Ajker Patrika

ঢাবিতে রমজানের আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে স্মারকলিপি

ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাবিতে রমজানের আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে স্মারকলিপি

‘প্রোডাক্টিভ রামাদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিবির আখ্যা দিয়ে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিচারের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহের হোসেন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন হয়। 

মানববন্ধনে ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ছাত্রলীগের বহিরাগতরা এসে ছাত্রদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের আপিল থাকবে, বহিরাগতরা এসে যদি ঢাবি শিক্ষার্থীদের মেরে যায়, আপনাদের কি দায়দায়িত্ব নেই? বহিরাগতদের একের পর এক আক্রমণের মুখে, আপনারা অভিভাবক হিসেবে কী দায়িত্ব পালন করছেন?’ 

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা (যারা মারধরের শিকার) বিচার বিভাগে জয়েন করবে, আইনজীবী হবে। তারা আইনে পড়ে, তাঁরা জানছে বিনা অভিযোগে কারো ওপর আক্রমণ করতে পারে না। তাঁদের ছাত্রলীগের গুণ্ডারা কী মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। এই গুণ্ডাদের আপনারা কী মেসেজ দিতে চান—এ দেশে কি আইনের শাসন রয়েছে?।’ 

এভাবে হামলা করাকে ফৌজদারি অপরাধ ও হত্যাচেষ্টা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘তাদের শিবির ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এই রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নয়। তাঁরা যাকে মারবে সে শিবির। সমস্ত অন্যায় অপরাধ ঢাকা হয় শিবির ট্যাগ দিয়ে। আপনাদের যদি এতই শিবিরভীতি থাকে তাহলে আইন করে শিবিরকে নিষিদ্ধ করেন না কেন?’ 

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘তাঁরা (মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা) কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তাঁদের মারা হয়েছে ইসলামি মাহফিল করার জন্য, ধর্মচর্চা করার জন্য। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারী যারা আছে, তাঁরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মার খাবে, এটার জন্য আমরা বাংলাদেশে স্বাধীন করেছিলাম?’ 

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা আইন বিভাগের ছাত্র। আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে আপিল করছি, তোমরা কি মনে করো নিরীহ ছেলেদেরকে ইসলামি মাহফিল করার জন্য বহিরাগত ছাত্রলীগের গুন্ডারা এসে রক্তাক্ত করার অধিকার রাখে?’ অবিলম্বে হামলাকারীদের বহিষ্কার করার অনুরোধ জানান এ অধ্যাপক। 

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে মিছিল ও স্লোগান সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বরাবর স্মারকলিপি দেন। 

মানববন্ধনে মাথায় কালো ব্যাজ পরে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন। বিচারের প্রক্রিয়া শুরু না করলে কঠোর আন্দোলনের নামার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

হামলার শিকার আইন বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস মনে করি, কিন্তু সেখানে রমজানের আলোচনা করতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হলো। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী। বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও যদি আমাদের এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হতে হয়, আর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা কীভাবে তাঁদের সিনিয়র ভাই মনে করব? অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ 

আইন বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ৪৩ তম ব্যাচের আখতার হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি ও ৪৪ তম ব্যাচের তারিকুল ইসলাম, ৪৮ তম ব্যাচের ছাত্রী ফাতিমা তাসনিম হক, ৪৯ তম ব্যাচের আয়েশা সিদ্দিকা জুঁই, ৫০ তম ব্যাচের সাদেকুন নাহার ও মাহমুদ শাকিল প্রমুখ। 

বক্তব্য প্রদানকালে শিক্ষার্থীরা মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করার দাবি জানান। 

এদিকে হামলার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন—সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা, ড. মো. আব্দুল মুহিত ও অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়েছি। যারা আহত হয়েছে, তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটিকে দ্রততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’ 

গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার মসজিদে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের রমজান উপলক্ষে এক সেমিনারে বাধা দেন শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজন ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ার সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক। পরে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে চলে যাওয়ার পথে গতিরোধ করে মোটরসাইকেল করে আসা একদল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হামলা করে। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত