Ajker Patrika

আপসকামিতার পথেই কি হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার

আবু তাহের খান
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ৫৬
আপসকামিতার পথেই কি হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার

সংবাদপত্র-সম্পাদকদের সঙ্গে গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর সরকারের কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়লে তা ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাঁর এ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত দুই মাসের কর্মকাণ্ডের কিছু কিছু দিক নিয়ে আশা-নিরাশা মেশানো কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হলো। উপস্থাপিত বক্তব্যকে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করলে সেটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাদের কর্মকাণ্ডের দূরত্ব কমিয়ে আনতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত সময়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যকার একটি বড় সাফল্য এই যে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বস্তুত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, সুখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আর এ ধরনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হওয়ার ফলে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেই যে শুধু বাড়তি সুবিধা পাবে তাই নয়, একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বৈদেশিক সহায়তালাভ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধাভোগের সুযোগ পাবে বলে আশা করা যায়।

কিন্তু কথা হচ্ছে, এসব সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি উপযুক্ত দক্ষতা ও পদ্ধতিগত সাবলীলতা নিয়ে প্রস্তুত আছে? মোটেও না। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে যত ইতিবাচক ধারণাই তৈরি হোক না কেন, সে ধারণার সুফল আমলাতন্ত্রনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।

অবশ্য এরপরও সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া কিছু বিষয়ের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভের দায়ে অভিযুক্ত ৫৭ বাংলাদেশি কর্মীকে মুক্ত করে ইউএই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার, মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে ১৮ হাজার শ্রমিক নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।

তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে আমরা তাদের গ্রহণ করব। অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন যে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়, যা এ দেশের সাধারণ মানুষেরও অভিব্যক্তি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত উপরিউক্ত অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এর বিপরীতে আশাভঙ্গের যেসব কারণ ঘটছে, সেগুলোর ব্যাপ্তি ও গভীরতা বিবেচনায় নিলে চলমান পরিস্থিতিকে কিছুটা হলেও হতাশাব্যঞ্জক বলতে হবে বৈকি! মানুষ আশা করেছিল, নতুন সরকারের আমলে সাধারণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম কমে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কায়েমি স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল পুরো বাজারব্যবস্থা, যা বর্তমান সরকারের আমলে আর থাকার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চরম হতাশার সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে এ সরকারের আমলেও নিত্যপণ্যের মূল্য একরত্তি পরিমাণও হ্রাস পায়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও বেড়ে গেছে। দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকার আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পরও তা না কমায় ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষেত্রে সরকার বিন্দুমাত্র সফল হতে পারেনি। আর নিত্যপণ্যের পরিবহনব্যবস্থায় সরকার সমর্থক টাউট-মাস্তান ও পুলিশের যে চাঁদাবাজি, সেটিও বন্ধ হয়নি—তা বদল হয়েছে মাত্র। এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে ব্যক্তির পরিচয় অপরিবর্তিতই থেকে গেছে।

কোনোই সন্দেহ নেই যে ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম কর্তৃক বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যা কমবেশি এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু অতি ছোট্ট ঘটনাকে উপলক্ষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ওপর যেভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এসবেরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট রাজধানীতে অহিংস সমাবেশ করে যখন অভিযোগ করে যে ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে’, তখন মানতেই হবে যে সমস্যা কিছু পরিসরে হলেও নতুন করে তৈরি হয়েছে বৈকি! একই সমাবেশ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা রক্ষায় মাদ্রাসাছাত্রদের নামিয়ে দেওয়া থেকে প্রতীয়মান হয় যে সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তারা বলেছে, ‘পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জোটের এসব বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে আসবে বলে আশা রাখি।

উল্লিখিত ধরনের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব লক্ষ করা গেছে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়েও। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিবর্তিত পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান পাঠ্যক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির দুজন খ্যাতিমান সদস্যের ব্যাপারে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করায় পরে ওই কমিটি বাতিল করা হয়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দাবির মুখে ওই কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে সরকারের নতজানু ও আপসকামী মনোভাব হিসেবেই দেখছে। বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দেশের নানা স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, ১২২ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে এর তীব্র নিন্দা জানান এবং সচেতন মহলে এ নিয়ে এখনো ক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।

অন্য আরও কিছু কিছু বিষয়েও সরকারের আচরণ ও কর্মকাণ্ড ক্রমেই নানা বিতর্ক তৈরি করছে, যেসব কর্মকাণ্ডের সবই হয়তো সরকারের ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসবের নীতিগত দায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ওপর গিয়ে বর্তাচ্ছে। একাধিক রদবদল ঘটিয়ে জনপ্রশাসনসচিব পদে যাঁকে বসানো হলো, পদে বসতে না বসতেই তাঁর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল।

বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এরই মধ্যে উল্লিখিত দুর্নীতি থেকে জনপ্রশাসনসচিবকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যে ধরনের বিবৃতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পক্ষে দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, অন্তর্বর্তী সরকার কি দুর্নীতিবাজকে রক্ষার এসব কায়েমি আয়োজন-ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেবে, নাকি তাঁর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে? অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ভয় হয়, শেষ পর্যন্ত জনপ্রশাসনসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সহসাই না শূন্যে মিলিয়ে যায়!

মোটকথা, যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল, তা এখন কিছুটা হলেও ম্লান হতে বসেছে। কিন্তু এ সরকারকে মনে রাখতে হবে যে তাদের পক্ষে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমুদয় আকাঙ্ক্ষাই ব্যর্থ হয়ে যাওয়া।

এমতাবস্থায় ব্যর্থতার ঝুঁকি মোকাবিলা করে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই আপসকামিতার পথ পরিহার করে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে চারপাশ ঘিরে থাকাদের কথা শুনলেই শুধু হবে না, প্রান্তিক যে মানুষেরা, তাদের বক্তব্য কখনো ক্ষমতার কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, তাদের নীরব কান্নাগুলোও শুনতে হবে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত