Ajker Patrika

‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ

ড. এম জসিম আলী চৌধুরী
‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সদ্য ভূমিষ্ঠ রাষ্ট্রের সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং স্বাধীনতার সরকারি ঘোষণাপত্র (প্রকলেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স) প্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় গণতন্ত্র, জনগণের ক্ষমতায়ন ও আইনের শাসনের অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। অঙ্গীকারটি কেবল কথার কথা ছিল না।

এর পেছনে দেশের স্বাধীনতাকামী নেতৃত্বের গভীর সংকল্প ও সদিচ্ছা ছিল। দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার স্বার্থে ওই সময় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাসের ভেতরেই তারা সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফেরত যায় (অন্তর্বর্তী সংবিধান আদেশ, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২)।

রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে অধিকতর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা সময় নিতে পারতেন। নতুন দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়নের জন্য অপেক্ষা করার অজুহাত দিতে পারতেন। ইচ্ছের সততায় (সিনসিয়ারিটি অব ইনটেনশন) তাঁরা সেটি করেননি। অন্তর্বর্তী সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীশাসিত সংসদীয় সরকারের চেতনা, আবহ ও কাঠামোর সুস্পষ্ট চিত্রায়ণ ছিল। এটিই ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত সংবিধানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রকাঠামোটি মোটা দাগে এমন—ব্রিটিশ রাজার আদলে দেশের প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং জনগণের রায়ে নির্বাচিত ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা নিয়ে দেশের নির্বাহী বিভাগ গঠিত (সংবিধানের চতুর্থ ভাগ)। জনগণের রায়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে দেওয়া হয়েছে আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের প্রাত্যহিক ও চূড়ান্ত জবাবদিহির দায়িত্ব (সংবিধানের পঞ্চম ভাগ)।

রাষ্ট্রীয় জীবনে সংবিধানের বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের আইনকানুন প্রয়োগে সরকারের ক্ষমতা চর্চার লাগাম টানা, জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দায়িত্ব পড়েছে বিচার বিভাগের ওপর (সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ)। দেশের তৃণমূলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানের নির্বাহী বিভাগ অংশে উল্লেখ করা হলেও সেখানে কেন্দ্রের বা আমলাতন্ত্রের শাসনের বদলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসনের নিশ্চয়তা দিতে আলাদা অধ্যায় যোগ করা হয়েছে (সংবিধানের চতুর্থ ভাগ, তৃতীয় অধ্যায়)।

সরকার, সংসদ ও আদালতের বাইরে একেবারে আলাদা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে তুলে ধরা হয়েছে (সংবিধানের সপ্তম ভাগ)। সংবিধানের অষ্টম ভাগে আলাদা করে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়কে। সংবিধানের নবম ভাগে দেশের জনপ্রশাসনে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও মৌলিক কিছু সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমলাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি কর্মকমিশনকেও আলাদা করে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে (নবম ভাগ, দ্বিতীয় অধ্যায়)। সংবিধানে সরকার, সংসদ ও আদালতের মতো বড় বড় তিনটি প্রতিষ্ঠানের পাশে এ চারটি তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানকে এমন বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করাটা অর্থহীন কিছু নয়। সন্দেহ নেই, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা দেশের তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গণতান্ত্রিক শাসন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি বাছাই, রাষ্ট্রীয় তহবিলের জবাবদিহি এবং জনপ্রশাসন তথা আমলাতন্ত্রের রাজনীতি ও দলীয়করণমুক্ত থাকাকে এই পুরো কাঠামোর ভিত্তি বলে মেনেছেন।

সংবিধান প্রণয়নের ৫২ বছর পর পেছন ফিরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোটিকে দেখলে আমাদের কিছুটা বিষণ্ণতা গ্রাস করে। ৫০ বছরের এ যাত্রায় এ কাঠামোর অনেক বাঁকবদল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। আমরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সরকার, জাতীয় দলকেন্দ্রিক রাষ্ট্রপতির সরকার, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রপতির সরকার, নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত সরকার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতামূলকভাবে কর্তৃত্ববাদী সংসদীয় সরকারব্যবস্থার ভেতর দিয়ে গেছি। এত সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা যে রাষ্ট্রকাঠামো বাতলে গেছেন, সেটির কঙ্কালসার অবয়বটিই কেবল অবশিষ্ট আছে। কাঠামোটির অন্তর্গত চেতনা, লক্ষ্য ও আদর্শ হারিয়ে যেতে বসেছে।

মোটা দাগে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সরকারগুলো প্রতিষ্ঠান বা সংবিধানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার চেয়ে ব্যক্তি বা দলীয় প্রধানকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দেশের একাডেমিক মহলে একটি মৃদু সমালোচনা আছে যে সংবিধানপ্রণেতারা সংসদীয়ব্যবস্থার ভেতর সরকারপ্রধানের ক্ষমতা কিছুটা বেশি দিয়েছিলেন। গভীর বিবেচনায় এ সমালোচনাটিকে কিছুটা অপরিপক্ব বলে মনে হয়। ১৯৭০ সালের এক পাবলিক লেকচারে লর্ড হেইলসাম ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থাকে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

এ ব্যবস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে স্বীকার করেই সাজানো। এখানে নিয়ন্ত্রণ আসে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ চাপ, সংসদের বিরোধী দল, শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র স্থানীয় সরকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী গণমাধ্যম ও জবাবদিহি নিশ্চিতকারী অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। আমাদের মতো উপনিবেশ-পরবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে জবাবদিহির এ ব্যবস্থাগুলো অনুপস্থিত থাকায় বা শক্তিশালী না হওয়ায় ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থার প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিকতাটিকে অতিরিক্ত চোখে পড়ে।

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় কখনো কখনো নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা গেলেও সেটি সংহত, নিরবচ্ছিন্ন ও কার্যকর হওয়ার আলামত সুস্পষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারে কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠপর্যায়ের আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ জোরালো। গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপপ্রবণতা। এতগুলো ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ দেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে অনেকটাই জিম্মি করে ফেলেছে। আমলাতন্ত্রের রাজনীতি-নিরপেক্ষ পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার মতো পরিবেশ, পরিস্থিতি বা এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কখনোই দেখা যায়নি। স্বাধীন স্বতন্ত্র সরকারি কর্ম কমিশনও দৃশ্যমান হয়নি।

বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আইনসভা সে অর্থে সরকারের জবাবদিহির জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি। প্রায় সবাই এ জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে দায়ী করলেও সংসদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব-প্রতিপত্তি কেবল সংসদ সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না পারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেই মনে হয়। আসল সমস্যাটি আমাদের রাজনৈতিক দলব্যবস্থার ভেতর থেকে আসে, যেখানে গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তৃণমূলের পছন্দে দলের মনোনয়ন লাভ বা নেতৃত্বের স্থানে উঠে আসার সুযোগ অনুপস্থিত। ফলে সংসদ সদস্যের পক্ষে দলের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের বিরোধিতা করা বা সরকারের নীতির বিরোধিতা করা অনেকটাই রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। ব্যাপারটি শুধু সংসদে ভোট দেওয়াতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সংসদের প্রশ্নোত্তর, সংসদীয় বিতর্ক বা সংসদীয় কমিটির জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ডের পুরোটাতেই প্রভাব ফেলে।

জনপ্রিয় ভাষ্যে দেশের বিচার বিভাগকে ‘জনগণের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল’ বলা হলেও সামরিক শাসন এবং অনেক রাজনৈতিক সরকারের সময়ও বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগকে খুব বেশি নাড়া দিতে পারেনি। উচ্চ আদালতের নিয়োগপ্রক্রিয়ার অতি রাজনৈতিকীকরণের প্রবণতা প্রায়ই দৃশ্যমান ছিল। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ৬ অনুচ্ছেদে সংবিধানপ্রণেতারা স্পষ্টভাবে অতিসত্বর নিম্ন আদালত পৃথক্‌করণের তাগিদ দিয়েছিলেন। অথচ কাজটি শুরু করতে আমাদের প্রায় ৩৫ বছর লেগেছে (২০০৭) এবং এর পরের ১৮ বছরেও আমরা কাজটি পুরোপুরি সমাধা করতে পারিনি।

সন্দেহ নেই যে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং এতে জনগণের আস্থা ফেরার আশু কোনো লক্ষণ নেই। অনেকে এটার জন্য দলগুলোর আদর্শিক অবস্থানের চরম মেরুকরণ, এর ফলে সৃষ্ট প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার রাজনীতিকে দায়ী করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে দলব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীনতার সমস্যা বলে মনে করি। আন্তদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জারি থাকলে আন্তদলীয় প্রতিযোগিতা অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভ বা হারানোকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতো।

মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়কে সংবিধানপ্রণেতারা যেভাবে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন, সেটি আদতে হয়নি। এটি সরকার প্রশাসনের ভেতর একেবারে আত্তীকৃত হয়ে গেছে। আলাদা করে জনগণের চোখে পড়েনি। আমলাতন্ত্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংসদের নিজস্ব ব্যবস্থা হিসেবে ন্যায়পাল নিয়োগের একটি বিধান (৭৭ অনুচ্ছেদ) সংবিধানপ্রণেতারা দিলেও সেটি এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সময়ে সময়ে আইনের মাধ্যমে কিছু জবাবদিহির প্রতিষ্ঠান (যেমন দুর্নীতি দমন, মানবাধিকার, তথ্য ও নদী কমিশন) আমরা তৈরি করেছি বটে, কিন্তু সেগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে চেয়েছি—এমনটা দাবি করা কঠিন।

যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির শিক্ষক ড. কুমারাসিঙ্গাম দক্ষিণ এশিয়ার সরকারব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর পিএইচডি থিসিসে তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখন প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, তখন ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থাটি একধরনের ‘ইস্টমিনস্টার’ ব্যবস্থায় পর্যবসিত হয়।

কিছুটা হেঁয়ালি করে বলা যেতে পারে, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা সম্ভবত একটি ‘ইস্টমিনস্টার’ ধাতে বেড়ে ওঠা সমাজকে একটি ‘ওয়েস্টমিনস্টার’ ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামো দিতে চেয়েছেন। ফলে বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৈষয়িক উন্নয়ন সূচকের অভাবনীয় বদল হলেও রাষ্ট্রকাঠামোর গোড়ার সংকটে তেমন বদল হয়নি। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত আমরা অনেকটাই ‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ।

লেখক: প্রভাষক, ইউনিভার্সিটি অব হাল, যুক্তরাজ্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত