আলতাফ পারভেজ

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
কিন্তু এসব কি আমরা বছর-বছর দেখতেই থাকব? চলতি ক্ষোভ-বিক্ষোভেরই বা পরিণতি কী? দক্ষিণ এশিয়ার পানি-সংঘাতের পুরো পটভূমি জানা-বোঝা না থাকলে এ রকম ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে পানিপ্রশ্নে ন্যায়সংগত একটা সমাধানের দিকে এগোতে পারতাম না আমরা।
‘দক্ষিণ এশিয়া’ বলতে বর্তমান আলোচনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানকে নিয়ে গঠিত এলাকাকে বোঝানো হচ্ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ এই অঞ্চলে বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার অনেকগুলো দক্ষিণ এশিয়াতেই আছে।
কেবল ঘনবসতি হিসেবেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ পরিচিতি তার দারিদ্র্যের কারণেও। বিশ্বের দরিদ্র জনগণের এক-চতুর্থাংশের বাস এ অঞ্চলেই। এই পুরো অঞ্চলের মধ্যে অনেক সাংস্কৃতিক ঐক্য থাকলেও দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে কম—দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এই হার ২০ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য কম হওয়ার প্রধান রাজনৈতিক কারণ—তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস খুবই দুর্বল। স্বাভাবিকভাবেই এর ছাপ পড়েছে পানির মতো জরুরি প্রসঙ্গেও। পানিও ক্রমে এখানে বিবাদের বিষয় হয়ে উঠছে। কখনো খরায়, কখনো বন্যায় পারস্পরিক ক্ষোভ-বিক্ষোভে থাকতে হয় তাদের।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির চাহিদা ও জোগানেও ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দেশের পানিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাও রূঢ় রূপ নিচ্ছে। ফলে অনেক অঞ্চলে পানিতে ধীরে ধীরে মানুষের অভিগম্যতা কমে আসছে। মোদিজির এ রকম কথা হয়তো অনেকের স্মরণ আছে: ‘rakt aur paani ek saath nahin beh sakta.’ এ রকম ঘোষণা পানিযুদ্ধ বাড়ার কথাই জানায়।
জীবনের জন্য পানি জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ায় এটা বিশেষভাবে জরুরি। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠেরই পেশা কৃষিকাজ, মাছ ধরা ইত্যাদি। পানির সঙ্গে এখানে তাই জড়িয়ে আছে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন। যে কারণে ইতিমধ্যে পানি এখানে ‘নিরাপত্তা ইস্যু’ হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির প্রধান উৎস তিনটি:
ক. হিমালয় ও সংলগ্ন এলাকা থেকে বয়ে আসা নদীর পানি; বরফ গলা পানি। প্রায় ২০টি আন্তর্জাতিক নদী বয়ে চলেছে দক্ষিণ এশিয়া দিয়ে।
খ. বৃষ্টিপাতের পানি।
গ. ভূগর্ভস্থ পানি।
এ রকম সব উৎস নিয়েই কমবেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ার নদীগুলোয় এ মুহূর্তে পানি প্রাপ্তির পরিমাণ কমবেশি ৩ হাজার মিলিয়ন একর ফুট। এর বিরাট অংশই প্রবাহিত ভারতের ওপর দিয়ে। এদিকের দেশগুলোর মধ্যে তার আয়তনই সবচেয়ে বড় ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গকিলোমিটার। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এই প্রবাহে কমবেশি হতে পারে। সেই বিপদের ছাপও সিংহভাগই পড়বে ভারতেই। তবে বাংলাদেশে সেই সংকটের তাপ ও ছাপ পড়বে।
পানির দ্বিতীয় উৎস হিসেবে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া সৌভাগ্যবান। বছরজুড়ে এই অঞ্চলে গড়ে ১ হাজার ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশে। কিন্তু বৃষ্টিপাতের এই পানি ধরে রাখার পর্যাপ্ত কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই মুহূর্তে অনেক পানি যাচ্ছে। তাতে দুঃখ-কষ্টের জন্য হাহাকারও হচ্ছে। কিন্তু এই পানি ধরে রাখার কোনো কাঠামোর কথা কেউ ভাবে না। হয়তো আগামী শুষ্ক মৌসুমেই আমরা আবার পানির জন্য একইভাবে হাহাকার করব।
যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে পানি সংরক্ষণাগার তৈরির হিড়িক পড়েছে—কিন্তু এই অঞ্চলে মাথাপিছু পানি সংরক্ষণ সামর্থ্য খুব কম। গড়ে ১৭৬ কিউবিক মিটার। ফলে নির্ভরতা থেকে যাচ্ছে নদীর পানির প্রাকৃতিক প্রবাহের ওপর। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রাপ্তি কমে যাওয়ায় শেষ বিচারে চাহিদার জোগান চাওয়া হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে।
অত্যধিক জনসংখ্যার খাবারের জোগান দিতে কয়েক দশক আগেই দক্ষিণ এশিয়া সবুজ বিপ্লবের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। পানির সরবরাহ সম্পর্কে সঠিকভাবে অনুমান করা যায় না বলে সেটা এখন বিরাট ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির গুণগত মানও কমছে। রাসায়নিক ও কীটনাশকমিশ্রিত গার্হস্থ্য ময়লা, শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পানিকে কলুষিত করছে। নদীগুলোর মধ্যে গঙ্গায় দূষণ সবচেয়ে বেশি। কেবল ভারতে ১১টি প্রদেশজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে এই নদীতে। ওই দেশের সরকার চেষ্টা করছে দূষণ কমাতে। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় উপলক্ষে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সাত কোটি মানুষ গোসল করতে আসে এই নদীর কয়েকটি জায়গায়—যাদের খাবারের এবং শরীরের উচ্ছিষ্ট তাৎক্ষণিকভাবে নদীতে পড়ে। গঙ্গার এই অবস্থার এক বড় শিকার ভাটির দেশও। কিন্তু বাংলাদেশ কখনো এ প্রসঙ্গটি ভারতের কাছে উত্থাপন করেছে বলে জানা যায় না। গঙ্গার প্রবাহে নির্গত দূষিত বর্জ্যের ১২ শতাংশই শিল্পবর্জ্য। এর দুই ধারে টেক্সটাইল, সিমেন্ট, কাগজ, স্টিল, গ্লাস ইত্যাদি শিল্পের ক্রম আধিক্য নদীটির দূষণ বাড়িয়ে চলেছে।
আসন্ন দিনগুলো নদীগুলোর দূষিত পানি অববাহিকাজুড়ে অনেক চেনা ও অচেনা রোগের যে প্রাদুর্ভাব ঘটাবে, তা প্রায় নিশ্চিত। পাশাপাশি, হরিদ্বার ড্যাম কিংবা ফারাক্কা ব্যারাজের মতো মানবসৃষ্ট কাঠামো গঙ্গার প্রবাহের কী ক্ষতি করেছে, তা দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল আলোচিত। তবে আরও বড় উদ্বেগের বিষয়—গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোয় এখনো শত শত ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয় আছে ভারতীয় আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদেরা। চীনও অভিন্ন নদীগুলোয় এসব করছে। এসব বিষয়ে অববাহিকার মানুষদের মতামতের কোনো জায়গা নেই। পারস্পরিক তথ্যের আদান-প্রদানও এসব বিষয়ে কম।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় লোকসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৭০ কোটি। এ শতাব্দীতে বিশ্বে জনসংখ্যা যা বাড়বে তার ৩০ শতাংশই জন্ম নেবে দক্ষিণ এশিয়ায়। ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে লোকসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২৩০ কোটি। আর জনসংখ্যার আধিক্য মানেই পানির বাড়তি চাহিদা। অপরদিকে পানির সংকট মানেই সংঘাত ও উত্তেজনা। আসন্ন দিনগুলোতে তাই দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত ও উত্তেজনার অন্যতম ইস্যু হবে পানি। অনেক রাজনীতিবিদ এসব ব্যবহার করেই হয়তো ভাগ্য বদলে নেবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ। এই দুই দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনগোষ্ঠীও এই দুই দেশে সর্বোচ্চ—যথাক্রমে ৪৯ ও ৪৮ শতাংশ। ফলে তাদের পানির চাহিদাও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু জনপ্রতি বার্ষিক পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অনেকের চেয়ে পিছিয়ে। এরও কারণ বর্ষার পানি ধরে রাখতে না পারা।
বিশ্বে জনপ্রতি গড়ে পানিসম্পদ আছে ৬ হাজার ২৩৬ কিউবিক মিটার। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রতি পানিসম্পদ ১ হাজার ১৯৯ কিউবিক মিটার। স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যা যত বাড়বে মাথাপিছু পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা তত কমবে এখানে।
বাড়তি জনসংখ্যার সঙ্গে পানিপ্রাপ্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা একটা দুষ্টচক্রের মতো। কারণ বাড়তি জনসংখ্যা মানেই বাড়তি খাদ্যশস্য উৎপাদনের চাপ। আর তার জন্য প্রয়োজন বাড়তি পানি। জনসংখ্যা বাড়লে খানাপর্যায়েও বেশি পানি প্রয়োজন। বাড়তি মানুষের ভোগ চাহিদা মেটাতে যে বাড়তি শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, সেখানেও দরকার হবে বাড়তি পানি। আবার এই সব মানুষের জন্য সভ্যতার চাকা ঘোরাতেও প্রয়োজন বাড়তি বিদ্যুৎ। সে জন্যও চাপ পড়বে পানিসম্পদে।
পানি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সংকটের প্রধান এক ক্ষেত্র হলো এর কৃষিনির্ভরতা এবং পানিনির্ভর কৃষি। এখানে আবাদে ধান অগ্রাধিকার পায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত পানির ৯১ শতাংশ ভোক্তা কৃষি খাত। ফলে পানি এখানে সরাসরি খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এমনকি অনেক এলাকায় পানি থাকা না-থাকার ওপর সেখানকার দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওঠানামা নির্ভর করে। চাষযোগ্য জমির ৪৬ ভাগ এখানে সেচের আওতাভুক্ত। পাকিস্তানে এটা প্রায় ৯৪ শতাংশ। দেশটি প্রধানত একটি নদীর অববাহিকাভিত্তিক। আর বাংলাদেশে সেচের আওতাভুক্ত জমির ৮৬ শতাংশেই ধান আবাদ হয়। কিন্তু কৃষিতে পানির উৎপাদনশীলতা বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক কম। সেচপ্রযুক্তির নিম্নমান পানির অপচয় ও কম উৎপাদনশীলতার বড় এক কারণ। পানি যে সংরক্ষণ করার এবং জমা রাখার জরুরি একটা বিষয় হতে পারে, সেই বোধ এই অঞ্চলে আজও অতিদুর্বল। অথচ সামনের দিনগুলোয় শিল্পেও পানি লাগবে অনেক। কিন্তু কীভাবে সেই প্রয়োজন মেটাব আমরা? এ মাসের বন্যার পানি তো ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে আগামী মাসেই চলে যাবে—তখন কি আমরা পানি বিষয়ে করণীয়গুলোর কথা আদৌ মনে রাখব?
শিল্পে পানি ব্যবহার দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো অনেক কম—পুরো ভোগের মাত্র ২ শতাংশ। তবে দ্রুত এটা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষুধাই অত্যধিক। দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্পে পানি চাহিদার ৮৫ শতাংশ জোগাতে হচ্ছে ভারতের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দেশে পানির তৃতীয় প্রধান ভোক্তা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। এই অঞ্চলে জ্বালানি ব্যবহারের হার বছরে ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে, যদিও চাহিদা বেশি। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো বিদ্যুতের সবচেয়ে সস্তা উৎস। ফলে সেদিকে ঝুঁকছে অনেক দেশ এবং পানির প্রবাহ হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত।
পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিষয়ক ভাবনায় আবহাওয়ার পরিবর্তন এখন বড় এক কালো মেঘ হয়ে উঠছে। পানির দুই প্রধান উৎস—নদীর প্রবাহ এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাত আবহাওয়ার পরিবর্তন দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। প্রধান তিন নদ-নদী—সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ অংশত হিমালয়ের বরফ গলা পানি। এর সঙ্গে বাড়তি বর্ষা যোগ হলে কী ঘটতে পারে, তার নজির আজকের ত্রিপুরা-নোয়াখালী।
মুশকিল হলো, আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে পানির প্রবাহ বাড়লেও বিপদ, কমলেও বিপদ। অতিরিক্ত পানি বা স্বল্প পানি দুটোই কৃষিকে প্রভাবিত করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের প্রধান আশ্রয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন খরা, বন্যা ও লবণাক্ততারূপে স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বলে আমরা শুনছি। তাতে উপকূলীয় মানুষদের বর্তমান বসতি ছাড়তে হতে পারে। এরূপ মানুষের শতকরা হার মালদ্বীপের পরই বাংলাদেশে বেশি। মালদ্বীপে পুরো জনগোষ্ঠীই ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৪৬ শতাংশ। যদিও শিল্পায়ন সীমিত হওয়ার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দক্ষিণ এশিয়ায় সামান্য। কিন্তু নগরায়ণ ও জ্বালানি এবং পরিবহন ইত্যাদির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দ্রুত বাড়বে এই অঞ্চলে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানি-সংকট ক্ষুদ্র হলেও অন্তত একটি কারণ পানির অদক্ষ, অপচয়মূলক ব্যবহার। বিশ্বের এই অঞ্চলের একটি বড় বৈশিষ্ট্য পানি সচরাচর খোদার দান হিসেবেই দেখা হয়। ফলে পানি কম দামে পেতে অভ্যস্ত সবাই। আবার ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানাকে একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির মালিকানা হিসেবেও ধরে নেওয়া হয়। উপরন্তু পানি উত্তোলনে ভর্তুকিও দেওয়া হয়! দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে কৃষির জন্য সেচে কমবেশি বিদ্যুৎ-ভর্তুকি আছে। কৃষিভিত্তিক সমাজে রাজনীতির এক ব্যয়বহুল রক্ষাকবচ এটা।
এইরূপ ভর্তুকির ইতিবাচক ফলের পাশাপাশি নেতিবাচক ফল হলো ভূগর্ভে দূষণ, পানির স্তর নেমে যাওয়া ও লবণাক্ততার বিস্তৃতি। এই অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এরূপ ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া যৌক্তিক হবে কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে ভর্তুকি কৃষকদের জন্য সুখবর হলেও লবণাক্ততা তাঁদের জন্য ধেয়ে আসছে অভিশাপ হিসেবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওই বিভাগের ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭০ হেক্টরই অতি লবণাক্ত। এসব জমিতে লবণের পরিমাণ সময় বিশেষে ১৬ থেকে ২৮ দশমিক ৫ ডেসিসিমেন (প্রতি মিটার পানিতে লবণের পরিমাণ)। ধান চাষে লবণের সহনশীলতা মাত্র ৪ দশমিক ১ থেকে ৮ ডেসিসিমেন। সবজি চাষে মাত্র ২ থেকে ৪ ডেসিসিমেন।
এই ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা দেখেছেন, নদী যেখানে পানিশূন্য, সেখানেই লবণাক্ততার প্রকোপ বেশি। কারণ গ্রীষ্মে আবাদের জন্য সেখানে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে চাষিদের। অথচ অতীতে বরিশাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নদীবিধৌত জেলা হিসেবে চিহ্নিত ছিল।
বিশ্বে অঞ্চলগতভাবে দক্ষিণ এশিয়াতেই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বেশি এবং তা নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন বা কর্তৃপক্ষ নেই, যদিও এ অঞ্চলের দেশগুলোয় পানিসম্পদকেন্দ্রিক মন্ত্রণালয় রয়েছে। কোনো কোনো দেশে পানি বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়েরও বিস্তর এখতিয়ার আছে। যেমন বাংলাদেশ। এ রকম দ্বৈততায় পানিকেন্দ্রিক শাসনকাঠামো কোনো সুনির্দিষ্ট রূপ পায়নি। সেটা আরেক সমস্যা।
এ অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনার আরেকটি দুর্বল দিক হলো পানি সংরক্ষণের অবকাঠামো কম থাকা; যা গত লেখায় আলাপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বন্যার সময় দেশটিতে ৩৫ মিলিয়ন একর ফুট পানি আরব সাগরে চলে যায়। বাংলাদেশেও বর্ষায় দেখা যায়, দেশটির গড়ে ৪০ ভাগ অঞ্চল বন্যা উপদ্রুত। অথচ অন্য মৌসুমে একই এলাকায় থাকে পানির তীব্র সংকট। এই মুহূর্তে নোয়াখালী-কুমিল্লা পানিতে ভাসছে, অথচ এসব এলাকায় গ্রীষ্মে ভূগর্ভের এত গভীরে গিয়ে পানি তুলতে হয় যে আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়।
পানি ব্যবস্থাপনার ঘাটতির সঙ্গে বিদ্যুৎঘাটতিরও কিছু সংযোগ আছে। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে বিদ্যুৎঘাটতি রয়েছে। ভুটান হাইড্রোইলেকট্রিসিটিকে তার আয়ের প্রধান এক খাত বানিয়ে নিয়েছে। তবে পানি সংরক্ষণাগার বা ড্যামধর্মী অবকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক বিবেচনা থাকা উচিত পরিবেশ প্রশ্ন। এসব প্রকল্পে অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ফলে তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের প্রশ্ন এসে পড়ে এবং এভাবে পানি প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিও। যার ধারাবাহিকতায় উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দুষ্প্রাপ্যতা পানিবিবাদ অবধারিত করে তুলছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পানিসংকটের কিছু একক বৈশিষ্ট্য থাকলেও বিভিন্ন দেশের আবার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ তার পানিপ্রবাহের ৯০ শতাংশের জন্যই চীন-ভারতের ওপর নির্ভরশীল। উদ্বেগের দিক হলো, কৃষি-শিল্প ইত্যাদি ঘিরে ভারত ও চীনে পানির ক্ষুধা বৃদ্ধি মানেই বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাওয়া। আবার তাদের ওদিকে বাড়তি পানি মানেই সেটা এসে এদিকে বন্যা ঘটায়।
বাংলাদেশের জন্য এ অবস্থা বিশেষ উদ্বেগের। ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহে বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় দর-কষাকষির সুযোগ তার অল্প। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশিদের মাঝে এটা এক বোবা ক্ষোভের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় নানাভাবে তার প্রকাশ ঘটে। এখন যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা দেখছি আমরা, তেমনি এক দশক আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে দেশটির রংপুর বিভাগে তিস্তার পানিপ্রত্যাশী মানুষের আন্দোলনে জন-অংশগ্রহণের ব্যাপকতাও সেটাই জানিয়েছিল।
ভারতের নদীপ্রবাহের প্রধান তিনটি ধারার (সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র) দুটিতেই বাংলাদেশের সরাসরি স্বার্থ জড়িত রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতার ৮৫ শতাংশ নির্ভরতাই গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রকে ঘিরে। অন্যদিকে ভারতে বিশ্ব জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগের বাস হলেও বিশ্ব পানি সম্পদে তার হিস্যা ২৫ ভাগের এক ভাগ মাত্র। ক্রমে এই ব্যবধান বাড়ছে। যে কারণে দেশটি তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীপ্রবাহের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করাকে কর্তব্যজ্ঞান করছে।
এদিকের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহে ভারতের নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাব কেবল বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের সঙ্গেও তার বৈরিতা বাড়াচ্ছে।সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাভ, রাভি, বিয়াস, সুৎলজসহ অন্তত ছয়টি নদীতে এই দুই দেশের যৌথ হিস্যা রয়েছে। ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদী চুক্তি দেশ দুটির মধ্যে উপরিউক্ত নদীগুলোর পানি বৈরিতা নিরসনের একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে নির্ধারিত হলেও তার বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে তারা সমঝোতায় আসতে পারছে কমই।
চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাভে পানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার পায়, ভারত পায় অপর তিনটিতে। তবে পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের বিস্তর অভিযোগ উঠছে হরহামেশা। অনেক ক্ষেত্রে এরূপ বিবাদ ১৯৪৭-এর ভারত ভাগেরও অংশীদার। রাজনীতি স্থলভাগ ও মানুষকে ভাগ করে দিলেও পানিপ্রবাহকে ভাগ করে দিতে পারেনি; বিশেষ করে রেডক্লিফ লাইন পাঞ্জাব বিভক্ত করামাত্রই সিন্ধু অববাহিকার নদীমালায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শুরু হয়। অনুরূপ বিবাদ রয়েছে নেপাল-ভারত পানি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। তবে তাদের মাঝে সমঝোতার নজিরও আছে।
১৯২০ সালে সারদা ব্যারাজ চুক্তির মধ্য দিয়ে নেপাল-ভারত পানি সমঝোতার শুরু। এরপর ১৯৫০-এ কোশি চুক্তি, ১৯৫৯ সালে গন্ধক চুক্তি, ১৯৯৬ সালে হয়েছে মহাকালী চুক্তি। এসব চুক্তি হওয়ার পরও পানি বিষয়ে এই দুই দেশের জনসমাজে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস কম; বিশেষ করে নেপালের নাগরিক সমাজ মনে করে, চুক্তিগুলোয় (অন্তত মহাকালী চুক্তিতে) তাদের দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। এ রকম মনোভাবের যথেষ্ট সত্যতাও আছে। এ জন্য ১৯৮৩ সালে ভারত যখন নেপাল সীমান্তে এককভাবে তানকপুর ব্যারাজ তৈরি শুরু করে, তখন নেপালজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
ভারতের সঙ্গে পানি বিষয়ে দর-কষাকষিতে নেপাল ও বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যটি প্রায় একই রকম—উভয় দেশে জাতীয় বিষয়গুলোয় রাজনৈতিক ঐক্য না থাকায় বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে তারা ন্যায্য হিস্যা নিয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে না। উভয় দেশেই বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভারতের কাছে তাদের পানির ন্যায্য হিস্যা চাইতে কুণ্ঠিত।
প্রশ্ন হলো, নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ-ভারত পানি কূটনীতির আগেকার নীরবতা ভাঙবে কি না; বাংলাদেশ ও ভারত মিলে উভয়ের জন্য গ্রীষ্ম-বর্ষা দুই মৌসুমের নদীপ্রবাহের ব্যবস্থাপনা ঠিক করে নিতে পারবে কি না; বন্যার ঢল আসার আগে আগে অন্তত পর্যাপ্ত তথ্যটুকু পাওয়া যাবে কি না, নাকি পানি জাতীয়তাবাদের জ্বালানি হয়েই থাকবে কেবল?
লেখক: লেখক ও ইতিহাস গবেষক

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
কিন্তু এসব কি আমরা বছর-বছর দেখতেই থাকব? চলতি ক্ষোভ-বিক্ষোভেরই বা পরিণতি কী? দক্ষিণ এশিয়ার পানি-সংঘাতের পুরো পটভূমি জানা-বোঝা না থাকলে এ রকম ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে পানিপ্রশ্নে ন্যায়সংগত একটা সমাধানের দিকে এগোতে পারতাম না আমরা।
‘দক্ষিণ এশিয়া’ বলতে বর্তমান আলোচনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানকে নিয়ে গঠিত এলাকাকে বোঝানো হচ্ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ এই অঞ্চলে বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার অনেকগুলো দক্ষিণ এশিয়াতেই আছে।
কেবল ঘনবসতি হিসেবেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ পরিচিতি তার দারিদ্র্যের কারণেও। বিশ্বের দরিদ্র জনগণের এক-চতুর্থাংশের বাস এ অঞ্চলেই। এই পুরো অঞ্চলের মধ্যে অনেক সাংস্কৃতিক ঐক্য থাকলেও দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে কম—দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এই হার ২০ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য কম হওয়ার প্রধান রাজনৈতিক কারণ—তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস খুবই দুর্বল। স্বাভাবিকভাবেই এর ছাপ পড়েছে পানির মতো জরুরি প্রসঙ্গেও। পানিও ক্রমে এখানে বিবাদের বিষয় হয়ে উঠছে। কখনো খরায়, কখনো বন্যায় পারস্পরিক ক্ষোভ-বিক্ষোভে থাকতে হয় তাদের।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির চাহিদা ও জোগানেও ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দেশের পানিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাও রূঢ় রূপ নিচ্ছে। ফলে অনেক অঞ্চলে পানিতে ধীরে ধীরে মানুষের অভিগম্যতা কমে আসছে। মোদিজির এ রকম কথা হয়তো অনেকের স্মরণ আছে: ‘rakt aur paani ek saath nahin beh sakta.’ এ রকম ঘোষণা পানিযুদ্ধ বাড়ার কথাই জানায়।
জীবনের জন্য পানি জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ায় এটা বিশেষভাবে জরুরি। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠেরই পেশা কৃষিকাজ, মাছ ধরা ইত্যাদি। পানির সঙ্গে এখানে তাই জড়িয়ে আছে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন। যে কারণে ইতিমধ্যে পানি এখানে ‘নিরাপত্তা ইস্যু’ হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির প্রধান উৎস তিনটি:
ক. হিমালয় ও সংলগ্ন এলাকা থেকে বয়ে আসা নদীর পানি; বরফ গলা পানি। প্রায় ২০টি আন্তর্জাতিক নদী বয়ে চলেছে দক্ষিণ এশিয়া দিয়ে।
খ. বৃষ্টিপাতের পানি।
গ. ভূগর্ভস্থ পানি।
এ রকম সব উৎস নিয়েই কমবেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ার নদীগুলোয় এ মুহূর্তে পানি প্রাপ্তির পরিমাণ কমবেশি ৩ হাজার মিলিয়ন একর ফুট। এর বিরাট অংশই প্রবাহিত ভারতের ওপর দিয়ে। এদিকের দেশগুলোর মধ্যে তার আয়তনই সবচেয়ে বড় ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গকিলোমিটার। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এই প্রবাহে কমবেশি হতে পারে। সেই বিপদের ছাপও সিংহভাগই পড়বে ভারতেই। তবে বাংলাদেশে সেই সংকটের তাপ ও ছাপ পড়বে।
পানির দ্বিতীয় উৎস হিসেবে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া সৌভাগ্যবান। বছরজুড়ে এই অঞ্চলে গড়ে ১ হাজার ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশে। কিন্তু বৃষ্টিপাতের এই পানি ধরে রাখার পর্যাপ্ত কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই মুহূর্তে অনেক পানি যাচ্ছে। তাতে দুঃখ-কষ্টের জন্য হাহাকারও হচ্ছে। কিন্তু এই পানি ধরে রাখার কোনো কাঠামোর কথা কেউ ভাবে না। হয়তো আগামী শুষ্ক মৌসুমেই আমরা আবার পানির জন্য একইভাবে হাহাকার করব।
যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে পানি সংরক্ষণাগার তৈরির হিড়িক পড়েছে—কিন্তু এই অঞ্চলে মাথাপিছু পানি সংরক্ষণ সামর্থ্য খুব কম। গড়ে ১৭৬ কিউবিক মিটার। ফলে নির্ভরতা থেকে যাচ্ছে নদীর পানির প্রাকৃতিক প্রবাহের ওপর। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রাপ্তি কমে যাওয়ায় শেষ বিচারে চাহিদার জোগান চাওয়া হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে।
অত্যধিক জনসংখ্যার খাবারের জোগান দিতে কয়েক দশক আগেই দক্ষিণ এশিয়া সবুজ বিপ্লবের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। পানির সরবরাহ সম্পর্কে সঠিকভাবে অনুমান করা যায় না বলে সেটা এখন বিরাট ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির গুণগত মানও কমছে। রাসায়নিক ও কীটনাশকমিশ্রিত গার্হস্থ্য ময়লা, শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পানিকে কলুষিত করছে। নদীগুলোর মধ্যে গঙ্গায় দূষণ সবচেয়ে বেশি। কেবল ভারতে ১১টি প্রদেশজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে এই নদীতে। ওই দেশের সরকার চেষ্টা করছে দূষণ কমাতে। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় উপলক্ষে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সাত কোটি মানুষ গোসল করতে আসে এই নদীর কয়েকটি জায়গায়—যাদের খাবারের এবং শরীরের উচ্ছিষ্ট তাৎক্ষণিকভাবে নদীতে পড়ে। গঙ্গার এই অবস্থার এক বড় শিকার ভাটির দেশও। কিন্তু বাংলাদেশ কখনো এ প্রসঙ্গটি ভারতের কাছে উত্থাপন করেছে বলে জানা যায় না। গঙ্গার প্রবাহে নির্গত দূষিত বর্জ্যের ১২ শতাংশই শিল্পবর্জ্য। এর দুই ধারে টেক্সটাইল, সিমেন্ট, কাগজ, স্টিল, গ্লাস ইত্যাদি শিল্পের ক্রম আধিক্য নদীটির দূষণ বাড়িয়ে চলেছে।
আসন্ন দিনগুলো নদীগুলোর দূষিত পানি অববাহিকাজুড়ে অনেক চেনা ও অচেনা রোগের যে প্রাদুর্ভাব ঘটাবে, তা প্রায় নিশ্চিত। পাশাপাশি, হরিদ্বার ড্যাম কিংবা ফারাক্কা ব্যারাজের মতো মানবসৃষ্ট কাঠামো গঙ্গার প্রবাহের কী ক্ষতি করেছে, তা দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল আলোচিত। তবে আরও বড় উদ্বেগের বিষয়—গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোয় এখনো শত শত ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয় আছে ভারতীয় আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদেরা। চীনও অভিন্ন নদীগুলোয় এসব করছে। এসব বিষয়ে অববাহিকার মানুষদের মতামতের কোনো জায়গা নেই। পারস্পরিক তথ্যের আদান-প্রদানও এসব বিষয়ে কম।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় লোকসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৭০ কোটি। এ শতাব্দীতে বিশ্বে জনসংখ্যা যা বাড়বে তার ৩০ শতাংশই জন্ম নেবে দক্ষিণ এশিয়ায়। ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে লোকসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২৩০ কোটি। আর জনসংখ্যার আধিক্য মানেই পানির বাড়তি চাহিদা। অপরদিকে পানির সংকট মানেই সংঘাত ও উত্তেজনা। আসন্ন দিনগুলোতে তাই দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত ও উত্তেজনার অন্যতম ইস্যু হবে পানি। অনেক রাজনীতিবিদ এসব ব্যবহার করেই হয়তো ভাগ্য বদলে নেবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ। এই দুই দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনগোষ্ঠীও এই দুই দেশে সর্বোচ্চ—যথাক্রমে ৪৯ ও ৪৮ শতাংশ। ফলে তাদের পানির চাহিদাও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু জনপ্রতি বার্ষিক পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অনেকের চেয়ে পিছিয়ে। এরও কারণ বর্ষার পানি ধরে রাখতে না পারা।
বিশ্বে জনপ্রতি গড়ে পানিসম্পদ আছে ৬ হাজার ২৩৬ কিউবিক মিটার। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রতি পানিসম্পদ ১ হাজার ১৯৯ কিউবিক মিটার। স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যা যত বাড়বে মাথাপিছু পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা তত কমবে এখানে।
বাড়তি জনসংখ্যার সঙ্গে পানিপ্রাপ্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা একটা দুষ্টচক্রের মতো। কারণ বাড়তি জনসংখ্যা মানেই বাড়তি খাদ্যশস্য উৎপাদনের চাপ। আর তার জন্য প্রয়োজন বাড়তি পানি। জনসংখ্যা বাড়লে খানাপর্যায়েও বেশি পানি প্রয়োজন। বাড়তি মানুষের ভোগ চাহিদা মেটাতে যে বাড়তি শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, সেখানেও দরকার হবে বাড়তি পানি। আবার এই সব মানুষের জন্য সভ্যতার চাকা ঘোরাতেও প্রয়োজন বাড়তি বিদ্যুৎ। সে জন্যও চাপ পড়বে পানিসম্পদে।
পানি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সংকটের প্রধান এক ক্ষেত্র হলো এর কৃষিনির্ভরতা এবং পানিনির্ভর কৃষি। এখানে আবাদে ধান অগ্রাধিকার পায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত পানির ৯১ শতাংশ ভোক্তা কৃষি খাত। ফলে পানি এখানে সরাসরি খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এমনকি অনেক এলাকায় পানি থাকা না-থাকার ওপর সেখানকার দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওঠানামা নির্ভর করে। চাষযোগ্য জমির ৪৬ ভাগ এখানে সেচের আওতাভুক্ত। পাকিস্তানে এটা প্রায় ৯৪ শতাংশ। দেশটি প্রধানত একটি নদীর অববাহিকাভিত্তিক। আর বাংলাদেশে সেচের আওতাভুক্ত জমির ৮৬ শতাংশেই ধান আবাদ হয়। কিন্তু কৃষিতে পানির উৎপাদনশীলতা বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক কম। সেচপ্রযুক্তির নিম্নমান পানির অপচয় ও কম উৎপাদনশীলতার বড় এক কারণ। পানি যে সংরক্ষণ করার এবং জমা রাখার জরুরি একটা বিষয় হতে পারে, সেই বোধ এই অঞ্চলে আজও অতিদুর্বল। অথচ সামনের দিনগুলোয় শিল্পেও পানি লাগবে অনেক। কিন্তু কীভাবে সেই প্রয়োজন মেটাব আমরা? এ মাসের বন্যার পানি তো ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে আগামী মাসেই চলে যাবে—তখন কি আমরা পানি বিষয়ে করণীয়গুলোর কথা আদৌ মনে রাখব?
শিল্পে পানি ব্যবহার দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো অনেক কম—পুরো ভোগের মাত্র ২ শতাংশ। তবে দ্রুত এটা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষুধাই অত্যধিক। দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্পে পানি চাহিদার ৮৫ শতাংশ জোগাতে হচ্ছে ভারতের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দেশে পানির তৃতীয় প্রধান ভোক্তা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। এই অঞ্চলে জ্বালানি ব্যবহারের হার বছরে ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে, যদিও চাহিদা বেশি। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো বিদ্যুতের সবচেয়ে সস্তা উৎস। ফলে সেদিকে ঝুঁকছে অনেক দেশ এবং পানির প্রবাহ হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত।
পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার পানিবিষয়ক ভাবনায় আবহাওয়ার পরিবর্তন এখন বড় এক কালো মেঘ হয়ে উঠছে। পানির দুই প্রধান উৎস—নদীর প্রবাহ এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাত আবহাওয়ার পরিবর্তন দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। প্রধান তিন নদ-নদী—সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ অংশত হিমালয়ের বরফ গলা পানি। এর সঙ্গে বাড়তি বর্ষা যোগ হলে কী ঘটতে পারে, তার নজির আজকের ত্রিপুরা-নোয়াখালী।
মুশকিল হলো, আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে পানির প্রবাহ বাড়লেও বিপদ, কমলেও বিপদ। অতিরিক্ত পানি বা স্বল্প পানি দুটোই কৃষিকে প্রভাবিত করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের প্রধান আশ্রয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন খরা, বন্যা ও লবণাক্ততারূপে স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বলে আমরা শুনছি। তাতে উপকূলীয় মানুষদের বর্তমান বসতি ছাড়তে হতে পারে। এরূপ মানুষের শতকরা হার মালদ্বীপের পরই বাংলাদেশে বেশি। মালদ্বীপে পুরো জনগোষ্ঠীই ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৪৬ শতাংশ। যদিও শিল্পায়ন সীমিত হওয়ার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দক্ষিণ এশিয়ায় সামান্য। কিন্তু নগরায়ণ ও জ্বালানি এবং পরিবহন ইত্যাদির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দ্রুত বাড়বে এই অঞ্চলে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানি-সংকট ক্ষুদ্র হলেও অন্তত একটি কারণ পানির অদক্ষ, অপচয়মূলক ব্যবহার। বিশ্বের এই অঞ্চলের একটি বড় বৈশিষ্ট্য পানি সচরাচর খোদার দান হিসেবেই দেখা হয়। ফলে পানি কম দামে পেতে অভ্যস্ত সবাই। আবার ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানাকে একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির মালিকানা হিসেবেও ধরে নেওয়া হয়। উপরন্তু পানি উত্তোলনে ভর্তুকিও দেওয়া হয়! দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে কৃষির জন্য সেচে কমবেশি বিদ্যুৎ-ভর্তুকি আছে। কৃষিভিত্তিক সমাজে রাজনীতির এক ব্যয়বহুল রক্ষাকবচ এটা।
এইরূপ ভর্তুকির ইতিবাচক ফলের পাশাপাশি নেতিবাচক ফল হলো ভূগর্ভে দূষণ, পানির স্তর নেমে যাওয়া ও লবণাক্ততার বিস্তৃতি। এই অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এরূপ ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া যৌক্তিক হবে কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে ভর্তুকি কৃষকদের জন্য সুখবর হলেও লবণাক্ততা তাঁদের জন্য ধেয়ে আসছে অভিশাপ হিসেবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওই বিভাগের ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭০ হেক্টরই অতি লবণাক্ত। এসব জমিতে লবণের পরিমাণ সময় বিশেষে ১৬ থেকে ২৮ দশমিক ৫ ডেসিসিমেন (প্রতি মিটার পানিতে লবণের পরিমাণ)। ধান চাষে লবণের সহনশীলতা মাত্র ৪ দশমিক ১ থেকে ৮ ডেসিসিমেন। সবজি চাষে মাত্র ২ থেকে ৪ ডেসিসিমেন।
এই ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা দেখেছেন, নদী যেখানে পানিশূন্য, সেখানেই লবণাক্ততার প্রকোপ বেশি। কারণ গ্রীষ্মে আবাদের জন্য সেখানে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে চাষিদের। অথচ অতীতে বরিশাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নদীবিধৌত জেলা হিসেবে চিহ্নিত ছিল।
বিশ্বে অঞ্চলগতভাবে দক্ষিণ এশিয়াতেই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বেশি এবং তা নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন বা কর্তৃপক্ষ নেই, যদিও এ অঞ্চলের দেশগুলোয় পানিসম্পদকেন্দ্রিক মন্ত্রণালয় রয়েছে। কোনো কোনো দেশে পানি বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়েরও বিস্তর এখতিয়ার আছে। যেমন বাংলাদেশ। এ রকম দ্বৈততায় পানিকেন্দ্রিক শাসনকাঠামো কোনো সুনির্দিষ্ট রূপ পায়নি। সেটা আরেক সমস্যা।
এ অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনার আরেকটি দুর্বল দিক হলো পানি সংরক্ষণের অবকাঠামো কম থাকা; যা গত লেখায় আলাপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বন্যার সময় দেশটিতে ৩৫ মিলিয়ন একর ফুট পানি আরব সাগরে চলে যায়। বাংলাদেশেও বর্ষায় দেখা যায়, দেশটির গড়ে ৪০ ভাগ অঞ্চল বন্যা উপদ্রুত। অথচ অন্য মৌসুমে একই এলাকায় থাকে পানির তীব্র সংকট। এই মুহূর্তে নোয়াখালী-কুমিল্লা পানিতে ভাসছে, অথচ এসব এলাকায় গ্রীষ্মে ভূগর্ভের এত গভীরে গিয়ে পানি তুলতে হয় যে আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়।
পানি ব্যবস্থাপনার ঘাটতির সঙ্গে বিদ্যুৎঘাটতিরও কিছু সংযোগ আছে। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে বিদ্যুৎঘাটতি রয়েছে। ভুটান হাইড্রোইলেকট্রিসিটিকে তার আয়ের প্রধান এক খাত বানিয়ে নিয়েছে। তবে পানি সংরক্ষণাগার বা ড্যামধর্মী অবকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক বিবেচনা থাকা উচিত পরিবেশ প্রশ্ন। এসব প্রকল্পে অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ফলে তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের প্রশ্ন এসে পড়ে এবং এভাবে পানি প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিও। যার ধারাবাহিকতায় উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দুষ্প্রাপ্যতা পানিবিবাদ অবধারিত করে তুলছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পানিসংকটের কিছু একক বৈশিষ্ট্য থাকলেও বিভিন্ন দেশের আবার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ তার পানিপ্রবাহের ৯০ শতাংশের জন্যই চীন-ভারতের ওপর নির্ভরশীল। উদ্বেগের দিক হলো, কৃষি-শিল্প ইত্যাদি ঘিরে ভারত ও চীনে পানির ক্ষুধা বৃদ্ধি মানেই বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাওয়া। আবার তাদের ওদিকে বাড়তি পানি মানেই সেটা এসে এদিকে বন্যা ঘটায়।
বাংলাদেশের জন্য এ অবস্থা বিশেষ উদ্বেগের। ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহে বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় দর-কষাকষির সুযোগ তার অল্প। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশিদের মাঝে এটা এক বোবা ক্ষোভের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় নানাভাবে তার প্রকাশ ঘটে। এখন যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা দেখছি আমরা, তেমনি এক দশক আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে দেশটির রংপুর বিভাগে তিস্তার পানিপ্রত্যাশী মানুষের আন্দোলনে জন-অংশগ্রহণের ব্যাপকতাও সেটাই জানিয়েছিল।
ভারতের নদীপ্রবাহের প্রধান তিনটি ধারার (সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র) দুটিতেই বাংলাদেশের সরাসরি স্বার্থ জড়িত রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতার ৮৫ শতাংশ নির্ভরতাই গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রকে ঘিরে। অন্যদিকে ভারতে বিশ্ব জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগের বাস হলেও বিশ্ব পানি সম্পদে তার হিস্যা ২৫ ভাগের এক ভাগ মাত্র। ক্রমে এই ব্যবধান বাড়ছে। যে কারণে দেশটি তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীপ্রবাহের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করাকে কর্তব্যজ্ঞান করছে।
এদিকের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহে ভারতের নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাব কেবল বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের সঙ্গেও তার বৈরিতা বাড়াচ্ছে।সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাভ, রাভি, বিয়াস, সুৎলজসহ অন্তত ছয়টি নদীতে এই দুই দেশের যৌথ হিস্যা রয়েছে। ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদী চুক্তি দেশ দুটির মধ্যে উপরিউক্ত নদীগুলোর পানি বৈরিতা নিরসনের একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে নির্ধারিত হলেও তার বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে তারা সমঝোতায় আসতে পারছে কমই।
চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাভে পানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার পায়, ভারত পায় অপর তিনটিতে। তবে পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের বিস্তর অভিযোগ উঠছে হরহামেশা। অনেক ক্ষেত্রে এরূপ বিবাদ ১৯৪৭-এর ভারত ভাগেরও অংশীদার। রাজনীতি স্থলভাগ ও মানুষকে ভাগ করে দিলেও পানিপ্রবাহকে ভাগ করে দিতে পারেনি; বিশেষ করে রেডক্লিফ লাইন পাঞ্জাব বিভক্ত করামাত্রই সিন্ধু অববাহিকার নদীমালায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শুরু হয়। অনুরূপ বিবাদ রয়েছে নেপাল-ভারত পানি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। তবে তাদের মাঝে সমঝোতার নজিরও আছে।
১৯২০ সালে সারদা ব্যারাজ চুক্তির মধ্য দিয়ে নেপাল-ভারত পানি সমঝোতার শুরু। এরপর ১৯৫০-এ কোশি চুক্তি, ১৯৫৯ সালে গন্ধক চুক্তি, ১৯৯৬ সালে হয়েছে মহাকালী চুক্তি। এসব চুক্তি হওয়ার পরও পানি বিষয়ে এই দুই দেশের জনসমাজে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস কম; বিশেষ করে নেপালের নাগরিক সমাজ মনে করে, চুক্তিগুলোয় (অন্তত মহাকালী চুক্তিতে) তাদের দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। এ রকম মনোভাবের যথেষ্ট সত্যতাও আছে। এ জন্য ১৯৮৩ সালে ভারত যখন নেপাল সীমান্তে এককভাবে তানকপুর ব্যারাজ তৈরি শুরু করে, তখন নেপালজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
ভারতের সঙ্গে পানি বিষয়ে দর-কষাকষিতে নেপাল ও বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যটি প্রায় একই রকম—উভয় দেশে জাতীয় বিষয়গুলোয় রাজনৈতিক ঐক্য না থাকায় বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে তারা ন্যায্য হিস্যা নিয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে না। উভয় দেশেই বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভারতের কাছে তাদের পানির ন্যায্য হিস্যা চাইতে কুণ্ঠিত।
প্রশ্ন হলো, নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ-ভারত পানি কূটনীতির আগেকার নীরবতা ভাঙবে কি না; বাংলাদেশ ও ভারত মিলে উভয়ের জন্য গ্রীষ্ম-বর্ষা দুই মৌসুমের নদীপ্রবাহের ব্যবস্থাপনা ঠিক করে নিতে পারবে কি না; বন্যার ঢল আসার আগে আগে অন্তত পর্যাপ্ত তথ্যটুকু পাওয়া যাবে কি না, নাকি পানি জাতীয়তাবাদের জ্বালানি হয়েই থাকবে কেবল?
লেখক: লেখক ও ইতিহাস গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
২৪ আগস্ট ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
২৪ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
২৪ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

স্বৈরাচার হটাতে না-হটাতেই বাংলাদেশ বন্যার বিপদে পড়েছে। এসবই যেন বাংলার অবধারিত নিয়তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও দেখছি আমরা। পাশাপাশি ভারতের দিক থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ চলছে।
২৪ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫