ফরিদ তামাল্লাহ

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
‘এটা আমাদের জমি’, বলতে বলতে চোখে আগুন ঠিকরে বেরোয় আবলা লাফির। ‘কী সাহস তাঁদের! আমাদের জমিতে ঢুকতে ও জলপাই পাড়তে বাধা দেয়, যেন আমরা চুরি করতে ঢুকেছি। আমরা নিজ হাতে এসব গাছ লাগিয়েছি। চোর তো দখলদারেরা, আমরা এই জমির মালিক!’
অক্টোবর ও নভেম্বর হলো ফিলিস্তিনি কৃষকদের জলপাই আবাদের প্রধান মৌসুম। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার পরিবারের জীবন ও জীবিকা এই জলাপাইর ওপর নির্ভরশীল। অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ কৃষিজমিতে জলপাই চাষ হয়। সেখানে প্রায় ১ কোটি জলপাইগাছ রয়েছে, যা থেকে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদিত হয়।
গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জলপাইবাগানে যেতে বাধা দিচ্ছে। গত মাসে দখলদার রাষ্ট্রের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জলপাই আবাদ নিষিদ্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্মোট্রিচের মতে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের জন্য নিশ্চিত নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে হবে, যার আশপাশে ফিলিস্তিনিদের নামগন্ধ পর্যন্ত থাকবে না। সেখানে শুধুই দখলদারেরা থাকবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এই নীতি বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলাচল এবং প্রবেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জলপাইবাগানে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে; বিশেষ করে বসতিগুলোর কাছাকাছি জমিতে। ‘এ বছরের নভেম্বরের শেষে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ৮ লাখ বর্গমিটার জমিতে জলপাইয়ের চাষ হয়নি।’
ফিলিস্তিনিদের জন্য জলপাই শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য, অদম্য প্রতিরোধ এবং জমির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের প্রতীক। জলপাইগাছ তাদের আত্মা ও পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
আবলা লাফি বলেন, ‘একসময় আমরা পুরো পরিবার, নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো সবাই মিলে জমিতে কাজ করতে যেতাম। আনন্দে কেটে যেত সময়। কারণ চাষাবাদ করা মানে ভূমির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘জলপাই মৌসুম আমাদের জন্য ঈদের মতো; আমরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এ সময়টা উপভোগ করি, এমনকি এ সময় খাবারের স্বাদও আলাদা হয়।’
‘কিন্তু ফিলিস্তিনি জমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার পর থেকে আমাদের জলপাই মৌসুম কাটে ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কে। বসতি স্থাপনকারী ও সেনাবাহিনীর ভয়ে আমরা ভীত। গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর সেই উদ্বেগ আর দুঃখ আরও বেড়ে গেছে।’
তুরমুস আইয়া গ্রামের কৃষি কমিটির প্রধান নিদাল রাবি নিশ্চিত করেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও তাদের রক্ষীরা নিজেদের বসতির কাছের জলপাইবাগানগুলোতে ফিলিস্তিনিদের যেতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জমি থেকে আমাদেরই তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের জমিতে ঢোকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা বন্দুকের মুখে আমাদের বের করে দিয়েছে।’
৬১ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি কৃষক (যাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে) আরও বলেন, ‘আমরা এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চলে এসেছি। জলপাই বাছাই করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। জলপাই তোলার চেষ্টাকারী প্রত্যেক কৃষককে গুলি করা হয়েছে। যদি আমরা আরও অপেক্ষা করি, জলপাই নষ্ট হয়ে যাবে এবং এ থেকে যে তেল তৈরি হবে তা খাওয়া যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০টি জমির মালিক। কিন্তু এখনো একটি জমি থেকেও ফসল তুলতে পারিনি।’
কয়েক দিন আগে তুরমুস আইয়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামবাসীদের ৫০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে সেনাবাহিনী। কারণ সেগুলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বর্গমিটার জমির ফসল কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাবি বলেন, ‘এসব জমিতে উৎপাদিত জলপাই থেকে প্রায় ৭০ হাজার লিটার অলিভ অয়েল উৎপাদন করতে পারতাম।’
মিশাল আল-কুক (৪৩) নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন এবং জমির দেখাশোনা ও চাষাবাদ করতে দুই বছর আগে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। ‘এ বছর আমরা গ্রামের পূর্বের সমতল অঞ্চলে গম চাষে একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ দখলদার বাহিনী সেখানে কাজ করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু এখন বীজ রোপণের মৌসুম। আমাদের দ্রুত রোপণ করতে হবে।’ তিনি জানান, গম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামবাসীর জন্য এটি একটি প্রধান ফসল। তিনি গম ও বার্লির বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু সেগুলো রোপণ করতে পারবেন কি না, তা জানেন না।
ইসরায়েলিদের হাতে জলপাই বাগান ধ্বংস হচ্ছে—এটা এমন একটি সত্যের মুখোশ উন্মোচন করে, যা পশ্চিমের অনেকেই জানে না। এটা প্রায়ই শোনা যায় যে ইসরায়েলিরা দ্বৈত মার্কিন নাগরিকত্ব ধারণ করে। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের সম্পর্কে তেমন কিছু শুনি না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে আনুমানিক ৪৫ থেকে ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি আমেরিকান বসবাস করেন।
যা-ই হোক, এই সংখ্যা ইসরায়েলকে থামাতে পারেনি। বর্ণবাদী রাষ্ট্রটি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যেমন আচরণ করে, আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও একই আচরণ করে। মার্কিন নাগরিক বলে বিশেষ কোনো সুবিধা তাঁরা পান না। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের পশ্চিম তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয় ইসরায়েল, এটি একটি সাম্প্রতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যে চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নাগরিকেরা ভিসা ছাড়াই অন্য দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
রাবির মতে, তুরমুস আইয়া গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, কিন্তু মার্কিন সরকার তাদের কোনো সুরক্ষা দেয় না। মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কিছু গ্রামবাসী মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নিজস্ব জমিতে কাজ করার জন্য সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তবে দূতাবাস বলেছে, তারা কেবল তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করতে পারে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ভিসা না দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু রাবির মতে, ‘এটা নিছক প্রচার। বাইডেনের প্রকৃত অবস্থান তখনই স্পষ্ট হয়,যখন তিনি বলেছিলেন যে যদি ইসরায়েল না থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এটি তৈরি করতে হবে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যোগসাজশকেই বোঝায়।’
আবলা লাফি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলি ‘হয়রানির’ লক্ষ্য হলো চুরি করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ বসতিগুলোর কাছাকাছি ফিলিস্তিনি জমি দখল করা যেখানে শত শত বছর ধরে চাষ করা জলপাইগাছ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তাঁদের এর ওপর কোনো অধিকার বা মালিকানা নেই।’
লাফি বলেন, ‘প্রথম ইহুদি বসতি স্থাপনের পর থেকে প্রতিবছর আমরা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সালে যখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। কারিউত ও তুরমুস আইয়ায় দখল করা জমিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে তারা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।’
রাবি জানান, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধের আগেও বসতি স্থাপনকারীরা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জমি বাজেয়াপ্ত, তাঁর এবং অন্যান্য গ্রামে জলপাইগাছ কাটা, পুড়িয়ে ফেলাসহ নানা অত্যাচার ক্রমাগত চালিয়েছে। বসতি স্থাপনকারীরা সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণটি করেছিল এ বছরের ২১ জুন। ওই দিন শত শত বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালায়। তারা ওমর কুতাইন নামের একজনকে হত্যা করে, কয়েক ডজন বাড়ি এবং গাড়ি, শত শত জলপাইগাছ এবং গমের খেত পুড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ধ্বংসযজ্ঞ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল, কিন্তু কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
রাবি বলেন, ‘এসব হামলা কৃষকদের জমিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি, পারবেও না। যদি আমরা চাষ করা বন্ধ করি, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জমিটি কোনো মানুষের জমি নয় বলে এটি বাজেয়াপ্ত করে বসতি স্থাপনকারীদের দিয়ে দেবে। তারা আগেও এটা করেছে।’
১৯৭৯ থেকে ইসরায়েল ১৮৫৮ সালের অটোমান ভূমি আইনের উদাহরণ টেনে তা কাজে লাগায়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি মালিকাধীন জমি চাষ না করে তিন বছর ফেলে রাখা হলে তা সরকারি খাসজমিতে পরিণত হবে।
আবলা লাফি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইসরায়েলি এই আক্রমণ ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জমি চাষ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। এসব জমি কৃষকদের ঘামে এবং শহীদদের রক্তে সিক্ত। এটি রক্ষা করতে গিয়ে জোদা আওয়াদ ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন এবং ১৯৯৩ সালে খামিস আবু আওয়াদ লাঙল চালাতে গিয়ে একজন বসতি স্থাপনকারীর হাতে নিহত হন। ফিলিস্তিনের মন্ত্রী জিয়াদ আবু আইনও ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। এই গ্রীষ্মে ওমর আল-কুতাইন শহীদ হয়েছেন। আমরা সেই জমি ছেড়ে দিতে পারি না, যা রক্ষা করতে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমরা এসব জমি আমাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেব।’
ফরিদ তামাল্লাহ, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
‘এটা আমাদের জমি’, বলতে বলতে চোখে আগুন ঠিকরে বেরোয় আবলা লাফির। ‘কী সাহস তাঁদের! আমাদের জমিতে ঢুকতে ও জলপাই পাড়তে বাধা দেয়, যেন আমরা চুরি করতে ঢুকেছি। আমরা নিজ হাতে এসব গাছ লাগিয়েছি। চোর তো দখলদারেরা, আমরা এই জমির মালিক!’
অক্টোবর ও নভেম্বর হলো ফিলিস্তিনি কৃষকদের জলপাই আবাদের প্রধান মৌসুম। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার পরিবারের জীবন ও জীবিকা এই জলাপাইর ওপর নির্ভরশীল। অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ কৃষিজমিতে জলপাই চাষ হয়। সেখানে প্রায় ১ কোটি জলপাইগাছ রয়েছে, যা থেকে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদিত হয়।
গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জলপাইবাগানে যেতে বাধা দিচ্ছে। গত মাসে দখলদার রাষ্ট্রের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জলপাই আবাদ নিষিদ্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্মোট্রিচের মতে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের জন্য নিশ্চিত নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে হবে, যার আশপাশে ফিলিস্তিনিদের নামগন্ধ পর্যন্ত থাকবে না। সেখানে শুধুই দখলদারেরা থাকবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এই নীতি বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলাচল এবং প্রবেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জলপাইবাগানে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে; বিশেষ করে বসতিগুলোর কাছাকাছি জমিতে। ‘এ বছরের নভেম্বরের শেষে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ৮ লাখ বর্গমিটার জমিতে জলপাইয়ের চাষ হয়নি।’
ফিলিস্তিনিদের জন্য জলপাই শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য, অদম্য প্রতিরোধ এবং জমির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের প্রতীক। জলপাইগাছ তাদের আত্মা ও পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
আবলা লাফি বলেন, ‘একসময় আমরা পুরো পরিবার, নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো সবাই মিলে জমিতে কাজ করতে যেতাম। আনন্দে কেটে যেত সময়। কারণ চাষাবাদ করা মানে ভূমির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘জলপাই মৌসুম আমাদের জন্য ঈদের মতো; আমরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এ সময়টা উপভোগ করি, এমনকি এ সময় খাবারের স্বাদও আলাদা হয়।’
‘কিন্তু ফিলিস্তিনি জমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার পর থেকে আমাদের জলপাই মৌসুম কাটে ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কে। বসতি স্থাপনকারী ও সেনাবাহিনীর ভয়ে আমরা ভীত। গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর সেই উদ্বেগ আর দুঃখ আরও বেড়ে গেছে।’
তুরমুস আইয়া গ্রামের কৃষি কমিটির প্রধান নিদাল রাবি নিশ্চিত করেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও তাদের রক্ষীরা নিজেদের বসতির কাছের জলপাইবাগানগুলোতে ফিলিস্তিনিদের যেতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জমি থেকে আমাদেরই তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের জমিতে ঢোকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা বন্দুকের মুখে আমাদের বের করে দিয়েছে।’
৬১ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি কৃষক (যাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে) আরও বলেন, ‘আমরা এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চলে এসেছি। জলপাই বাছাই করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। জলপাই তোলার চেষ্টাকারী প্রত্যেক কৃষককে গুলি করা হয়েছে। যদি আমরা আরও অপেক্ষা করি, জলপাই নষ্ট হয়ে যাবে এবং এ থেকে যে তেল তৈরি হবে তা খাওয়া যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০টি জমির মালিক। কিন্তু এখনো একটি জমি থেকেও ফসল তুলতে পারিনি।’
কয়েক দিন আগে তুরমুস আইয়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামবাসীদের ৫০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে সেনাবাহিনী। কারণ সেগুলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বর্গমিটার জমির ফসল কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাবি বলেন, ‘এসব জমিতে উৎপাদিত জলপাই থেকে প্রায় ৭০ হাজার লিটার অলিভ অয়েল উৎপাদন করতে পারতাম।’
মিশাল আল-কুক (৪৩) নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন এবং জমির দেখাশোনা ও চাষাবাদ করতে দুই বছর আগে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। ‘এ বছর আমরা গ্রামের পূর্বের সমতল অঞ্চলে গম চাষে একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ দখলদার বাহিনী সেখানে কাজ করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু এখন বীজ রোপণের মৌসুম। আমাদের দ্রুত রোপণ করতে হবে।’ তিনি জানান, গম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামবাসীর জন্য এটি একটি প্রধান ফসল। তিনি গম ও বার্লির বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু সেগুলো রোপণ করতে পারবেন কি না, তা জানেন না।
ইসরায়েলিদের হাতে জলপাই বাগান ধ্বংস হচ্ছে—এটা এমন একটি সত্যের মুখোশ উন্মোচন করে, যা পশ্চিমের অনেকেই জানে না। এটা প্রায়ই শোনা যায় যে ইসরায়েলিরা দ্বৈত মার্কিন নাগরিকত্ব ধারণ করে। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের সম্পর্কে তেমন কিছু শুনি না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে আনুমানিক ৪৫ থেকে ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি আমেরিকান বসবাস করেন।
যা-ই হোক, এই সংখ্যা ইসরায়েলকে থামাতে পারেনি। বর্ণবাদী রাষ্ট্রটি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যেমন আচরণ করে, আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও একই আচরণ করে। মার্কিন নাগরিক বলে বিশেষ কোনো সুবিধা তাঁরা পান না। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের পশ্চিম তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয় ইসরায়েল, এটি একটি সাম্প্রতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যে চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নাগরিকেরা ভিসা ছাড়াই অন্য দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
রাবির মতে, তুরমুস আইয়া গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, কিন্তু মার্কিন সরকার তাদের কোনো সুরক্ষা দেয় না। মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কিছু গ্রামবাসী মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নিজস্ব জমিতে কাজ করার জন্য সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তবে দূতাবাস বলেছে, তারা কেবল তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করতে পারে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ভিসা না দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু রাবির মতে, ‘এটা নিছক প্রচার। বাইডেনের প্রকৃত অবস্থান তখনই স্পষ্ট হয়,যখন তিনি বলেছিলেন যে যদি ইসরায়েল না থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এটি তৈরি করতে হবে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যোগসাজশকেই বোঝায়।’
আবলা লাফি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলি ‘হয়রানির’ লক্ষ্য হলো চুরি করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ বসতিগুলোর কাছাকাছি ফিলিস্তিনি জমি দখল করা যেখানে শত শত বছর ধরে চাষ করা জলপাইগাছ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তাঁদের এর ওপর কোনো অধিকার বা মালিকানা নেই।’
লাফি বলেন, ‘প্রথম ইহুদি বসতি স্থাপনের পর থেকে প্রতিবছর আমরা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সালে যখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। কারিউত ও তুরমুস আইয়ায় দখল করা জমিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে তারা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।’
রাবি জানান, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধের আগেও বসতি স্থাপনকারীরা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জমি বাজেয়াপ্ত, তাঁর এবং অন্যান্য গ্রামে জলপাইগাছ কাটা, পুড়িয়ে ফেলাসহ নানা অত্যাচার ক্রমাগত চালিয়েছে। বসতি স্থাপনকারীরা সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণটি করেছিল এ বছরের ২১ জুন। ওই দিন শত শত বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালায়। তারা ওমর কুতাইন নামের একজনকে হত্যা করে, কয়েক ডজন বাড়ি এবং গাড়ি, শত শত জলপাইগাছ এবং গমের খেত পুড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ধ্বংসযজ্ঞ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল, কিন্তু কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
রাবি বলেন, ‘এসব হামলা কৃষকদের জমিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি, পারবেও না। যদি আমরা চাষ করা বন্ধ করি, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জমিটি কোনো মানুষের জমি নয় বলে এটি বাজেয়াপ্ত করে বসতি স্থাপনকারীদের দিয়ে দেবে। তারা আগেও এটা করেছে।’
১৯৭৯ থেকে ইসরায়েল ১৮৫৮ সালের অটোমান ভূমি আইনের উদাহরণ টেনে তা কাজে লাগায়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি মালিকাধীন জমি চাষ না করে তিন বছর ফেলে রাখা হলে তা সরকারি খাসজমিতে পরিণত হবে।
আবলা লাফি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইসরায়েলি এই আক্রমণ ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জমি চাষ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। এসব জমি কৃষকদের ঘামে এবং শহীদদের রক্তে সিক্ত। এটি রক্ষা করতে গিয়ে জোদা আওয়াদ ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন এবং ১৯৯৩ সালে খামিস আবু আওয়াদ লাঙল চালাতে গিয়ে একজন বসতি স্থাপনকারীর হাতে নিহত হন। ফিলিস্তিনের মন্ত্রী জিয়াদ আবু আইনও ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। এই গ্রীষ্মে ওমর আল-কুতাইন শহীদ হয়েছেন। আমরা সেই জমি ছেড়ে দিতে পারি না, যা রক্ষা করতে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমরা এসব জমি আমাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেব।’
ফরিদ তামাল্লাহ, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
ফরিদ তামাল্লাহ

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
‘এটা আমাদের জমি’, বলতে বলতে চোখে আগুন ঠিকরে বেরোয় আবলা লাফির। ‘কী সাহস তাঁদের! আমাদের জমিতে ঢুকতে ও জলপাই পাড়তে বাধা দেয়, যেন আমরা চুরি করতে ঢুকেছি। আমরা নিজ হাতে এসব গাছ লাগিয়েছি। চোর তো দখলদারেরা, আমরা এই জমির মালিক!’
অক্টোবর ও নভেম্বর হলো ফিলিস্তিনি কৃষকদের জলপাই আবাদের প্রধান মৌসুম। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার পরিবারের জীবন ও জীবিকা এই জলাপাইর ওপর নির্ভরশীল। অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ কৃষিজমিতে জলপাই চাষ হয়। সেখানে প্রায় ১ কোটি জলপাইগাছ রয়েছে, যা থেকে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদিত হয়।
গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জলপাইবাগানে যেতে বাধা দিচ্ছে। গত মাসে দখলদার রাষ্ট্রের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জলপাই আবাদ নিষিদ্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্মোট্রিচের মতে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের জন্য নিশ্চিত নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে হবে, যার আশপাশে ফিলিস্তিনিদের নামগন্ধ পর্যন্ত থাকবে না। সেখানে শুধুই দখলদারেরা থাকবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এই নীতি বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলাচল এবং প্রবেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জলপাইবাগানে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে; বিশেষ করে বসতিগুলোর কাছাকাছি জমিতে। ‘এ বছরের নভেম্বরের শেষে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ৮ লাখ বর্গমিটার জমিতে জলপাইয়ের চাষ হয়নি।’
ফিলিস্তিনিদের জন্য জলপাই শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য, অদম্য প্রতিরোধ এবং জমির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের প্রতীক। জলপাইগাছ তাদের আত্মা ও পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
আবলা লাফি বলেন, ‘একসময় আমরা পুরো পরিবার, নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো সবাই মিলে জমিতে কাজ করতে যেতাম। আনন্দে কেটে যেত সময়। কারণ চাষাবাদ করা মানে ভূমির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘জলপাই মৌসুম আমাদের জন্য ঈদের মতো; আমরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এ সময়টা উপভোগ করি, এমনকি এ সময় খাবারের স্বাদও আলাদা হয়।’
‘কিন্তু ফিলিস্তিনি জমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার পর থেকে আমাদের জলপাই মৌসুম কাটে ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কে। বসতি স্থাপনকারী ও সেনাবাহিনীর ভয়ে আমরা ভীত। গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর সেই উদ্বেগ আর দুঃখ আরও বেড়ে গেছে।’
তুরমুস আইয়া গ্রামের কৃষি কমিটির প্রধান নিদাল রাবি নিশ্চিত করেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও তাদের রক্ষীরা নিজেদের বসতির কাছের জলপাইবাগানগুলোতে ফিলিস্তিনিদের যেতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জমি থেকে আমাদেরই তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের জমিতে ঢোকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা বন্দুকের মুখে আমাদের বের করে দিয়েছে।’
৬১ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি কৃষক (যাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে) আরও বলেন, ‘আমরা এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চলে এসেছি। জলপাই বাছাই করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। জলপাই তোলার চেষ্টাকারী প্রত্যেক কৃষককে গুলি করা হয়েছে। যদি আমরা আরও অপেক্ষা করি, জলপাই নষ্ট হয়ে যাবে এবং এ থেকে যে তেল তৈরি হবে তা খাওয়া যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০টি জমির মালিক। কিন্তু এখনো একটি জমি থেকেও ফসল তুলতে পারিনি।’
কয়েক দিন আগে তুরমুস আইয়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামবাসীদের ৫০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে সেনাবাহিনী। কারণ সেগুলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বর্গমিটার জমির ফসল কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাবি বলেন, ‘এসব জমিতে উৎপাদিত জলপাই থেকে প্রায় ৭০ হাজার লিটার অলিভ অয়েল উৎপাদন করতে পারতাম।’
মিশাল আল-কুক (৪৩) নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন এবং জমির দেখাশোনা ও চাষাবাদ করতে দুই বছর আগে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। ‘এ বছর আমরা গ্রামের পূর্বের সমতল অঞ্চলে গম চাষে একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ দখলদার বাহিনী সেখানে কাজ করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু এখন বীজ রোপণের মৌসুম। আমাদের দ্রুত রোপণ করতে হবে।’ তিনি জানান, গম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামবাসীর জন্য এটি একটি প্রধান ফসল। তিনি গম ও বার্লির বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু সেগুলো রোপণ করতে পারবেন কি না, তা জানেন না।
ইসরায়েলিদের হাতে জলপাই বাগান ধ্বংস হচ্ছে—এটা এমন একটি সত্যের মুখোশ উন্মোচন করে, যা পশ্চিমের অনেকেই জানে না। এটা প্রায়ই শোনা যায় যে ইসরায়েলিরা দ্বৈত মার্কিন নাগরিকত্ব ধারণ করে। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের সম্পর্কে তেমন কিছু শুনি না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে আনুমানিক ৪৫ থেকে ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি আমেরিকান বসবাস করেন।
যা-ই হোক, এই সংখ্যা ইসরায়েলকে থামাতে পারেনি। বর্ণবাদী রাষ্ট্রটি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যেমন আচরণ করে, আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও একই আচরণ করে। মার্কিন নাগরিক বলে বিশেষ কোনো সুবিধা তাঁরা পান না। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের পশ্চিম তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয় ইসরায়েল, এটি একটি সাম্প্রতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যে চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নাগরিকেরা ভিসা ছাড়াই অন্য দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
রাবির মতে, তুরমুস আইয়া গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, কিন্তু মার্কিন সরকার তাদের কোনো সুরক্ষা দেয় না। মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কিছু গ্রামবাসী মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নিজস্ব জমিতে কাজ করার জন্য সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তবে দূতাবাস বলেছে, তারা কেবল তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করতে পারে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ভিসা না দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু রাবির মতে, ‘এটা নিছক প্রচার। বাইডেনের প্রকৃত অবস্থান তখনই স্পষ্ট হয়,যখন তিনি বলেছিলেন যে যদি ইসরায়েল না থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এটি তৈরি করতে হবে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যোগসাজশকেই বোঝায়।’
আবলা লাফি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলি ‘হয়রানির’ লক্ষ্য হলো চুরি করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ বসতিগুলোর কাছাকাছি ফিলিস্তিনি জমি দখল করা যেখানে শত শত বছর ধরে চাষ করা জলপাইগাছ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তাঁদের এর ওপর কোনো অধিকার বা মালিকানা নেই।’
লাফি বলেন, ‘প্রথম ইহুদি বসতি স্থাপনের পর থেকে প্রতিবছর আমরা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সালে যখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। কারিউত ও তুরমুস আইয়ায় দখল করা জমিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে তারা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।’
রাবি জানান, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধের আগেও বসতি স্থাপনকারীরা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জমি বাজেয়াপ্ত, তাঁর এবং অন্যান্য গ্রামে জলপাইগাছ কাটা, পুড়িয়ে ফেলাসহ নানা অত্যাচার ক্রমাগত চালিয়েছে। বসতি স্থাপনকারীরা সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণটি করেছিল এ বছরের ২১ জুন। ওই দিন শত শত বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালায়। তারা ওমর কুতাইন নামের একজনকে হত্যা করে, কয়েক ডজন বাড়ি এবং গাড়ি, শত শত জলপাইগাছ এবং গমের খেত পুড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ধ্বংসযজ্ঞ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল, কিন্তু কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
রাবি বলেন, ‘এসব হামলা কৃষকদের জমিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি, পারবেও না। যদি আমরা চাষ করা বন্ধ করি, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জমিটি কোনো মানুষের জমি নয় বলে এটি বাজেয়াপ্ত করে বসতি স্থাপনকারীদের দিয়ে দেবে। তারা আগেও এটা করেছে।’
১৯৭৯ থেকে ইসরায়েল ১৮৫৮ সালের অটোমান ভূমি আইনের উদাহরণ টেনে তা কাজে লাগায়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি মালিকাধীন জমি চাষ না করে তিন বছর ফেলে রাখা হলে তা সরকারি খাসজমিতে পরিণত হবে।
আবলা লাফি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইসরায়েলি এই আক্রমণ ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জমি চাষ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। এসব জমি কৃষকদের ঘামে এবং শহীদদের রক্তে সিক্ত। এটি রক্ষা করতে গিয়ে জোদা আওয়াদ ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন এবং ১৯৯৩ সালে খামিস আবু আওয়াদ লাঙল চালাতে গিয়ে একজন বসতি স্থাপনকারীর হাতে নিহত হন। ফিলিস্তিনের মন্ত্রী জিয়াদ আবু আইনও ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। এই গ্রীষ্মে ওমর আল-কুতাইন শহীদ হয়েছেন। আমরা সেই জমি ছেড়ে দিতে পারি না, যা রক্ষা করতে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমরা এসব জমি আমাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেব।’
ফরিদ তামাল্লাহ, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
‘এটা আমাদের জমি’, বলতে বলতে চোখে আগুন ঠিকরে বেরোয় আবলা লাফির। ‘কী সাহস তাঁদের! আমাদের জমিতে ঢুকতে ও জলপাই পাড়তে বাধা দেয়, যেন আমরা চুরি করতে ঢুকেছি। আমরা নিজ হাতে এসব গাছ লাগিয়েছি। চোর তো দখলদারেরা, আমরা এই জমির মালিক!’
অক্টোবর ও নভেম্বর হলো ফিলিস্তিনি কৃষকদের জলপাই আবাদের প্রধান মৌসুম। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার পরিবারের জীবন ও জীবিকা এই জলাপাইর ওপর নির্ভরশীল। অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ কৃষিজমিতে জলপাই চাষ হয়। সেখানে প্রায় ১ কোটি জলপাইগাছ রয়েছে, যা থেকে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদিত হয়।
গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জলপাইবাগানে যেতে বাধা দিচ্ছে। গত মাসে দখলদার রাষ্ট্রের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জলপাই আবাদ নিষিদ্ধ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্মোট্রিচের মতে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের জন্য নিশ্চিত নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে হবে, যার আশপাশে ফিলিস্তিনিদের নামগন্ধ পর্যন্ত থাকবে না। সেখানে শুধুই দখলদারেরা থাকবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এই নীতি বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলাচল এবং প্রবেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জলপাইবাগানে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে; বিশেষ করে বসতিগুলোর কাছাকাছি জমিতে। ‘এ বছরের নভেম্বরের শেষে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ৮ লাখ বর্গমিটার জমিতে জলপাইয়ের চাষ হয়নি।’
ফিলিস্তিনিদের জন্য জলপাই শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য, অদম্য প্রতিরোধ এবং জমির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের প্রতীক। জলপাইগাছ তাদের আত্মা ও পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
আবলা লাফি বলেন, ‘একসময় আমরা পুরো পরিবার, নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো সবাই মিলে জমিতে কাজ করতে যেতাম। আনন্দে কেটে যেত সময়। কারণ চাষাবাদ করা মানে ভূমির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘জলপাই মৌসুম আমাদের জন্য ঈদের মতো; আমরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে এ সময়টা উপভোগ করি, এমনকি এ সময় খাবারের স্বাদও আলাদা হয়।’
‘কিন্তু ফিলিস্তিনি জমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে ওঠার পর থেকে আমাদের জলপাই মৌসুম কাটে ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কে। বসতি স্থাপনকারী ও সেনাবাহিনীর ভয়ে আমরা ভীত। গাজায় যুদ্ধের কারণে এ বছর সেই উদ্বেগ আর দুঃখ আরও বেড়ে গেছে।’
তুরমুস আইয়া গ্রামের কৃষি কমিটির প্রধান নিদাল রাবি নিশ্চিত করেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও তাদের রক্ষীরা নিজেদের বসতির কাছের জলপাইবাগানগুলোতে ফিলিস্তিনিদের যেতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জমি থেকে আমাদেরই তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের জমিতে ঢোকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা বন্দুকের মুখে আমাদের বের করে দিয়েছে।’
৬১ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি কৃষক (যাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে) আরও বলেন, ‘আমরা এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চলে এসেছি। জলপাই বাছাই করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। জলপাই তোলার চেষ্টাকারী প্রত্যেক কৃষককে গুলি করা হয়েছে। যদি আমরা আরও অপেক্ষা করি, জলপাই নষ্ট হয়ে যাবে এবং এ থেকে যে তেল তৈরি হবে তা খাওয়া যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০টি জমির মালিক। কিন্তু এখনো একটি জমি থেকেও ফসল তুলতে পারিনি।’
কয়েক দিন আগে তুরমুস আইয়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামবাসীদের ৫০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে সেনাবাহিনী। কারণ সেগুলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বর্গমিটার জমির ফসল কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাবি বলেন, ‘এসব জমিতে উৎপাদিত জলপাই থেকে প্রায় ৭০ হাজার লিটার অলিভ অয়েল উৎপাদন করতে পারতাম।’
মিশাল আল-কুক (৪৩) নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন এবং জমির দেখাশোনা ও চাষাবাদ করতে দুই বছর আগে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। ‘এ বছর আমরা গ্রামের পূর্বের সমতল অঞ্চলে গম চাষে একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ দখলদার বাহিনী সেখানে কাজ করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু এখন বীজ রোপণের মৌসুম। আমাদের দ্রুত রোপণ করতে হবে।’ তিনি জানান, গম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামবাসীর জন্য এটি একটি প্রধান ফসল। তিনি গম ও বার্লির বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু সেগুলো রোপণ করতে পারবেন কি না, তা জানেন না।
ইসরায়েলিদের হাতে জলপাই বাগান ধ্বংস হচ্ছে—এটা এমন একটি সত্যের মুখোশ উন্মোচন করে, যা পশ্চিমের অনেকেই জানে না। এটা প্রায়ই শোনা যায় যে ইসরায়েলিরা দ্বৈত মার্কিন নাগরিকত্ব ধারণ করে। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের সম্পর্কে তেমন কিছু শুনি না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে আনুমানিক ৪৫ থেকে ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি আমেরিকান বসবাস করেন।
যা-ই হোক, এই সংখ্যা ইসরায়েলকে থামাতে পারেনি। বর্ণবাদী রাষ্ট্রটি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যেমন আচরণ করে, আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও একই আচরণ করে। মার্কিন নাগরিক বলে বিশেষ কোনো সুবিধা তাঁরা পান না। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের পশ্চিম তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয় ইসরায়েল, এটি একটি সাম্প্রতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যে চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নাগরিকেরা ভিসা ছাড়াই অন্য দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
রাবির মতে, তুরমুস আইয়া গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, কিন্তু মার্কিন সরকার তাদের কোনো সুরক্ষা দেয় না। মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কিছু গ্রামবাসী মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নিজস্ব জমিতে কাজ করার জন্য সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তবে দূতাবাস বলেছে, তারা কেবল তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করতে পারে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ভিসা না দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু রাবির মতে, ‘এটা নিছক প্রচার। বাইডেনের প্রকৃত অবস্থান তখনই স্পষ্ট হয়,যখন তিনি বলেছিলেন যে যদি ইসরায়েল না থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এটি তৈরি করতে হবে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যোগসাজশকেই বোঝায়।’
আবলা লাফি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলি ‘হয়রানির’ লক্ষ্য হলো চুরি করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ বসতিগুলোর কাছাকাছি ফিলিস্তিনি জমি দখল করা যেখানে শত শত বছর ধরে চাষ করা জলপাইগাছ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তাঁদের এর ওপর কোনো অধিকার বা মালিকানা নেই।’
লাফি বলেন, ‘প্রথম ইহুদি বসতি স্থাপনের পর থেকে প্রতিবছর আমরা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সালে যখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। কারিউত ও তুরমুস আইয়ায় দখল করা জমিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে তারা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।’
রাবি জানান, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধের আগেও বসতি স্থাপনকারীরা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জমি বাজেয়াপ্ত, তাঁর এবং অন্যান্য গ্রামে জলপাইগাছ কাটা, পুড়িয়ে ফেলাসহ নানা অত্যাচার ক্রমাগত চালিয়েছে। বসতি স্থাপনকারীরা সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণটি করেছিল এ বছরের ২১ জুন। ওই দিন শত শত বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালায়। তারা ওমর কুতাইন নামের একজনকে হত্যা করে, কয়েক ডজন বাড়ি এবং গাড়ি, শত শত জলপাইগাছ এবং গমের খেত পুড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ধ্বংসযজ্ঞ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল, কিন্তু কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
রাবি বলেন, ‘এসব হামলা কৃষকদের জমিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি, পারবেও না। যদি আমরা চাষ করা বন্ধ করি, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জমিটি কোনো মানুষের জমি নয় বলে এটি বাজেয়াপ্ত করে বসতি স্থাপনকারীদের দিয়ে দেবে। তারা আগেও এটা করেছে।’
১৯৭৯ থেকে ইসরায়েল ১৮৫৮ সালের অটোমান ভূমি আইনের উদাহরণ টেনে তা কাজে লাগায়। ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি মালিকাধীন জমি চাষ না করে তিন বছর ফেলে রাখা হলে তা সরকারি খাসজমিতে পরিণত হবে।
আবলা লাফি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইসরায়েলি এই আক্রমণ ফিলিস্তিনি কৃষকদের তাঁদের জমি চাষ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। এসব জমি কৃষকদের ঘামে এবং শহীদদের রক্তে সিক্ত। এটি রক্ষা করতে গিয়ে জোদা আওয়াদ ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন এবং ১৯৯৩ সালে খামিস আবু আওয়াদ লাঙল চালাতে গিয়ে একজন বসতি স্থাপনকারীর হাতে নিহত হন। ফিলিস্তিনের মন্ত্রী জিয়াদ আবু আইনও ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। এই গ্রীষ্মে ওমর আল-কুতাইন শহীদ হয়েছেন। আমরা সেই জমি ছেড়ে দিতে পারি না, যা রক্ষা করতে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমরা এসব জমি আমাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেব।’
ফরিদ তামাল্লাহ, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক
(মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আবলা লাফি, ৫৯ বছর বয়স। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর উত্তরে তুরমুস আইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যখন তাঁর জলপাইবাগানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে এক অনির্বচনীয় আবেগ ঝরে পড়ছিল। এই জলপাই চাষে গ্রামবাসীদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫