কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি। তাঁদের কান ধরিয়ে ওঠবস ও মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. ফারুকুল ইসলাম নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগী আরোহী ইসলাম (তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি) বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মছিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার মো. ফারুকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৫–৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ভুক্তভোগী ও সাক্ষী হিসেবে মামলার বাদীসহ সাত জনের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।
থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, আমি আরোহী ইসলাম (২০) ও অন্যান্য ভুক্তভোগী/সাক্ষীরা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের লোক। আমি ও আমার সঙ্গে অন্যান্য সাক্ষী/ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্রতিদিনের মতো রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধ্যা বিচ এলাকায় সৈকতে ঘুরতে যাই।
আসামিরা অত্যন্ত খারাপ–বখাটে। ১ নং আসামি মো. ফারুকুল ইসলাম নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমাদের ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার সময় পথরোধ করে জিজ্ঞেস করে যে, আমরা সি বিচ এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াই এবং মানুষকে হয়রানি করি। এই বলে আমাদের গালিগালাজ করতে থাকে।
একপর্যায়ে ১ নং আসামি হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমাকে এবং প্রিয়া মনিকে উপর্যুপরি আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। আমি এর প্রতিবাদ করলে ২ নং আসামি আমার ডান হাতে বাহুতে সজোরে আঘাত করে হাড় ভেঙে দেয়।
আমার সঙ্গে থাকা প্রিয়া মনি–২ ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর পেটে লাথি মেরে জখম করে। ৭ নং সাক্ষী খুশির পরনে থাকা কাপড়চোপড় টানা হিঁচড়ে করে চরম শ্লীলতাহানি করে। বিবাদীদের এই ঘটনা প্রিয়া মনি–১ ভিডিও করতে গেলে ২ নং আসামি ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় তাঁর ব্যবহৃত স্মার্টফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ১ নং আসামি সাক্ষী/ভুক্তভোগী প্রিয়া মনি–১–কে ঘটনাস্থলে কান ধরে ওঠবস করায়। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
বিবাদীদের আঘাতে আমরা চিৎকার করে মোবাইলটি ফেরত চাইলে বিবাদীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ভবিষ্যতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় আবার দেখলে বা এই ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রকার মামলা মোকদ্দমা করলে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
আসামিরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সুগন্ধ্যা বিচ এলাকায় গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে এমন জখন্যতম অপরাধ করে। ওই ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় অসংখ্য নাগরিক এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
আসামিদের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ওই ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ব্যবসায়ী সমিতিসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থানায় এসে আসামিদের নামা–ঠিকানা সংগ্রহসহ এজাহার করতে দেরি হলো।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে