Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কিছুর ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে

মাসুদ রানা
অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কিছুর ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে

আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ‘সর্বজন কথা’ পত্রিকার সম্পাদক। সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: জুলাই অভ্যুত্থানকে কীভাবে দেখেন?
আনু মুহাম্মদ: জুলাই অভ্যুত্থান আপাতদৃষ্টিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটা ধারাবাহিকতা। তবে এটা শুধু তা না। সমাজের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে ক্ষোভ, সেই ক্ষোভ যখন আরও বৃদ্ধি পায় সরকারের সহিংস আগ্রাসী ভূমিকার কারণে, তখনই একটা অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতির তৈরি হয়। সেভাবেই জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান ঘটে।

আমরা জানি, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ওই সময় এই আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি সামনে রেখেই আন্দোলন করছিলেন। তারপরও তাঁদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। সে সময় যেভাবে কোটা বাতিল করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেটার মধ্যে একটা চাতুর্য ছিল। সেটা বাতিল হওয়ারই কথা, সেটাই হয়েছে এ বছরের জুনে। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি করে। শুধু কোটা নিয়ে কেন বিশাল বিশাল জমায়েত হলো, সেটা সরকারের উপলব্ধি করার ব্যাপার ছিল। কারণ, দেশের বড় সমস্যা হলো বেকার সমস্যা। আর জনসংখ্যার যে বিন্যাস, সেখানে তরুণদের অনুপাত সবচেয়ে বেশি। তরুণ তাঁর ভবিষ্যৎ কী দেখছেন? দেশে অনেক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি কোনো কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি; বরং এমন সব কাজের মধ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, যেগুলো কর্মসংস্থান নষ্ট করে।

আবার পাবলিক সেক্টর, যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার লাখ পদ খালি ছিল। সরকার সেগুলো পূরণ করেনি। কারণ, সরকার শিক্ষা, চিকিৎসা বেসরকারি খাতেই বাড়তে দিতে চায়। আর কর্মসংস্থান যতটা হচ্ছিল তা নিয়োগ-বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠের আওতার বাইরেই থেকে যায়। এর বাইরে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়মিত কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ থাকলেও, কোটার কারণে সেটা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। এই তিন কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হতাশা, অনিশ্চয়তা এর কারণেই ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে যুক্ত হন।

এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা, লুণ্ঠন, দুর্নীতি এবং সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের জুলুমের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল। শিক্ষার্থীরা তাঁদেরই সন্তান, তাঁদের কাজ পাওয়ার আন্দোলনে তাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থন প্রথম থেকেই ছিল।

এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। কিন্তু ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার কথার কারণে ক্ষোভ-ক্রোধ আরও বাড়ে, পরিস্থিতি অস্বাভাবিকতার দিকে চলে যায়। এরপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, বিজিবি দিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড শুরু হলো। সবকিছু মানুষের সহ্যসীমার বাইরে চলে গেল। এই সহ্যসীমা পার হওয়ার কারণেই জনগণ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে যুক্ত হলেন। এককথায় সরকারের ঔদ্ধত্য, অহমিকা, জনগণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, সমস্যা উপলব্ধি না করার প্রবণতা এবং সর্বোপরি ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের ফলাফল হলো এই গণ-অভ্যুত্থান। 

আজকের পত্রিকা: অনেকেই এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলছেন। আপনার কাছে কী মনে হয়?
আনু মুহাম্মদ: এ রকম চিন্তার একটা বড় কারণ হলো, ১৫ বছর ধরে মানুষ নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারেনি। গুম, অপহরণ, ক্রসফায়ার, ধরপাকড়, নির্যাতন ব্যাপক আকার লাভ করেছিল। সরকার দলীয় লোক দিয়ে সব জায়গা দখল করে রেখেছিল। মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষের মধ্যে একটা পরাধীনতার বোধ তৈরি হয়েছিল। এ রকম একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণে মানুষের কাছে স্বাধীনতা মনে হচ্ছে। তবে এটা যেভাবে সংঘটিত হয়েছে, তাকে অবশ্যই গণ-অভ্যুত্থান বলতে হবে। বিপ্লব আরও অনেক বড় ব্যাপার।

বিপ্লবের মধ্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া থাকতে হয়। বিপ্লব মানে মৌলিক একটা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে যখন রাষ্ট্র বা সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয়। এখানে কিন্তু সেই ব্যাপারটা ছিল না। এটা কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল, রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্য থাকলে প্রস্তুতি অন্য রকম থাকত। তবে এই অভ্যুত্থানের মধ্যে বিপ্লবের উপাদান আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে নেতৃত্বের ভূমিকা দেখা গেছে, সেটা অসাধারণ ব্যাপার ছিল। এর সঙ্গে শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। যেখানে আগে অভিভাবকেরা সন্তানদের ছেড়ে দিতেন না, সেখানে তাঁরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর আক্রমণ মোকাবিলা করে যেভাবে পুরো সমাজ দাঁড়িয়েছিল, সেটাই গণ-অভ্যুত্থান তৈরি করেছে। মূল দাবি এসেছে—এ অবস্থা এভাবে চলতে পারে না। সবার মধ্যে যখন প্রত্যাশা তৈরি হয় আগের অবস্থায় আর ফেরত যাওয়া যাবে না, বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের শাসনে আর ফিরে যাওয়া যাবে না, সেই আকাঙ্ক্ষাটাই হলো বিপ্লবের উপাদান। এখন গণ-অভ্যুত্থানকে কত দূর পর্যন্ত নেওয়া যাবে, সেটা সামনের দিনে আরও স্পষ্ট হবে।

আজকের পত্রিকা: এই অভ্যুত্থানকে যাঁরা গ্রহণ করছেন না। তাঁরা বলছেন, এটা বিদেশি চক্রান্তের ফল। আপনার কাছে কী মনে হয়?
আনু মুহাম্মদ: বাংলাদেশ নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক আধিপত্যের ব্যাপার আছে। এখানে ভারতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। চীনের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। রাশিয়ার স্বার্থ আছে আর যুক্তরাষ্ট্রের বড় কৌশলগত স্বার্থ আছে। সুতরাং যখনই একটা পরিবর্তন ঘটছে, সেই সময় সবারই কিছু না কিছু ভূমিকা থাকার কথা। এই গণ-অভ্যুত্থানে সেই সুযোগটা নেওয়ারই কথা। কিন্তু ঘটনাটা যে বিদেশি শক্তির কারণে হয়েছে, এ রকম বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

আন্দোলনের পরম্পরা দেখলেই বোঝা যায়, ব্যাপারটা মোটেই সে রকম নয়। প্রধানত শেখ হাসিনার জেদ ও অহমিকার কারণে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ধরা যাক, পুলিশ যে নিষ্ঠুর কায়দায় গুলি করে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রকাশ্যে ও অপ্রয়োজনে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে, বাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি করেছে, এগুলো কি বিদেশিরা করেছে? এটা বাংলাদেশের সাবেক সরকার করেছে। বিদেশিরা এই পরিস্থিতির সুবিধা তো নিতেই পারে। এ রকম কথা আমরা ১৯৭১ সালেও শুনেছি। যেমন মুক্তিযুদ্ধটা ভারত করেছে। এগুলো বললে হবে না। দেশের ভেতরে কীভাবে আন্দোলনটা গড়ে উঠেছে, জনগণের ভূমিকা ও আকাঙ্ক্ষা কী ছিল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারপর বিদেশি শক্তি সুবিধা নিতে পারে, সেটা অন্য প্রসঙ্গ।

গণ-অভ্যুত্থানের পরে পরিবর্তনটা যাতে জনগণের পক্ষে থাকে এবং জনগণের স্বার্থে একটা টেকসই বা মৌলিক পরিবর্তনের দিকে যায়, সেটা অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের একটা বড় দায়িত্ব।

আজকের পত্রিকা: এই অভ্যুত্থানের পরে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ সবার প্রত্যাশা এখন রাষ্ট্র সংস্কার করা। আপনি কি মনে করেন এ সরকার সেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার করতে পারবে?
আনু মুহাম্মদ: অন্তর্বর্তী সরকার তো একটা বড় দায়িত্ব নিয়েছে। এখন এ সরকার সেই দায়িত্ব পালন করে কি না, সেটা আমরা দেখব। তারা যদি অবহেলা করে, উদাসীনতা দেখায়, তাহলে তো তাদের জনগণ দায়মুক্তি দেবে না। আগের আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ধরনের দায়মুক্তি আইন করেছিল। কিন্তু এই সরকারকে আমরা দায়মুক্তি দেব না।

এই সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, আগের সরকারের অর্থনৈতিক লুণ্ঠন ও রাজনৈতিক নিপীড়ন নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য নিপীড়নের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের সম্মুখীন করা তাদের দায়িত্ব। তাদের আরও দায়িত্ব হলো, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দখল ও লুণ্ঠন করেছে, তাদের কাছ থেকে সম্পদগুলো উদ্ধার করা। আর মানুষের জন্য মহা ক্ষতিকর মেগা প্রকল্প রামপাল কয়লা ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা। এসব বাতিলের জন্য মানুষের একটা ঐকমত্য আছে। যেগুলো নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছিল।

এরপর অর্থ ও সম্পদ পাচারের প্রক্রিয়া বন্ধ করা। আর জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সব প্রতিষ্ঠানে একটা ধস নেমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়—এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠান দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। সে জন্য এগুলোকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে সুযোগ দেওয়া এবং জবাবদিহির আওতায় আনা এ সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। 

আজকের পত্রিকা: রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কি করণীয়?
আনু মুহাম্মদ: অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা হলো, 
তারা সবকিছু করতে পারবে না। কিন্তু অনেক কিছুর ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারবে। যেমন আমাদের যে সংবিধান আছে, সেটাই যদি বলবৎ থাকে, তাহলে যে সরকার এটার অধীনে থাকবে, তারাই স্বৈরতান্ত্রিক হবে। কারণ এটা ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অধিকতর স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জাতিবিদ্বেষী এবং বৈষম্যমূলক দলিলে পরিণত হয়েছে। এই সরকার সংবিধানসহ আইনকাঠামো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো, যেমন কী পরিবর্তন করতে হবে, সে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কমিশন গঠন করতে পারে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতসহ অন্যান্য খাতে পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। আর জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আইনকানুনের পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারে।

আগের সরকারগুলোর ঘাড়টা ঘোরানো ছিল কিছু দেশি-বিদেশি লুটেরা শক্তির দিকে। তাদের স্বার্থ দেখার জন্যই রাষ্ট্রের শক্তি ব্যবহার হতো। সে কারণে শিক্ষা, চিকিৎসা, জ্বালানি, নিরাপত্তা, পরিবহন, পরিবেশ—সব ক্ষেত্রে জনগণের জীবন বিপন্ন করে কিছু গোষ্ঠী ফুলেফেঁপে উঠেছে। এখন সরকারের ঘাড়টা ঘুরিয়ে দিতে হবে জনগণের দিকে। জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, সেটা সরকার তখনই শুরু করতে পারবে।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
আনু মুহাম্মদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত