Ajker Patrika

পণ্যবাজারে দেখা যাচ্ছে দ্বিমুখী প্রবণতা

পণ্যবাজারে দেখা যাচ্ছে দ্বিমুখী প্রবণতা

সবজির বাজারে অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে। শীত এসে যাচ্ছে; এর আগেই বাজারে এসে গেছে শীতের সবজি। উৎপাদন ভালো বলেই মনে হয়। এর প্রভাবে দাম কমে আসারই কথা। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। চলমান ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচিতে সেটা কমবেশি ব্যাহত হচ্ছে বৈকি। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়ে দামে। মাঝে খবর মিলেছিল, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বগুড়ার একটি পাইকারি বাজারে সবজির দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। দামের আকস্মিক পতন আবার উৎপাদক ও এর ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ। অর্থনীতিতে তাঁদের স্বার্থ দেখাও জরুরি।

সবজির মধ্যে আলু নিয়ে রীতিমতো সংকট দেখা দিয়েছিল। এর কারণ উৎপাদন না বাজার ব্যবস্থাপনায় নিহিত, সেটা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে রয়েছে মতভেদ। তাতে আমদানি শুরু হতেও দেরি হয়। আলুও শেষতক আমদানি করতে হলো, এটা নিয়ে আক্ষেপ আছে অনেকের।

বিশেষ করে কৃষকদের। এর কারণ অবশ্য ভিন্ন। তাঁরা তো আলুর রেকর্ড দামের সুফল পাননি। দাম বাড়তে থাকার সময়টায় সাধারণ কৃষকের হাতে আলু ছিল না। এর সুফল পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিতে তাঁদের ভূমিকা অবশ্য অস্বীকার করা যাবে না। কোনো বিক্রেতাগোষ্ঠীর বেশি লাভবান হওয়াটাও ভালো নয়। এতে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।

আলুর মতো পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়াটা খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকেও খারাপ। অনেকে আলুকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও আলুর ব্যবহার রয়েছে। আর ঘরে এটা আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করি। ভালো যে সরকার দেরিতে হলেও আলুর বাজার শান্ত করে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। সংকটময় রিজার্ভ পরিস্থিতিতেও পণ্যটি আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে এর প্রভাব সীমিত। দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ হয়েছে বড়জোর। এর দামের ওপর আরও প্রভাব ফেলতে ‘ট্রাক সেলে’ আলুও যুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ করা প্রতিটি পণ্যের দামই উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে কার্যক্রমটি এখনো রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ। বাণিজ্যসচিব বলেছেন, অন্যান্য বড় শহরেও এটা বিস্তৃত করা হবে। দেশে নির্বাচন ঘিরে একটা উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে এখন। এর মধ্যে সুস্থিরভাবে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়াটা কঠিনও বটে।

শীতের শুরুতে বাজারে ওঠে নতুন আলু। এর একাংশ প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। চোরাপথেও কি আসে না? যা-ই হোক, নতুন আলুর চাহিদা-সরবরাহে অসংগতি থাকায় দাম বেশি থাকে কিছুদিন। আলুর সংকট দেখে দেশের কৃষকেরা উৎসাহী হয়ে ‘আগাম আলু’ ফলিয়েছেন। সেটা বাজারে আসার আগমুহূর্তে আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না, এ প্রশ্নও উঠছে। মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট ও আলোচনা বেশি হওয়া ভালো। কারণ এত বেশি মানুষের দেশে যে পণ্য বছরজুড়ে বলতে গেলে রোজ ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে থেকে থেকেই সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংকট দেখা দিলেও তা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এটা মাথায় রাখা ভালো।

আলুসহ সবজি উৎপাদনে আমরা ভালো করছি। কিন্তু উৎপাদন নিশ্চিত হলেই দাম কমে আসবে, এমনটা চট করে বলা যায় না। উৎপাদন ব্যয়ও তো বাড়ছে। অনেক সময় পণ্য বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। কিংবা মুনাফা হলেও সামান্য হয়ে থাকে।

গেল আলু মৌসুমে অল্প লাভে কৃষক আলু বেচে দিয়েছিলেন। তাঁদের তো বেশি দামের আশায় পণ্য ধরে রাখার সুযোগ নেই। সেটা আছে যাঁদের, তাঁরাই হাতবদল করে মুনাফা লুটছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকার সময় আবার ‘সিন্ডিকেটবাজি’র অভিযোগ ওঠে। বহু বিক্রেতার বাজারে সিন্ডিকেট সম্ভব কি না, সে বিতর্কও আছে। সিন্ডিকেট থাকুক বা না থাকুক, ক্রেতাদের আলু নিয়ে ভুগতে হচ্ছে এখনো। আমদানির পরও এমনকি সবজির দাম কমে আসতে থাকার সময়ও আলুর দাম সেভাবে কমেনি। তবে এটা ঠিক, অন্যান্য সবজি সহজলভ্য হলে আলুর ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তাতে এর দামে কিছুটা প্রভাব পড়ার আশা।

ডিম নিয়ে মাঝে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাও থিতিয়ে এসেছে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে। কমে অবশ্য আগের জায়গায় আসেনি বলে অভিযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে, যখন দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ করাটাও সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। ডিমের বেলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এর দাম ডজনে কমপক্ষে ২০ টাকা কমে এসেছে কীভাবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যে পরিমাণ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা কিন্তু বেশি ছিল না। আমদানিতে বিলম্ব হয়েছে আর বেশি আমদানিও হয়নি। তবে আমদানির খবরে প্রতিযোগিতা করে ডিম ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা সম্ভবত দেখা দিয়েছে খামারিদের মধ্যে।

এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যয় উঠে এলেই তাঁরা খুশি। এমন পরিস্থিতি আবার বিশেষ করে ছোট খামারিদের জন্য হতাশাজনক। এ খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও। ডিম উৎপাদনে লোকসানের শিকার হয়ে অনেক খামারি নাকি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের খবর রাখা হয়নি। এতে সরবরাহ সংকটও যে দেখা দিতে পারে, তা ভাবা হয়নি। মাঝে কোনো কারণে ডিমের চাহিদাও হয়তো বেড়ে গিয়েছিল একসঙ্গে। মাংসের দাম বাড়লে মানুষ বেশি করে ডিম খাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মাছের দাম বাড়লেও। মাঝে কিন্তু এই সবকিছুর দাম একযোগে বেড়েছিল।

আমাদের একটা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, এটাও লক্ষ করার বিষয়। এতে উপকরণ হিসেবে লাগে ডিম, চিনি, আটা-ময়দা। ভালো যে দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়ে এত দিন শিল্পের চাহিদাও মেটানো গেছে। তবে খামারিরা ভালো দাম পাননি। তাঁদের উৎপাদন ব্যয় যদিও বাড়ছিল ক্রমে। ব্রয়লার মুরগির বেলায়ও এ কথা সত্য। এই খামারিদের উৎপাদন ব্যয় কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে আলোচনা কম। সংকট তীব্র হয়ে উঠলেই কেবল তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়। এটা তো নীতিনির্ধারকদের নজরে রাখার বিষয়।

এই মুহূর্তে অবশ্য বেশি করে সামনে আসছে চিনি ও আটা-ময়দার দাম। চিনির দাম বেড়েছে নতুন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও চিনিটা রয়ে গেল ব্যতিক্রমের তালিকায়। এর প্রভাব দেশীয় বাজারেও আছে। কর-শুল্ক কমালেও এর দাম কমছে না। ঘরে তেমন বেশি চিনি লাগে না বলে অবশ্য রক্ষা। তবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রচুর লাগে। সেখানে উৎপাদিত পণ্যের দাম তাতে বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতেও। তারা চায়ের সঙ্গে খায় বিস্কুট কিংবা বনরুটি। এতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় চিনি। আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়ার বিষয়টিও এর সঙ্গে আলোচিত হবে।

গমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির খবর রয়েছে এ মুহূর্তে। গমের আন্তর্জাতিক বাজার কিন্তু শান্ত হয়ে এসেছে। এটা হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে। ওই বেল্ট থেকে গমের সরবরাহ, তাতে বিঘ্নিত হয়ে পড়ে আর দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর প্রভাবে এখানেও আটা-ময়দার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। দাম কমে আসার একটা প্রবণতাও তৈরি হয় মাঝে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমে। আমরা তো চাহিদার ৮০-৮৫ শতাংশ গম আমদানি করে থাকি।

সমস্যা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যুদ্ধের পূর্বাবস্থায় চলে এলেও অভ্যন্তরীণ ডলার-সংকটে আমাদের আমদানি ব্যয় পড়ে যাচ্ছে বেশি। এলসি জটিলতা অনেক বেড়ে ওঠায় বেশি দামে আমদানিও নাকি কঠিন এখন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাঁরা কখনো হননি। এ ক্ষেত্রেও কথা থাকে, সংকটকালে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন কি না? এমন অভিযোগ দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বড় ব্যবসায়ীদের বিষয়েও রয়েছে। চিনি ও আটা-ময়দার মতো আমদানিনির্ভর পণ্যের ব্যবসায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগও রয়ে গেছে।

দেশে উৎপাদিত বা আমদানি করা যে পণ্যই হোক—এর বাজার স্বাভাবিক রাখার কাজটা সরকারকে করে যেতেই হবে; বিশেষ করে যেসব পণ্য সর্বসাধারণ নিত্যদিন ব্যবহার করে। বেশি আয় করা আর দ্রুত আয় বাড়াতে পারা মানুষ তো বেশি নেই। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপে অবশিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অবস্থা কমবেশি খারাপ। তাদের স্বস্তি দেওয়ার কাজে ব্যর্থতারও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজারে রাখতে হবে সবিশেষ দৃষ্টি। আমন ধান ওঠার এ সময়টায় চালের বাজারে কিন্তু পরিলক্ষিত হচ্ছে অস্থিরতা। বছরে তৃতীয়বারের মতো একটা ঘূর্ণিঝড় গেছে উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে। তাতে সবজি, রবিশস্য ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও রাখতে হবে। হিসাবের গোলমালেও কিন্তু বাজার হয়ে ওঠে অস্থির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত