Ajker Patrika

ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

এ কে এম শামসুদ্দিন
ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-উত্তর প্রতিটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে যে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, প্রায় এক যুগ ধরে সেই সংগঠনের বর্তমান নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও নানাবিধ অপরাধমূলক ঘটনার জন্ম দিয়ে সবকিছু যেন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই যেন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। গত এক সপ্তাহে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, তা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীদের আচরণ সব ধৃষ্টতা ছাড়িয়ে গেছে। তাঁরা এতই ঔদ্ধত্যপূর্ণ যে যাকে খুশি তাকেই ধরে নিয়ে গিয়ে মারতে পারেন, হাতুড়িপেটা করে শরীরের অস্থিমজ্জা গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। গুলি করে হত্যা করেও প্রশাসনের সহায়তায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতেও পারেন। তাঁরা এতটাই সাহস সঞ্চয় করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলতেও দ্বিধা করেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, তাঁদের অনেক অপকর্মই দলের বিভিন্ন মহলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা হয়। অতীতে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনেক উদাহরণও আছে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এসব অপকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যে অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং একাধিকবার তাঁদের সতর্ক করেও দিয়েছেন। তারপরও বেপরোয়া আচরণ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণের অন্যতম উদাহরণ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রসায়ন বিভাগে ছাত্রলীগ নেত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবিতে তাঁরা প্রার্থীদের বের করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কাউকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না।’

জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নবনিযুক্ত প্রভাষকেরা ইতিমধ্যে বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্য অফিস অবরোধ করেছেন নেতা-কর্মীরা। অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের সবাই নিজ নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ছিলেন। অপরদিকে ছাত্রলীগের সাদিয়া আফরিন পাপড়ি স্নাতকে চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। শুধু পরীক্ষার ফলাফলেই পাপড়ি পিছিয়ে নেই, পাপড়ির বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে। এরপরও ছাত্রলীগ তাঁকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রলীগের নেতারা এ বিষয়ে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও এনেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার নেতা আশরাফুল ‘উপাচার্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোকদের নিয়োগ দিতে চান, কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না’ বলে জানালে, উপাচার্য তা অস্বীকার করেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, ‘যাঁরা বিভাগে ভালো শিক্ষার্থী, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে।’ অথচ শেষ পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের বাধার মুখে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করতে বাধ্য হলেন। এটি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য নয়। দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য দেখা যায়। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্ষেত্রে এভাবেই প্রভাব খাটিয়ে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য আছে—এমন পেছনের সারির ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি শিরোনামের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। শিরোনামটি হলো, ‘প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, তবু ডাক পাননি পরীক্ষায়’। এই শিরোনামের ঠিক নিচে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী জোবেদা আক্তার একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার প্রতি অনিয়মের বিচার চাই’। জোবেদা আক্তার ২০১৭ সালে স্নাতক (সম্মান) সিজিপিএ ৪ স্কোরের মধ্যে ৩.৬২ এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ জন্য একই বছরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে একজন প্রভাষক (স্থায়ী) পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলে জোবেদা আক্তার আবেদন করেন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথমে এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলেও পরে স্থগিত হয়। পরে ওই পদের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কী এক অজানা কারণে চিঠি ও মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষার বিষয়ে অন্য প্রার্থীদের ডাকা হলেও জোবেদা আক্তারকে ডাকা হয়নি। ফলে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি। 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধারালো অস্ত্র হাতে বারবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে হলের কক্ষ দখল, কর্মকর্তাদের মারধর, যৌন হয়রানি, ভাঙচুর, শিক্ষক-ঠিকাদারদের হুমকি, চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারাসহ নানা কারণে ১৬২ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সর্বশেষ প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব সংঘর্ষে প্রতিবারই ধারালো অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের সড়কে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, এসব সংঘর্ষে ছাত্রলীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী হাতে ধারালো অস্ত্রের মহড়া ধারণ করে। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীদের পরিচয় শনাক্ত করে তাঁদের ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করার পরও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। ছাত্রলীগের 
এসব ‘লাগামহীন কর্মকাণ্ডে’ উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে বারবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করেন, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেই অনিয়ম মসৃণভাবে চালিয়ে যেতে ছাত্রলীগকে তিনি এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য দিন দিন আরও বেড়েছে।

পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর যখন-তখন চড়াও হওয়া যেন ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশীর্বাদে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা বারবার ছাড়া পেয়ে যান। 

এ কারণেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচেটিয়া মাস্তানি ও স্বৈরাচারী পরিবেশ তৈরির পেছনে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে দেওয়া একটি উক্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। শশী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষকদের নিয়োগ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন। ফেসবুক লাইভে এসে শশী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছোট করে প্রতিনিয়ত নিউজ করছে সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কথা বলছে না। আপনারা যদি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাশে না থাকেন, তাহলে আমি বলব, ভিসি-প্রোভিসি, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে আওয়ামী পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়াই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।’ শশীর এই বক্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়। যদিও কিছুক্ষণ পরই শশী তাঁর প্রোফাইল থেকে বক্তব্যটি সরিয়ে নেন। প্রধানমন্ত্রীকে উল্লেখ করে শশীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া 
প্রকাশ করে শশীর বক্তব্যকে ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ওই নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন, আমরা যখন সংগঠন (রাজনৈতিক দল) করেছি, তখন তাঁর জন্মই হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছেন, এত বড় স্পর্ধা তাঁর দেখানো উচিত হয়নি। এটা তাঁর সীমা লঙ্ঘনকারী বক্তব্য।’ উপাচার্য অবশ্য এ ব্যাপারে একটু কৌশলী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না।’ তিনি শশীর শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু আছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ৪৫টির বেশি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৬টির। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় শাস্তি না হওয়ায় ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কমছে না।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট। রাজনৈতিক আনুগত্যই যে তাঁদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের আচার-আচরণই প্রমাণ করে যে তাঁরা দলীয় পরিচয়ে পরিচিত। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করলেও যখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেন না বা নিতে পারেন না, তখন তাঁদের অক্ষমতা বা আসল উদ্দেশ্য বুঝতে সমস্যা হয় না। এখন যদি তাঁরা বলেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না’, শুনতে কেমন হাস্যকর মনে হয় না? এ কথা সবাই বোঝেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারজানা শশী বক্তব্য দিতে গিয়ে বেফাঁস প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে ফেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। তা না হলে বরাবরের মতোই, তাদের আগের ভূমিকাতেই দেখতে পেতাম।

এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত