একেএম শামসুদ্দিন

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের বীরত্বগাথা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন থাকে। এ সময় গান, কবিতা পাঠসহ নানাবিধ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, একাত্তরের মার্চে এসে সেই সংগ্রাম স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়।
এই দীর্ঘ সংগ্রামে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে, এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত উল্লিখিত সবার মধ্যে যে ছাত্রসংগঠনটি সবচেয়ে বেশি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে বলে ধরা হয়, সেই সংগঠনের নাম ‘ছাত্রলীগ’। শুধু ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা-উত্তর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই সংগঠন করেই এ দেশের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ের স্বনামধন্য নেতা হয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একই বছরের ২ মার্চ তৎকালীন ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহাম্মদ তোয়াহা, অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্ত, আবুল কাসেমসহ আরও অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্ট্র নির্বাচনে ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির আন্দোলন বেগবান করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাঙালি ছাত্রসমাজ যে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যা পরে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেই আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জেলা ও থানা পর্যায়ে যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তাতে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রেখেছে, তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনাহূত কর্মকাণ্ড অতীতের সব অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। ক্ষমতার এই কয়েক বছরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মারামারি-খুনোখুনি, নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যাতে এই সংগঠনের সদস্যরা জড়িত ছিলেন না।
ছাত্রলীগের কর্মীদের ধারাবাহিক এসব কুকর্মের সর্বশেষ সংযোজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ। এই কুকর্মটিও তাঁরা করেছেন ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণ ঘটনায় অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাগর, সিদ্দিকী, হাসানুজ্জামান ও মুরাদ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি—এই তিন মূলনীতি নিয়ে গঠিত যে ছাত্রসংগঠন দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, এখন তারাই প্রতিনিয়ত নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে যেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী বের হয়ে আসতে পারছেন না। ধর্ষণের ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই প্রথম নয়।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী এমন ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতেও ঘটেছে। ১৯৯৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদ্যাপন করে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৯ জনের দল স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছিল।
৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ঘটনার মতো নিষ্ক্রিয় না থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। অপরাধীদের ধরার বিষয়ে নিজেরা উদ্যোগী না হলেও পুলিশকে সহায়তা করেছে। অভিযুক্তদের সনদও স্থগিত করেছে। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের আশ্রয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে ভোর ৬ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন মোস্তাফিজুর। সোহেলের নির্দেশেই নাকি মোস্তাফিজুরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী।
পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোস্তাফিজুরকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের। ফুটেজ গায়ের করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজুর। এবারের ধর্ষণের ঘটনায় আরও একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতা আটক করায় সোচ্চার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ না করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাও মোস্তাফিজুরের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেন। তাঁদের এই মানববন্ধন ও বিচার দাবি লোকদেখানো ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই ধর্ষক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। হলের এই কক্ষটিকে মোস্তাফিজুর ও তার সহযোগীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই কক্ষে নিয়মিত মাদক সেবন চলত। মোস্তাফিজুরের হাত এত লম্বা ছিল যে তিনি এই টর্চার সেলে আশুলিয়া থানার এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকাও দাবি করেন।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে সমঝোতা করে কনস্টেবলকে ছাড়িয়ে নেন। সে সময় পুলিশ আটকের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত একটি খবর সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি সত্য হলে কর্তৃপক্ষের উচিত খবরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। মোস্তাফিজুর ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হলের সামনের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তাঁদের অত্যাচারে হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোকানমালিকেরা অতিষ্ঠ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বছরজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে ধর্ষণের মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সংগঠনটির নেত্রীরাও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। অতীতে সংগঠনটির নেত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আসামিও হয়েছেন নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীদের অভিমত, জাতীয় রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটিতে দিনে দিনে শুধু ধর্ষকের সংখ্যাই বাড়ছে।
অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন প্রশাসনের কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। অপরদিকে ছাত্র সংসদও নেই। এখন শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলছে। কাজেই তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাঁদের তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনও প্রয়োজন পড়ে না।
তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতি করেই অনেকে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছেন। কাজেই স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে তাঁদের বিবেকেও বাধে না। সাধারণ মানুষের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব যদি চান, তাহলে এসব বন্ধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাঁরা চাইলে যেকোনো মুহূর্তেই তা করতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাইলে এখনই তা করা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের বীরত্বগাথা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন থাকে। এ সময় গান, কবিতা পাঠসহ নানাবিধ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, একাত্তরের মার্চে এসে সেই সংগ্রাম স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়।
এই দীর্ঘ সংগ্রামে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে, এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত উল্লিখিত সবার মধ্যে যে ছাত্রসংগঠনটি সবচেয়ে বেশি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে বলে ধরা হয়, সেই সংগঠনের নাম ‘ছাত্রলীগ’। শুধু ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা-উত্তর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই সংগঠন করেই এ দেশের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ের স্বনামধন্য নেতা হয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একই বছরের ২ মার্চ তৎকালীন ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহাম্মদ তোয়াহা, অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্ত, আবুল কাসেমসহ আরও অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্ট্র নির্বাচনে ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির আন্দোলন বেগবান করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাঙালি ছাত্রসমাজ যে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যা পরে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেই আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জেলা ও থানা পর্যায়ে যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তাতে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রেখেছে, তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনাহূত কর্মকাণ্ড অতীতের সব অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। ক্ষমতার এই কয়েক বছরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মারামারি-খুনোখুনি, নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যাতে এই সংগঠনের সদস্যরা জড়িত ছিলেন না।
ছাত্রলীগের কর্মীদের ধারাবাহিক এসব কুকর্মের সর্বশেষ সংযোজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ। এই কুকর্মটিও তাঁরা করেছেন ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণ ঘটনায় অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাগর, সিদ্দিকী, হাসানুজ্জামান ও মুরাদ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি—এই তিন মূলনীতি নিয়ে গঠিত যে ছাত্রসংগঠন দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, এখন তারাই প্রতিনিয়ত নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে যেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী বের হয়ে আসতে পারছেন না। ধর্ষণের ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই প্রথম নয়।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী এমন ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতেও ঘটেছে। ১৯৯৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদ্যাপন করে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৯ জনের দল স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছিল।
৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ঘটনার মতো নিষ্ক্রিয় না থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। অপরাধীদের ধরার বিষয়ে নিজেরা উদ্যোগী না হলেও পুলিশকে সহায়তা করেছে। অভিযুক্তদের সনদও স্থগিত করেছে। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের আশ্রয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে ভোর ৬ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন মোস্তাফিজুর। সোহেলের নির্দেশেই নাকি মোস্তাফিজুরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী।
পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোস্তাফিজুরকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের। ফুটেজ গায়ের করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজুর। এবারের ধর্ষণের ঘটনায় আরও একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতা আটক করায় সোচ্চার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ না করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাও মোস্তাফিজুরের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেন। তাঁদের এই মানববন্ধন ও বিচার দাবি লোকদেখানো ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই ধর্ষক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। হলের এই কক্ষটিকে মোস্তাফিজুর ও তার সহযোগীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই কক্ষে নিয়মিত মাদক সেবন চলত। মোস্তাফিজুরের হাত এত লম্বা ছিল যে তিনি এই টর্চার সেলে আশুলিয়া থানার এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকাও দাবি করেন।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে সমঝোতা করে কনস্টেবলকে ছাড়িয়ে নেন। সে সময় পুলিশ আটকের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত একটি খবর সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি সত্য হলে কর্তৃপক্ষের উচিত খবরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। মোস্তাফিজুর ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হলের সামনের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তাঁদের অত্যাচারে হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোকানমালিকেরা অতিষ্ঠ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বছরজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে ধর্ষণের মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সংগঠনটির নেত্রীরাও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। অতীতে সংগঠনটির নেত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আসামিও হয়েছেন নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীদের অভিমত, জাতীয় রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটিতে দিনে দিনে শুধু ধর্ষকের সংখ্যাই বাড়ছে।
অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন প্রশাসনের কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। অপরদিকে ছাত্র সংসদও নেই। এখন শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলছে। কাজেই তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাঁদের তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনও প্রয়োজন পড়ে না।
তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতি করেই অনেকে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছেন। কাজেই স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে তাঁদের বিবেকেও বাধে না। সাধারণ মানুষের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব যদি চান, তাহলে এসব বন্ধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাঁরা চাইলে যেকোনো মুহূর্তেই তা করতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাইলে এখনই তা করা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
একেএম শামসুদ্দিন

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের বীরত্বগাথা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন থাকে। এ সময় গান, কবিতা পাঠসহ নানাবিধ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, একাত্তরের মার্চে এসে সেই সংগ্রাম স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়।
এই দীর্ঘ সংগ্রামে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে, এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত উল্লিখিত সবার মধ্যে যে ছাত্রসংগঠনটি সবচেয়ে বেশি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে বলে ধরা হয়, সেই সংগঠনের নাম ‘ছাত্রলীগ’। শুধু ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা-উত্তর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই সংগঠন করেই এ দেশের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ের স্বনামধন্য নেতা হয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একই বছরের ২ মার্চ তৎকালীন ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহাম্মদ তোয়াহা, অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্ত, আবুল কাসেমসহ আরও অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্ট্র নির্বাচনে ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির আন্দোলন বেগবান করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাঙালি ছাত্রসমাজ যে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যা পরে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেই আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জেলা ও থানা পর্যায়ে যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তাতে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রেখেছে, তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনাহূত কর্মকাণ্ড অতীতের সব অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। ক্ষমতার এই কয়েক বছরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মারামারি-খুনোখুনি, নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যাতে এই সংগঠনের সদস্যরা জড়িত ছিলেন না।
ছাত্রলীগের কর্মীদের ধারাবাহিক এসব কুকর্মের সর্বশেষ সংযোজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ। এই কুকর্মটিও তাঁরা করেছেন ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণ ঘটনায় অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাগর, সিদ্দিকী, হাসানুজ্জামান ও মুরাদ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি—এই তিন মূলনীতি নিয়ে গঠিত যে ছাত্রসংগঠন দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, এখন তারাই প্রতিনিয়ত নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে যেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী বের হয়ে আসতে পারছেন না। ধর্ষণের ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই প্রথম নয়।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী এমন ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতেও ঘটেছে। ১৯৯৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদ্যাপন করে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৯ জনের দল স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছিল।
৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ঘটনার মতো নিষ্ক্রিয় না থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। অপরাধীদের ধরার বিষয়ে নিজেরা উদ্যোগী না হলেও পুলিশকে সহায়তা করেছে। অভিযুক্তদের সনদও স্থগিত করেছে। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের আশ্রয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে ভোর ৬ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন মোস্তাফিজুর। সোহেলের নির্দেশেই নাকি মোস্তাফিজুরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী।
পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোস্তাফিজুরকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের। ফুটেজ গায়ের করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজুর। এবারের ধর্ষণের ঘটনায় আরও একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতা আটক করায় সোচ্চার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ না করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাও মোস্তাফিজুরের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেন। তাঁদের এই মানববন্ধন ও বিচার দাবি লোকদেখানো ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই ধর্ষক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। হলের এই কক্ষটিকে মোস্তাফিজুর ও তার সহযোগীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই কক্ষে নিয়মিত মাদক সেবন চলত। মোস্তাফিজুরের হাত এত লম্বা ছিল যে তিনি এই টর্চার সেলে আশুলিয়া থানার এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকাও দাবি করেন।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে সমঝোতা করে কনস্টেবলকে ছাড়িয়ে নেন। সে সময় পুলিশ আটকের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত একটি খবর সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি সত্য হলে কর্তৃপক্ষের উচিত খবরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। মোস্তাফিজুর ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হলের সামনের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তাঁদের অত্যাচারে হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোকানমালিকেরা অতিষ্ঠ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বছরজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে ধর্ষণের মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সংগঠনটির নেত্রীরাও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। অতীতে সংগঠনটির নেত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আসামিও হয়েছেন নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীদের অভিমত, জাতীয় রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটিতে দিনে দিনে শুধু ধর্ষকের সংখ্যাই বাড়ছে।
অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন প্রশাসনের কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। অপরদিকে ছাত্র সংসদও নেই। এখন শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলছে। কাজেই তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাঁদের তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনও প্রয়োজন পড়ে না।
তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতি করেই অনেকে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছেন। কাজেই স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে তাঁদের বিবেকেও বাধে না। সাধারণ মানুষের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব যদি চান, তাহলে এসব বন্ধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাঁরা চাইলে যেকোনো মুহূর্তেই তা করতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাইলে এখনই তা করা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের বীরত্বগাথা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন থাকে। এ সময় গান, কবিতা পাঠসহ নানাবিধ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, একাত্তরের মার্চে এসে সেই সংগ্রাম স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়।
এই দীর্ঘ সংগ্রামে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে, এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত উল্লিখিত সবার মধ্যে যে ছাত্রসংগঠনটি সবচেয়ে বেশি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে বলে ধরা হয়, সেই সংগঠনের নাম ‘ছাত্রলীগ’। শুধু ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা-উত্তর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই সংগঠন করেই এ দেশের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ের স্বনামধন্য নেতা হয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একই বছরের ২ মার্চ তৎকালীন ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহাম্মদ তোয়াহা, অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্ত, আবুল কাসেমসহ আরও অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্ট্র নির্বাচনে ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির আন্দোলন বেগবান করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাঙালি ছাত্রসমাজ যে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যা পরে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেই আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জেলা ও থানা পর্যায়ে যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তাতে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রেখেছে, তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনাহূত কর্মকাণ্ড অতীতের সব অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। ক্ষমতার এই কয়েক বছরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মারামারি-খুনোখুনি, নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই, যাতে এই সংগঠনের সদস্যরা জড়িত ছিলেন না।
ছাত্রলীগের কর্মীদের ধারাবাহিক এসব কুকর্মের সর্বশেষ সংযোজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ। এই কুকর্মটিও তাঁরা করেছেন ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণ ঘটনায় অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাগর, সিদ্দিকী, হাসানুজ্জামান ও মুরাদ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি—এই তিন মূলনীতি নিয়ে গঠিত যে ছাত্রসংগঠন দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, এখন তারাই প্রতিনিয়ত নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে যেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী বের হয়ে আসতে পারছেন না। ধর্ষণের ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই প্রথম নয়।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী এমন ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতেও ঘটেছে। ১৯৯৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদ্যাপন করে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৯ জনের দল স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছিল।
৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। চার শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ঘটনার মতো নিষ্ক্রিয় না থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে। অপরাধীদের ধরার বিষয়ে নিজেরা উদ্যোগী না হলেও পুলিশকে সহায়তা করেছে। অভিযুক্তদের সনদও স্থগিত করেছে। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের আশ্রয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে ভোর ৬ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন মোস্তাফিজুর। সোহেলের নির্দেশেই নাকি মোস্তাফিজুরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী।
পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোস্তাফিজুরকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের। ফুটেজ গায়ের করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজুর। এবারের ধর্ষণের ঘটনায় আরও একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতা আটক করায় সোচ্চার সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ না করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরাও মোস্তাফিজুরের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেন। তাঁদের এই মানববন্ধন ও বিচার দাবি লোকদেখানো ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই ধর্ষক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। হলের এই কক্ষটিকে মোস্তাফিজুর ও তার সহযোগীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই কক্ষে নিয়মিত মাদক সেবন চলত। মোস্তাফিজুরের হাত এত লম্বা ছিল যে তিনি এই টর্চার সেলে আশুলিয়া থানার এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকাও দাবি করেন।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে সমঝোতা করে কনস্টেবলকে ছাড়িয়ে নেন। সে সময় পুলিশ আটকের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত একটি খবর সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি সত্য হলে কর্তৃপক্ষের উচিত খবরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। মোস্তাফিজুর ও তাঁর সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হলের সামনের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তাঁদের অত্যাচারে হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোকানমালিকেরা অতিষ্ঠ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বছরজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে ধর্ষণের মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সংগঠনটির নেত্রীরাও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। অতীতে সংগঠনটির নেত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আসামিও হয়েছেন নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীদের অভিমত, জাতীয় রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটিতে দিনে দিনে শুধু ধর্ষকের সংখ্যাই বাড়ছে।
অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন প্রশাসনের কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। অপরদিকে ছাত্র সংসদও নেই। এখন শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলছে। কাজেই তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাঁদের তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনও প্রয়োজন পড়ে না।
তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতি করেই অনেকে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছেন। কাজেই স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে তাঁদের বিবেকেও বাধে না। সাধারণ মানুষের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব যদি চান, তাহলে এসব বন্ধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাঁরা চাইলে যেকোনো মুহূর্তেই তা করতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাইলে এখনই তা করা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাঙালির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দুটো মাস। এ দুই মাসে বাংলাদেশের জনগণ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগী শহীদদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫