Ajker Patrika

চলতি সশস্ত্র সংগ্রাম মিয়ানমারের চেহারা পাল্টে দিতে পারে

মাসুদ রানা
চলতি সশস্ত্র সংগ্রাম মিয়ানমারের চেহারা পাল্টে দিতে পারে

আলতাফ পারভেজ লেখক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর। ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী: ইতিহাসের পুনর্পাঠ, বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত দশক, শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম, গ্রামসি ও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা, মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা: একটি পর্যালোচনা, যোগেন মণ্ডলের বহুজনবাদ ও দেশভাগ প্রভৃতি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বই। সম্প্রতি মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মিলিত সংগ্রামে সামরিক শাসন উচ্ছেদের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: এ সময়ে ‘অপারেশন-১০২৭’ মিয়ানমারের পরিস্থিতি পরিবর্তনে কতটুকু সফল হবে?
আলতাফ পারভেজ: ‘অপারেশন ১০২৭’ যারা শুরু করেছিল, তারা গত ২৭ নভেম্বর থেকে অপারেশন কোড বদল করে এটার নাম রেখেছে ‘অপারেশন-১১২৭’; অর্থাৎ এখন একই অপারেশন নতুন নামে চলবে। নাম পরিবর্তনের একটা ব্যাখ্যা হিসেবে মিয়ানমারের ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ বলেছে, আগের অভিযানটা ছিল বিশেষ বিশেষ এলাকাকেন্দ্রিক। এখন তারা জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধটা ছড়িয়ে দিতে চায়। এই অপারেশন দেশটির পরিস্থিতিতে একটা গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন এনেছে। প্রথমত, যাঁরা এত দিন সামরিক জান্তাবিরোধী গেরিলা দলগুলোর শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, তাঁদের অনেকখানি ভুল ভেঙেছে। এই অভিযানের প্রথম ৩০ দিনে জান্তা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় প্রায় ১৮০টি চৌকি হারিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, গেরিলা দলগুলোর মধ্যে বিস্ময়করভাবে সমন্বয় দেখা যাচ্ছে। আমরা জানি, মিয়ানমারে সাতটি প্রদেশ এবং সাতটি বিভাগ রয়েছে। এর প্রতিটি প্রদেশের গেরিলা দল কিন্তু পৃথক পৃথক। কিন্তু তাদের অনেকের মাঝে এবার চমৎকার সমন্বয় দেখা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, আঞ্চলিক এসব গেরিলা দলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মিয়ানমারের বাহিনীতে বামার তরুণেরা এবার গেরিলাযুদ্ধে শরিক হয়েছেন। এটা এবারের যুদ্ধের একটা নতুন দিক। অতীতে বিভিন্ন জাতির আঞ্চলিক গেরিলারা বামার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ত। এখন সেনাবাহিনীকে তাদের জাতির তরুণ গেরিলাদেরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এবারের পরিস্থিতির আরেকটি নতুন দিক হলো, চীন হঠাৎ করে গেরিলা দলগুলোকে মদদ দিচ্ছে। যদিও এই মদদ তাদের নিজস্ব স্বার্থে এবং সাময়িক চরিত্রের। কিন্তু এটাও মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে একটা নতুন উপাদান। কারণ এত দিন চীন সামরিক জান্তাকে একচেটিয়াভাবে সহায়তা করে এসেছে।
 
আজকের পত্রিকা: পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং জাতিগত অপরাপর সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা কেমন?
আলতাফ পারভেজ: ‘মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ’ কথাটা ভালোভাবে বোঝা দরকার। এ দেশের মূল জনগোষ্ঠী হলো বামার। আর আছে অনেকগুলো আঞ্চলিক জাতি। যেমন—কারেন, কাচিন, শান, রাখাইন ইত্যাদি। আঞ্চলিক প্রায় প্রতিটি দল বহু বছর ধরে স্বায়ত্তশাসনের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ করছে। যাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করছে সেই কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীটি হলো বামারদের। ফলে এত দিন গৃহযুদ্ধ হচ্ছিল আসলে ‘বামার বনাম অন্যান্য জাতি’র মধ্যে। এবার সেনাবাহিনী যখন অং সান সু চির দলকে ক্ষমতায় বসতে দিল না, তখন বামারদের নিজেদের মাঝেই সংঘাত বেধে যায়। গণতন্ত্রপন্থী সু চি-সমর্থক তরুণেরা তখন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গঠন করে গেরিলাযুদ্ধে নামেন। ফলে আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোর সঙ্গে পিডিএফও গৃহযুদ্ধে শরিক হয়েছে।

আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোর প্রতি নিজ নিজ জাতির পূর্ণ সমর্থনই আছে। অন্যদিকে, পিডিএফগুলোর প্রতি সব বামারের সমর্থন আছে— এমন বলা যায় না। তবে বামার অঞ্চলগুলোতে তাদের পরিসর বাড়ছে। বামারদের মধ্যে ভিক্ষুসংঘ ও সেনাবাহিনীর প্রভাব এখনো কম নয়। এই দুই শক্তি আবার আদর্শিকভাবে বেশ কাছাকাছি। তারা উগ্র বামার জাতীয়তাবাদী আদর্শের। তাই বামার পিডিএফগুলোকে এদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বামার জাতীয়তাবাদের মূল শক্তির ভিত্তি। আবার চীন ও রাশিয়াও তাদের বেশ শক্তি জুগিয়েছে অতীতে। সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে এরা বেশ শক্তিশালী ও চৌকস। ফলে জনসমাজ থেকে তাদের উপড়ে ফেলা সহজ নয়। কিন্তু গেরিলাদের অগ্রগতি ঘটছে।
 
আজকের পত্রিকা: এত দিন মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের মদদ দিয়ে আসছে চীন। অবস্থার পরিবর্তনে চীনের আধিপত্য কি বজায় থাকবে?
আলতাফ পারভেজ: মিয়ানমারে চীনের প্রভাব বিপুল। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ একচেটিয়াভাবে তারাই ভোগ করছে দশকের পর দশক ধরে। এটা করতে গিয়ে তারা সেনাবাহিনী এবং আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোকেও সহায়তা দিয়েছে। এটা এক বিস্ময়কর কৌশল। আবার চীন মনে করে, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক অভিলাষের জন্যও মিয়ানমার খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দেশটিতে তাদের বিপুল বিনিয়োগও আছে। সুতরাং এখানে তার একচেটিয়া প্রভাব থাকতে হবে। ফলে যেকোনোভাবে সে এ দেশে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইবে। আন্তর্জাতিকভাবেও চীন সব অবস্থায় মিয়ানমারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে আসছে।

মিয়ানমারে পরিবর্তন যদি অবধারিত হয়, তাহলে পরিবর্তনবাদীদের সঙ্গে চীনের অবশ্যই একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে। আবার মিয়ানমারে পরিবর্তন আনতে হলে গেরিলা দলগুলোকেও চীনের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে। এ ব্যাপারগুলো কীভাবে ঘটবে তার সবটাই এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটা মানতেই হবে, মিয়ানমারে চীন একটা ফ্যাক্টর। যদিও গণতন্ত্রপন্থীদের কাছে চীন অপছন্দনীয়।
 
আজকের পত্রিকা: যদি সত্যিকার অর্থে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর এবারের সংগ্রাম সফল হয়, তাহলে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু?
আলতাফ পারভেজ: আগেই বলেছি, গেরিলা দলগুলোর মাঝে দুটো ধারা আছে এবং দুই ধরনের রাজনীতি আছে। আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলো লড়ছে স্বায়ত্তশাসনের জন্য। যার যার এলাকায় নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ চায় তারা। আর জাতীয়ভাবে দেশটি একটা ফেডারেল ধরনের দেশ হোক, সেটাই তাদের ইচ্ছা; অর্থাৎ তারা মিয়ানমার থেকে বের হয়ে যেতে চায় না। তবে বামারদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেও তারা থাকতে চায় না।

অন্যদিকে, পিডিএফগুলো চাইছে জান্তাকে হারিয়ে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা ফিরে পেতে। আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোর সঙ্গে পিডিএফগুলোর যে বোঝাপড়া হয়েছে, তাতে যৌথ এই সংগ্রামে তারা যদি বিজয়ী হয়, তাহলে দেশটিতে নতুন সংবিধান তৈরি করা হবে এবং দেশটিকে সত্যিকারের একটি ফেডারেশন হিসেবে গড়ে তোলা হবে; অর্থাৎ তখন অঞ্চলগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ণ করা হবে। সেনা আধিপত্য ভেঙে দেওয়া হবে। আপাতত এ রকম প্রতিশ্রুতি আছে। তবে এগুলো অর্জন সহজ হবে এমনও নয়।

সমস্যা হলো, আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলো পৃথক পৃথক চরিত্রের। আবার তাদের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় বামারদের প্রত্যাশার ফারাক আছে। সব শক্তিকে সমন্বয় করার মতো জাতীয় কোনো ব্যক্তি নেই আপাতত। অং সান সু চি কারাগারে আছেন এবং তাঁর যথেষ্ট বয়সও হয়েছে। আঞ্চলিক দলগুলো সু চির ওপর খুব বেশি ভরসাও আর করে না। ফলে সামনে দেখার ব্যাপার হলো, যুদ্ধের মধ্যে কী ধরনের নেতৃত্ব তৈরি হয়। তারা কীভাবে পুরো যুদ্ধ সমন্বয় করে এবং কীভাবে জান্তাবিরোধী সব শক্তিকে সমন্বিত রাখতে পারে। তবে এই যুদ্ধ যদি সফল হয়, মিয়ানমার নিশ্চিতভাবে নতুন এক রাজনৈতিক চরিত্র ফিরে পাবে। আগের মিয়ানমার আর থাকবে না।
 
আজকের পত্রিকা: একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী সশস্ত্র লড়াই করছে। এতে কি মিয়ানমারের বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে?
আলতাফ পারভেজ: হ্যাঁ, সে রকম সম্ভাবনাও আছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়া উচিত হবে না। মিয়ানমার অতীতে সেভাবে ‘এক দেশ’ ছিল না। যেভাবে ভারতবর্ষও এক দেশ ছিল না। দক্ষিণ এশিয়াকে এ রকম চেহারা দিয়ে গেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি। তারা দখল করেছিল একভাবে, আর রেখে গেছে অন্যভাবে। যেমন আরাকান একসময় একটা স্বাধীন দেশ ছিল। এখন তারা মিয়ানমারের অধীনে।

এখন আরাকান যদি আলাদা হয়, আদৌ যদি কখনো হতে পারে, সেটা তো নতুন কিছু নয়, পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাওয়া মাত্র। যেমন আরাকান আর্মি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের অন্যতম শক্তি এখন। যদিও তারা স্বায়ত্তশাসনের কথা বলছে, কিন্তু তাদের হৃদয়ে তো পুরোনো স্বাধীন অবস্থায় ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন আছে।

মোটকথা, আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলো যেকোনো উপায়ে বামারদের আধিপত্য থেকে বের হতে চায়। সে কারণে তারা যেকোনো ধরনের সুযোগ নিতে কার্পণ্য করবে না। আবার মিয়ানমারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডাযুদ্ধের প্রভাবও আছে। সেই প্রভাবকেও আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলো তাদের স্বার্থে কাজে লাগাবে। ফলে পুরো মিয়ানমার যদি সামরিক জান্তামুক্ত না-ও হয়, তাহলে দুই-তিনটি অঞ্চলে দেশটি কৃত্রিমভাবে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। তার অনেক আলামত এবং বাস্তবতাও আছে।

চিন, কাচিন ও কারেন অঞ্চল ধর্মীয়ভাবেও মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পৃথক চরিত্রের। কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যত বেশি কোণঠাসা হয়ে যাবে, এই অঞ্চল তত বেশি মুক্ত বোধ করতে শুরু করবে। এই তিন অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রেরও গভীর আগ্রহ আছে বলে শোনা যায়।
 
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারে সামরিক শাসন উচ্ছেদ হলে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কি সহজ হতে পারে?
আলতাফ পারভেজ: সু চি-সমর্থক ও গণতন্ত্রপন্থীরা বলছেন, তাঁরা বিজয়ী হলে দেশটিতে নতুন সংবিধান তৈরি করবেন। যে সংবিধানের আওতায় নাগরিকত্বের নতুন আইন তৈরি হবে। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হলো, তার একটা আইনি উৎস দেশটির নাগরিকত্ব আইন এবং সংবিধান। এই সংবিধান নিয়ে দেশটির প্রদেশগুলোও সন্তুষ্ট নয়। এটা সেনাবাহিনীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি করে রেখেছে। উগ্র বামারদের এই নাগরিকত্ব আইনের প্রতি জোরালো সমর্থন আছে। এই আইন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও জাতিগত স্বীকৃতি কেড়ে নিয়েছে। বামার পিডিএফগুলো এবং তাদের ‘জাতীয় ঐক্যের সরকার’ ইতিমধ্যে বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার স্বীকার করে। তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ নিজ বসতভূমিতে ফিরিয়ে নেবে।
 
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারে পরিবর্তন সাধিত হলে, বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে কি?
আলতাফ পারভেজ: অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে, সেটা বলা মুশকিল। যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উত্থান-পতন তৈরি হয় অভ্যন্তরীণ নানান উপাদান দ্বারা। তবে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এটা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই এ ঘটনা প্রভাব ফেলবে। মিয়ানমারের চলতি গৃহযুদ্ধ আরাকানের চেহারা একদম পাল্টে দিতে পারে। আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমান্ত এবং রোহিঙ্গাদের কারণে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তার ফলে মিয়ানমারের যেকোনো পরিবর্তন আমাদের দক্ষিণ সীমান্তকে তুমুলভাবে প্রভাবিত করবে। উত্তর-পূর্ব ভারতেও এ ঘটনা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত