Ajker Patrika

বাগে পেয়ে দেখিয়ে দেওয়ার রাজনীতি

চিররঞ্জন সরকার
বাগে পেয়ে দেখিয়ে দেওয়ার রাজনীতি

আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ‘তলে তলে’ হয়। এই ‘তলে তলে’ হওয়া আলাপ-আলোচনা-শর্ত-চুক্তির আলোকে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এমন একটা প্রত্যাশা অনেকের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেই আশা ক্রমেই উবে যেতে বসেছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করবে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নির্বাচন বর্জন করে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে দলটি কি আদৌ টিকবে, এ প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে।

বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, সেই নির্বাচনে জেতা যায়, ক্ষমতায় থাকা যায়, সেই ক্ষমতাকে কীভাবে জায়েজ করা যায়? এসব ব্যাপার আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ আর কোনো দল দুনিয়ায় আছে বলে মনে হয় না। ১৫ বছর ধরে তারা সেই চর্চা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। কাজেই বলা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘ভালোভাবেই’ হবে, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে জিতে আবার আওয়ামী লীগই যে ক্ষমতায় আসবে, এটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে ভিড়িয়ে নির্বাচনকে যথাসম্ভব ‘অংশগ্রহণমূলক’ করার জন্য আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যারা নির্বাচনে আসতে চায়, তাদের নির্বাচনে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উৎসাহের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন নতুন দল ও জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। নির্বাচনের বাগানে নতুন নতুন ‘ফুল’ ফুটছে। ইতিমধ্যে বিএনপির কিছু নিষ্ক্রিয় ও সাবেক নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে।

আওয়ামী লীগের বাইরে মোটামুটি ৫০-৬০ জনকে যদি এমপি বানানো যায়, তাহলে সেটা হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় সাফল্য। এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে থাকবেন। তাঁরা সংসদে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করবেন। আবার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের গুণগান গাইবেন। যাঁরা হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেবেন না। আবার মোলায়েম ভাষায় সরকারের সমালোচনাও করবেন। বেশ ‘মধু’র একটা ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’ নির্মাণের প্রয়াস চলছে।

অনেকে অবশ্য আওয়ামী লীগের মুণ্ডুপাত করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা গায়ে মাখছে না। মাখবেই বা কেন? একটি রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্যই তো থাকে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। আওয়ামী লীগ সে কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে। তাদের কৌশলের কাছে আর কেউ বা কোনো দল সুবিধা করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন তোলা অবান্তর। প্রেমে আর রণে নীতি চলে না—এটা পুরোনো প্রবাদ। রাজনীতিতেও এখন আর ‘নীতি’ চলে না। নীতি নিয়ে চললে ক্ষমতা থাকে না এবং দলও টেকে না। তাই যেকোনো উপায়ে ও মূল্যে ক্ষমতায় যেতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আরাধনা করতে হবে।

বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তা-ই করেছিলেন। তখন শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামের মতো জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বিএনপি চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিঃশেষ করার জন্য এই দলের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

গ্রেনেড হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার করার ব্যাপারে খালেদা জিয়া কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি দেখাবেন কীভাবে? শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা খুন হয়ে যান, তাহলে যে তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের পোয়াবারো হতো। যুগ যুগ ধরে তাঁরা বিনা প্রতিযোগিতায় বাধাবিঘ্ন ছাড়া নির্বাচনে জিততে পারবেন। পরম সুখে ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন!

কিন্তু মানুষের সব ভাবনা তো আর সব সময় বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। যে হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টায় খোদ তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে আছে। তারেক রহমানকে বাঁচাতে খালেদা জিয়া পুরো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-মামলাটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই দুজনকে বাগে পেয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমা করে দেবেন, তা কি আর হয়?

এখন ‘নির্বাচনবিরোধী’ নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের যে সত্যতা নেই, তা কেউ বলবে না। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য পরিচালিত গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময় বিএনপির ভূমিকাকে তিনি কীভাবে দেখেন? ইট মারলে তো পাটকেল খেতেই হবে। রাজনীতি তো ফেরেশতাদের কায়কারবার নয়। মানুষ হলে তো প্রতিশোধের ব্যাপার থাকবেই। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীকে মেরে ফেলতে চাইবেন, আর সেই নেত্রী সুযোগ পেয়ে ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ জসীমউদ্‌দীনের এই ঔদার্যের পদ্য পাঠ করবেন, তা কি আশা করা যায়?

দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযোগে আদালতের দণ্ড নিয়ে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে বসে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পরামর্শে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। তারেক রহমান বিএনপির কোনো নেতাকে বিশ্বাস করেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাক, ভালো করুক, তা তিনি চান না। কারণ তাঁর মধ্যে সংশয় আছে। যদি নির্বাচিত এমপিরা তাঁর কথা না শোনেন!

তারেক রহমান চান দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। এমন একটা নির্বাচনের আয়োজন করতে, যাতে বিএনপির শতভাগ জয়ের গ্যারান্টির নিশ্চয়তা থাকে। কারণ পূর্ণ শক্তি নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় না গেলে তারেক রহমানের দেশে আসা এবং রাজনীতি করা হবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, নির্বাহী আদেশে যদি তারেক রহমানের মামলা ও দণ্ড বাতিল বা মওকুফ না করা হয়, তাহলে তাঁর রাজনীতি করা ইহকালে আর সম্ভব হবে না।

আর বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি যদি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে শতাধিক আসনও পায়, তাতে দলের লাভ হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও লাভ হবে। তিনি বিরোধী দলের নেতা হবেন। কিন্তু তাতে তারেক রহমানের কোনো লাভ হবে না; বরং জিয়া পরিবারের হাত থেকে বিএনপির নেতৃত্ব স্থায়ীভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কাজেই তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি আওয়ামী লীগের বর্তমান মেকানিজমে নির্বাচনে যাবে না।

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো নির্বাচন করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের এখন ভাত ছিটানোর সামর্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। কাজেই নির্বাচনে ‘কাক’-এর পরিমাণও একেবারে কম হবে বলে মনে হয় না।

পক্ষান্তরে তারেকের বিএনপি হরতাল-অবরোধের পথ ছেড়ে আসবে বলেও মনে হয় না। কারণ আওয়ামী শর্তের নির্বাচনে অংশ নিলে ব্যক্তিগতভাবে তারেকের তেমন কোনো লাভ নেই। এর আগে হরতাল-অবরোধের নামে ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করায় বিএনপির চরিত্রে একটা অমোচনীয় দাগ তৈরি হয়েছিল। গত দুই-তিন বছরের অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পর বিএনপির ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হচ্ছিল। কিন্তু তারা সেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে তারা ঠিকই পুরোনো চরিত্রে ফিরে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশকে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করার পর বিএনপির পক্ষে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সহিংস কর্মসূচি দিলে পুলিশ অ্যাকশন নেবেই। ২৮ অক্টোবরও তাই হয়েছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে।

অথচ ক্ষমতাসীনদের উসকানিকে উপেক্ষা করে বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে ওই সমাবেশ শেষ করত। সমাবেশে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বলতে পারত, নির্বাচনে যেখানে অনিয়ম ও কারচুপি হবে, সেখানেই অবরোধ হবে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আহ্বান জানাত, তাহলে হয়তো দেশের রাজনীতি ভিন্ন হতে পারত। এখন বিএনপি নির্বাচনমুখী নেতা-কর্মীদের ঠেকাবে, না নির্বাচন প্রতিরোধের কর্মসূচি সফল করবে?

আসলে তারেক রহমানের কাছে বিএনপি নামের দলটি জিম্মি হয়ে গেছে। তাঁর ইচ্ছাতেই সবকিছু হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু বলার বা করার মতো হিম্মত রাখেন না। তাহলে অবশ্য পদও থাকবে না। এই বাস্তবতায় বিএনপির কাছে সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না।

বিএনপি সহিংস কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। আওয়ামী লীগ এই সহিংসতার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে, দ্রুত বিচার আইনে দণ্ড দিয়ে জেলখানায় ভরে রাখবে। খুচরা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কিছু ‘কেক-পরোটা’ দিয়ে একটা নির্বাচনও করে ফেলবে। দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রসাতলে যাবে। এর বাইরে রাজনীতিতে ভিন্ন কোনো দৃশ্যপট আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত