Ajker Patrika

হজের খরচ কমতে পারে অর্ধলক্ষ, প্যাকেজ ঘোষণা বুধবার

  • হজ প্যাকেজ ঘোষণা কাল বুধবার, থাকছে না বিশেষ প্যাকেজ।
  • রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ আর কমানো যাচ্ছে না।
  • গত বছর রিয়াল ছিল ২৯.৭৪ টাকা, এবার ৩২ টাকা।
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে হজযাত্রার খরচ কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। কিন্তু টাকার বিপরীতে সৌদি রিয়ালের দর বেড়ে যাওয়ায় হজের খরচ খুব একটা কমছে না। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার মতো হজের খরচ কমতে পারে বলে ধারণা করছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা আছে আগামীকাল বুধবার। সচিবালয়ে এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এই সভা থেকেই আগামী বছরের হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে খরচ কত কমবে, তা আগামীকালের নির্বাহী কমিটির সভায় আগে বলা যাচ্ছে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমানভাড়া কমিয়ে এবং হজযাত্রীদের সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করে এবার হজের খরচ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোনো বিশেষ প্যাকেজ না দিয়ে হজের সাধারণ দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।

২০২৪ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজ খরচ হয়েছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের খরচ ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিল, হজ প্যাকেজে সবার প্রত্যাশা সেভাবে পূরণ হবে না। সরকার হজের খরচ কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু টাকার মান কমে গিয়ে সৌদি রিয়ালের মান বেড়ে যাওয়ায় হজের খরচ খুব বেশি কমানো যাচ্ছে না।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের হজের প্যাকেজ নির্ধারণের সময় ২৯.৭৪ টাকা সৌদি রিয়াল ধরে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার তা ৩২ টাকার বেশি ধরে হিসাব করতে হচ্ছে। সৌদি সরকারের নির্ধারিত ফি রিয়ালে হিসাব করে দিতে হবে বলে এবার হজযাত্রীদের সৌদি অংশের খরচ বাড়বে। এই খরচ না বাড়লে হজের খরচ পাঁচ লাখের মধ্যেই নির্ধারণ করা যেত।

২০২৪ সালে হজে যাওয়ার বিমানভাড়া ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। এবার তা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিমানভাড়া আরেকটু কমানোর চেষ্টা করছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, বিমানভাড়া গতবারের থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার হাজার টাকা কমাতে চায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হজযাত্রীদের টাকা থেকে ট্যাক্স-ভ্যাট কাটা হয়। বিমানবন্দর ব্যবহার করার কারণেও হজযাত্রীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়। এসব মওকুফ করলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা কম দিতে হবে হজযাত্রীদের। সঙ্গে বিমানভাড়ার খরচ কমবে। সব মিলিয়ে হজের খরচ গতবারের থেকে ৫০ হাজার টাকা কমানোর চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়।

একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বছর দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি প্যাকেজ মসজিদুল হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িসহ একটি। অন্যটি হবে আজিজিয়া প্যাকেজ। এবার বিশেষ কোনো প্যাকেজ থাকবে না।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সরকারিভাবে ১ হাজার ৯৮৮ জন এবং বেসরকারিভাবে ৬৩ হাজার ৮৩৩ জন প্রাক্-নিবন্ধন করেছেন। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। আগামী বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর নিবন্ধনের গতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি। আশা করছি, গতবারের থেকে হজের কোটা কম ফাঁকা থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলায় শনাক্ত ৩১, গ্রেপ্তার ৯

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কমপক্ষে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা ও মো. শফিকুল ইসলাম।

এ ছাড়া পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত কাশেম ফারুক বগুড়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র এবং ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। মো. সাইদুর রহমান ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।

শেরপুর জেলার বাসিন্দা গ্রেপ্তারকৃত রাকিব হোসেন প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হয়েছেন। তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে পোস্ট করা হয়। তিনি তাঁর আইডি থেকে উসকানিমূলক পোস্টও করেন।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাইমকে এর আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় একটি ঘটনায় লুট হওয়া ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাইম স্বীকার করেছেন, তিনি মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছেন। লুট করা টাকা দিয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কিনেছিলেন, যা ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

ঢাকার কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য আইনে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃত মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও  উদীচী কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবন এবং ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন— মো. কাশেম ফারুকি, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম। শনাক্তকৃত বাকি সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে একদল লোক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে যায়। তারা প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভবনের সামনে অগ্নিসংযোগও করা হয়। এর পরপরই ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ডেইলি স্টার ভবনে অগ্নিসংযোগের পর ভেতরে ৩০-৩৫ জন সাংবাদিক ও কর্মী আটকা পড়েন।

পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলার পরদিন ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তোপখানা সড়কে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

গতকালের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

এ ছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে

  • ৫৪ শতাংশ স্কুলে নেই প্রতিবন্ধীবান্ধব পানির পয়েন্ট
  • নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে ৩৩ শতাংশ স্কুল
  • ৭১.৪ শতাংশ স্কুলে কোনো উন্নত শৌচাগার নেই
  • পানি-সাবানের ব্যবস্থা রয়েছে ৫% স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের ৪৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। ৯৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্থা। ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে কোনো উন্নত শৌচাগারও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে গতকাল রোববার আয়োজিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি (ওআইসি) ফারুক আদরিয়ান ডুমন।

জরিপের তথ্য বলছে, দেশের মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত শৌচাগার রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলোর মান ও ব্যবহারযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে শৌচাগার রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে, এমন বিদ্যালয়ের হার ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়; মাত্র ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড পূরণ করছে।

জরিপে বলা হয়, উন্নত পানির উৎসে প্রবেশগম্যতার দিক থেকে দেশের বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসে প্রবেশাধিকার আছে। মৌলিক পানি সেবার মানদণ্ড; অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের ভেতরে উন্নত পানির উৎস থাকতে হবে—এই শর্ত পূরণ করতে পেরেছে এমন বিদ্যালয়ের হার ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী পানির সুবিধার চিত্র হতাশাজনক। দেশের ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীবান্ধব উন্নত পানির পয়েন্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। জরিপে উঠে এসেছে, ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ অত্যন্ত সীমিত। মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ খাতে নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে।

হাত ধোয়ার সুবিধা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে থাকলেও পানি ও সাবানের অভাবে মৌলিক সেবার মানদণ্ড পূরণ করছে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয় এবং মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

নারীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বড় ঘাটতির চিত্র পাওয়া গেছে। মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে কিশোরীদের জন্য পৃথক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার রয়েছে। আর মাসিককালীন মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, এমন বিদ্যালয়ের হার মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষায় লৈঙ্গিকভিত্তিক বৈষম্য আরও তীব্র করে তুলছে।

জরিপে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য–উভয় খাতের ওয়াশ অবকাঠামোই ঝুঁকিপূর্ণ। গত এক বছরে ২৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ জলবায়ু সহনশীল ওয়াশ ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতনতা ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত সীমিত।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে সীমিত সম্পদের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’–এসডিজির এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়নে পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিতে বাংলাদেশের অর্জন অনেক দেশের তুলনায় ভালো। এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কার্যক্রম প্রভাবিত করতে মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে: গুম কমিশন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’র নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। এসব তথ্য কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং কমিশনের মতে, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলকে ঘিরে মনগড়া তথ্য যুক্ত করে এ ধরনের বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য কমিশনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি বা প্রভাবিত করা।

আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) গুমসংক্রান্ত কমিশনের সচিব কুদরত-এ-ইলাহী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’-এর নাম জড়িয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, যা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সংগতি রেখে মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সংযুক্ত করে কমিশন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, তা মূলত কমিশনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি বা প্রভাবিত করার হীন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, কমিশনের বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমে খন্দকার রাকিব নামের কোনো ব্যক্তির উপস্থিতির যে দাবি প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। ওই ব্যক্তি কখনোই গুমসংক্রান্ত কমিশনে কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না এবং কমিশনের কোনো জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমেও তাঁর উপস্থিতি ছিল না।

কমিশনের মতে, এ ধরনের অস্পষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের মাধ্যমে একটি মহল কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে কমিশন তার অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক সব নাগরিকের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এই অবস্থায় দেশবাসীকে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উসকানিমূলক তথ্যের প্রতি কর্ণপাত না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত