মামুনুর রশীদ

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
প্রমোশন পেয়ে আমাদের হাতে আসত নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো। আমরা অপেক্ষা করতাম পরবর্তী ডিসেম্বরের জন্য। এই সময়ে বাংলার ফসলের মাঠে নতুন ধানের গন্ধে শুরু হতো পিঠা-পুলির আয়োজন। নানা ধরনের লোকসংগীতের সময় ছিল এটা। যাত্রা পালাগান, কবিগান, উত্তরবঙ্গের পালাটিয়া, ভাওয়াইয়া এসব গানের সুর পথে-প্রান্তরে ভাসতে থাকত।
আমাদের আন্দোলনের মাসও ছিল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সেভাবেই আমাদের জীবনে এসেছিল ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাসের যুদ্ধের পর এক রক্তাক্ত বিজয়। একদিকে আকাশে-বাতাসে সর্বত্র বিজয়ের ধ্বনি আর অন্যদিকে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। এই সবকিছুর পরেই আমাদের জীবনে এল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যে স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং কোনো বিদেশি শাসন নয়, একেবারেই বাঙালির নিজস্ব শাসনের রাষ্ট্র। বাঙালি কোনো দিন স্বাধীন ছিল না। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাঙালিরা বিদেশি শাসিত। সর্বশেষ শাসন পাঞ্জাবির। আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি, বিদেশি শাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও আমাদের কৃষক ন্যূনতম অর্থ পেতেন, যা দিয়ে শুধু বেঁচে থাকা যেত।
পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল অত্যন্ত সুফলা, বঙ্গের গরিব মানুষেরাও দুবেলা খেতে পায় এবং এতেই তারা সুখী। তারা পরিশ্রমী এবং খাবারের অতিরিক্ত তেমন কোনো চাহিদা নেই। সেই সৈনিক সে সময়ের শাসনব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, সুশাসন ও স্বাধীনতার অনুপস্থিতি এ দেশের মানুষকে আয়েশে দিন কাটাতে দেয়নি। প্রাচ্য শাসকদের মনোভাব হচ্ছে প্রজাদের গোলাম করে রাখা। অতিরিক্ত শাসন নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রজাকুল নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার হতো।
ষাটের দশকে আমরা সাধারণ মানুষের নিদারুণ কষ্ট দেখেছি; বিশেষ করে কৃষকদের। আমাদের পাট সারা বিশ্বে রপ্তানি হতো। বিপুল অর্থ আসত বিদেশ থেকে। কিন্তু সেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আমাদের কোনো হাত ছিল না। কাগজ উৎপাদন করেও বাংলার মানুষকে উচ্চমূল্যেই কাগজ কিনতে হতো। এটা ছিল একটি নয়া ঔপনিবেশিক অবস্থা। এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও করা হয়েছিল; কিন্তু তখন সুশাসনের অভাবে এগুলো কার্যকর হতে পারেনি।
এরপর আসে সেনাশাসন। সেনাশাসনে দীর্ঘ সময় এক জবাবদিহিবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চলে সোনার বাংলায়। আবারও রাজপথে আন্দোলন। সেই স্বৈরাচারী শাসনেরও অবসান হয় এই ডিসেম্বরে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর মধ্যেই জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। একটা সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। আবার সেই বিদেশি শাসনের সংস্কৃতিকে শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করে ফেলেছে। একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি তিনটি ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা বিভক্ত হয়েছে। ইংরেজি উচ্চবিত্তদের, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের বাংলা এবং নিম্নবিত্তদের একটা বড় অংশ আরবিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, তা থেকে রাষ্ট্র সরে গেল। ফলে প্রাথমিকের অর্ধেক শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষায় দুর্বল হয়ে পড়ল। অন্যদিকে যারা ইংরেজি শিক্ষায় গেল, সেই সব শিক্ষার্থী ইংরেজিটা ভালো বলতে পারল, কিন্তু মাতৃভাষায় একেবারে কাঁচাই রয়ে গেল এবং এই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা দেশে থাকতে চাইল না। তারা অভিবাসনমুখী।
দেশ পরিচালনার জন্য প্রকৃত শিক্ষা এবং মেধার প্রয়োজন হয়। ব্যাপকভাবে অভিবাসন এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে সর্বক্ষেত্রেই একটা মেধার সংকট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষাপদ্ধতি এবং নিয়োগপদ্ধতিতে কোনো সংস্কার না হওয়ায় সমাজে প্রকৃত শিক্ষা ও যথাযথ নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। যার ফলাফল রাজনীতি, প্রশাসন এবং শিক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের লগ্নিও দীর্ঘস্থায়ী। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিও রাজনীতিতে এবং প্রশাসনে খুঁজে পাওয়া যায় না।
শিক্ষা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু সেই শিক্ষা যদি প্রকৃত শিক্ষা না হয়ে শুধু নম্বর ও সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা অপচয় ও শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। আজ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব, যেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিও দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কলেজেও এখন মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। আবার দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর তাঁদের চাকরির সংস্থানও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উচ্চতর সরকারি চাকরিতে পদের সংখ্যা কয়েক হাজার, কিন্তু প্রার্থী লাখ লাখ। ফলে বিপুল পরিমাণ বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
প্রকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা এত বেশি মাস্টার্স ডিগ্রি পেতেন না। যাঁরা পেতেন তাঁদের একটা কাজের সংস্থানও হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কোথাও প্রয়োজন নেই। তাই দেখা যায় রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন। তাঁর অর্জিত শিক্ষা ব্যাংকে কোনো কাজেই লাগছে না। এই যে অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষা প্রশাসন কোনো সুনির্দিষ্ট পথও দেখাতে পারছে না। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে হাজার হাজার বিদ্যাপীঠ একধরনের শিক্ষিত মানুষ তৈরি করছে বটে, কিন্তু এই শিক্ষিত মানুষেরা সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারছেন না।
এই সুযোগে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই ছাত্ররাজনীতি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বা মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল, সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা অনেকেই বিপুল অর্থের মালিক। ছাত্র থাকাকালেই কেউ যদি এত অর্থের মালিক হন, তবে শিক্ষার সমূহ উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য। একটি স্বাধীন দেশে মানুষের বড় অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসার অধিকার পাওয়া। স্বাস্থ্যের পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি যৌক্তিক পুষ্টির ব্যবস্থা। বহুকাল বিদেশি শোষণের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যথার্থ পুষ্টি পায়নি এবং যথেষ্ট চিকিৎসাও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। পাকিস্তান আমলে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর যদিও চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত হয়েছে; তবু এখনো সেটা অপ্রতুল। যেকোনো মহামারি এলে আমরা অপ্রস্তুত চিকিৎসাব্যবস্থা দেখতে পাই। সাম্প্রতিককালে করোনা ও ডেঙ্গু—এই দুটি মহামারিতেই এর প্রমাণ মেলে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে চিকিৎসাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দেশের রোগীদের বিদেশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্রের যথাযথ মনোযোগ প্রয়োজন ছিল এবং প্রচুর আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্যে গিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। সব স্বাধীন রাষ্ট্রে এই প্রথাই চালু আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বায়ান্ন বছরে রাজনীতিবিদদের তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পীঠস্থান সংসদ অধিকাংশ সময়ই অকার্যকর থেকেছে। এ কারণেই সমাজে কোনো সংলাপের প্রথা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংলাপের খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অমানবিক এবং একধরনের অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে।
ডিসেম্বরে এই বিজয়ের মাসে এসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা শুধু কি ভাবব, নাকি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেব?

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
প্রমোশন পেয়ে আমাদের হাতে আসত নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো। আমরা অপেক্ষা করতাম পরবর্তী ডিসেম্বরের জন্য। এই সময়ে বাংলার ফসলের মাঠে নতুন ধানের গন্ধে শুরু হতো পিঠা-পুলির আয়োজন। নানা ধরনের লোকসংগীতের সময় ছিল এটা। যাত্রা পালাগান, কবিগান, উত্তরবঙ্গের পালাটিয়া, ভাওয়াইয়া এসব গানের সুর পথে-প্রান্তরে ভাসতে থাকত।
আমাদের আন্দোলনের মাসও ছিল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সেভাবেই আমাদের জীবনে এসেছিল ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাসের যুদ্ধের পর এক রক্তাক্ত বিজয়। একদিকে আকাশে-বাতাসে সর্বত্র বিজয়ের ধ্বনি আর অন্যদিকে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। এই সবকিছুর পরেই আমাদের জীবনে এল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যে স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং কোনো বিদেশি শাসন নয়, একেবারেই বাঙালির নিজস্ব শাসনের রাষ্ট্র। বাঙালি কোনো দিন স্বাধীন ছিল না। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাঙালিরা বিদেশি শাসিত। সর্বশেষ শাসন পাঞ্জাবির। আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি, বিদেশি শাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও আমাদের কৃষক ন্যূনতম অর্থ পেতেন, যা দিয়ে শুধু বেঁচে থাকা যেত।
পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল অত্যন্ত সুফলা, বঙ্গের গরিব মানুষেরাও দুবেলা খেতে পায় এবং এতেই তারা সুখী। তারা পরিশ্রমী এবং খাবারের অতিরিক্ত তেমন কোনো চাহিদা নেই। সেই সৈনিক সে সময়ের শাসনব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, সুশাসন ও স্বাধীনতার অনুপস্থিতি এ দেশের মানুষকে আয়েশে দিন কাটাতে দেয়নি। প্রাচ্য শাসকদের মনোভাব হচ্ছে প্রজাদের গোলাম করে রাখা। অতিরিক্ত শাসন নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রজাকুল নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার হতো।
ষাটের দশকে আমরা সাধারণ মানুষের নিদারুণ কষ্ট দেখেছি; বিশেষ করে কৃষকদের। আমাদের পাট সারা বিশ্বে রপ্তানি হতো। বিপুল অর্থ আসত বিদেশ থেকে। কিন্তু সেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আমাদের কোনো হাত ছিল না। কাগজ উৎপাদন করেও বাংলার মানুষকে উচ্চমূল্যেই কাগজ কিনতে হতো। এটা ছিল একটি নয়া ঔপনিবেশিক অবস্থা। এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও করা হয়েছিল; কিন্তু তখন সুশাসনের অভাবে এগুলো কার্যকর হতে পারেনি।
এরপর আসে সেনাশাসন। সেনাশাসনে দীর্ঘ সময় এক জবাবদিহিবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চলে সোনার বাংলায়। আবারও রাজপথে আন্দোলন। সেই স্বৈরাচারী শাসনেরও অবসান হয় এই ডিসেম্বরে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর মধ্যেই জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। একটা সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। আবার সেই বিদেশি শাসনের সংস্কৃতিকে শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করে ফেলেছে। একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি তিনটি ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা বিভক্ত হয়েছে। ইংরেজি উচ্চবিত্তদের, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের বাংলা এবং নিম্নবিত্তদের একটা বড় অংশ আরবিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, তা থেকে রাষ্ট্র সরে গেল। ফলে প্রাথমিকের অর্ধেক শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষায় দুর্বল হয়ে পড়ল। অন্যদিকে যারা ইংরেজি শিক্ষায় গেল, সেই সব শিক্ষার্থী ইংরেজিটা ভালো বলতে পারল, কিন্তু মাতৃভাষায় একেবারে কাঁচাই রয়ে গেল এবং এই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা দেশে থাকতে চাইল না। তারা অভিবাসনমুখী।
দেশ পরিচালনার জন্য প্রকৃত শিক্ষা এবং মেধার প্রয়োজন হয়। ব্যাপকভাবে অভিবাসন এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে সর্বক্ষেত্রেই একটা মেধার সংকট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষাপদ্ধতি এবং নিয়োগপদ্ধতিতে কোনো সংস্কার না হওয়ায় সমাজে প্রকৃত শিক্ষা ও যথাযথ নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। যার ফলাফল রাজনীতি, প্রশাসন এবং শিক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের লগ্নিও দীর্ঘস্থায়ী। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিও রাজনীতিতে এবং প্রশাসনে খুঁজে পাওয়া যায় না।
শিক্ষা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু সেই শিক্ষা যদি প্রকৃত শিক্ষা না হয়ে শুধু নম্বর ও সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা অপচয় ও শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। আজ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব, যেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিও দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কলেজেও এখন মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। আবার দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর তাঁদের চাকরির সংস্থানও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উচ্চতর সরকারি চাকরিতে পদের সংখ্যা কয়েক হাজার, কিন্তু প্রার্থী লাখ লাখ। ফলে বিপুল পরিমাণ বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
প্রকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা এত বেশি মাস্টার্স ডিগ্রি পেতেন না। যাঁরা পেতেন তাঁদের একটা কাজের সংস্থানও হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কোথাও প্রয়োজন নেই। তাই দেখা যায় রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন। তাঁর অর্জিত শিক্ষা ব্যাংকে কোনো কাজেই লাগছে না। এই যে অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষা প্রশাসন কোনো সুনির্দিষ্ট পথও দেখাতে পারছে না। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে হাজার হাজার বিদ্যাপীঠ একধরনের শিক্ষিত মানুষ তৈরি করছে বটে, কিন্তু এই শিক্ষিত মানুষেরা সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারছেন না।
এই সুযোগে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই ছাত্ররাজনীতি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বা মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল, সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা অনেকেই বিপুল অর্থের মালিক। ছাত্র থাকাকালেই কেউ যদি এত অর্থের মালিক হন, তবে শিক্ষার সমূহ উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য। একটি স্বাধীন দেশে মানুষের বড় অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসার অধিকার পাওয়া। স্বাস্থ্যের পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি যৌক্তিক পুষ্টির ব্যবস্থা। বহুকাল বিদেশি শোষণের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যথার্থ পুষ্টি পায়নি এবং যথেষ্ট চিকিৎসাও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। পাকিস্তান আমলে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর যদিও চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত হয়েছে; তবু এখনো সেটা অপ্রতুল। যেকোনো মহামারি এলে আমরা অপ্রস্তুত চিকিৎসাব্যবস্থা দেখতে পাই। সাম্প্রতিককালে করোনা ও ডেঙ্গু—এই দুটি মহামারিতেই এর প্রমাণ মেলে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে চিকিৎসাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দেশের রোগীদের বিদেশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্রের যথাযথ মনোযোগ প্রয়োজন ছিল এবং প্রচুর আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্যে গিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। সব স্বাধীন রাষ্ট্রে এই প্রথাই চালু আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বায়ান্ন বছরে রাজনীতিবিদদের তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পীঠস্থান সংসদ অধিকাংশ সময়ই অকার্যকর থেকেছে। এ কারণেই সমাজে কোনো সংলাপের প্রথা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংলাপের খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অমানবিক এবং একধরনের অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে।
ডিসেম্বরে এই বিজয়ের মাসে এসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা শুধু কি ভাবব, নাকি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেব?
মামুনুর রশীদ

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
প্রমোশন পেয়ে আমাদের হাতে আসত নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো। আমরা অপেক্ষা করতাম পরবর্তী ডিসেম্বরের জন্য। এই সময়ে বাংলার ফসলের মাঠে নতুন ধানের গন্ধে শুরু হতো পিঠা-পুলির আয়োজন। নানা ধরনের লোকসংগীতের সময় ছিল এটা। যাত্রা পালাগান, কবিগান, উত্তরবঙ্গের পালাটিয়া, ভাওয়াইয়া এসব গানের সুর পথে-প্রান্তরে ভাসতে থাকত।
আমাদের আন্দোলনের মাসও ছিল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সেভাবেই আমাদের জীবনে এসেছিল ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাসের যুদ্ধের পর এক রক্তাক্ত বিজয়। একদিকে আকাশে-বাতাসে সর্বত্র বিজয়ের ধ্বনি আর অন্যদিকে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। এই সবকিছুর পরেই আমাদের জীবনে এল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যে স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং কোনো বিদেশি শাসন নয়, একেবারেই বাঙালির নিজস্ব শাসনের রাষ্ট্র। বাঙালি কোনো দিন স্বাধীন ছিল না। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাঙালিরা বিদেশি শাসিত। সর্বশেষ শাসন পাঞ্জাবির। আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি, বিদেশি শাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও আমাদের কৃষক ন্যূনতম অর্থ পেতেন, যা দিয়ে শুধু বেঁচে থাকা যেত।
পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল অত্যন্ত সুফলা, বঙ্গের গরিব মানুষেরাও দুবেলা খেতে পায় এবং এতেই তারা সুখী। তারা পরিশ্রমী এবং খাবারের অতিরিক্ত তেমন কোনো চাহিদা নেই। সেই সৈনিক সে সময়ের শাসনব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, সুশাসন ও স্বাধীনতার অনুপস্থিতি এ দেশের মানুষকে আয়েশে দিন কাটাতে দেয়নি। প্রাচ্য শাসকদের মনোভাব হচ্ছে প্রজাদের গোলাম করে রাখা। অতিরিক্ত শাসন নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রজাকুল নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার হতো।
ষাটের দশকে আমরা সাধারণ মানুষের নিদারুণ কষ্ট দেখেছি; বিশেষ করে কৃষকদের। আমাদের পাট সারা বিশ্বে রপ্তানি হতো। বিপুল অর্থ আসত বিদেশ থেকে। কিন্তু সেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আমাদের কোনো হাত ছিল না। কাগজ উৎপাদন করেও বাংলার মানুষকে উচ্চমূল্যেই কাগজ কিনতে হতো। এটা ছিল একটি নয়া ঔপনিবেশিক অবস্থা। এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও করা হয়েছিল; কিন্তু তখন সুশাসনের অভাবে এগুলো কার্যকর হতে পারেনি।
এরপর আসে সেনাশাসন। সেনাশাসনে দীর্ঘ সময় এক জবাবদিহিবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চলে সোনার বাংলায়। আবারও রাজপথে আন্দোলন। সেই স্বৈরাচারী শাসনেরও অবসান হয় এই ডিসেম্বরে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর মধ্যেই জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। একটা সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। আবার সেই বিদেশি শাসনের সংস্কৃতিকে শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করে ফেলেছে। একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি তিনটি ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা বিভক্ত হয়েছে। ইংরেজি উচ্চবিত্তদের, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের বাংলা এবং নিম্নবিত্তদের একটা বড় অংশ আরবিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, তা থেকে রাষ্ট্র সরে গেল। ফলে প্রাথমিকের অর্ধেক শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষায় দুর্বল হয়ে পড়ল। অন্যদিকে যারা ইংরেজি শিক্ষায় গেল, সেই সব শিক্ষার্থী ইংরেজিটা ভালো বলতে পারল, কিন্তু মাতৃভাষায় একেবারে কাঁচাই রয়ে গেল এবং এই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা দেশে থাকতে চাইল না। তারা অভিবাসনমুখী।
দেশ পরিচালনার জন্য প্রকৃত শিক্ষা এবং মেধার প্রয়োজন হয়। ব্যাপকভাবে অভিবাসন এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে সর্বক্ষেত্রেই একটা মেধার সংকট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষাপদ্ধতি এবং নিয়োগপদ্ধতিতে কোনো সংস্কার না হওয়ায় সমাজে প্রকৃত শিক্ষা ও যথাযথ নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। যার ফলাফল রাজনীতি, প্রশাসন এবং শিক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের লগ্নিও দীর্ঘস্থায়ী। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিও রাজনীতিতে এবং প্রশাসনে খুঁজে পাওয়া যায় না।
শিক্ষা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু সেই শিক্ষা যদি প্রকৃত শিক্ষা না হয়ে শুধু নম্বর ও সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা অপচয় ও শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। আজ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব, যেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিও দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কলেজেও এখন মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। আবার দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর তাঁদের চাকরির সংস্থানও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উচ্চতর সরকারি চাকরিতে পদের সংখ্যা কয়েক হাজার, কিন্তু প্রার্থী লাখ লাখ। ফলে বিপুল পরিমাণ বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
প্রকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা এত বেশি মাস্টার্স ডিগ্রি পেতেন না। যাঁরা পেতেন তাঁদের একটা কাজের সংস্থানও হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কোথাও প্রয়োজন নেই। তাই দেখা যায় রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন। তাঁর অর্জিত শিক্ষা ব্যাংকে কোনো কাজেই লাগছে না। এই যে অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষা প্রশাসন কোনো সুনির্দিষ্ট পথও দেখাতে পারছে না। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে হাজার হাজার বিদ্যাপীঠ একধরনের শিক্ষিত মানুষ তৈরি করছে বটে, কিন্তু এই শিক্ষিত মানুষেরা সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারছেন না।
এই সুযোগে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই ছাত্ররাজনীতি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বা মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল, সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা অনেকেই বিপুল অর্থের মালিক। ছাত্র থাকাকালেই কেউ যদি এত অর্থের মালিক হন, তবে শিক্ষার সমূহ উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য। একটি স্বাধীন দেশে মানুষের বড় অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসার অধিকার পাওয়া। স্বাস্থ্যের পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি যৌক্তিক পুষ্টির ব্যবস্থা। বহুকাল বিদেশি শোষণের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যথার্থ পুষ্টি পায়নি এবং যথেষ্ট চিকিৎসাও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। পাকিস্তান আমলে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর যদিও চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত হয়েছে; তবু এখনো সেটা অপ্রতুল। যেকোনো মহামারি এলে আমরা অপ্রস্তুত চিকিৎসাব্যবস্থা দেখতে পাই। সাম্প্রতিককালে করোনা ও ডেঙ্গু—এই দুটি মহামারিতেই এর প্রমাণ মেলে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে চিকিৎসাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দেশের রোগীদের বিদেশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্রের যথাযথ মনোযোগ প্রয়োজন ছিল এবং প্রচুর আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্যে গিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। সব স্বাধীন রাষ্ট্রে এই প্রথাই চালু আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বায়ান্ন বছরে রাজনীতিবিদদের তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পীঠস্থান সংসদ অধিকাংশ সময়ই অকার্যকর থেকেছে। এ কারণেই সমাজে কোনো সংলাপের প্রথা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংলাপের খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অমানবিক এবং একধরনের অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে।
ডিসেম্বরে এই বিজয়ের মাসে এসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা শুধু কি ভাবব, নাকি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেব?

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
প্রমোশন পেয়ে আমাদের হাতে আসত নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো। আমরা অপেক্ষা করতাম পরবর্তী ডিসেম্বরের জন্য। এই সময়ে বাংলার ফসলের মাঠে নতুন ধানের গন্ধে শুরু হতো পিঠা-পুলির আয়োজন। নানা ধরনের লোকসংগীতের সময় ছিল এটা। যাত্রা পালাগান, কবিগান, উত্তরবঙ্গের পালাটিয়া, ভাওয়াইয়া এসব গানের সুর পথে-প্রান্তরে ভাসতে থাকত।
আমাদের আন্দোলনের মাসও ছিল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সেভাবেই আমাদের জীবনে এসেছিল ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাসের যুদ্ধের পর এক রক্তাক্ত বিজয়। একদিকে আকাশে-বাতাসে সর্বত্র বিজয়ের ধ্বনি আর অন্যদিকে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। এই সবকিছুর পরেই আমাদের জীবনে এল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যে স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং কোনো বিদেশি শাসন নয়, একেবারেই বাঙালির নিজস্ব শাসনের রাষ্ট্র। বাঙালি কোনো দিন স্বাধীন ছিল না। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাঙালিরা বিদেশি শাসিত। সর্বশেষ শাসন পাঞ্জাবির। আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করেছি, বিদেশি শাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও আমাদের কৃষক ন্যূনতম অর্থ পেতেন, যা দিয়ে শুধু বেঁচে থাকা যেত।
পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল অত্যন্ত সুফলা, বঙ্গের গরিব মানুষেরাও দুবেলা খেতে পায় এবং এতেই তারা সুখী। তারা পরিশ্রমী এবং খাবারের অতিরিক্ত তেমন কোনো চাহিদা নেই। সেই সৈনিক সে সময়ের শাসনব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, সুশাসন ও স্বাধীনতার অনুপস্থিতি এ দেশের মানুষকে আয়েশে দিন কাটাতে দেয়নি। প্রাচ্য শাসকদের মনোভাব হচ্ছে প্রজাদের গোলাম করে রাখা। অতিরিক্ত শাসন নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রজাকুল নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার হতো।
ষাটের দশকে আমরা সাধারণ মানুষের নিদারুণ কষ্ট দেখেছি; বিশেষ করে কৃষকদের। আমাদের পাট সারা বিশ্বে রপ্তানি হতো। বিপুল অর্থ আসত বিদেশ থেকে। কিন্তু সেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আমাদের কোনো হাত ছিল না। কাগজ উৎপাদন করেও বাংলার মানুষকে উচ্চমূল্যেই কাগজ কিনতে হতো। এটা ছিল একটি নয়া ঔপনিবেশিক অবস্থা। এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও করা হয়েছিল; কিন্তু তখন সুশাসনের অভাবে এগুলো কার্যকর হতে পারেনি।
এরপর আসে সেনাশাসন। সেনাশাসনে দীর্ঘ সময় এক জবাবদিহিবিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা চলে সোনার বাংলায়। আবারও রাজপথে আন্দোলন। সেই স্বৈরাচারী শাসনেরও অবসান হয় এই ডিসেম্বরে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর মধ্যেই জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। একটা সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। আবার সেই বিদেশি শাসনের সংস্কৃতিকে শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করে ফেলেছে। একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি তিনটি ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা বিভক্ত হয়েছে। ইংরেজি উচ্চবিত্তদের, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের বাংলা এবং নিম্নবিত্তদের একটা বড় অংশ আরবিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, তা থেকে রাষ্ট্র সরে গেল। ফলে প্রাথমিকের অর্ধেক শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষায় দুর্বল হয়ে পড়ল। অন্যদিকে যারা ইংরেজি শিক্ষায় গেল, সেই সব শিক্ষার্থী ইংরেজিটা ভালো বলতে পারল, কিন্তু মাতৃভাষায় একেবারে কাঁচাই রয়ে গেল এবং এই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা দেশে থাকতে চাইল না। তারা অভিবাসনমুখী।
দেশ পরিচালনার জন্য প্রকৃত শিক্ষা এবং মেধার প্রয়োজন হয়। ব্যাপকভাবে অভিবাসন এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে সর্বক্ষেত্রেই একটা মেধার সংকট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষাপদ্ধতি এবং নিয়োগপদ্ধতিতে কোনো সংস্কার না হওয়ায় সমাজে প্রকৃত শিক্ষা ও যথাযথ নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। যার ফলাফল রাজনীতি, প্রশাসন এবং শিক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের লগ্নিও দীর্ঘস্থায়ী। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিও রাজনীতিতে এবং প্রশাসনে খুঁজে পাওয়া যায় না।
শিক্ষা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের অধিকার। কিন্তু সেই শিক্ষা যদি প্রকৃত শিক্ষা না হয়ে শুধু নম্বর ও সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা অপচয় ও শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। আজ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব, যেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিও দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কলেজেও এখন মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। আবার দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর তাঁদের চাকরির সংস্থানও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উচ্চতর সরকারি চাকরিতে পদের সংখ্যা কয়েক হাজার, কিন্তু প্রার্থী লাখ লাখ। ফলে বিপুল পরিমাণ বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
প্রকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা এত বেশি মাস্টার্স ডিগ্রি পেতেন না। যাঁরা পেতেন তাঁদের একটা কাজের সংস্থানও হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কোথাও প্রয়োজন নেই। তাই দেখা যায় রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন। তাঁর অর্জিত শিক্ষা ব্যাংকে কোনো কাজেই লাগছে না। এই যে অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষা প্রশাসন কোনো সুনির্দিষ্ট পথও দেখাতে পারছে না। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে হাজার হাজার বিদ্যাপীঠ একধরনের শিক্ষিত মানুষ তৈরি করছে বটে, কিন্তু এই শিক্ষিত মানুষেরা সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারছেন না।
এই সুযোগে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই ছাত্ররাজনীতি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বা মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল, সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা অনেকেই বিপুল অর্থের মালিক। ছাত্র থাকাকালেই কেউ যদি এত অর্থের মালিক হন, তবে শিক্ষার সমূহ উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য। একটি স্বাধীন দেশে মানুষের বড় অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসার অধিকার পাওয়া। স্বাস্থ্যের পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি যৌক্তিক পুষ্টির ব্যবস্থা। বহুকাল বিদেশি শোষণের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যথার্থ পুষ্টি পায়নি এবং যথেষ্ট চিকিৎসাও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। পাকিস্তান আমলে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কয়েকটি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর যদিও চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত হয়েছে; তবু এখনো সেটা অপ্রতুল। যেকোনো মহামারি এলে আমরা অপ্রস্তুত চিকিৎসাব্যবস্থা দেখতে পাই। সাম্প্রতিককালে করোনা ও ডেঙ্গু—এই দুটি মহামারিতেই এর প্রমাণ মেলে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে চিকিৎসাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দেশের রোগীদের বিদেশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্রের যথাযথ মনোযোগ প্রয়োজন ছিল এবং প্রচুর আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্যে গিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। সব স্বাধীন রাষ্ট্রে এই প্রথাই চালু আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বায়ান্ন বছরে রাজনীতিবিদদের তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পীঠস্থান সংসদ অধিকাংশ সময়ই অকার্যকর থেকেছে। এ কারণেই সমাজে কোনো সংলাপের প্রথা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংলাপের খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অমানবিক এবং একধরনের অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে।
ডিসেম্বরে এই বিজয়ের মাসে এসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা শুধু কি ভাবব, নাকি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেব?

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ডিসেম্বর আমাদের একটি আনন্দের মাস, আন্দোলন-সংগ্রামের মাস এবং সর্বোপরি বিজয়ের মাস। ছোটবেলায় আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা হতো ডিসেম্বর মাসে, তারপর মুক্তি। ডিসেম্বরের প্রায় অর্ধ মাসের পরে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হতো। সেটিও আনন্দের।
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫