Ajker Patrika

একদিন ফিরিয়ে দিতে পারব স্বাধীন-মুক্ত ফিলিস্তিন

জেরেমি করবিন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য
একদিন ফিরিয়ে দিতে পারব স্বাধীন-মুক্ত ফিলিস্তিন

আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে আমি শেষবার গিয়েছিলাম ২০১৩ সালের প্রথম দিকে। গাজার উত্তরে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত শরণার্থীশিবিরটি ‘বিচ ক্যাম্প’ নামে পরিচিত ছিল। সেখানে ফল ব্যবসায়ীরা নানা রঙের ছাতার নিচে বসে ফল বিক্রি করতেন। বিড়ালগুলো সরু গলির মাঝখানে ঘুমাত। শিশুরা দড়িলাফসহ নানা ধরনের খেলাধুলা করত।

নাকবাতে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করার পর ১৯৪৮ সালে বিচ ক্যাম্পটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে শিবিরে প্রায় ২৩ হাজার শরণার্থীকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সাত দশকে এই সংখ্যা ৯০ হাজারে পৌঁছায়। মাত্র শূন্য দশমিক ২ বর্গমাইল জায়গার মধ্যে এত মানুষ থাকত।

গাজার জনগণ ১৬ বছর ধরে অবরোধের মধ্যে বসবাস করছে। ইসরায়েল দখলদারি বজায় রাখতে গাজার ভেতরে ও বাইরে যা আছে এর বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে। বিচ ক্যাম্পও আলাদা কিছু ছিল না। সেখানকার লোকেরা বেঁচে থাকার জন্য ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির সাহায্য এবং পরিষেবার ওপর নির্ভর করত। এসব পরিষেবার মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র এবং বেশ কয়েকটি স্কুল ভবন ছিল।

বিচ ক্যাম্পের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। আমাকে স্কুলটির ছাদে উঠতে দেওয়া হয়েছিল, যেখান থেকে আমি একপাশে ইসরায়েলের বেড়া দেখতে পেয়েছিলাম। সমুদ্রে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি টহল নৌকা দেখেছিলাম। পরে জেনেছি, এসব নৌকা ফিলিস্তিনি জেলেদের ছয় নটিক্যাল মাইলের বেশি যেতে দিত না।

স্কুলটি চালাতেন কয়েকজন অনুপ্রেরণাদায়ী ও কঠোর পরিশ্রমী শিক্ষক, যাঁদের দর্শন ছিল আবিষ্কার, সংগীত, থিয়েটার এবং শিল্পের জন্য একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করা। কয়েকজন ছাত্র আমাকে তাদের কাজ দেখিয়েছিল। তাদের ড্রয়িং খাতায় অনেক বিমান, বেড়া ও বোমার ছবি আঁকা ছিল। তবে অন্যান্য জিনিসও তারা এঁকেছিল: তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন ও বন্ধুদের ছবি। স্পষ্টতই, সব শিশু ট্রমায় ভুগছিল, তবে তাদের শেখার, ভাগ করে নেওয়া এবং খেলার ইচ্ছাও ছিল।

দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ভয়াবহ হামলার দুই দিন পর গত ৯ অক্টোবর বিচ ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর পাওয়া যায়। তবে বিচ ক্যাম্পে এটাই প্রথম হামলা ছিল না। ২০২১ সালের মে মাসে এই ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের মধ্যে আটজনই ছিল শিশু। শুধু ৯ অক্টোবরই নয়, তিন সপ্তাহে বিচ ক্যাম্পকে বারবার লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
যখন আমি গাজায় বোমা হামলার খবর শুনি, তখন বিচ ক্যাম্পের সেই স্কুলের কথা ভাবি। আমি জানি না এটি এখনো আছে কি না। আমি জানি না, ওই শিশু ও শিক্ষকেরা বেঁচে আছেন কি না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২৩ লাখ জনসংখ্যার এই ছোট্ট উপত্যকায় ২৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে। তারা বেসামরিক মৃত্যু এড়াতে চেষ্টা করছে তা কিন্তু নয়। গাজায় ইতিমধ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

যারা বেঁচে আছে, তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক জিনিস—পানি, জ্বালানি, খাদ্য এবং চিকিৎসা সবই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অ্যানেসথেশিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করছেন চিকিৎসকেরা। মায়েরা তাঁদের বাচ্চাদের বিদ্যুৎ ফুরিয়ে যাওয়া ইনকিউবেটরে বেঁচে থাকার লড়াই দেখছেন। মানুষ বাধ্য হচ্ছে সমুদ্রের পানি পান করতে। ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তবে ইসরায়েলে চালানো হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো উচিত। ওই হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। একটি গানের কনসার্টে ওই হামলা চালানো হয়। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই সেখানে গান শুনতে গিয়েছিলেন। তাঁরা জুয়েলারি ডিজাইনার। তাঁরা কারখানার শ্রমিক। তাঁরা শান্তির প্রচারক। তাঁদের পরিবার যে কষ্ট ও যন্ত্রণা অনুভব করছে তা চিরকাল থাকবে।

তবে এ ঘটনা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণকে ন্যায্যতা দিতে পারে না; যা তারা করেনি এমন জঘন্য অপরাধের জন্য শাস্তি পাচ্ছে। আমাদের শান্তির জন্য কণ্ঠস্বর দরকার। উল্টো বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদেরা ইসরায়েলি সরকারকে আত্মরক্ষার নামে ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে রাখার ও হত্যা করার সবুজ সংকেত দিয়ে চলেছেন।

গাজার প্রতিটি মানুষের একটি নাম ও একটি মুখ আছে; আমরা ইনকিউবেটরে শিশুদের জন্য যেমন গভীরভাবে শোক করি, ঠিক তেমনি মধ্যবয়সী পুরুষদের জন্য শোক করি, যাঁরা রাস্তা পার হতে গিয়ে নিহত হন। যা-ই হোক না কেন, আমরা সুন্দর, সৃজনশীল জীবন চুরির শোক করছি। শিল্পী, যাঁদের আঁকা আমরা কোনো দিন দেখব না। গায়ক, যাঁদের গান আমরা কখনো আর শুনব না। লেখক, যাঁদের বই আমরা কখনোই পড়ব না। রাঁধুনি, যাঁদের বানানো কুনাফা আমরা কখনোই খাব না। শিক্ষক, যাঁদের কাছ থেকে কোনো শিক্ষাই আমরা কখনো পাব না।

আমরা শুধু গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি না। আমরা একটি সম্পূর্ণ সংস্কৃতি, একটি পরিচয় এবং একটি জাতিকে মুছে ফেলা দেখছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিভিন্ন মানদণ্ড অনুযায়ী গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করেন। গণহত্যা মানে শুধু গণহারে মানুষ হত্যা নয়। গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা, জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে কোনো ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া বা জোর করে শিশুদের স্থানান্তর করাও গণহত্যা বলে বিবেচিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট জাতিকে বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

২ নভেম্বর জাতিসংঘের সাতজন বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার বলেছেন, ‘তাঁরা নিশ্চিত যে ফিলিস্তিনি জনগণ গণহত্যার গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে।’ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অফিসের পরিচালক ক্রেগ মোখিবারের পদত্যাগের পর ওই সাতজন র‍্যাপোর্টিয়ার এ মন্তব্য করেন। ক্রেগ মোখিবার গাজার ভয়াবহতাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। মোখিবার নিজের পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, আরব জাতি হওয়ায় ফিলিস্তিনি জনগণকে পাইকারি হারে হত্যা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ক্রমাগত বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। তিনি ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর নেতাদের উদ্দেশ্যের সুস্পষ্ট বিবৃতি তুলে ধরেন।

তবে ক্রেগ মোখিবার একটি বিষয় উল্লেখ করেননি। তিনি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের কথা উল্লেখ করতে পারতেন, যিনি পোস্ট করেছিলেন যে ‘যতক্ষণ হামাস তার হাতে জিম্মিদের মুক্তি না দেয়—তা হলে গাজায় একমাত্র জিনিস প্রবেশ করবে আর তা হলো, বিমানবাহিনী থেকে কয়েক শ টন বিস্ফোরক, এক আউন্স মানবিক সাহায্য তারা পাবে না।’ মোখিবার ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির একজন এমপি গ্যালিট ডিস্টেল অ্যাটবারিয়ানের কথা উল্লেখ করতে পারেন, যিনি গাজাকে ‘পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গণহত্যা একটি শব্দ, যা সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। শব্দটির একটি আইনি সংজ্ঞা, একটি আইনি ভিত্তি এবং আইনি প্রভাব রয়েছে। সে জন্য, যখন এই ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আমাদের গণহত্যা সম্পর্কে সতর্ক করেন, তখন আমাদের উঠে বসে শোনা উচিত। আর সে কারণেই আমাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দরকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জরুরি তদন্তের পর।

আইসিসির উচিত শুধু গণহত্যার অপরাধে নয়, গত মাসে সব পক্ষের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করা। এই তদন্তের আহ্বান জানানোর ক্ষমতা ও দায়িত্ব যুক্তরাজ্য সরকারের রয়েছে। গাজায় ব্ল্যাকআউট সাময়িক হতে পারে, কিন্তু দায়মুক্তি স্থায়ী এবং আমাদের সরকার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে তার অপরাধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে চলেছে।

যুদ্ধবিরতি আনতে যত দিন লাগবে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে, গাজা অবরোধ বন্ধ করতে, আর দখলদারির অবসান ঘটাতে। আমরা এই দাবিগুলো করি, কারণ আমরা জানি কী ঝুঁকিতে রয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণের কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও দয়া।

আমার মনে আছে, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমরা একটি খাদ্য-উৎপাদন প্রকল্প অতিক্রম করেছিলাম। প্রকল্পটি সাবেক ইসরায়েলি বসতির ৫০ হেক্টর জমি কিনেছিল। পরে তারা চলে গেছে। আর তাদের সব ভবন ধ্বংস করে গেছে। এই ধ্বংসাবশেষের ওপর ফিলিস্তিনিরা একটি সমবায় খামার তৈরি করেছিল। আমাকে বলা হয়েছিল, শিগগির সেখানে জলপাই ও অন্যান্য ফল উৎপাদন করা হবে।

আমি এই জলপাই আর ফল জন্মানোর আশা ছেড়ে দেব না। গাজার মানুষ আমাকে তাদের আনন্দ, সহানুভূতি এবং মানবতা দেখিয়ে দিয়েছে। আশা করি, আমি একদিন তাদের সব ফিরিয়ে দিতে পারব—একটি মুক্ত ও স্বাধীন ফিলিস্তিনে। 

(আল-জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত