নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে এবং দ্বিগুণ-বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের কংগ্রেস ও পাকিস্তানের মুসলিম লীগের চেয়েও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব বা সাফল্য অধিক। কংগ্রেস (১৮৮৫) অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম রাজনৈতিক দল; মুসলিম লীগ (১৯০৬) অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। তবে আওয়ামী লীগের বয়সও কম হলো না, ৭৪ বছর চলছে এখন দলটির বয়স। কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর এবং মুসলিম লীগের ১১৭ বছর পর আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের যখন জন্ম হয়, তত দিনে ভারত উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে যথাক্রমে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট ’৪৭) ও ভারত (১৫ আগস্ট ’৪৭) দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্ম সালকে (১৯৪৯) ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে কর্মকৃতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চেয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারী। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দুটি দলই একাধিকবার ভেঙেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তান দেশটাও ভেঙে গেছে। মুসলিম লীগ তো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কংগ্রেস ১৯৬৯ সালে ভেঙে গেলে আর কখনো এক হতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতারা একে একে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে কংগ্রেসের একটি খণ্ডিত দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে।
সে তুলনায় আওয়ামী লীগ দুবার ভাঙলেও দুবারই জোড়া লেগেছে; ঘরের লোকেরা ঘরে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনের কারণে ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এরপর দুই দফায় আরও ১০ বছর বিরোধী দলের আসনে বসে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ, যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি, সেই দেশ প্রতিষ্ঠা করে অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগও দুটি দেশ যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দুই দেশই স্বাধীন হয়েছে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে। বাঙালির মতো যুদ্ধ জয় করে নয়।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও প্রদেশে (পূর্ববঙ্গ, তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয়নি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন; প্রদেশে আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় অবদান হলো ব্রিটিশের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন প্রথা বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও হয়েছিল পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিতে। তখন মোহামেডান আসন, নন-মোহামেডান আসন, ইউরোপিয়ান আসন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আসন, ভারতীয় খ্রিষ্টান আসন, শিল্প ও বাণিজ্য আসন, উইমেন’স মোহামেডান আরবান আসন, উইমেন’স জেনারেল আরবান আসন, জমিদার আসন ইত্যাদি আসনে ভাগ করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক ও আইন পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হতো। করদাতারা ছিলেন ভোটার, সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। এর ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অভিন্ন জাতীয়তার দাবিদার হলেও উক্ত সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বিভক্ত নির্বাচনী প্রথায় বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করে বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যুক্ত নির্বাচন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘...যুক্ত নির্বাচন এক দেশ এক জাতিত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং বিভেদমূলক সকল প্রবণতা নস্যাৎ করবে।’
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী শুধু পৃথক নির্বাচন নয়, ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অমিতব্যয়ী, উচ্ছৃঙ্খল পুত্র সলিমুল্লাহকে ১৬ লাখ টাকা লোন দিয়ে ১৯০৬ সালে তাঁকে দিয়ে মুসলিম লীগ গঠন করায়। ঢাকার সমাজ ও জনজীবনের ওপর নবাব পরিবারের প্রভাবের অবসান ঘটানোর জন্য ’৪৭-এর আগেই কলকাতা থেকে ঢাকার এসে আবুল হাশিম ১৫০ মোগলটুলীতে কর্মী শিবির গঠন করেছিলেন। ক্রমান্বয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ এসে কর্মী শিবিরে যোগদান করেন।
জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার যে হলাহল উৎপন্ন হয়েছিল, সেটি পান করে নীলকণ্ঠ হন শেখ মুজিব। হিন্দু-মুসলিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতি। এই বিভক্ত জাতিসত্তাকে একক সত্তায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি জমানায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ যাঁরা দেখেছেন বা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, তখন মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক দলের নেতারা জনসভায় বক্তৃতা শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, ‘নাহমাদুহু ওয়ানুছল্লি আলা আম্মা বাআদ’ ইত্যাদি দোয়া-দরুদ পড়ে। আর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সভার শুরুতে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল থেকে পাঠ করার রেওয়াজ চালু করেছিলেন। এতে বিভক্ত জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল। তারপর ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই নবজাগ্রত বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে তৃপ্ত হতে রাজি ছিল না। তাতেই না বঙ্গবন্ধুর মরণজয়ী সংগ্রাম ও সাধনায় আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
যুক্ত নির্বাচন প্রথার ঐতিহাসিক তাৎপর্য হলো, বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তি এক ভোটের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সেই নীতির ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হন। প্রদেশে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অশুভ আঁতাত একজন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে—এটা মানতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে, যার পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাঙালি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে অসহযোগ আন্দোলন করেছিল, সেটি ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে নিখিল ভারতজুড়ে অনুষ্ঠিত অসহযোগের চেয়েও সর্বাত্মক, সফল, সার্থক ও সর্বব্যাপী হয়েছিল। দুটি অসহযোগই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগের ওপর কংগ্রেসের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে মহাত্মার অহিংস আন্দোলন সহিংস রূপ পরিগ্রহ করে, যার ফলস্বরূপ চৌরিচোরায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা থানা আক্রমণ করে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এই নিদারুণ হত্যাকাণ্ডে গান্ধীজি এতই ব্যথিত ও বিচলিত হয়েছিলেন যে, তিনি অসহযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
পক্ষান্তরে ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনে কোনো অপ্রীতিকর হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগের ওপর তিনি ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের অস্তিত্ব ছিল না। সচিবালয়, অফিস-আদালত, ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই চলত। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে সুশৃঙ্খল উপায়ে পরিচালিত হয়েছে এবং তা অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সবকিছু জীবনের তরে বন্ধ করে দেবে।’ সেটা মনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তাঘাট কেটে, ব্যারিকেড দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করে রেখেছিল। ফলে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক, কামান, রিকয়েললেস রাইফেল, আর্মড ভেহিক্যাল নিয়ে ঢাকার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জনতার ওই ব্যারিকেডই তাদের অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছিল। সেগুলো সরিয়ে অগ্রসর হতে তাদের বেগ পেতে হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ঘাঁটিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে এবং দ্বিগুণ-বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের কংগ্রেস ও পাকিস্তানের মুসলিম লীগের চেয়েও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব বা সাফল্য অধিক। কংগ্রেস (১৮৮৫) অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম রাজনৈতিক দল; মুসলিম লীগ (১৯০৬) অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। তবে আওয়ামী লীগের বয়সও কম হলো না, ৭৪ বছর চলছে এখন দলটির বয়স। কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর এবং মুসলিম লীগের ১১৭ বছর পর আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের যখন জন্ম হয়, তত দিনে ভারত উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে যথাক্রমে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট ’৪৭) ও ভারত (১৫ আগস্ট ’৪৭) দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্ম সালকে (১৯৪৯) ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে কর্মকৃতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চেয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারী। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দুটি দলই একাধিকবার ভেঙেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তান দেশটাও ভেঙে গেছে। মুসলিম লীগ তো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কংগ্রেস ১৯৬৯ সালে ভেঙে গেলে আর কখনো এক হতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতারা একে একে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে কংগ্রেসের একটি খণ্ডিত দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে।
সে তুলনায় আওয়ামী লীগ দুবার ভাঙলেও দুবারই জোড়া লেগেছে; ঘরের লোকেরা ঘরে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনের কারণে ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এরপর দুই দফায় আরও ১০ বছর বিরোধী দলের আসনে বসে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ, যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি, সেই দেশ প্রতিষ্ঠা করে অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগও দুটি দেশ যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দুই দেশই স্বাধীন হয়েছে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে। বাঙালির মতো যুদ্ধ জয় করে নয়।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও প্রদেশে (পূর্ববঙ্গ, তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয়নি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন; প্রদেশে আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় অবদান হলো ব্রিটিশের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন প্রথা বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও হয়েছিল পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিতে। তখন মোহামেডান আসন, নন-মোহামেডান আসন, ইউরোপিয়ান আসন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আসন, ভারতীয় খ্রিষ্টান আসন, শিল্প ও বাণিজ্য আসন, উইমেন’স মোহামেডান আরবান আসন, উইমেন’স জেনারেল আরবান আসন, জমিদার আসন ইত্যাদি আসনে ভাগ করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক ও আইন পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হতো। করদাতারা ছিলেন ভোটার, সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। এর ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অভিন্ন জাতীয়তার দাবিদার হলেও উক্ত সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বিভক্ত নির্বাচনী প্রথায় বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করে বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যুক্ত নির্বাচন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘...যুক্ত নির্বাচন এক দেশ এক জাতিত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং বিভেদমূলক সকল প্রবণতা নস্যাৎ করবে।’
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী শুধু পৃথক নির্বাচন নয়, ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অমিতব্যয়ী, উচ্ছৃঙ্খল পুত্র সলিমুল্লাহকে ১৬ লাখ টাকা লোন দিয়ে ১৯০৬ সালে তাঁকে দিয়ে মুসলিম লীগ গঠন করায়। ঢাকার সমাজ ও জনজীবনের ওপর নবাব পরিবারের প্রভাবের অবসান ঘটানোর জন্য ’৪৭-এর আগেই কলকাতা থেকে ঢাকার এসে আবুল হাশিম ১৫০ মোগলটুলীতে কর্মী শিবির গঠন করেছিলেন। ক্রমান্বয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ এসে কর্মী শিবিরে যোগদান করেন।
জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার যে হলাহল উৎপন্ন হয়েছিল, সেটি পান করে নীলকণ্ঠ হন শেখ মুজিব। হিন্দু-মুসলিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতি। এই বিভক্ত জাতিসত্তাকে একক সত্তায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি জমানায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ যাঁরা দেখেছেন বা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, তখন মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক দলের নেতারা জনসভায় বক্তৃতা শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, ‘নাহমাদুহু ওয়ানুছল্লি আলা আম্মা বাআদ’ ইত্যাদি দোয়া-দরুদ পড়ে। আর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সভার শুরুতে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল থেকে পাঠ করার রেওয়াজ চালু করেছিলেন। এতে বিভক্ত জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল। তারপর ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই নবজাগ্রত বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে তৃপ্ত হতে রাজি ছিল না। তাতেই না বঙ্গবন্ধুর মরণজয়ী সংগ্রাম ও সাধনায় আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
যুক্ত নির্বাচন প্রথার ঐতিহাসিক তাৎপর্য হলো, বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তি এক ভোটের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সেই নীতির ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হন। প্রদেশে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অশুভ আঁতাত একজন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে—এটা মানতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে, যার পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাঙালি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে অসহযোগ আন্দোলন করেছিল, সেটি ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে নিখিল ভারতজুড়ে অনুষ্ঠিত অসহযোগের চেয়েও সর্বাত্মক, সফল, সার্থক ও সর্বব্যাপী হয়েছিল। দুটি অসহযোগই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগের ওপর কংগ্রেসের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে মহাত্মার অহিংস আন্দোলন সহিংস রূপ পরিগ্রহ করে, যার ফলস্বরূপ চৌরিচোরায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা থানা আক্রমণ করে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এই নিদারুণ হত্যাকাণ্ডে গান্ধীজি এতই ব্যথিত ও বিচলিত হয়েছিলেন যে, তিনি অসহযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
পক্ষান্তরে ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনে কোনো অপ্রীতিকর হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগের ওপর তিনি ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের অস্তিত্ব ছিল না। সচিবালয়, অফিস-আদালত, ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই চলত। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে সুশৃঙ্খল উপায়ে পরিচালিত হয়েছে এবং তা অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সবকিছু জীবনের তরে বন্ধ করে দেবে।’ সেটা মনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তাঘাট কেটে, ব্যারিকেড দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করে রেখেছিল। ফলে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক, কামান, রিকয়েললেস রাইফেল, আর্মড ভেহিক্যাল নিয়ে ঢাকার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জনতার ওই ব্যারিকেডই তাদের অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছিল। সেগুলো সরিয়ে অগ্রসর হতে তাদের বেগ পেতে হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ঘাঁটিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে এবং দ্বিগুণ-বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের কংগ্রেস ও পাকিস্তানের মুসলিম লীগের চেয়েও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব বা সাফল্য অধিক। কংগ্রেস (১৮৮৫) অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম রাজনৈতিক দল; মুসলিম লীগ (১৯০৬) অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। তবে আওয়ামী লীগের বয়সও কম হলো না, ৭৪ বছর চলছে এখন দলটির বয়স। কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর এবং মুসলিম লীগের ১১৭ বছর পর আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের যখন জন্ম হয়, তত দিনে ভারত উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে যথাক্রমে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট ’৪৭) ও ভারত (১৫ আগস্ট ’৪৭) দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্ম সালকে (১৯৪৯) ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে কর্মকৃতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চেয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারী। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দুটি দলই একাধিকবার ভেঙেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তান দেশটাও ভেঙে গেছে। মুসলিম লীগ তো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কংগ্রেস ১৯৬৯ সালে ভেঙে গেলে আর কখনো এক হতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতারা একে একে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে কংগ্রেসের একটি খণ্ডিত দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে।
সে তুলনায় আওয়ামী লীগ দুবার ভাঙলেও দুবারই জোড়া লেগেছে; ঘরের লোকেরা ঘরে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনের কারণে ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এরপর দুই দফায় আরও ১০ বছর বিরোধী দলের আসনে বসে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ, যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি, সেই দেশ প্রতিষ্ঠা করে অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগও দুটি দেশ যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দুই দেশই স্বাধীন হয়েছে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে। বাঙালির মতো যুদ্ধ জয় করে নয়।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও প্রদেশে (পূর্ববঙ্গ, তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয়নি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন; প্রদেশে আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় অবদান হলো ব্রিটিশের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন প্রথা বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও হয়েছিল পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিতে। তখন মোহামেডান আসন, নন-মোহামেডান আসন, ইউরোপিয়ান আসন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আসন, ভারতীয় খ্রিষ্টান আসন, শিল্প ও বাণিজ্য আসন, উইমেন’স মোহামেডান আরবান আসন, উইমেন’স জেনারেল আরবান আসন, জমিদার আসন ইত্যাদি আসনে ভাগ করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক ও আইন পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হতো। করদাতারা ছিলেন ভোটার, সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। এর ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অভিন্ন জাতীয়তার দাবিদার হলেও উক্ত সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বিভক্ত নির্বাচনী প্রথায় বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করে বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যুক্ত নির্বাচন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘...যুক্ত নির্বাচন এক দেশ এক জাতিত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং বিভেদমূলক সকল প্রবণতা নস্যাৎ করবে।’
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী শুধু পৃথক নির্বাচন নয়, ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অমিতব্যয়ী, উচ্ছৃঙ্খল পুত্র সলিমুল্লাহকে ১৬ লাখ টাকা লোন দিয়ে ১৯০৬ সালে তাঁকে দিয়ে মুসলিম লীগ গঠন করায়। ঢাকার সমাজ ও জনজীবনের ওপর নবাব পরিবারের প্রভাবের অবসান ঘটানোর জন্য ’৪৭-এর আগেই কলকাতা থেকে ঢাকার এসে আবুল হাশিম ১৫০ মোগলটুলীতে কর্মী শিবির গঠন করেছিলেন। ক্রমান্বয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ এসে কর্মী শিবিরে যোগদান করেন।
জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার যে হলাহল উৎপন্ন হয়েছিল, সেটি পান করে নীলকণ্ঠ হন শেখ মুজিব। হিন্দু-মুসলিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতি। এই বিভক্ত জাতিসত্তাকে একক সত্তায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি জমানায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ যাঁরা দেখেছেন বা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, তখন মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক দলের নেতারা জনসভায় বক্তৃতা শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, ‘নাহমাদুহু ওয়ানুছল্লি আলা আম্মা বাআদ’ ইত্যাদি দোয়া-দরুদ পড়ে। আর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সভার শুরুতে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল থেকে পাঠ করার রেওয়াজ চালু করেছিলেন। এতে বিভক্ত জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল। তারপর ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই নবজাগ্রত বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে তৃপ্ত হতে রাজি ছিল না। তাতেই না বঙ্গবন্ধুর মরণজয়ী সংগ্রাম ও সাধনায় আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
যুক্ত নির্বাচন প্রথার ঐতিহাসিক তাৎপর্য হলো, বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তি এক ভোটের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সেই নীতির ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হন। প্রদেশে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অশুভ আঁতাত একজন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে—এটা মানতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে, যার পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাঙালি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে অসহযোগ আন্দোলন করেছিল, সেটি ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে নিখিল ভারতজুড়ে অনুষ্ঠিত অসহযোগের চেয়েও সর্বাত্মক, সফল, সার্থক ও সর্বব্যাপী হয়েছিল। দুটি অসহযোগই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগের ওপর কংগ্রেসের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে মহাত্মার অহিংস আন্দোলন সহিংস রূপ পরিগ্রহ করে, যার ফলস্বরূপ চৌরিচোরায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা থানা আক্রমণ করে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এই নিদারুণ হত্যাকাণ্ডে গান্ধীজি এতই ব্যথিত ও বিচলিত হয়েছিলেন যে, তিনি অসহযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
পক্ষান্তরে ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনে কোনো অপ্রীতিকর হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগের ওপর তিনি ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের অস্তিত্ব ছিল না। সচিবালয়, অফিস-আদালত, ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই চলত। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে সুশৃঙ্খল উপায়ে পরিচালিত হয়েছে এবং তা অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সবকিছু জীবনের তরে বন্ধ করে দেবে।’ সেটা মনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তাঘাট কেটে, ব্যারিকেড দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করে রেখেছিল। ফলে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক, কামান, রিকয়েললেস রাইফেল, আর্মড ভেহিক্যাল নিয়ে ঢাকার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জনতার ওই ব্যারিকেডই তাদের অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছিল। সেগুলো সরিয়ে অগ্রসর হতে তাদের বেগ পেতে হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ঘাঁটিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে এবং দ্বিগুণ-বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের কংগ্রেস ও পাকিস্তানের মুসলিম লীগের চেয়েও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব বা সাফল্য অধিক। কংগ্রেস (১৮৮৫) অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম রাজনৈতিক দল; মুসলিম লীগ (১৯০৬) অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। তবে আওয়ামী লীগের বয়সও কম হলো না, ৭৪ বছর চলছে এখন দলটির বয়স। কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর এবং মুসলিম লীগের ১১৭ বছর পর আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের যখন জন্ম হয়, তত দিনে ভারত উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে যথাক্রমে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট ’৪৭) ও ভারত (১৫ আগস্ট ’৪৭) দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্ম সালকে (১৯৪৯) ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে কর্মকৃতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চেয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারী। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দুটি দলই একাধিকবার ভেঙেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তান দেশটাও ভেঙে গেছে। মুসলিম লীগ তো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কংগ্রেস ১৯৬৯ সালে ভেঙে গেলে আর কখনো এক হতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতারা একে একে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে কংগ্রেসের একটি খণ্ডিত দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে।
সে তুলনায় আওয়ামী লীগ দুবার ভাঙলেও দুবারই জোড়া লেগেছে; ঘরের লোকেরা ঘরে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনের কারণে ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এরপর দুই দফায় আরও ১০ বছর বিরোধী দলের আসনে বসে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ, যেখানে আমরা এখন বসবাস করছি, সেই দেশ প্রতিষ্ঠা করে অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগও দুটি দেশ যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দুই দেশই স্বাধীন হয়েছে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে। বাঙালির মতো যুদ্ধ জয় করে নয়।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও প্রদেশে (পূর্ববঙ্গ, তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয়নি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন; প্রদেশে আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় অবদান হলো ব্রিটিশের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন প্রথা বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও হয়েছিল পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিতে। তখন মোহামেডান আসন, নন-মোহামেডান আসন, ইউরোপিয়ান আসন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আসন, ভারতীয় খ্রিষ্টান আসন, শিল্প ও বাণিজ্য আসন, উইমেন’স মোহামেডান আরবান আসন, উইমেন’স জেনারেল আরবান আসন, জমিদার আসন ইত্যাদি আসনে ভাগ করে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক ও আইন পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হতো। করদাতারা ছিলেন ভোটার, সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। এর ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অভিন্ন জাতীয়তার দাবিদার হলেও উক্ত সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বিভক্ত নির্বাচনী প্রথায় বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করে বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যুক্ত নির্বাচন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘...যুক্ত নির্বাচন এক দেশ এক জাতিত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং বিভেদমূলক সকল প্রবণতা নস্যাৎ করবে।’
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী শুধু পৃথক নির্বাচন নয়, ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অমিতব্যয়ী, উচ্ছৃঙ্খল পুত্র সলিমুল্লাহকে ১৬ লাখ টাকা লোন দিয়ে ১৯০৬ সালে তাঁকে দিয়ে মুসলিম লীগ গঠন করায়। ঢাকার সমাজ ও জনজীবনের ওপর নবাব পরিবারের প্রভাবের অবসান ঘটানোর জন্য ’৪৭-এর আগেই কলকাতা থেকে ঢাকার এসে আবুল হাশিম ১৫০ মোগলটুলীতে কর্মী শিবির গঠন করেছিলেন। ক্রমান্বয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ এসে কর্মী শিবিরে যোগদান করেন।
জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার যে হলাহল উৎপন্ন হয়েছিল, সেটি পান করে নীলকণ্ঠ হন শেখ মুজিব। হিন্দু-মুসলিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতি। এই বিভক্ত জাতিসত্তাকে একক সত্তায় রূপান্তরের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল। পাকিস্তানি জমানায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ যাঁরা দেখেছেন বা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, তখন মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক দলের নেতারা জনসভায় বক্তৃতা শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, ‘নাহমাদুহু ওয়ানুছল্লি আলা আম্মা বাআদ’ ইত্যাদি দোয়া-দরুদ পড়ে। আর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সভার শুরুতে কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল থেকে পাঠ করার রেওয়াজ চালু করেছিলেন। এতে বিভক্ত জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল। তারপর ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই নবজাগ্রত বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে তৃপ্ত হতে রাজি ছিল না। তাতেই না বঙ্গবন্ধুর মরণজয়ী সংগ্রাম ও সাধনায় আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
যুক্ত নির্বাচন প্রথার ঐতিহাসিক তাৎপর্য হলো, বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তি এক ভোটের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সেই নীতির ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হলে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হন। প্রদেশে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অশুভ আঁতাত একজন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে—এটা মানতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে, যার পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাঙালি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে অসহযোগ আন্দোলন করেছিল, সেটি ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে নিখিল ভারতজুড়ে অনুষ্ঠিত অসহযোগের চেয়েও সর্বাত্মক, সফল, সার্থক ও সর্বব্যাপী হয়েছিল। দুটি অসহযোগই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগের ওপর কংগ্রেসের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে মহাত্মার অহিংস আন্দোলন সহিংস রূপ পরিগ্রহ করে, যার ফলস্বরূপ চৌরিচোরায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা থানা আক্রমণ করে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এই নিদারুণ হত্যাকাণ্ডে গান্ধীজি এতই ব্যথিত ও বিচলিত হয়েছিলেন যে, তিনি অসহযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
পক্ষান্তরে ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনে কোনো অপ্রীতিকর হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগের ওপর তিনি ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের অস্তিত্ব ছিল না। সচিবালয়, অফিস-আদালত, ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই চলত। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নির্দেশে সুশৃঙ্খল উপায়ে পরিচালিত হয়েছে এবং তা অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সবকিছু জীবনের তরে বন্ধ করে দেবে।’ সেটা মনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তাঘাট কেটে, ব্যারিকেড দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করে রেখেছিল। ফলে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক, কামান, রিকয়েললেস রাইফেল, আর্মড ভেহিক্যাল নিয়ে ঢাকার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জনতার ওই ব্যারিকেডই তাদের অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছিল। সেগুলো সরিয়ে অগ্রসর হতে তাদের বেগ পেতে হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ঘাঁটিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের, এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা-অপচেষ্টা হয়নি। যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই দলটি যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠেছে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫